বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু চত্বরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা কোনোভাবেই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, এর আগেও কয়েকবার ভিসির অপসারণের দাবিতে তারা আন্দোলন করেছিরেন। এপর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যতবার আন্দোলন হয়েছে প্রতিবারই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন বিভিন্নভাবে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
উল্লেখ্য, সহপাঠির সাথে ফেসবুকে লেখা নিয়ে মন্তব্য করার কারণে গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করলে এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ভিসির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিসির বরাবর জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে একটি লিখিত আবেদন করলে ভিসি তার বিরুদ্ধে বহিষ্কার আদেশ তুলে নেয়।
ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামা আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাচান মাহমুদ বলেন, ‘এই ভিসি ছিলেন বিএনপিপন্থী, তিনি কি করে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে থাকেন। তিনি ছিলেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের সদস্য। বঙ্গবন্ধুর এই মাটিতে বিএনপিপন্থী ভিসির কোনো জায়গা নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত ভিসি পদত্যাগ না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
এরআগে ভিসির অপসারনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বুধবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত আন্দোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্দোলনের মুখে শিক্ষার্থীদের আগের ১৪ দফা দাবি মেনে নিয়ে রেজিস্ট্রার মো. নুরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশ প্রচার করে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ছয় মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শুরু, হলে প্রতি সিটের ভাড়া ১৫০ টাকা এবং রুমের ভাড়া ৫০ টাকা করা, ভর্তি ফি সর্বমোট ১৪ হাজার টাকা এবং সেমিস্টার ফি ২ হাজার টাকা করা, বিভাগ উন্নয়ন ফি বাদ দেয়া, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার না করা প্রভৃতি।
এবিষয়ে আন্দোলনরত কৃষি বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের মূল দাবি ছিল ভিসির অপসারণ বা পদত্যাগ। কিন্তু এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভিসিপন্থী একদল তেলবাজ ও দালালরা এই ১৪ দফাকে সামনে আনেন। এই ১৪ দফা দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই করে আসছিল।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে ১৪ দফা দাবি করেছিল, আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ওই দাবিগুলো মেনে নিয়েছি। এরপরও এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কতটুকু যৌক্তিক তা আপনাদের বিবেচনার বিষয়। আর পদত্যাগ চাওয়ার বিষয়টা শুধু আমাদের এখানে নয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও হচ্ছে। মুষ্টিমেয় একটা গোষ্ঠী ঢাকা থেকে একটি ঢেউ তুলেছে যার প্রভাব গোপালগঞ্জে এসে পড়েছে।’