প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুন্দরবনের পশ্চিম ও পূর্ব এই দুই বিভাগে কাঁকড়া ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এতে কাঁকড়া-শিকারিরা জীবিকার সংকটে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময়ে সরকারি সহায়তা দরকার বলে জানিয়েছেন তারা।
পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন সাতক্ষীরা রেঞ্জে নদ-নদীতে বুধবার (১ জানুয়ারি) থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
এর ফলে বন বিভাগের পক্ষ থেকে কাঁকড়া আহরণের পাস (অনুমতিপত্র) বন্ধ রাখায় গহিন বনাঞ্চল থেকে লোকালয়ে ফিরেছেন সংশ্লিষ্ট জেলেরা।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার। যা সুন্দরবনের আয়তনের প্রায় ৩১ ভাগ। সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। তাই ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বন বিভাগ।
কাঁকড়া ধরার জেলে আবুল হোসেন বলেন, ‘দুই মাসের নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের চলতে কষ্ট হয়। কাঁকড়া ধরে বিক্রি করেই তাদের চলে সংসার। এ সময় সরকারি সহায়তা খুবই দরকার হয়।’
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিস সূত্র জানায়, বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের আওতায় ২ হাজার ৯০০টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র আছে। এর মধ্যে কাঁকড়া ধরার অনুমতিপত্র আছে ১ হাজার ৬০০ টির। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকাকালীন কোনো জেলে কাঁকড়া ধরার জন্য বনে প্রবেশ করতে পারবে না।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা
সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) জিয়াউর রহমান জানান, সাতক্ষীরা রেঞ্জে বিভিন্ন নদ-নদীতে শীলা প্রজাতির কাঁকড়া বেশি পাওয়া যায়। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি প্রজনন মৌসুমে সাগর থেকে কাঁকড়ারা নদ-নদীতে উঠে আসে ও ডিম পাড়ে। এ সময় ক্ষুধার্ত থাকে বলে এদের ধরা খুবই সহজ হয়। যদি এ সময় কাঁকড়া শিকার না করা হয়, তাহলে পরের বছর বেশি কাঁকড়া উৎপাদন সম্ভব। সে কারণে প্রজনন বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দুই মাস কাঁকড়া আহরণ বন্ধ থাকবে। কাঁকড়া প্রজনন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে টহলও জোরদার করা হবে।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘কাঁকড়া বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার। কাঁকড়া প্রজনন বৃদ্ধি করার জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’
এছাড়া জেলেদের কাঁকড়া আহরণ না করার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক।