নিম্নচাপের প্রভাবে কুষ্টিয়াতে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। রবিবার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টায় ২৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি বছরে ও গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড বলে জানিয়েছেন কুমারখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক মো. আল আমিন।
এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় বিপাকে শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবী, খামারিসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। জলাবদ্ধতায় ডুবেছে কৃষকের ফসল। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ভেঙে পড়েছে বেশকিছু ঘরবাড়ি ও গাছপালা।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল, আদালত চত্বর, টিএন্ডটি অফিস, শহরের কোর্টপাড়া, পেয়ারাতলা, ঈদগাঁপাড়া, কালিশঙ্করপুর, গোরস্থান পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কে হাঁটু পানি জমেছে। অনেক জায়গায় ঘর-বাড়িতে পানি উঠে গেছে।
কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, চাঁদপুর, সদকী ও জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও কুমারখালী পৌর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় হাঁটু পানি জমেছে।
আরও পড়ুন: টানা চারদিনের বৃষ্টিপাতে মেহেরপুরে ফসলের মাঠ পানির নিচে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ
উপজেলার সদকী ইউনিয়নের গড়েরমাঠ এলাকায় প্রায় ২২ বিঘা জমির পুকুরে মাছ এবং পুকুরপাড়ে সবজি চাষাবাদ করেছিলেন খামারি সুজন আলী পলাশ।
তিনি বলেন, মাস দুই পরেই প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ বিক্রির প্রত্যাশা ছিল তার। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পুকুর ভেসে গেছে। লাউ ও ঝিঙেসহ অন্যান্য সবজি নষ্ট হয়েছে। মাছ ও সবজিতে তার প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
যদুবয়রা পশুহাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. আব্দুল গনি বলেন, ভারী বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ার কারণে গত রবিবার হাটে মাত্র দুটি গরু এসেছিল। তাও বিক্রি হয়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় ৫০ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৩০ হেক্টর মাসকলাই, ৬০ হেক্টর সবজি ও ৬০ হেক্টর জমির কলা খেতের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ভারী বৃষ্টির কারণে কিছু গাছপালা ও ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। তবে বিভিন্ন ফসলের মাঠে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তা নিরসনের চেষ্টা চলছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মো. আল আমিন বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে গত শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি গত শনিবার বিকালে রূপ নেয় ভারী বৃষ্টিপাতে। পরে ওইদিন মধ্যরাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত দমকা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। ২৪ ঘণ্টায় ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষক আল আমিন বলেন, এর আগে ২০১৮ সালে ৭৯ মিলিমিটার, ২০১৯ সালে ৪৪, ২০২০ সালে ৪৯, ২০২১ সালে ১০৫, ২০২২ সালে ৬৪ ও ২০২৩ সালে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
তবে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে মেঘলা আকাশ ভেদ করে সূর্য উঁকি দেওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছেন কুষ্টিয়াবাসী।
আরও পড়ুন: সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর