মন্দা
রপ্তানি আয়ের মন্দা কাটিয়ে উঠছে বাংলাদেশ
জুলাই ও আগস্টে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রপ্তানি খাত স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অক্টোবরে প্রায় ১৯ শতাংশ রপ্তানি আয় বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।
শুধু অক্টোবর মাসেই বাংলাদেশ ৪১৩ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। যা গত বছরের একই মাসের চেয়ে ৬৫ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর সময়ে দেশের রপ্তানি আয় ছিল যথাক্রমে ৩৮২ কোটি, ৪০৭ কোটি ও ৩৮৬ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ১৬৬ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের ১ হাজার ৮৩ কোটি ডলার থেকে ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। জুলাই-আগস্ট সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ৭৮৫ কোটি ডলার।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে নিটওয়্যার রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৩৫ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের ৪৯৪ কোটি ডলারের তুলনায় ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। ওভেন পোশাক রপ্তানি ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪১৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৩৮৮ কোটি ডলার।
রপ্তানিকারকরা সাম্প্রতিক প্রত্যাবর্তনের জন্য শ্রমিক অসন্তোষ, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে আটকে থাকা অর্ডারের বিলম্বকে দায়ী করেছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় পুঁজিবাজারে তেজিভাব
বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক ইউএনবিকে বলেছেন, এই ঝুলে থাকা কার্যাদেশগুলোর অনেকগুলো গত মাসে পাঠানো হয়।
তারা আরও বলেন, শীত ও বড়দিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যের মৌসুমি চাহিদাও রপ্তানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে, যা মূল্য ও পরিমাণ উভয় ক্ষেত্রেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিউএজ গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন যে, তাদের কারখানাগুলো পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করছে। ‘আমরা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বুকিং পেয়েছি এবং আশা করি অন্যান্য কারখানাগুলোও একইভাবে কাজ করছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, কাজের অর্ডার সুরক্ষিত করা খ্যাতি, গুণমান এবং সম্মতির মানের উপর নির্ভর করে।
একটি সরকারি নথিতে দেখা গেছে, বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্য সংকোচন সত্ত্বেও ২০২৪ সালে পণ্যদ্রব্য বাণিজ্যের পরিমাণ ২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ায় ভোক্তাদের আরও পণ্য কেনার জন্য উৎসাহিত করার সঙ্গে সঙ্গে পুনরুদ্ধার আশা করা হচ্ছে।
উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির (ইএমডিই) উন্নত অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালে উল্লেখযোগ্য সংকোচনের শিকার হওয়া ইউরোজোন ২০২৫ সাল থেকে প্রায় ৩ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধিসহ ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে আনুমানিক ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে এসেছে। আর আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে এটি ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ব্যাংকিং ব্যবস্থার অপব্যবহারে সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোর ক্ষতি ১৬৬৩.৩৮ কোটি টাকা
চীনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালে ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ২ দশমিক ৮৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ভারতের রপ্তানি ২০২৩ সালের ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ সংকোচন থেকে ২০২৫ সালে প্রায় ৪ শতাংশে দৃঢ়ভাবে পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিপরীতে, যুক্তরাজ্যে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে সংকোচনসহ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৭ সাল পর্যন্ত পরিমিত প্রবৃদ্ধির হার ২ শতাংশের নিচে থাকবে।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪-২৭ জুড়ে প্রায় ৩ শতাংশ স্থিতিশীল রপ্তানি বৃদ্ধির হার বজায় রাখবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
রপ্তানি পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানিও মাঝারি মেয়াদে ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইএমএফের মতে, বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালের সংকোচন থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়ে ২০২৪ সালে ৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে প্রায় ১৮ শতাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে, নির্দিষ্ট দেশের গতিশীলতা বিভিন্ন গতিপথ প্রকাশ করে। উদাহরণস্বরূপ, চীনের আমদানি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে শূন্য দশমকি ৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, ভারতের আমদানি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালে এবং তার পরেও ৬ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত অর্থনীতিতে আমদানি প্রবৃদ্ধি কম থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাজ্য ২০২৫ সালে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির অভিজ্ঞতা অর্জন করবে বলে ধারণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হয়রানি কমাতে অনলাইন কর পদ্ধতি সংস্কারের পরিকল্পনা এনবিআরের
৩ সপ্তাহ আগে
দীর্ঘ অবরোধে দেশের অর্থনীতিতে মন্দা
দেশব্যাপী গত কয়েকদিনের টানা অবরোধে দেশের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাইকারি বাজারগুলো ক্রমে জনশূন্য হয়ে গেছে এবং সপ্তাহব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে।
এর প্রভাব পড়েছে ঢাকার নিউমার্কেট, চাঁদনী মার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেট, গুলিস্তান মার্কেট, শান্তিনগর, কাকরাইল, মৌচাক মার্কেট, রামপুরা-বাড্ডা, মিরপুর, ধানমন্ডি, গুলশান-বনানী ও উত্তরার মতো এলাকায়।
নবাবপুর, চকবাজার, ইসলামপুর, বাবুবাজার, শাঁখারিবাজার, মৌলভীবাজার ও বঙ্গবাজারেও বাণিজ্য কার্যক্রম কমেছে।
ঢাকা নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম জানান, অবরোধের সময় বেচাকেনা খুবই কম ছিল।
তিনি বলেন, ‘কোনো ক্রেতা নেই, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অবরোধ চলতে থাকলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
বায়তুল মোকাররম এলাকার অলিম্পিয়া বেকারিশপের কর্মচারীরাও একইভাবে বিক্রি কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এ কারণে তারা পরিচিত নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে বিকল্প বিক্রয় কৌশল অবলম্বন করেছেন।
পল্টন মোড়ের চা বিক্রেতা সবুজ জানান, গত সপ্তাহে তার দোকানে বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন ১০-১২ হাজার টাকার কেনাবেচা করি। এখন এটা ২-৩ হাজার টাকায় নেমে গেছে।
বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান ইউএনবিকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে আগে থেকেই ক্রেতা সংকটে ভুগছিল খাতটি। এখন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এর ফলে শুধু রপ্তানি খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। এটি রিজার্ভের উপরও প্রভাব ফেলবে।’
আরও পড়ুন: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি: বিশ্লেষকরা
বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান লোকসান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘পণ্যের অভ্যন্তরীণ পরিবহন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। শিল্প উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। রপ্তানি খাত চলমান অবরোধের কারণে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।’
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী ইউএনবিকে বলেন, অবরোধের কারণে পরিবহন সংকটে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন বন্দরে আটকে থাকা কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছেন না।
চলমান ধর্মঘট অবরোধ সম্মিলিতভাবে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।
তিনি বলেন, এই ধরনের কর্মসূচি দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে যেতে পারে।
গত ২৯ অক্টোবর বিএনপিসহ অন্যান্য সমমনা বিরোধী দলগুলোর ডাকে সারাদেশে হরতাল পালিত হয়।
৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিনের অবরোধের পর ৫ ও ৬ নভেম্বর অবরোধ চলে। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে ফের ৮ ও ৯ নভেম্বর অবরোধ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: চলমান রাজনৈতিক সংকটে উৎকণ্ঠায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা
২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির ১১.২% কর আদায়ের লক্ষ্য সরকারের
১ বছর আগে
বিশ্ব বাণিজ্যে সাম্প্রতিক মন্দার মধ্যেও সবুজ পণ্যের চাহিদা বেশি ছিল: জাতিসংঘ
২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতি কমেছে, কিন্তু পরিবেশ বান্ধব পণ্যের চাহিদা শক্তিশালী ছিল। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন (আঙ্কটাড) এ তথ্য জানিয়েছে।
আঙ্কটাড-এর সর্বশেষ গ্লোবাল ট্রেড আপডেট অনুসারে, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ‘সবুজ পণ্যের’ (কম সম্পদ ব্যবহার করে এবং কম দূষণ করে) বাণিজ্য চার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ২০২২ সালে রেকর্ড এক দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
রিপোর্টের অন্যতম লেখক আঙ্কটাড-এর অর্থনীতিবিদ আলেসান্দ্রো নিসিতা বলেছেন, ‘পৃথীবির জন্য এটি সুসংবাদ, কারণ এই পণ্যগুলো পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মূল চাবিকাঠি।’
২০২২ সালে ভাল ব্যবসা করা সবুজ পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহন, নন-প্লাস্টিক প্যাকেজিং এবং বায়ু টারবাইন।
আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) তার ফ্ল্যাগশিপ রিপোর্টে বলেছে, তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে এখন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় অর্ধেক কমাতে হবে বলে প্রাক-শিল্প পর্যায়ে ফিরে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘পানির প্রতিটি ফোঁটা দূষণের শিকার ও অতি ব্যবহারে অপচয় হচ্ছে’
সামগ্রিকভাবে ২০২২ সালে বিশ্ব বাণিজ্যের মূল্য ৩২ ট্রিলিয়ন ডলার ছিল, কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির ফলে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে।
আঙ্কটাড এর মতে, বাণিজ্যের ভবিষ্যত ‘অনিশ্চিত’ রয়ে গেছে।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটি উদ্বেগের কারণ হিসেবে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, উচ্চ দ্রব্যমূল্য এবং উচ্চ সুদের হারের সঙ্গে সরকারি ঋণের রেকর্ড মাত্রার কথা উল্লেখ করেছে।
আঙ্কটাড এর পূর্বাভাস বলেছে যে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ব বাণিজ্য স্থবির হতে চলেছে।
তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা ‘ইতিবাচক’ হতে পারে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আঙ্কটাড বলেছে যে সবুজ পণ্য বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা টিকিযে রেখেছে। যদিও এগুলো জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত আঙ্কটাড এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন প্রতিবেদনে এই মুহূর্তটিকে ‘সবুজ প্রযুক্তিগত বিপ্লবের সূচনা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে বৈদ্যুতিক গাড়ি, সৌর ও বায়ু শক্তি, সবুজ হাইড্রোজেন এবং অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে চারগুণ বেড়ে ২ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
আঙ্কটাড আরও বলেছে যে উন্নত দেশগুলো সবুজ প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বেশিরভাগ অর্থনৈতিক সুযোগগুলো দখল করছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে।
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নীতির বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগ না দেয়ায় বা দক্ষতা ও সক্ষমতা তৈরিতে বিনিয়োগের অভাবের কারণে এই সবুজ প্রযুক্তির ধারায় তাল না মেলাতে পারাটা দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনবে।’
আঙ্কটাড রিপোর্টে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নিয়ম এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে উদীয়মান সবুজ শিল্পকে সমর্থন করার আহ্বান জানানো হয়েছে-যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলো ‘পৃথিবীকে রক্ষা করতে সাহায্য করার সময় অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারে।’
আরও পড়ুন: ‘জীবজগতের অসাধারণ বৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদেরকে দায়িত্বের কথা স্মরণ করতে হবে’
বিশ্বের ৭৮ মিলিয়ন শিশু কোনোদিন স্কুলে যায় না: জাতিসংঘ প্রধান
১ বছর আগে
মন্দার ‘খুব কাছাকাছি’ বিশ্ব অর্থনীতি: বিশ্বব্যাংক প্রধান
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, মন্দার ‘খুব কাছাকাছি’ রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। কেননা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সুদের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা উন্নয়নশীল বিশ্বকে জর্জরিত করছে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য আমরা ২০২৩ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছি, এটি ভয়াবহভাবে বিশ্ব মন্দার কাছাকাছি।’
বৃহস্পতিবার আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকের সময় এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যালপাস এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাংককে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান নসরুল হামিদের
তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণ বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘মানুষ যে সব সমস্যাগুলো প্রকাশ করেছে যেমন- মুদ্রাস্ফীতি সমস্যা, সুদের হার বৃদ্ধি এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে মূলধন প্রবাহের পরিমাণ হ্রাস দরিদ্র দেশগুলোকে চাপে ফেলেছে।
ম্যালপাস বলেন, ‘নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে একটি বিশ্ব মন্দা ঘটতে পারে।’
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছিল যে সারা বিশ্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো একযোগে মুদ্রাস্ফীতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে সুদের হার বাড়িয়েছে, এর ফলে বিশ্ব ২০২৩ সালে বৈশ্বিক মন্দার দিকে অগ্রসর হতে পারে। বিশ্বব্যাংক এ সময়ে প্রবৃদ্ধি শুধুমাত্র ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিনহুয়ার করা এক প্রশ্নের জবাবে ম্যালপাস বলেছেন, বিশ্বে প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ১ শতাংশ ধরা হয়েছে। ‘সুতরাং যদি বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় অনেক ধীর গতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়, তার মানে মানুষ পিছিয়ে পড়ছে।’
বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ম্যালপাস বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য-হ্রাস প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় আঘাত হেনেছে। এই মহামারি ২০২০ সালে প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষকে চরম দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ এ পরিস্থিতি আরও খারাপ করার ঝুঁকিতে ফেলেছে।
২ বছর আগে
অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে ব্যয়বহুল মেগাপ্রকল্প বাদ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান বিএনপির
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের মধ্যে বাংলাদেশ ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদলীয় এই নেতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কার মতো একই পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে। তাই তারা সরকারকে ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্পগুলো বাদ দেয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বুলেট ট্রেন, দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পূর্বাচলে ১১০ তলা বঙ্গবন্ধু বহুতল ভবন কমপ্লেক্স, শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, নোয়াখালী বিমানবন্দর, দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প এবং রাজধানী ঢাকার বাইরে স্থানান্তরের মতো প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ এবং পদ্মা সেতু হয়ে পায়রা বন্দর এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার এবং দোহাজারী হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণসহ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা ইতোমধ্যে এই প্রকল্পগুলোকে ব্যয়বহুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যা কেবলমাত্র সরকারি ঋণের বোঝা বাড়াবে।
আরও পড়ুন: নতুন ফসল উঠলেও ভুল নীতির কারণে চালের দাম বাড়ছে: বিএনপি
সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ফখরুল বলেন, ‘আমার মনে হয় বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা আশঙ্কা করছি, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশও শ্রীলঙ্কার মতো বিপদে পড়তে পারে। আমাদের আশঙ্কাকে বাস্তবসম্মত বলা যায়।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাপকভাবে লুণ্ঠন করে অর্থ উপার্জন করা। ‘অর্থনীতি তখনই চাঙ্গা হবে, যখন জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই বিএনপি নেতা বলেন, বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে তাদের দলের ঐক্য প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। ‘আপনারা আমাদের আন্দোলন পরিকল্পনাসহ সবকিছু জানতে পারবেন, আমরা প্রকাশ্যে ঐক্য প্রক্রিয়ার ঘোষণা নিয়ে আসব।’
ফখরুল বলেন, তাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি গত ১৩-১৪ বছরের তুলনায় এখন সবচেয়ে বেশি চাপের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি হ্রাস এবং রেমিট্যান্স হ্রাসের কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে দ্রব্যমূল্য অসহনীয় হয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত আট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নেমে এসেছে। আগামী দুই মাসে এটি আরও ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং রেমিট্যান্সের মাধ্যমে সেই শূন্যতা পূরণ না হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ খুব শিগগিরিই শেষ হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন: তীব্র সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ: বিএনপি
এরকম কতজন পি কে হালদার আছে, জানতে চাই: ফখরুল
২ বছর আগে
সম্ভাব্য মন্দা বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
করোনাভাইরাসের কারণে সম্ভাব্য মন্দার আশঙ্কা বিবেচনায় নিয়ে সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করেছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
৪ বছর আগে
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বৈশ্বিক মন্দা নিকটবর্তী: গুতেরেস
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বৈশ্বিক মন্দাকে এক নিকট সম্ভাবনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তার আশঙ্কা যে এ মন্দা হয়তো রেকর্ড মাত্রার হতে পারে।
৪ বছর আগে