তিনি রবিবার সন্ধ্যার আগে সালমা বেগমকে শরবত খাইয়ে অনশন ভাঙান।
রায়হানের মাকে আশ্বস্ত করে মেয়র আরিফ বলেন, ‘রায়হান হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আমি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলব। তারপরও অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার না হলে সিলেটবাসীকে সাথে নিয়ে আমিও বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’
এ সময় সালমা বেগম বলেন, ‘আমি আর আশ্বাস শুনতে চাই না। এখন উদ্যোগ দেখতে চাই। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার চাই।’
এর আগে, রবিবার সকালে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে সালমা বেগমসহ তার পরিবারের সদস্যরা অনশন শুরু করেন। অনশনে সংহিত জানিয়ে অনেকেই এতে অংশ নেন। রায়হান হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াসহ অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন বলে সে সময় জানিয়েছিলেন সালমা বেগম।
মাথায় সাদা কাপড় পরে অনশনে অংশ নেন রায়হানের পরিবারের সদস্যরা। অনশনকারীদের হাতে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন ফেস্টুন দেখা যায়।
গত ১১ অক্টোবর রায়হানের মৃত্যুর পর থেকেই পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে টানা বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হচ্ছে। ছেলের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন মা সালমা বেগম। তাতেও কাজ না হওয়ায় আজ অনশন শুরু করেন তিনি।
সিলেট নগরীর নেহারিপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হানকে গত ১০ অক্টোবর রাতে ধরে এনে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ওসমানী মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান।
পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে প্রচার করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান।
তবে ওই দিন বিকালে পরিবারের বক্তব্য পাওয়ার পর ঘটনা মোড় নিতে থাকে অন্যদিকে।
পরিবার দাবি করে, বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে মারা যান রায়হান। এ ঘটনায় রাতেই পুলিশকে অভিযুক্ত করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।
পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট মহানগর পুলিশ।
এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। ওই তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটুচন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনমুখর হয়ে পরে সিলেট। সিলেট মহানগর পুলিশকে নিয়ে সমালোচনার শুরু হয়। এ সমালোচনার মুখে ২২ অক্টোবর মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা।
মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাশ ও হারুনুর রশিদকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। অন্যদিকে, এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত আকবর হোসেন ভূইয়া ১২ অক্টোবর থেকে পলাতক আছেন।
রায়হান স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।