দুই মাসের নিষেধাজ্ঞ শেষে আবারও শুরু হয়েছে কাঁকড়া আহরণের জন্য বন বিভাগ থেকে ‘পাস-পারমিট’ প্রদান। তাই দীর্ঘ সময় অলস বসে থাকার পর সুন্দরবনে নদী ও খালে কাঁকড়া আহরণের জন্য সরঞ্জম নিয়ে ছুটছেন জেলেরা।
শুক্রবার থেকে সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ শুরু হলেও আহরণের নৌকা ও মালামাল সংগ্রহ করতে ও প্রস্তুতি নিতে দেরি হওয়ায় আজ রবিবার (৩ মার্চ) সকালে ভাটিতে বনের গহীনে প্রবেশ করতে শুরু করেছে মোংলা, রামপাল, দাকোপসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা।
পূর্ব সুন্দরবন চাঁদপাই রেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার। যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। জলভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫০টি নদ-নদী ও খাল আছে। এসব খালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছাড়াও ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া রয়েছে।
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ৫৯ দিনের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া ধরার অনুমতি বন্ধ রাখে বন বিভাগ।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরায় নিষেধাজ্ঞা
করমজল বন্যপ্রাণী ও ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, সুন্দরবনের মধ্যে অভয়ারণ্য ঘোষিত ৩০টি খাল এবং ২৫ ফুটের কম প্রশস্ত খালে সারা বছরই কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ থাকে। বাকি অংশের নদী ও খালে বন বিভাগের বৈধ পাস-পারমিটধারী প্রায় ১৫ হাজার জেলে শুধু কাঁকড়া আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
১৯৯৮ সালে কাঁকড়া রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়নের পর থেকেই প্রতিবছর দুই মাস কাঁকড়া ধরার পাস-পারমিট বন্ধ রাখা হয় বলে জানান তিনি।
কাঁকড়া আহরণকারী মোংলার জয়মনি এলাকার আনিছুর রহমান জানান, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল কোনো লোক সুন্দরবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁকড়া ধরতে যান না। যারা যান, তারা প্রায় সবাই দরিদ্র। দুই মাস নিষেধাজ্ঞা চলাকালে দরিদ্র জেলেদের চরম দুর্দিন গেছে। বন্ধের দিনগুলোয় সরকারি কোনো ভাতার ব্যবস্থা না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়েছে তাদের। শুক্রবার সকালে কাঁকড়া ধরার অনুমতি পেয়ে তারা আশার আলো দেখছেন।
একই এলাকার ছগির মোল্লা জানান, ‘সংসারে সাতজন সদস্য। সুন্দরবনে একদিন না গেলে তার চুলা জ্বলে না। দুই মাসের কাঁকড়া আহরণ বন্ধে দিনমজুরি করে কোনোমতে সংসার চালিয়েছি। মহাজনের কাছ থেকেও ধার নিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।’
আরও পড়ুন: বন্যায় ভেসে গেছে ৮ কোটি টাকার মাছ-চিংড়ি-কাঁকড়া
জেলেদের অভিযোগ, বনবিভাগ যে উদ্দেশ্যে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তা সফল হয়নি। কারণ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও গোপনে অসাধু লোকজনের সঙ্গে আঁতাত করে কাঁকড়া আহরণ করা হয়েছে এর বহু প্রমাণ রয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে বলেন, কাঁকড়ার বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুন্দরবনে বিভিন্ন নদী-খালে দুই মাস জেলেদের কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ ছিল। ২ মার্চ থেকে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে জেলেরা প্রবেশ নিষিদ্ধ অভয়াশ্রম ছাড়া অন্য নদী-খালে কাঁকড়া আহরণ করতে পারবেন। তবে কেউ যাতে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার অনুমতি নিয়ে বেআইনি কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে না পারে, সেজন্য বনরক্ষীদের স্মার্ট পেট্রোলিং টহল ও অন্যান্য কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ইঞ্জিনচালিত কোনো নৌকা বা ট্রলার কাঁকড়া পরিবহনের ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
শুধু পরিবহন করতে পারবে যে নৌকায় কাঁকড়া আহরণ করে সেই নৌকায়। আর এ ব্যতিত ট্রলার যোগে পরিবহন করছে যদি এ রকম কাউকে পাওয়া বা এর সঙ্গে বন রক্ষীদের কেউ জড়িত থাকে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান বন বিভাগের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় কাঁকড়া ধরায় ২৪ জেলে আটক