দীর্ঘ ছয়টি বছর ধরে ঘরের বাইরে পা পড়েনি তাঁর। চার দেয়ালের ভেতরেই থমকে আছে বস্ত্রহীন জীবন। বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন তিনি। বন্ধ ঘরের জানালা দিয়ে খাবার দেয়া হয়।
মাঝে মধ্যে গোসল ও শৌচকর্মও ঘরেই করতে হয়। এ অবস্থায় বন্দি জীবনের দুর্বিষহ দিন কাটছে মানসিক প্রতিবন্ধী যুবক অর্জুন দাস বেনু’র (৩২)। তিনি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের স্বর্গীয় রানু দাসের ছেলে।
আরও পড়ুন: সিলেটে শিশুসহ তিন নাইজেরিয়ান নাগরিক আটক
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাইরে থেকে বন্ধ ঘরের একটি খালি কাঠের চৌকিতে বিবস্ত্র শুয়ে আছেন বেনু। জানালা দিয়ে ডাকলে উঠে বসে সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতোই কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত অন্য গ্রামের জনৈক আগন্তুককে উদ্দেশ্য করে বলছিল নানা কথা।
আগন্তুক জানালেন বেনুর স্কুল জীবনের সহপাঠী তিনি। দীর্ঘদিন পর তাকে দেখতে এসেছেন। বেনু তখন নাম ধরে ধরে একে একে তার সকল সহপাঠীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন। তোমার এ অবস্থা কেন? জানতে চাইলে নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকেন।
বেনু’র বড়ভাই ঝুনু দাস জানান, খুবই মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল বেনু। এসএসসিতে অকৃতকার্য হবার পর অর্থাভাবে পড়ালেখা বাদ দিয়ে স্থানীয় বাজারে বেশ কিছুদিন টং দোকান দেয়। পরে ২০০৬ সালে হঠাৎই একটু মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তাঁর। এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে পেটের পীড়া দেখা দিলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে তাঁর লিভার অপারেশন করানো হয়। অবস্থা জটিল হওয়ায় তিন মাস হাসপাতালেই কাটাতে হয়। এক মাস রাখা হয় আইসিউতে। পরে বাড়িতে নিয়ে আসার তিন মাস পর ক্ষতস্থান শুকায় তার। এতে ৫-৬ লাখ টাকা খরচ হয়।
তিনি জানান, অভাবের সংসারে জায়গা বিক্রি ও ধার-দেনা করে এ টাকা ব্যয় করেন বাবা। তিনি মারা যাবার পর এখনও আমরা সেই ঋণের বোঝা টানছি। মূলত ভুল চিকিৎসার কারণে এমনটি হয়েছে।
ঝুনু দাস আরও জানান, নিয়মিত ওষুধ দিতে না পারায় আরও অস্বাভাবিক আরচণ, গালমন্দ ও যাকে-তাকে মারতে তেড়ে যাওয়ার কারণে এক কথায় নিরূপায় হয়ে তাকে ঘরবন্দি রাখা হয়েছে।
ভালো চিকিৎসা ও নিয়মিত ওষুধ দিতে পারলে হয়তো আগের মতো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারবেন বলে ঝুনু দাস জানান।
আরও পড়ুন: সিলেটে জোড়া খুন: ‘গৃহকর্মীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন শিক্ষিকা!’
এ বিষয়ে বিশ্বনাথ পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন চন্দ্র দাস জানান, চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষের প্রয়োজন পরিবারের সমর্থন ও অফুরন্ত ভালোবাসা। বিস্তারিত জেনে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।