ইলিশ
ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা মানছেন না ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর জেলেরা
মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর অনেক জেলে পদ্মায় মাছ শিকার করছেন নিয়মিত। সময়মতো সরকারি সহায়তা না পাওয়া ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে নদীতে নামতে হচ্ছে বলে দাবি তাদের। তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
পদ্মা পাড়ে গিয়ে দেখে বোঝার উপায় নেই যে মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। বরং তার উল্টোটাই মনে হবে। এই সময়েও দুই জেলার পদ্মায় অর্ধশতাধিক পয়েন্টে অসংখ্য জেলে ইলিশ শিকার করছেন।
জেলেদের দাবি, সরকারি প্রণোদনা না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই জেল-জরিমানা উপেক্ষা করে নদীতে নামছেন তারা। তাদের অনেকের মৎস্য কার্ড থাকার পরও সরকারের সহায়তা পাননি।
আরও পড়ুন: যশোরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে শীতকালীন সবজি চারা, পোঁছে যাচ্ছে সারা দেশে
নাম প্রকাশে একাধিক জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকারের দেওয়া ২৫ কেজি চাল দিয়ে পরিবার নিয়ে চলাটা কষ্টকর হয়ে যায়। নৌকা ও জাল মেরামতের জন্য বিভিন্ন আড়ৎ ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন অনেকেই। এ সময় আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় জেলেরা ঋণের চাপে পড়েছেন, তাই বাধ্য হয়ে নদীতে যাচ্ছেন তারা।
৪৭ দিন আগে
ভরা মৌসুমেও খুলনায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ইলিশের দাম
মাছের রাজা ইলিশ, স্বাদে এই মাসের তুলনা মেলা ভার। তবে ভরা মৌসুমেও এবার সেভাবে ইলিশের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না খুলনার বাজারে, যা-ও আসছে তার দাম ক্রেতাদের নাাগলের বাইরে। গত বছরের তুলনায় এবার খুলনার বাজারগুলোতে ইলিশের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
ইলিশ ঘাট বলে পরিচিত ভৈরব নদের পাড়ের ৫ নম্বর ঘাট এবং রুপসা মাছ ঘাটে গত দুদিন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশের সরবরাহ নেই বললেই চলে। কেবল কিছু জাটকা ইলিশ এ সময় চোখে পড়ে।
ইলিশ মাছের আড়তদার সাঈদ আলী বলেন, আমার বাবা ও দাদা ইলিশ মাছের আড়তদার ছিলেন। প্রায় ৭০/৮০ বছরের ব্যবসা আমাদের। কিন্তু কখনো এ বছরের মতো ইলিশের আকাল পড়েনি। আমরা সাধারণত খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছেই ইলিশ বিক্রি করি, কিন্তু দামের কারণে তারা এখন অন্য মাছের ব্যবসা করছেন।
খুলনার নিউমার্কেটে কাঁচাবাজারের সামনে থেকে রিকশাচালক জালাল বলেন, ‘ইলিশ এখন শুধু বাজারের দোকানেই সাজানো দেখি, কিন্তু কিনে খাওয়া আর হয় না। দুই বছর আগে ছোট মেয়েটা বায়না ধরেছিল, তখন সাড়ে ৫০০ টাকা দিয়ে চারটা জাটকা ইলিশ কিনেছিলাম। এরপর আর কেনা হয়নি। এখন বাজারে যাই, শুধু দূর থেকে দেখি। যখন অন্যরা বাজার করে ফিরে যায়, তখন তাদের কাছে দাম শুনি; কেনা আর হয়ে ওঠে না।’
আরও পড়ুন: কিছুতেই নাগালে আসছে না সবজির দাম
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দিন রিকশা চালিয়ে যে কয়টা টাকা হাতে আসে, তা দিয়েই পাঁচজনের সংসার চালাতে হয়। ঘরভাড়া, বাজারঘাট, দুই মেয়ে আর ছেলের খরচ—সব মিলিয়ে মাস পার করতে কষ্ট হয়ে যায়। সেখানে ইলিশ মাছ কিনে খাওয়ার মতো বাড়তি পয়সা কই?’
নগরীর নিউমার্কেট ও ময়লাপোতা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ‘এক কেজির উপরে ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে, কেজির নিচে ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে এবং ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকা আর ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নিউমার্কেটে বাজার করতে আসা মাসুমা লিমা নামে এক নারী বলেন, ‘ভরা মৌসুমেও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে ইলিশের দাম। তাই সাধ থাকলেও এখনো মুখে তোলা হয়নি মাছটি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য হিসেবে সাধ্যের মধ্যে বাজার সামলানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নদীর একটু বড় ইলিশ বছরে এক-দুবার খেতে পারি। কিন্তু সেটাও আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। সিজনের (মৌসুম) সময়ও যদি এমন দাম থাকে, তাহলে আমরা খাবো কীভাবে? এখন ফেসবুকে ছবি দেখেই স্বাদ মেটাতে হচ্ছে।’
ইলিশের দাম বেশি হওয়ায় বাজারে ক্রেতাদের সাড়া মিলছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন: দাম কমেছে ইলিশের, উর্ধ্বমুখী সবজির বাজার
নিউমার্কেটের মাছ ব্যবসায়ী বাদশা মোড়ল বলেন, ‘এখনকার বাজারে মাছের যে দাম তাতে দোকানে মাছ তোলা আমাদের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্রেতারা আগের মতো আর আসেন না। সারা দিন বসে থেকেও হাতেগোনা কয়েকটি মাছ বিক্রি হয়। সেই টাকায় মাছ কেনার খরচ, দোকান পর্যন্ত আনা-নেওয়ার ভাড়া আর কর্মচারীর বেতন মিটিয়ে কিছুই হাতে থাকে না। অথচ আমাদের সংসার চলে মাছ বিক্রি করে। মৌসুমের সময়টাতেও আগের মতো লাভ হয় না, দুই-চারটা মাছ বিক্রি করেও তেমন লাভ থাকে না। এভাবে দিন চালানো কঠিন।’
আরেক মাছ ব্যবসায়ী প্রান্ত বলেন, ‘সারা দিনে পাঁচ-সাত জন ক্রেতা এলেও দুই-একজন দাম শুনে চলে যান। ফলে ইলিশের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অনেক সময় মাছ দুই থেকে চার দিনের বেশি দোকানে পড়ে থাকে, তখন বাধ্য হয়ে কেনা দামে বা তার চেয়ে কমে বিক্রি করতে হয়। সব মিলিয়ে এখন বাজারে ইলিশের ব্যবসা করা বেশ কষ্টকর।’
৯৩ দিন আগে
ইলিশের মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন
চাঁদপুরসহ দেশের অন্যান্য জেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও এর মূল্য ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরেই থেকে যায় বছরের অধিকাংশ সময়। তাই ইলিশের দাম নির্ধারণ এবং সিন্ডিকেটের কবল থেকে রক্ষা করে ইলিশের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শুধু তাই নয়, এটিকে আমলে নিয়ে প্রস্তাবটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করলে তিনি তা অনুমোদন করেছেন।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ইউএনবিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ শাখার স্মারকে গত ২৬জুন এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক চাঁদপুর ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের একান্ত সচিব বরাবর পাঠান জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মাহমুদ উল্লাহ মারুফ।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে পাওয়া জুন ২০২৫-এর পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন থেকে এটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সামনে উপস্থাপিত হয়।
আরও পড়ুন: ইলিশের দাম অস্বাভাবিকভাবে না বাড়াতে মৎস্য উপদেষ্টার নির্দেশ
সেখানে বলা হয়, জাতীয় সম্পদ ও মাছ চাঁদপুরের ইলিশের সুস্বাদের সুযোগ নিয়ে চাঁদপুর ও আশপাশের জেলার কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ও আড়তদার নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছেন, যা একেবারেই ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাইরে। চড়া মূল্যের কারণে জনসাধারণের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে ইলিশ।
যেহেতু ইলিশ চাঁদপুরসহ অন্যান্য জেলাতেও ধরা পড়ে, তাই কেবল চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইলিশের মূল্য নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হলে এর ফলপ্রসু প্রভাব বাজারে পড়বে না। চাঁদপুরের পাশাপাশি বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ আরও অনেক এলাকার নদী যেগুলো সাগর তীরবর্তী, সেখানে ইলিশ ধরা পড়ে।
চিঠিতে বলা হয়, নদী বা সাগরে ইলিশ উৎপাদনে জেলেদের কোনো উৎপাদন খরচ না থাকলেও ইলিশের মুল্য অসাধু, লোভী ব্যবসায়ী কিংবা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
যেহেতু ইলিশের উৎপাদন প্রাকৃতিকভাবে হয়, তাই ইলিশ আহরণ ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক ব্যয়ের প্রতি লক্ষ রেখে এর মূল্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। জাতীয় এই মাছের মূল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে।
ইলিশ সংক্রান্ত এই প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দিয়েছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে এর অগ্রগতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন ইউএনবিকে বলেন, ‘চাঁদপুরসহ দেশের ১০ থেকে ১২ জেলায় ইলিশ ধরা পড়ে এবং ক্রয়-বিক্রয় হয়। আমরা মনে করি, যদি চাঁদপুরে অংশীজনদের নিয়ে ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেই, তখন এই ইলিশ অন্য জেলায় গিয়ে বিক্রি হবে। এ কথা মাথায় রেখেই আমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি, ইলিশের বাজার মূল্য যাতে সিন্ডিকেটের খপ্পরে না পড়ে এবং উচ্চমূল্য না হয়। তা যেন সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের মধ্যে থাকে।’
১৫৬ দিন আগে
চুয়াডাঙ্গায় বৈশাখে ইলিশ বিক্রিতে ভাটা, হতাশ ব্যবসায়ীরা
পহেলা বৈশাখ মানেই বাঙালির উৎসব আর পান্তা-ইলিশ। প্রতিবছর নববর্ষ ঘিরে ইলিশের বাজার থাকে জমজমাট। কিন্তু এবার চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারে ছিল একেবারেই ভিন্ন চিত্র।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ বিক্রিতে নেই কোনো জোয়ার।
ব্যবসায়ীরা মাছ সাজিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতা ছিলেন হাতে গোনা। দাম তুলনামূলক কম হলেও ইলিশ বিক্রি হয়নি বললেই চলে— ফলে চরম হতাশায় ভুগছেন বিক্রেতারা।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের মাছ বাজারে দেখা যায়, মাত্র চারজন বিক্রেতা ইলিশ বিক্রির চেষ্টা করছেন। তাদের একজন বলেন, ‘অন্যান্য বছর পহেলা বৈশাখের দুই থেকে তিন দিন আগেই ইলিশের ব্যাপক চাহিদা থাকত। হুড়োহুড়ি লেগে যেত। এবার মানুষ আসছেই না, আগ্রহও নেই।’
বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশের দাম তুলনামূলকভাবে ক। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু এরপরও বিক্রিতে একেবারেই মন্দা।
একজন বিক্রেতা জানালেন, গত বছর এই সময়ে দিনে ২০ থেকে ৩০ কেজি বিক্রি হতো। এবার দিনে ৫ কেজিও বিক্রি হচ্ছে না। দাম কমিয়েও লাভ হচ্ছে না।
ইলিশ কিনতে আসা শাহারিয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাই। এবার বাজারে এসে দেখি মাছ কম, আর দাম বেশি। মাঝারি সাইজের ইলিশের দাম চাচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। পরিবারের অন্য খরচ সামলে ইলিশ কেনা কঠিন। তাছাড়া ইলিশের স্বাদ নিয়েও অভিযোগ আছে। আগের মতো সুস্বাদু না। একটিমাত্র মাছ কিনেছি ৬০০ টাকায়, বাচ্চারা খেতে চেয়েছে তাই।’
আরও পড়ুন: ১১ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি হবে সৌদি আরব ও আমিরাতে
মাছ ব্যবসায়ী সাহেব আলী বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে ইলিশ বিক্রি করি। এই সময়টায় ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এবার সেই চিত্র নেই। দাম কমিয়েও লাভ হচ্ছে না। কেউ বলছেন মাছের স্বাদ নেই, কেউ বলছেন দাম বেশি। বৈশাখে ইলিশ বিক্রি না হওয়ায় আমরা খুবই হতাশ।’
চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের নিচের অংশে বাজার করতে আসা শিউলি আক্তার নামের এক চাকরিজীবী নারী বলেন, ‘ছুটির দিনে বিশেষ রান্না করব বলে বাজারে এসেছি। তবে পান্তা-ইলিশে আমাদের পরিবারের তেমন আগ্রহ নেই। বাচ্চারাও খেতে চায় না, তাই আয়োজন করিনি।’
বিক্রেতারা বলছেন, চুয়াডাঙ্গায় এবারের বৈশাখে ইলিশ বিক্রির বাজার ছিল একেবারেই মলিন।
২৩৪ দিন আগে
এখনই ইলিশের কৃত্রিম প্রজননে যেতে চান না মৎস্য উপদেষ্টা
এখনই ইলিশের কৃত্রিম প্রজননে যেতে চান না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘যে ১১টা দেশে ইলিশ পাওয়া যায়, তারমধ্যে বাংলাদেশ প্রথম।’
শনিবার (১২ এপ্রিল) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনায় ‘ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রজনন সাফল্য নিরূপণ, জাটকা সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান মৎস্য উপদেষ্টার
উপদেষ্টা বলেন, ইলিশ বিশ্বের মধ্যে এমন একটি সম্পদ, যা বাংলাদেশে আছে। ইলিশের ব্যবস্থাপনা ঠিক মতো করতে পারলে বিশ্বের কাছে তা পরিচয় করিয়ে দেওয়া সম্ভব। তাই ইলিশকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে হবে।
ফরিদা আখতার বলেন, এখনই আমরা ইলিশের কৃত্রিম প্রজননের যেতে চাই না। কৃত্রিম প্রজনন আমাদের প্রাণিসম্পদের খুব বেশি উপকার করেনি। এটা আমাদের বুঝতে হবে। ইলিশ প্রকৃতি থেকে আসা একটা মাছ, এটা প্রাকৃতিকই রাখা ভালো। একই সঙ্গে জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে, তখন যেন দামটা ঠিক থাকে তা আমাদের দেখতে হবে।’
‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততার প্রভাবতো আছেই, সেইসঙ্গে বৃষ্টি হওয়া, না-হওয়ার সঙ্গে ইলিশের ডিম ছাড়ার একটা সম্পর্ক আছে,’ বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। তাহলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। আর ৯৫ শতাংশ জেলে যদি বন্ধের সময় ইলিশ না ধরেন, তাহলে বাকি কাজটা আমরা করতে পারবো না। জেলারা যেখানে মাছ ধরতে যান, সেখানে দস্যুরা আক্রমণ করে। তাদের চিহ্নিত করে ধরতে হবে। আমরা যে মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকি, তা যেন জেলেরাই পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
আরও পড়ুন: তরুণ প্রজন্ম হচ্ছে ‘পোল্ট্রি-ভাতে বাঙালি’: মৎস্য উপদেষ্টা
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন। গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ।
এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিএফআরআইয়ের গবেষক ও মৎস্যজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
২৩৬ দিন আগে
ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে পারলে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব: উপদেষ্টা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, বিদেশে ইলিশের চাহিদা অনেক। সেক্ষেত্রে জাটকা নিধন বন্ধ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি করা সম্ভব।
‘জাটকা ধরা বন্ধ হলে, ইলিশ উঠবে জাল ভরে’-এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে বরিশাল বেলস পার্কে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ইলিশের বাড়ি ভোলা আর বিভাগ বরিশাল। কেননা দেশে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৬৫.৮৮ শতাংশ বরিশাল বিভাগে উৎপাদিত হয়। বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলিশ উৎপাদিত হয় ভোলা জেলায়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ব্যাংক নামে একটি বিশেষায়িত ব্যাংক চালু করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা। বলেন, ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হলে জেলেরা সেখান থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারবে। জাটকা সংরক্ষণকালীন জেলেদের যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয় তা আগের চেয়ে বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এসময় তিনি আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের কার্যক্রম চলমান থাকবে উল্লেখ করে উপস্থিত সকলকে জাটকা নিধন বন্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান মৎস্য উপদেষ্টার
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন। অনুষ্ঠান শেষে একটি বর্ণাঢ্য নৌ- র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালিটি কীর্তনখোলা নদীর ডিসি ঘাট হতে শুরু হয়ে চরমোনাইতে গিয়ে শেষ হয়।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার থেকে দেশের ইলিশ সমৃদ্ধ ২০টি জেলা ঢাকা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট ও সিরাজগঞ্জে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৫ উদ্যাপিত হচ্ছে।
২৪০ দিন আগে
পহেলা বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান মৎস্য উপদেষ্টার
চলতি বছর পহেলা বৈশাখের সময় ইলিশ জাটকা অবস্থায় থাকবে, সে কারণে এ সময় ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
সোমবার (৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ- ২০২৫’ উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন এসব কথা জানান উপদেষ্টা। এ সময় জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এ বছর প্রাথমিকভাবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১১ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘ইলিশের জাটকা যেন নিরাপদে বাড়তে পারে, সেজন্য ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস দেশব্যাপী জাটকা ধরা, পরিবহন, মজুদ ও ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
ইলিশ সম্পদ রক্ষা ও উন্নয়নে জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সচেতনতামূলক প্রচারসহ নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: মুগ্ধকে নিয়ে কথা বললে গর্বে মাথা উঁচু হয়ে যায়: ফরিদা আখতার
উপদেষ্টা বলেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান অন্তরায় হচ্ছে কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জালসহ অন্যান্য অবৈধ জাল ব্যবহার। এসব জালের ব্যবহার বন্ধে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে বিশেষ চিরুনি তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ সময় পহেলা বৈশাখে পান্থা ইলিশে না খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে যে ইলিশ থাকবে, সেটি জাটকা ইলিশ হিসেবে গণ্য হবে। এটি না খাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।‘
এই উদ্যোগের আওতায় প্রতি বছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপনের বিষয়টি উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় নির্ধারণ করে মা ইলিশ আহরণের নিষিদ্ধ সময় ২২ দিন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দেশের ইলিশসমৃদ্ধ প্রধান প্রধান নদ-নদীতে ছয়টি ইলিশ অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে। এসব অভয়াশ্রমে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশসহ সব প্রকার মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মা ইলিশ এবং জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের জীবনধারণের জন্য প্রতিবছর ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নানা চাহিদামাফিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: শিল্প রক্ষা করতে হলে শিল্পীকে মর্যাদা দিতে হবে: ফরিদা আখতার
ইলিশসহ উপকলীয় অন্যান্য মৎস্য প্রজাতি ও জলজ জীব রক্ষায় ২০১৯ সালে নিঝুম দ্বীপ ও আশপাশের ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা (এমপিএ) ‘ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালা-২০২৩ এর ৩(১) বিধি অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সব ধরনের মাছ ও ক্রাস্টাশিয়ান্স (কাঁকড়া, চিংড়ি ইত্যাদি) নিষিদ্ধ থাকে। এতে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণ ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে বলে সরকারি তথ্যে জানা গেছে।
২৪১ দিন আগে
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ নিতে চায় চীন
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ‘রূপালি ইলিশ’ আমদানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠককালে তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এ সময় বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার ও বন্ধুত্বপ্রতীম দেশ। অধিক বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে কৃষি, পরিবহন, কৃষি-যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান উপদেষ্টা। বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান বিশাল। তিনি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি বৃদ্ধি এবং আমদানিকৃত পণ্যের ওপর সকল ধরণের শুল্ক হ্রাস করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সেখ বশির উদ্দিন বলেন, এ দেশে ট্রাক উৎপাদন কারখানা স্থাপন এবং কৃষির আধুনিকীকরণে বিনিয়োগ উভয় দেশের জন্যই সুফল বয়ে আনবে।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘৩০টি চীনা কোম্পানি চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।’
আরও পড়ুন: ১১ হাজার টন ইলিশ রপ্তানি হবে সৌদি আরব ও আমিরাতে
‘চীনে বাংলাদেশি ইলিশ মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইলিশ মাছ রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সুযোগ রয়েছে।’
এ সময় প্রাথমিকভাবে ১ হাজার টন ইলিশ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, চীন বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করতে এবং বাংলাদেশে এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
২৮০ দিন আগে
সামুদ্রিক জলসীমায় ৫৮ দিন ইলিশ ও অন্যান্য মাছ ধরা নিষিদ্ধ
বঙ্গোপসাগরে সকল ধরনের মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখার বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে সকল ধরনের মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে আসন্ন রমজান মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম এবং বিগত ৬ মাসে মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘সামুদ্রিক জলসীমায়ও ইলিশ ও অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য আহরণের ওপর প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সকল প্রকার মৎস্য নৌযান দিয়ে যেকোনো প্রকার মৎস্য ও চিংড়ি, কাঁকড়া, লবস্টার ইত্যাদি (ক্রাস্টাশিয়ান্স) আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণ ১২.৭৮ শতাংশ বৃদ্ধির রেকর্ড রয়েছে।
কিন্তু এই সময়কাল পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সমন্বয় না থাকায় বাংলাদেশের মাছ আহরণে পার্শ্ববর্তী দেশের মৎস্যজীবীরা সুযোগ নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাই মৎস্য আহরণকারী সংগঠন এবং মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ব্যানড পিরিয়ড সমন্বয় করার দাবি উত্থাপিত হয়ে আসছে।’
আরও পড়ুন: মাংস-ডিম আমদানিতে নিরুৎসাহিত করলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
উপদেষ্টা বলেন, ‘তারই পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও অন্যান্য অংশীজন এবং মৎস্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। কারিগরি কমিটি সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের স্থায়িত্বশীল আহরণ ও স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বঙ্গোপসাগরে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ মাছের ব্রিডিং পিরিয়ড এপ্রিল থেকে জুন মাস হওয়ায় ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এখন থেকে সামুদ্রিক জলসীমায় ইলিশ ও অন্যান্য মাছের আহরণের নিষিদ্ধ কাল হচ্ছে ৫৮ দিন (১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন)।
এছাড়া হাওরে দেশীয় মাছ সংরক্ষণে জন্য ১৫ মে হতে ১৪ জুন পর্যন্ত হাওরে পানি আসার পরিপ্রেক্ষিতে ২০ দিন বা সর্বোচ্চ ১ মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধকরণ বিষয়ে মতামত দেয়া হয়েছে।
২৯০ দিন আগে
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজবাড়ীতে চলছে ইলিশ শিকার
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজবাড়ীতে ইলিশ শিকার করছে এক শ্রেণির অসাধু জেলে ও সৌখিন মৎস্য শিকারিরা। রাজবাড়ীর ৪২ কিলোমিটার পদ্মা নদীর অংশে জেলা টাস্কফোর্স কমিটি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও তাদের আড়ালে মাছ ধরছে জেলেরা। রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধাওয়াপাড়া থেকে গোয়ালন্দ উপজেলার বাহির চর দৌলতদিয়া পর্যন্ত পদ্মা নদীর পাড়েই প্রকাশ্যে এসব ইলিশ বিক্রি চলছে।
মা মাছ রক্ষায় ও মাছের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এ সময় মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাড়তি লাভের আশায় ইলিশ শিকার করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পদ্মা নদীর পাড় থেকে তারা ইলিশ কিনে গ্রাম ঘুরে বিক্রি করছেন। আবার অনেকে ‘হোম ডেলিভারি’ও দিচ্ছেন।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সদর উপজেলার উড়াকান্দা, বরাট অন্তারমোড়, গোয়ালন্দের দেবগ্রামের তেনাপচা ও দৌলতদিয়া কলাবাগান এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে ইলিশ শিকার ও বিক্রির সত্যতা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে ২০০ কেজি ইলিশ জব্দসহ ২২ জেলে আটক
সদর উপজেলার বরাট ইউপির অন্তারমোড়ে দেখা যায়, নদীতে অসংখ্য জেলে নৌকায় মাছ শিকার করছেন। এর এক কিলোমিটার দূরে দেব গ্রামের তেনাপচায় নদীর পাড়ে দেখা যায় ব্যবসায়ীদের ভিড়। নদী থেকে মাছ নিয়ে জেলেরা আসলেই ক্রেতা, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। প্রতিটি নৌকায় ১০ থেকে ৩০ কেজি করে ইলিশ দেখা যায়।
দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকায় পদ্মা নদীতে নৌকা দেখা না গেলেও ঘাট থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার ভাটিতে বাহির চর কলাবাগান এলাকায় সারি সারি নৌকা দেখা যায়। নদী থেকে মাছ ধরে জেলেরা কলাবাগান এলাকার নালায় গিয়ে বিক্রি করছে।
স্থানীয়রা জানায়, ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ইলিশ এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কেজি প্রতি ১০০ গ্রাম করে তারা বাড়তি ছাড় পাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা গ্রাম ঘুরে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন।
দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমরান মাহমুদ তুহিন বলেন, ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে মৎস্য বিভাগকে সহযোগিতা করছেন। প্রকাশ্যে ইলিশ শিকার ও বিক্রির বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব বলেন, ৪২ কিলোমিটার পদ্মা নদীপথের মধ্যে ধাওয়া পাড়া থেকে বাহির চর দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। জনবল স্বল্পতার কারণে এতবড় এলাকায় অভিযান চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সকালে, দুপুরে ও সন্ধ্যার পর পৃথক ভাগ করে অভিযান চালানো হচ্ছে।
একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত আসা যাওয়ার ফাঁকে জেলেরা নেমে পড়েন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, অভিযান চালাতে সরকারিভাবে ২২ দিনের জন্য মাত্র ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ মিলেছে। অথচ এই অভিযানে প্রতিদিন শুধুমাত্র ট্রলারভাড়া, জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচ মিলে ১০ হাজার টাকার বেশি লাগছে। পাশাপাশি নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার না থাকায় অভিযানকালে ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়।
এসব সমস্যা সমাধান হলে ২৪ ঘণ্টা নির্বিঘ্নে অভিযান চালানো সম্ভব বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তা।
ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ইলিশ শিকার, আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় এবং বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অমান্য করলে কমপক্ষে এক থেকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড রয়েছে।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইলিশ ধরায় ৯ জেলের কারাদণ্ড
৪০৭ দিন আগে