‘নিজের নামে জমি, নিজের ঘর। এ আনন্দ বলে বুঝানো যাবে না। আমরা আর ভিক্ষা করতে চাই না। কর্ম করে বাঁচতে চাই। ঘরতো হলো, মাথাগুজার ঠাঁই হলো। এখন আমরা যাতে আয়-উপার্জন করতে পারি, নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারি, সেই সুযোগ চাই।’ জমি সহ ঘর পেয়ে খুশিতে কথাগুলো বললেন তানিয়া হিজড়া।
শেরপুরে ৭ জুন সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর মৌজার আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় ২ একর ওপর ওপর নির্মিত তৃতীয় লিঙ্গ হিজড়া জনগোষ্ঠীর ৪০ জনের মাঝে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব প্রধান অতিথি হিসেবে এসব ঘর হস্তান্তর করেন। এসব হিজড়াদের জন্য ঘরের আসবাবপত্র, রান্নাবান্নার থালা-বাসন, খাদ্যসমাগ্রী সহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদান করা হয়।
এছাড়া আবাসন প্রকল্পে সবজি আবাদের জন্য সবজি বীজ, পুকুরে মৎস্য অবমুক্ত করণ করা হয় এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার পক্ষ থেকে প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকা করে আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ঋণ প্রদান করা হয়।
ভিক্ষাবৃত্তি ও চাঁদাবাজি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন এখন শেরপুরে বসবাসরত তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মানুষের। কম্পিউটার, শেলাই, পার্লারের কাজসহ নানা প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করতে চান তারা।
মূল জনশক্তিতে এগিয়ে আসার জন্য তাদের আগ্রহকে প্রাধান্য দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ‘স্বপ্নের ঠিাকানা’ আবাসন প্রকল্প। এই আবাসন প্রকল্পে ৪০ জনের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন ঘরের চাবি। সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কবিরপুর মৌজাধীন আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় ২ একর সরকারি খাসজমিতে নির্মিত হয়েছে এই স্বপ্নের ঠিকানা।
শেরপুর সদর উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, দুই একর জায়গায় ৬৯ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই আবাসন প্রকল্পে বসবাসকারি হিজড়াদের আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য থাকছে প্রায় ৪০ শতক জমির ওপর একটি পুকুর, শাক-সবজি, ফসল আবাদের জন্য রাখা হয়েছে খোলা জায়গা, আত্মকর্ম প্রশিক্ষণের জন্য নির্মিত হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস কক্ষ। গুচ্ছগ্রামের সাথেই রয়েছে ৮ একরের বড় একটি সরকারি খাস বিল। সেই বিলটিও খনন করে মৎস্য চাষের জন্য হিজড়াদের দেয়ার প্রক্রিয়া চলেছে। গুচ্ছগ্রামে নির্মিত প্রতিটি ঘরের সাথেই রয়েছে রান্নাঘর ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা।
শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকার গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করায় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একইসাথে তারা হিজড়াদের বিষয়গুলো জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটির প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মাঝে যুবলীগের ঈদ উপহার
এসময় তিনি বলেন, গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে আমাদের বাসস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এখন আমাদের কর্মসংস্থানের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ভিক্ষাবৃত্তি চাই না, চাঁদাবাজি করে জীবন চালাতে চাই না। আমরা মানুষের মতো বাঁচতে চাই। কর্ম করে খেতে চাই।