লিঙ্গভিত্তিক প্রচলিত ধ্যানধারণা ও সামাজিক বিধিনিষেধ জয় করা বাংলাদেশি কিশোরীদের একটি ফুটবল দলকে নিয়ে নির্মিত বহু-প্রত্যাশিত সিরিজ নাটক ‘ইচ্ছে ডানা’ আবারও ছোট পর্দায় ফিরছে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে।
নাটকটির তৃতীয় সিজনে তানজিলা, মেয়েদের নিয়ে গঠিত তার ফুটবল দল এবং তাদের কমিউনিটির গল্প থাকছে। যেখানে বাল্য বিয়ে এড়াতে এবং নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে তাদের নিজেদের পথ তৈরি করে নিতে দেখা যাবে। ‘ইচ্ছে ডানা’ নাটকটি যৌথভাবে নির্মাণ করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইউনিসেফ।
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, ‘বাংলাদেশের মেয়ে ও নারীদের সমাজে অবদান রাখার মতো অনেক কিছু আছে। তা সত্ত্বেও বৈষম্য ও সমাজের ক্ষতিকর চর্চার কারণে তারা পিছিয়ে পড়ছে। ইচ্ছে ডানা সমাজের ইতিবাচক চর্চাগুলোকে তুলে ধরে এবং কিশোরী মেয়েদের উন্নতি করতে এবং তাদেরকে জীবনে পূর্ণ অংশগ্রহণে উৎসাহিত করে। বাল্যবিয়ে বন্ধ করা এবং লিঙ্গ সমতা বাস্তবে পরিণত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ইচ্ছে ডানায় কাল্পনিক গ্রাম হাতমাথালির কিশোরী মেয়েরা বাল্যবিয়ের চাপ কাটিয়ে ওঠে, যৌন হয়রানির মোকাবিলা করে এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে তাদের মাসিক ব্যবস্থাপনার উপায় খুঁজে বের করে।
আরও পড়ুন:ফের আলেচনায় ব্রিটিশ রাজা চার্লসকে পদ্মিনীর চুমু
তৃতীয় সিজনের গল্পে মানসিক স্বাস্থ্য, উৎপীড়ন বা হয়রানিমূলক আচরণ এবং কিশোর-কিশোরীদের ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবকে তুলে ধরা হয়েছে।
সিরিজটি মেয়েদের শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা এবং তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে এমন নীতিমালার বিষয়ে কথা বলতে তাদের উৎসাহিত করার গুরুত্বও তুলে ধরে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মি. শেলডন ইয়েট বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক মেয়ে ও নারী নেতিবাচক সামাজিক রীতিনীতির কারণে বৈষম্য, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়। তবে পরিবর্তন সম্ভব। ইচ্ছে ডানা হল মেয়েরা যা অর্জন করতে পারে তার একটি উদযাপন এবং লিঙ্গ সমতার লড়াইয়ে যোগদানের জন্য প্রত্যেকের প্রতি একটি আহ্বান।’
বাংলাদেশের মেয়েরা তাদের মধ্যে থাকা সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। এদেশের ৫১ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়ে যায় তাদের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে। বিবাহিত মেয়েদের স্কুলে না যাওয়ার আশঙ্কা অবিবাহিত মেয়েদের তুলনায় চারগুণ, যা তাদের স্বাস্থ্য, সার্বিক মঙ্গল, শিক্ষা ও কর্মজীবনের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শিশু বধূরা ঘরে সহিংসতার শিকার হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে থাকে এবং তাদের সন্তানদের ভালভাবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনাও কমে যায়।
তানজিলা চরিত্রে অভিনয়কারী অভিনেত্রী প্রিয়াম অর্চি বলেন, ‘বাংলাদেশের মেয়েরা যাতে নিজেরদের সঙ্গে সহজে মেলাতে পারে এমন একটি ইতিবাচক রোল মডেল থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তানজিলা দেখায় যে পরিবর্তন আনা সম্ভব এবং প্রতিকূলতা কাটিয়ে সম্মান ও সমমর্যাদা আদায় করা সম্ভব, বিশেষ করে যদি আমরা একত্রিত হই এবং একে অপরকে সমর্থন করি ও উৎসাহ দেই।’
চার্জারের ভূমিকায় অভিনয়কারী আরোশ খান বলেন, ‘মেয়ে ও ছেলেদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয় বা আমাদের যে সুযোগ দেয়া হয়, তাতে কোনও পার্থক্য থাকা উচিত নয়। ইচ্ছে ডানা দেখায় যে, মেয়েদের ক্ষমতায়ন ছেলেদের জন্যও ভালো–পরস্পরকে সহায়তা করার মাধ্যমে আমরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে মিত্রে পরিণত হই।’
আরও পড়ুন:ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে ৯০ শতাংশ বিদেশি শিল্পীই ‘অবৈধ অভিবাসী’