ব্রয়লার মুরগির মাংস জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিছু না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পিআইডির কনফারেন্স রুমে ব্রয়লার মুরগির মাংসে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক, হেভি মেটাল ও অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি রয়েছে কিনা, তা নিয়ে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দিয়েছেন।
এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন,ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়া নিরাপদ কিনা,এ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত ধারণা বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক প্রচারণায় দেখা যায় যে ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক,হেভি মেটাল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে; যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ফলে সাধারণ জনগণের মাঝে অনেক সময় ব্রয়লার মাংস সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্রয়লার মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটছে, বছরে সাশ্রয় হবে ১০ হাজার কোটি টাকা: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, ‘ফলে ব্রয়লার শিল্পের ওপর একটি বড় ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। সম্প্রতি তার নজির আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ২০২০ সালে শুরু হওয়া কোভিড- ১৯ প্রাদুর্ভাবে। রোগটির প্রকোপের প্রথম দিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ ব্রয়লার মাংস খাওয়া অনেক কমে যায়।’
তিনি বলেন, দেশে ব্রয়লার মুরগি খুবই সম্ভাবনাময় একটি খাত। চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারলে দেশে যে পরিমাণ খামার ও অবকাঠামো রয়েছে,তার পুরোপুরি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব। সেজন্য,মানুষের কাছে মুরগির মাংস জনপ্রিয় করতে হবে।
তার মতে, এটি করতে পারলে একদিকে আমিষের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সুস্থ, সবল ও মেধাবী জাতি গঠন সহজতর হবে।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির বাজার দ্রুত বিকশিত হবে, মুরগির মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন বৃদ্ধি পাবে, কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘এছাড়া সুস্থ ও মেধাবী জাতি গঠনে, আমিষের চাহিদা পূরণে ও কর্মসংস্থান তৈরিতে ব্রয়লার মুরগির মাংস খাওয়ার বিষয়ে প্রচারণা ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।’
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংসে,হাড়ে ও কম্পোজিটে মূলত দুইটি অ্যান্টিবায়োটিক (অক্সিটেট্রাসিাইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন) এবং তিনটি হেভি মেটালের (আর্সেনিক,ক্রোমিয়াম ও লেড) সামান্য উপস্থিতি রয়েছে; যা অস্বাভাবিক নয় এবং তা সর্বোচ্চ সহনশীল সীমার অনেক নিচে। খামার এবং বাজারে প্রায় ব্রয়লার মাংসের চেয়ে সুপারশপের ব্রয়লার মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক এবং হেভি মেটাল এর পরিমাণ কম রয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, পোল্ট্রি খাতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। একটা সময় গ্রামে নিজস্ব আঙ্গিনায় হাঁস মুরগি পালন করা হতো। এখন এটা শিল্পে পরিণত হয়েছে। দেশের মানুষের আমিষের একটা বড় চাহিদা মিটায় এ খাত। ফলে নিজ উদ্যোগে অনেকেই এখাতে এসেছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। তবে কিছু ভুল ভ্রান্তিমুলক তথ্যের কারণে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এজন্য আমরা একটি গবেষণা পরিচালনা করেছি। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পোল্ট্রি খাত বড় ভূমিকা পালন করছে। তাই আমরা চেষ্টা করছি পোল্ট্রি খাতকে আরও আধুনিক করা এবং এখাতের বিকাশকে সরকারি পৃষ্টপোষকতা দিতে। এ লক্ষ্যে পোল্ট্রি খাদ্য আমদানিতে শুল্কে রেয়াত দিতে এনবিআরকে অনুরোধ করেছি। পোল্ট্রি খাতকে সামনে নিয়ে একটি কল্যাণকর মঙ্গলকর অধ্যায় রচনার জন্য কাজ করছি জাতির জন্য।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যায় যে, ব্রয়লার মুরগির মাংসে,হাড়ে ও কম্পোজিটে মূলত দুইটি অ্যান্টিবায়োটিক (অক্সিটেট্রাসিইক্লিন ও ডক্সিসাইক্লিন) এবং তিনটি হেভি মেটালের (আর্সেনিক,ক্রোমিয়াম ও লেড) সামান্য উপস্থিতি রয়েছে, যা অস্বাভাবিক নয় এবং তা সর্বোচ্চ সহনশীল সীমার অনেক নিচে। খামার এবং বাজারে প্রায় ব্রয়লার মাংসের চেয়ে সুপারশপের ব্রয়লার মাংসে এন্টিবায়োটিক এবং হেভি মেটাল এর পরিমাণ কম রয়েছে।
এসময় কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. নাহিদ রশীদ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্তকর্তা ও প্রধান গবেষক ড. রফিকুল ইসলাম, বিআরসির প্রাক্তন সদস্য পরিচালক ড. মনিরুল ইসলাম এবং গবেষণা টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বৈধ সরকারের পতন ঘটাতে পারবে না বিএনপি: কৃষিমন্ত্রী