দাতা সংস্থা ব্যুরো অব হিউম্যানিট্যারিয়ান অ্যাসিস্টেন্সের (বিএইচএ) সহযোগিতায় মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে শুক্র ও শনিবার অনুষ্ঠিত এই প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন মহেশখালী সংসদীয় আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক।
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার-মহেশখালী সমুদ্রপথটি ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সমুদ্র সুরক্ষায় আমাদের নৌ-চালকদের সংবেদনশীল করার এই উদ্যোগের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আইওএম মহেশখালীর নানামুখী উন্নয়নে ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতায় কাজ করছে। আমরা আশা করছি এই প্রত্যন্ত দ্বীপের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও নানা জরুরি ক্ষেত্রে এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুন : কক্সবাজারে স্থানীয়দের জন্য নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করল আইওএম
কক্সবাজার-মহেশখালী এই অঞ্চলের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। স্থানীয়েদের পাশাপাশি পর্যটক ও উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা প্রতিনিয়ত এই রুট ব্যবহার করে মহেশখালী ভ্রমণ করেন।
অন্যদিকে কক্সবাজারের মূল ভূখণ্ডের মতই মহেশখালী দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এই দ্বীপের প্রায় তিন লাখ বসবাসকারীদের মধ্যে এক লাখ বাসিন্দাই এই ঝুঁকিতে বসবাস করছে।
মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহফুজুর রহমান আইওএম’র এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ‘মহেশখালীতে আইওএম’র প্রতিনিয়ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অজানা নয়। এই ধরনের সহযোগিতার ফলে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা উপকৃত হচ্ছে। তারা বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় দুর্যোগজনিত ঝুঁকি হ্রাসে সক্ষমতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকে উপকৃত হয়েছে এবং কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা সামগ্রীর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল এবং আইওএম এগুলোও আমাদের সরবরাহ করেছে।’
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র চালু করল আইওএম
উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং উপকূলরক্ষীরাও প্রশিক্ষণে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। প্রশিক্ষণটিতে দুটি ব্যাচে প্রতিদিন ১০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত থাকছে। পাশাপাশি মহেশখালীর উপজেলা ও ইউনিয়ন ডিএমসির সদস্যরাও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণ মডিউলটি শেষ করার পর আইওএম নৌ-চালকদের সমুদ্র সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করে।
আইওএম কক্সবাজার কার্যালয়ের ট্রানজিশন অ্যান্ড রিকভারি ডিভিশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর প্যাট্রিক শেরিগনন বলেন, ‘কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটে কয়েকশত নৌ-চালক কর্মরত আছেন। কিন্তু সমুদ্রে সুরক্ষার বিষয়ে তাদের এখনও পর্যন্ত কোনো যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। এই ধরনের জীবনরক্ষামূলক সক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকলাপে তাদের অভিগম্যতা জরুরি। আমরা আশা করি এই উদ্যোগটি কেবল জীবনই রক্ষা করবে না, বরং দ্বীপের পর্যটন খাতের জন্যও ভূমিকা রাখবে।’
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে অক্সিজেন জেনারেটর প্লান্ট স্থাপন করল আইওএম
প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে, নৌ-চালকরা সমুদ্রে সুরক্ষা সরঞ্জামের সঠিক ব্যবহার, দুর্যোগকালীন ঝুঁকি হ্রাস, মৌলিক অগ্নিনির্বাপন প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক উদ্ধার কাজ, প্রাথমিক উদ্ধার ব্যবস্থা, ঘূর্ণিঝড় শুরুর সতর্কতা ব্যবস্থা এবং আচরণের পরিবর্তন যোগাযোগেসহ বিভিন্ন ধরনের বিষয়ে নতুন ধারণা শিখেছে। এছাড়া সমুদ্র সুরক্ষার সরঞ্জাম (লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া, রেডিয়াম স্টিকার, পাওয়ার ব্যাংক এবং টর্চ লাইট) কিভাবে চালনা করতে হয় তাও জানতে পেরেছে।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী নৌ-চালক রাজন বলেন, ‘আজ আমি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ পেয়েছি যা আমার প্রতিদিনের কাজে খুব সহায়ক হবে। এখন থেকে আমি আরও অনেক আত্মবিশ্বাসী যে সমুদ্রে ভ্রমণের সময় আমি নিজকে এবং আমার যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারব।’
আরও পড়ুন: লিবিয়া থেকে বাংলাদেশিদের ফেরাতে আইওএমের ৩য় ফ্লাইট মঙ্গলবার
এদিকে, ২০১৯ সাল থেকে আইওএম মহেশখালী উপজেলা ও এর পাঁচটি ইউনিয়নে উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ পরিচালনা কমিটির (ডিএমসি) সদস্যদের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবীদের দুর্যোগকালীন ঝুঁকি হ্রাসে মৌলিক দক্ষতা এবং অগ্নিনির্বাপনে মৌলিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাশাপাশি ১৫০ জন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবককে উদ্ধার কাজ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।