শাহজাহান গাজী, চাঁদপুরের মধ্য বয়সী এ ব্যক্তি আপন মনে জাল মেরামত করছেন। তার সাথে রয়েছে আরও কয়েকজন। প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইলিশ ধরার। কয়েক দশক নদীতে ইলিশসহ অন্য মাছ আহরণ করেই জীবন জীবীকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি।
তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রকৃত জেলেরা মা ইলিশ শিকার করে না, বরং নিরাপদে ডিম ছাড়ার জন্য সুযোগ করে দেয়।
তিনি বলেন, গত ২২ দিন অনেক কষ্টে সংসার চালালেও নদীতে যান নি। তবে এ সময়টাতে এক শ্রেণির অসাধু জেলে মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়, শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ এলাকা থেকে এসে চাঁদপুরের মেঘনা-পদ্মা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ শিকার করেছে বলে জানান তিনি।
শুধু অভয়াশ্রম এলাকায় নয়, প্রাকৃতিক সম্পদ ইলিশ রক্ষায় নদী পাড়ের সকল লোকদের সচেতন হওয়া দরকার, বলেন তিনি।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামের মেঘনা নদীর পাড় এলাকায় খালে ইলিশ শিকার করার জন্য প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে শত শত জেলেকে।
নিষেধাজ্ঞা শেষ। সাগরে ইলিশ শিকার করতে যাবেন জেলেরা। মধ্যরাত থেকেই আহরণ করতে পারবেন ইলিশসহ সব ধরণের মাছ। মাছ ধরার ট্রলার, জাল মেরামতসহ অন্যান্য বিষয়ে শেষ মুহুর্তের সব প্রস্তুতি নিয়ে চলছেন তারা।
প্রস্তুতি নেয়া জেলেদের একজন হাফেজ গাজী জানান, ‘সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনেছি। আজ রাতে অথবা বৃহস্পতিবার সকালে সাগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হব। দক্ষিণ হাতিয়া সাগর এলাকায় গিয়ে মাছ শিকার করব। একবার গেলে কমপক্ষে একমাস থাকা হয়।’
আজাদ খান নামের আরেক জেলে জানান, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদেরকে সরকারিভাবে যে সহায়তা দেয়া হয়। তাতে সংসার চালানোর মত তেমন কিছু হয় না। কারণ বাজারে সব কিছুরই দাম বেশি। ২০ কেজির স্থলে পাই ১০ থেকে ১২ কেজি চাল। এ দিয়ে কি হয়! তবে এখন আমরা ইলিশ পাওয়ার আশায় নদীতে নামবো। নদীতে মাছ থাকলে সংসার আবার স্বছল হবে।’
একই এলাকার জেলে নজরুল শেখ জানান, ২২ দিন অবসর থাকলেও জাল মেরামত করার মত টাকা ছিলো না। কারণ ব্যবসায়ীরা বাকিতে কোনো কিছুই বিক্রি করেন না। এখন আমরা ঋণ করে টাকা নিয়ে জাল, সুতা ও নৌকার অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় করেছি। সকাল থেকেই জাল মেরামত চলছে। রাতেই ইলিশ আহরণে নামা হবে।
সাখুয়া জেলে পাড়ার এক নারী খোদেজা বেগম। বয়স ৬০ হবে। জেলে পরিবারেরই একজন তিনি। খুবই দৃঢ় কন্ঠে তিনি বললেন, ‘জেলেদরে ছবি তোলা, পত্রিকায় ছাপানো আরও আগেই দরকার ছিলো। কারণ আমরা কিভাবে থাকি, আমাদের সংসার কিভাবে চলে, আগেই সরকারকে জাননো দরকার। আমাদের বেঁচে থাকার কষ্ট বাস্তবে না দেখলে বুঝা যাবে না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে আনোয়ার গাজী নামের এক জেলে বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক ছবি তুইল্যা নিচে, আমাগো পরিবর্তন হয় না। ২০ কেজির বদলে চাল পাই ১৫ কেজি। বিকল্প কর্মসংস্থানের সেলাই মেশিন পায় মেম্বার-চেয়ারম্যানগো আত্মীয়রা। সরকার চাল দিয়া চেয়ারম্যান ও মেম্বারগরে বড়লোক বানানোর দরকার নাই। চাল দেয়া বন্ধ করুক।’
উল্লেখ্য, পদ্মা-মেঘনার উপকূলীয় এলাকাসহ চাঁদপুর জেলায় ৫১ হাজার ১৯০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। বছরজুড়ে তারা নদীতে মাছ আহরণ করেই জীবন জীবীকা নির্বাহ করেন। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অভয়াশ্রম এলাকায় মা ইলিশ শিকার করায় গত ২২ দিনে বিভিন্ন মেয়াধে ১৭৩ জনকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।