রাজস্ব আদায় বাড়াতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি শুল্ক স্টেশনের আধুনিকায়নে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যা গত মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়।
শুল্কস্টেশন তিনটি হচ্ছে-সিলেটের তামাবিল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া।
৩১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় কাস্টমসের অবকাঠামো তৈরি ও শুল্কায়ন প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করা হবে।
আরও পড়ুন: সিলেট-তামাবিল সড়ক সংস্কারে অনিয়ম, ঢালাইয়ের পরদিনই ফাটল
এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শুল্কস্টেশনগুলো রাজস্ব আদায়ের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এগুলোর অবকাঠামো খুবই দুর্বল। এ ছাড়া জনবলের ঘাটতি রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ শুল্ক স্টেশনের জন্য যা দরকার এসব শুল্ক স্টেশনে তা নেই। অথচ বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড দিন দিন বাড়ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এসব শুল্কস্টেশন দিয়ে পণ্য আনা-নেয়া সহজ হবে। এতে করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের গতি বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে রাজস্ব আদায়।’
বর্তমানে এনবিআরের অধীনে সারা দেশে ৫০টি শুল্ক স্টেশন সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকেরই দুর্বল অবকাঠামো।
এনবিআর সূত্র বলেছে, তিনটি শুল্ক স্টেশনের আধুনিকায়নের পর অন্যগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় যে সব কাজ হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কাস্টমস অফিসের ভবন নির্মাণ, কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন স্থাপন, আধুনিক ল্যাব তৈরি ও কম্পিউটার ক্রয় ইত্যাদি।
বর্তমানে এসব শুল্ক স্টেশনে ম্যানুয়াল বা প্রচলিত প্রথায় পণ্যের শুল্কায়ন নিরূপণ করা হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন হবে। এতে করে পণ্য দ্রুত খালাস হবে। সহজ হবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।
বর্তমানে সারা দেশে কাস্টমসের শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়, এর ৩০ ভাগ এই তিনটি স্টেশনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, আধুনিকায়নের কাজ শেষ হলে বাণিজ্যক কর্মকাণ্ড কমপক্ষে ২০ ভাগ বাড়বে।
ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়সহ ৭টি রাজ্যে প্রবেশের অন্যতম দ্বার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া শুল্কস্টেশন। ১৯৯৪ সালে চালু হয় এটি। এই স্থলবন্দর দিয়ে মাছ, পাথর, সিমেন্ট, ইট, বালি, শুঁটকি, প্লাস্টিকসামগ্রী, তুলাসহ প্রায় ৪২টি বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে তামাবিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শুল্কস্টেশন হলেও দুর্বল অবকাঠামো ও স্বল্প লোকবল দিয়ে এটি চলছে। এটিকে পূর্ণাঙ্গ শুল্কস্টেশনে উন্নীত করা হলে রাজস্ব আদায় বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ হবে। গত অর্থবছরে তামাবিল শুল্ক স্টেশন থেকে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ হয়। এই শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে পাথর ও কয়লা বেশি আসে।
এ ছাড়া সোনামসজিদ দিয়ে পাথর, চাল, পেঁয়াজ, শুঁটকি, ভুট্টাসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করা হয়। এর মধ্যে বেশি আসে পাথর। এই শুল্কস্টেশন থেকে মাসে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ হয়।
আরও পড়ুন: তামাবিল দিয়ে দেশে ফিরলেন ন্যাপ সভাপতিসহ ১০ বাংলাদেশি