মানসিক স্বাস্থ্য
নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
একটি সুস্থ জীবনের জন্য দৈহিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই যত্নশীল হওয়া জরুরি। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও আশেপাশের মানুষদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা নারী ও পুরুষ দুজনের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যই বিপজ্জনক। প্রচন্ড হতাশায় এমনকি আত্মহত্যা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারে এই সমস্যা। ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই পরিস্থিতির নিত্যতার পাল্লা পুরুষদের দিকেই বেশি ভারী। অর্থাৎ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার আধিক্য থাকলেও নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি। এই সমস্যার শিকড় কোথায়, চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
বিশ্বজুড়ে নারী ও পুরুষের আত্মহত্যা
নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকলেও, সেটি পুরুষদের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বেশি মৃত্যু পর্যন্ত গড়ায়। জেন্ডার প্যারাডক্স হিসেবে পরিচিত এই অসঙ্গতির জন্য বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার মাধ্যমে মারা যাওয়া পুরুষের সংখ্যা নারীদের তুলনায় বেশি।
২০০৮ সালে আত্মাহুতির মাধ্যমে মারা যাওয়া পুরুষের সংখ্যা ছিল নারীদের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৮ গুণ বেশি। ৭ বছর পর ২০১৫ সালেও আনুপাতিক হারটা প্রায় অপরিবর্তিতই ছিল, যা ১ দশমিক ৭। পশ্চিমা দেশগুলোতে আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুতে নারীদের তুলনায় পুরুষদের সংখ্যা হরহামেশাই তিন থেকে চার গুণ বেশি থাকে। এই বৃহৎ পরিসরটি পরিলক্ষিত হয় ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে।
আরও পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
১৯৫০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের আত্মহত্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ২০১৯ সালে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার নারীদের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ গুণ বেশি ছিল। ২০২১ সালে এই আনুপাতিক হার বেড়ে ৩ দশমিক ৯০- এ দাঁড়িয়েছে। মার্কিন জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশই পুরুষ, আর এই হিসাবে আত্মহত্যা জনিত কারণে পুরুষের মৃত্যুর হার দাঁড়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ।
কিশোর এবং তরুণদের আত্মাহুতির হার অন্যান্য বয়সের তুলনায় কম। তবে আত্মঘাতী বিষয়টি এখনও মার্কিন তরুণদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ।
অন্যদিকে, আত্মহত্যার প্রচেষ্টার ঘটনা ঘটে নারীদের মধ্যে বেশি, যা পুরুষদের তুলনায় দুই থেকে চার গুণ। পুরুষদের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৩৩ গুণেরও বেশি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা। শিক্ষার্থীদের মাঝেও এমন প্রবণতা পুরুষ শিক্ষার্থীদের তুলনায় ১ দশমিক ৮৬ গুণ বেশি।
আরও পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
আশঙ্কাজনক আত্মহত্যার হারে পশ্চিম ইউরোপের একমাত্র দেশ হলো বেলজিয়াম। সেখানে প্রতি ১ লাখে আত্মহত্যা করে ১৮ দশমিক ৩ জন, যার মধ্যে প্রতি লাখে ২৪ দশমিক ৯ জন পুরুষ এবং ১১ দশমিক ৮ জন নারী।
২০১৯ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ আত্মহত্যার হার ছিল আফ্রিকার দেশ লেসোথোতে। সেখানে প্রতি লাখে আত্মাহুতির রেকর্ড ছিল ৭২ দশমিক ৪ জনের, যাদের মধ্যে প্রতি লাখে পুরুষ সংখ্যা ১১৬ জন এবং নারী ৩০ দশমিক ১ জন।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০০০ সালে বাংলাদেশে আত্মহত্যায় পুরুষের মৃত্যুর হার ছিল ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং নারী মৃত্যুহার ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। নারী-পুরুষ উভরে ক্ষেত্রে এই হার ২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্রমাগত কমতে থাকে। অতঃপর ২০১৬ সাল পর্যন্ত কিছুটা ওঠা-নামার পর আবার বাড়তে শুরু করে। ২০১৯ সালে পুরুষ মৃত্যুহার ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, যা নারীদের ক্ষেত্রে ছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
আরও পড়ুন: অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ: কেন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না?
৯ মাস আগে
আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২২: ‘হেলথ ও ওয়েলনেস’ সেশনে গুরুত্ব পেয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ-ভারত বিজনেস কাউন্সিল (বিআইবিসি) ও উইমেনস ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ডব্লিউআইসিসিআই) যৌথ উদ্যোগে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হল আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন ২০২২। ‘হেলথ ও ওয়েলনেস’ সেশনে উঠে এসেছে মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক কুসংস্কার, নারীর বর্তমান অবস্থা শিশুদের স্বাস্থ্যসহ দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা।
দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন বুধবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
উদ্বোধনের দিন সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী পরিচালক লোকমান হোসেন মিয়া, বিআইবিসি’র প্রেসিডেন্ট মানতাশা আহমেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মালিহা মান্নান আহমেদসহ অনেকে।
আরও পড়ুন: মানসিক রোগ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫% শিক্ষার্থী সচেতন: শাবিপ্রবির গবেষণা
ড. মালিহা মান্নান আহমেদের সঞ্চালনায় ‘হেলথ ও ওয়েলনেস’ সেশনে আলোচনা করেন বিডার নির্বাহী পরিচালক লোকমান হোসেন মিয়া, বুশরা আলম, রুনা খান, জাহিদা ফিজ্জা কবির, ড. রুমানা দৌলা, আরিফ মাহমুদ, মৌসুমী ইসলাম।
‘হেলথ ও ওয়েলনেস’ সেশনে আলোচনা শুরু হয় ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ডা. বুশরা আলমের বক্তব্য দিয়ে। উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য বলতে আমরা শারীরিক অবস্থাকেই সাধারণত বুঝি। কিন্তু আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা কম। সামাজিক কুসংস্কারের কারণে এটাকে আমরা প্রতিনিয়ত লুকাই। তবে করোনার পরবর্তীতে এ নিয়ে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ কিছু তৈরি হয়েছে।’
সমাজে নারীদের অবস্থান প্রসঙ্গে ডা. বুশরা আলম বলেন, ‘বর্তমানে নারীরা দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন ভূমিকা রাখছে। আমরা চেষ্টা করছি নারীদের কাজের অগ্রগতিকে কীভাবে আরও সামনে নিয়ে আসতে পারি। এটা শুধুমাত্র উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরির বিষয় নয়। বরং এর চেয়েও বেশি। নারীরা পাবলিক যানবাহনে করে তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত করে। কিন্তু সেখানে তাদের অবস্থা কী? সেখানে তারা প্রতিনিয়ত হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে পুরষদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ সবার সম্মিলত প্রচেষ্টায় পরিবর্তন আসে।’
আরও পড়ুন: কোন দেশে বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার, বেশি মানসিক রোগ?
আলোচনার দ্বিতীয় বক্তা ফ্রেন্ডশিপ এনজিও’র প্রতিষ্ঠাতা রুনা খান। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে তার কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ’২০ বছর আগে আমি এমন একটা বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করি যখন দেশে প্রায় ৪০ হাজার এনজিও ছিল। কিন্তু শিশুদের নিয়ে কাজ করার কাউকে তেমন পাইনি। আমি দেখেছি, একজন শিশুর হয়তো ডায়রিয়া হয়েছে, কিন্তু তার মা মাত্র পাঁচ টাকার জন্য শিশুটিকে সেলাইন খাওয়াতে পারছে না। ২০ বছর আগে শিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের কাজটা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু আমাদের প্রত্যয় ছিল কাজটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সেখান থেকে আমরা স্যাটেলাইট হাসপাতাল পর্যন্ত এসেছি।’
সাজেদা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাহিদা ফিজা কবীর বলেন, ‘সাজেদা ফাউন্ডেশন ব্যতিক্রম একটি উদ্যোগ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেনাটার অর্থে এটা চলে। রেনাটার মুনাফার ৫১ শতাংশ এই সাজেদা ফাউন্ডেশনে খরচ করা হয়। এটি দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, জীবনমান উন্নয়নে কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে। বর্তমানে আমরা মানসিক স্বস্থ্য নিয়েও কাজ করছি। যেটি আজকের আলোচনার অন্যতম অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় আট বছর আগে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। যখন দেখেছি আমাদের এখানে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের সেবা নেই। সেখান থেকেই আমাদের চিন্তা এলো এমন একটি সেবায় বিনিয়োগ করার বিষয়। যেখানে আমরা আন্তর্জাতিক মানে সেবা প্রদান করতে পারব। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা পেয়েছি।’
আরও পড়ুন: মানসিক বিকাশে শিশুর সঙ্গে মা-বাবার টেলিভিশন দেখা হতে পারে উপকারী
বাংলাদেশে প্যালিয়েটিভ অ্যান্ড সাপোর্ট কেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ডা. রুমানা দোলা সেশনে কথা বলেন দেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের অবস্থা প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের দুরারোগ্য ব্যাধিতে প্রতি বছর অনেক মানুষ ভোগে। যার জন্যই প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজনীয়তা। অনেকেই আছেন দীর্ঘদিন হৃদরোগ, ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, এইডস, ডায়াবেটিকে ভুগছেন, এমনকি অনেকে একসময় তীব্র যন্ত্রণায় ভোগেন। প্যালিয়েটিভ কেয়ার এই ধরনের রুগীদের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ।’
বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা প্রসঙ্গে নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল সার্ভিসের পরিচালক আরিফ মাহমুদ বলেন, ‘চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার সময় আমরা বিষয়টি আরও লক্ষ্য করেছি। তখন বিদেশি যাওয়া বন্ধ ছিল, জনগনকে হয়তো সরকারি বা বেসরকারি চিকিৎসা নিতে হয়েছে। আর আমরা কিন্তু পেরেছি। তবে বর্ডার খুলে দেয়ার পর আবারও মানুষ চিকিৎসার জন্য বাইরে যাচ্ছে। সেটার দুটি কারণ, প্রথমত বাংলাদেশে যেসব চিকিৎসা সম্ভব। দ্বিতীয়ত অনেকের অভিযোগ আমাদের দেশের অনেক ডাক্তার রোগীর বিষয়ে মনযোগী নন। দুটি বিষয়ের উন্নতির জন্য এরই মধ্যে কাজ হচ্ছে।’
বাংলাদেশে মেডিকেল যন্ত্রাংশ ব্যবসায় নিজের উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রমিস্কো গ্রুপের নির্বাহি পরিচালক মৌসুমী ইসলাম বলেন, ‘একজন নারী উদ্যোক্তার হিসেবে আমার শুরু পথটা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু আমি সৌভাগ্যবান, এই কাজে আমি অনেককে বন্ধুর মতো পাশে পেয়েছি। যাদের জন্য আমি এগিয়ে যেতে পেরেছি। বাংলাদেশের অত্যাধুনিক মেডিকেল যন্ত্রাংশ আসার সময়টা কিন্তু নতুন। ২০১৫ থেকে আমরা মেডিকেল যন্ত্রাংশ তৈরি করে আসছি। করোনার সময় আমরা প্রমাণ করেছি বাংলাদেশেরও বিশ্বমানে মেডিকেল যন্ত্রাংশ তৈরি করা সম্ভব।’
আরও পড়ুন: উন্নত দেশ গড়তে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজিনেস’ সূচক উন্নয়নের বিকল্প নেই: বিডা
বিডার নির্বাহী পরিচালক লোকমান হোসেন মিয়া ২০২২ আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা সম্মেলনের আলোচনা সেশনে বলেন, ‘এই সম্মেলন নারী উদ্যোক্তাদের ভালো একটি সুযোগ আমি মনে করি। যারা অংশগ্রহণ করেছেন সবার মনোবল ও আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে বিশ্বাস করি। এ সম্মেলন নারী উদ্যোক্তাদের মনোবল আরও দৃঢ় ও সাহসী করবে। এ সম্মেলনে চার হাজার নারী উদ্যোক্তা ও প্রায় ৪০টি দেশের পেশাজীবী ও বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণ অংশগ্রহণ করছেন।’
২ বছর আগে
কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
কান পেতে রই হচ্ছে দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেল্পলাইন। মানসিক দুর্দশায় জর্জরিত অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এই ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি কাজ করে। উদ্যোগটা অভিনব হলেও এই কাজটি নিতান্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এরকম বিশ্বের প্রায় ৪২টি দেশে নজির রয়েছে। বরং বাংলাদেশে আরও আগেই এরকম কার্যক্রম শুরু হওয়াটা জরুরি ছিল। এবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
প্রতিষ্ঠানটির শুরুর গল্প
একবার যুক্তরাজ্যের এক ধর্মযাজকের খুব প্রিয় একজন মানুষ আত্মহত্যা করল। এতে প্রচণ্ড মনোকষ্টে ভুগলেও ধর্মযাজক শোককে শক্তিতে পরিণত করলেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, মানসিকভাবে পর্যুদস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মধ্যে শক্তি-সাহস যোগাবেন এবং বেঁচে থাকার প্রেরণা দেবেন।
১৯৫২ সাল থেকে শুরু করলেন টেলিফোনের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত লোকদের মানসিক সেবা দেয়া। সেখানে একটি নির্দিষ্ট নাম্বার থেকে একদল স্বেচ্ছাসেবী কর্মকর্তা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের কথা শুনত। নিজেদের দুঃখের কথা বলতে যেয়ে তারা খেয়াল করত যে তাদের বুকের বোঝাটা কমে আসছে। সে সময়ের জন্য এটি ছিল এক অভিনব উদ্যোগ এবং এটি ব্যাপকভাবে বেশ সফলতাও পেয়েছিল।
আরও পড়ুন: মধু কি সত্যি অমৃত?
এই কাহিনীটি থেকে শিক্ষা নিয়েই মূলত কান পেতে রই সংগঠনের অভিযাত্রা শুরু।
আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষা নেবার সময় বাংলাদেশের ইয়েশিম ইকবালের কাজ করার সুযোগ হয়েছিল বোস্টন শহরের টেলিফোনের মাধ্যমে মানসিক সেবা দেয়া একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। সেখানে প্রায় তিন বছর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তিনি যুক্ত ছিলেন।
সেখান থেকেই ইয়েশিমের পরিকল্পনায় কান পেতে রই’র গোড়াপত্তন হয়েছিল। বাংলাদেশে প্রতিদিনি বাড়তে থাকা আত্মহত্যার সংখ্যাকে কমাতে আত্মহত্যাপ্রবণ লোকদের মানসিক সমর্থন দিতে ২০১২ সালে তিনি শুরু করলেন কান পেতে রই’র প্রাথমিক কার্যক্রম। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ এর ২৮ এপ্রিল।
প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমসমূহ
কান পেতে রই (http://shuni.org/) এ আছে কিছু নির্দিষ্ট হেল্পলাইন, যেগুলোর মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত মানুষের কল গ্রহণ করে তাদের কথা শুনে তাদের মাঝে থাকা নিঃস্বঙ্গতা, এবং আত্মহত্যার প্রবণতা দূর করতে সহায়তা করা হয়। এই কাউন্সেলিংয়ের প্রতিক্রিয়া বেশ ফলপ্রসূ আর এই সেবার জন্য কোন ধরনের চার্জ নেয়া হয় না।
করোনা মহামারির আগে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সেবা দেয়া হতো। শুধু বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা কথা বলার সুযোগ ছিল।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সেবা দাতা সাজিদা ফাউন্ডেশনের যৌথ সহযোগে করোনা মহামারির ভেতর নাগরিকদের জন্য কান পেতে রই’র সেবা প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়।
কাউন্সিলিংয়ের সময় বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন, পরীক্ষায় খারাপ করা, পারস্পরিক অভিমান প্রভৃতির কারণে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
এই পদ্ধতির নাম ‘বিফ্রেন্ডিং’ যেটি মূলত কাউন্সিলিংয়ের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মডেল।
কান পেতে রই গ্রাহকদের কোন তথ্য নিজেদের প্রচারের স্বার্থে ব্যবহার করে না। কর্মরত স্বেচ্ছাসেবীদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া থাকে কলকারীদের পরিচয় সম্পর্কিত কোনো তথ্য জিজ্ঞাসা না করার। এমনকি স্বেচ্ছাসেবীদের অত্যন্ত কঠোর গোপনীয়তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হয়।
অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন কলকারী ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে ফেললে তা নোট না করার জন্যও প্রশিক্ষকরা স্পষ্টভাবে বলে দেন। সর্বপরি এখানে মূল ফোকাস ব্যক্তিগত পরিচয় নয়; কলকারীর মানসিক সমস্যা সমাধান।
এতে করে গ্রাহকরা স্বাচ্ছন্দ্যে কোন অস্বস্তি ছাড়াই কান পেতে রই’তে ফোন দিতে পারেন। একই সঙ্গে গ্রাহকদের এক রকম নির্ভরতার জায়গা তৈরি হয়, যেটা এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি বিষয়।
আরও পড়ুন: নিপা ভাইরাস এড়িয়ে খেজুর রস খাওয়ার উপায়
এখন পর্যন্ত কান পেতে রই আট বছর ধরে প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষকে সেবা দিয়েছে। এদের মধ্যে শতকরা প্রায় ২০ ভাগরেই প্রধান সমস্যা আত্মহত্যার প্রবণতা।
কান পেতে রই দলের সদস্যর
কান পেতে রই’র প্রতিষ্ঠাতা ইয়েশিম ইকবাল কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের স্নাতক। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছেন।
তিনি ছাড়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন হেল্পলাইন সমন্বয়কারী রোজি হোসেন, জনসংযোগ ও যোগাযোগ সমন্বয়কারী সওগাত মাহমুদ, স্বেচ্ছাসেবক সমন্বয়কারী অরুণ দাস, আউটরিচ কো-অর্ডিনেটর রুবিনা জাহান রুমি ও আউটরিচ এক্সিকিউটিভ আশিক আব্দুল্লাহ শুভ। সঙ্গে রয়েছে প্রশিক্ষিত পরিশ্রমী এক ঝাঁক তরুণ স্বেচ্ছাসেবী, যারা যে কোন কল অবিলম্বে গ্রহণ করে তার জরুরি কাউন্সিলিং নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাউন্সিলিংয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়। প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকে মনযোগ দিয়ে কথা শোনার পদ্ধতি, বিপদের মাত্রা উপলব্ধি করার উপায় ও বন্ধুর মত আচরণ। মানসিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত বিশেষত আত্মহত্যা প্রবণ ব্যাক্তিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমে প্রত্যেককে প্রস্তুত করা হয়
এখানের কাজের পদ্ধতি হলো শিফটিং বা পর্যায়ক্রমে। একজন স্বেচ্ছাসেবক চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রতি সপ্তাহে তিন ঘণ্টা করে কাজ করতে পারে। প্রতিটি কল গ্রহণের সময় হেল্পলাইনের তত্ত্বাবধায়করা পুরো কথোপোকথোনটি মনিটরিং করে থাকেন।
আরও পড়ুন: ওজন কমাতে ১০ কার্যকরী পানীয়
কান পেতে রই’র সময়োপযোগিতা
বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আত্মহত্যার কারণে মৃতের সংখ্যা শতকরা ২.০৬ ভাগ বাংলাদেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশিদের আত্মহত্যার হার ছিল ৩.৭০, যা ২০১৮ থেকে শতকরা ২.৭৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক অস্থিরতা, জনসংখ্যা সংক্রান্ত জটিলতার পাশাপাশি পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে জীবন ধারণে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক মূল্যবোধ বিনষ্টের ফলে ভাঙন ধরছে সম্পর্কগুলোতে। ইতোমধ্যেই রীতিমত প্রসার লাভ করা পরস্পর থেকে দূরত্বে থাকার বিষয়টিকে যেন আরও গতিময় করেছে করোনা মহামারি। এই নেতিবাচক উত্তেজক পরিস্থিতিগুলোর কারণে অতিরিক্ত আবেগের তাড়নায় চরম অবস্থায় মানুষ ধাবিত হচ্ছে আত্মঘাতী ঘটনার দিকে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঘটে গেল ২০২২ সালের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা। একই সঙ্গে দেশব্যাপী ১২টি আত্মহত্যা।
এমতাবস্থায় মন খারাপের লাগাম টেনে ধরার জন্য কিছু শক্ত হাতের প্রয়োজন। প্রয়োজন নিঃস্বার্থভাবে আলো জ্বালানো মানুষের অন্তরের গহীনে অন্ধকূপের মত জেঁকে বসা অন্ধকারে। হোক সেটা কোন বন্ধুর অন্তরঙ্গ আলাপে বা কোন টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অথবা নির্দিষ্ট কোন নাম্বারে ফোন করার মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ডালিমের খোসার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার
সবশেষে বলা যায়, কান পেতে রই বাংলাদেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেল্পলাইন হিসেবে একটি যুগান্তকারি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে। বাংলাদেশের চলমান প্রতিকূল প্রেক্ষাপটে তাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার প্রতিক্রিয়াটি খুব ধীর গতির হলেও মানুষের মনে আশা জাগাচ্ছে। নিদেনপক্ষে যে মানুষগুলো তাদের থেকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে, তারা সেই অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছে আরও কিছু হতাশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে। অর্থাৎ আলোকের দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়া থেমে নেই। আসলে এরকম প্রেরণা ও সাহস যোগানোর চর্চা শুধু কান পেতে রই’রই দায়িত্ব নয়; প্রতিটি মানুষেরই হওয়া উচিত।
২ বছর আগে
মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় অনির্দিষ্টকালের বিরতি নিচ্ছেন টিম পেইন
মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্রিকেট থেকে বিরতি নিচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক টেস্ট ক্রিকেট অধিনায়ক টিম পেইন। ফলে প্রথম অ্যাশেজ টেস্ট মিস করতে যাচ্ছেন তিনি।
২০১৭ সালে একজন নারী সহকর্মীকে অনুপযুক্ত টেক্সট পাঠানোর সাথে জড়িত থাকার কেলেঙ্কারির প্রকাশের পরে পেইন অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এর এক সপ্তাহ পরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া শুক্রবার পেইনের বদলি হিসেবে ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্সের নাম ঘোষণা করেছেন। কর্তৃপক্ষ বলেছে যে পেইন জানিয়েছে সে কিছু সময়ের জন্য ক্রিকেট থেকে দূরে সরে থাকবে।
আরও পড়ুন: 'সেক্সটিং' কেলেংকারি: অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অধিনায়কের পদত্যাগ
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী নিক হকলি এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা স্বীকার করি যে এটি টিম এবং তার পরিবারের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন সময়। আমরা তাদের সমর্থন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তার এবং তার পরিবারের মঙ্গলের দিকে লক্ষ্য রেখে এই সময়ে বিরতি নেয়ায় টিমের সিদ্ধান্তকে সম্মান করছি আমরা।
শুক্রবার ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাসমানিয়ার একদিনের ম্যাচে ব্যাট করতে পেইনকে ডাকা হয়েছিল। তবে ক্রিকেট তাসমানিয়া (সিটি) শুক্রবার বলেছে যে পেইন তাদের দলে জায়গা নেবেন না।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়
সিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টার আলোচনার পর, টিম পেইন ক্রিকেট তাসমানিয়াকে জানিয়েছেন তিনি অদূর ভবিষ্যতের জন্য সমস্ত ধরণের ক্রিকেট থেকে অনুপস্থিতির ছুটি নেবেন। এই সময় ক্রিকেট তাসমানিয়া তার পরিবারকে পেশাদার এবং ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করতে পাশে থাকবে।
টেস্টে পেইনের পরিবর্তে উইকেটরক্ষক হতে পারে অ্যালেক্স ক্যারি বা জোশ ইঙ্গলিস।
৩ বছর আগে
করোনার ছুটি শেষে শাবিপ্রবিতে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা: মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে থাকছে নজরদারি
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিনের ছুটি কাটিয়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। ভার্চুয়াল থেকে সশরীরে ক্লাসে ফিরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা। আর এই ক্লাসে ফেরা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিতে নজরদারীতে এনেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)।শিক্ষার্থীদের জন্য ইতোমধ্যে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় সার্বক্ষণিক কাজ করছে ‘সাস্ট মনের কথা’ ফেসবুক পেইজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ ও নির্দেশনা পরিচালকের অধীনে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সেবাটি পরিচালনা হচ্ছে। এতে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ফজিলাতুন্নেছা শাপলা।বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী কারও মানসিক সমস্যা দেখা দিলে সরাসরি সম্ভব না হলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ‘সাস্ট মনের কথা’ ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সার্বক্ষণিক মানসিক বিষয়ক স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া যাবে। এই মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় সর্বদা গোপনীয়তা রক্ষা করে সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি বিভাগে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পুরুষ ও নারী আলাদাভাবে দুইজন করে শিক্ষক ছাত্র উপদেষ্টা বিদ্যমান।
আরও পড়ুন: করোনার দীর্ঘ ছুটিতে নতুন আঙ্গিকে শাবিপ্রবির চিকিৎসা কেন্দ্রকরোনাকালীন প্রথম থেকেই অনলাইন কার্যক্রমে সচল ব্যবস্থাপনা চালু রেখেছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে শিক্ষার্থীদের স্বশরীরে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্লাসের আক্ষেপটি দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মাঝে। এছাড়াও দীর্ঘ এই ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী তোরাবি বিনতে হক, একই বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের আছিয়া আকতার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের তৌহিদুল আলম প্রত্যয়ের আত্মহত্যা ও রসায়ন বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু কাঁদিয়েছে শাবিপ্রবিয়ানদের হৃদয়কে। চলতি বছরের ৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ বর্ষের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আলমগীর কবির ও ১৬ অক্টোবর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়াশোনা করতে গিয়ে আত্মহত্যার মতো ঘটনাগুলো শাবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে হৃদয় বিদারক পরিবেশ তৈরি করেছে।দীর্ঘ ছুটির পর ক্যাম্পাসে ফেরা নিয়ে কথা হয় শিক্ষার্থীদের সাথে। বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ফারজানা আকতার বলেন, কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর থেকে গত দেড় বছরে শাবিপ্রবি থেকে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে কিছু মানুষকে আমরা হারিয়েছি। এর মধ্যে পাঁচজন আত্মহত্যা করেছেন, যাদের মধ্যে একজন শিক্ষকও ছিলেন। একজন মানুষ কতোটা অসহায় হলে আত্মহত্যার মতো কঠিনতম সিদ্ধান্তে চলে যায় তা হয়তো আমরা জানি না। কিন্তু কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে মানসিক ও শারিরীকভাবে সুস্থ্ থাকার জন্য একজন মনোবিজ্ঞানীসহ ছাত্র উপদেষ্টা-ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহোদয়গণ অনলাইনে নানা সময়ে বিভিন্ন সেশন, আলোচনা অনুষ্ঠান ইত্যদির আয়োজন করে এসেছেন।
আরও পড়ুন: ক্যান্সারে মারা গেলেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী
তিনি বলেন, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী যারা মাত্র দেড় মাস ক্যাম্পাসে কাটানোর পর দীর্ঘ দেড় বছর বাড়িতে কাটিয়ে এখন একজন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে ক্যাম্পাসে ফিরছেন তাদেরসহ সকল শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যায় কিংবা কঠিন কোনো পরিস্থিতিতে তাঁরা পরামর্শ দিয়ে যাবেন এবং শিক্ষার্থীরাও পরিবেশ-পরিস্থিতির এই নানা উত্থান-পতনে হতাশাগ্রস্থ না হয়ে মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকার চেষ্টা করবেন বলে আশা রাখছি।অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী প্রবাল বড়ুয়া বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর পর আমরা সশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হয়েছি। এই মহামারিতে যদি মানসিক অবস্থা চিন্তা করি তাহলে একপ্রকার বলা যায় শোচনীয় অবস্থায় ছিল। অনলাইন ক্লাসে যেহেতু আমাদের পাঠদান সম্পন্ন হচ্ছিল, ডিভাইস সমস্যা, নেটওয়ার্ক সমস্যা, ফ্যামিলির সমস্যা আরও অনেক ধরনের সমস্যার কারণে ক্লাসে ভালোভাবে উপস্থিত হতে পারি নি। যেহেতু ক্লাসগুলো এখন সশরীরে হচ্ছে সেহেতু ক্লাসগুলোতে আমরা নিয়মিত উপস্থিত হতে পারছি এবং আমরা মানসিকভাবে সতেজ থাকতে পারছি।
হলগুলোতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম বলেন, একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজ বিশেষ করে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। ইনডোর- আউটডোর খেলাধুলা এবং এক্সট্রা কারিকুলার কর্মকান্ড শিক্ষার্থীদের নির্মল মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. জায়েদা শারমীন বলেন, করোনার মতো মহামারি মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আমাদের সকলের জন্যই আসলে বিরাট এক চ্যালেঞ্জ হিসেবেই এসেছে। আর এই চ্যালেঞ্জের বড় একটা বিষয় হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যের সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করা। শিক্ষার্থীদের জন্য এ বিষয়টি আরও বড় ধরনের গুরুত্ব বহন করে বলে আমি মনে করি।
আরও পড়ুন: ওরা আর কখনো শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ফিরবে না
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে অনেক দিন বাসায় থাকায় একদিকে যেমন তাদের মধ্যে একঘেয়েমিতা দেখা দিয়েছে তেমনি কিছুটা সেশন জ্যাম তৈরির ফলে চাকরির বাজারে প্রবেশের প্রতিবন্ধকতাও একটি বড় অংশের মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে। এ ধরনের মানসিক চাপ মোকাবেলায় আমাদের সকলকে ধৈর্যের সাথে একযোগে কাজ করতে হবে। শিক্ষক –শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা -কর্মচারী সকলের মানসিক বিষয়টি প্রয়োজন অনুযায়ী গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার জন্য কাউন্সেলিং সেলের নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তাতে সকলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ফজিলাতুন্নেছা শাপলা বলেন, দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরেছে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশটা আগের মতোন নাও মনে হতে পারে এডজাস্টমেন্টের ক্ষেত্রে। সকল শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের দরজা খোলা। অনলাইন, সশরীরে, মুঠোফোনে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত আছে। ডিপার্টমেন্ট ও হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় কাউন্সেলিং, ফলোআপ, মেডিসিনের বিষয়গুলোতে সেবা থাকছে।শাবিপ্রবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড.আলমগীর কবীর বলেন, আমাদের শৃঙ্খলা কমিটি শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তায় বিবেচনায় তৎপর। বর্তমানে করোনার এই দীর্ঘ ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফেরা অনেক শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে এসেছে। আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সমাধানে চেষ্টা করছি। এই বিষয়গুলো আমাদের নজরে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে চাকরির সুযোগ পেলেন শাবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থীবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমদ জানান, লম্বা একটি ছুটি কাটিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। দীর্ঘ একটা সময় শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যস্ততা ভুলে অন্য একটি পরিবেশে মিশে ছিল। আর এই সময়টিতে হল, মেস, বাসা, বিভাগ যেকোনো পরিস্থিতিতে কোনো মানসিক সমস্যা তৈরি হলে শিক্ষার্থীদের বলবো আমাদের কাছে চলে আসতে । আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ও অফলাইন দুই জায়গাতেই এই মানসিক স্বাস্থ্য সেবা চালু রেখেছি। শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার সংকট নিরসনে আমাদের সাইকোলজিস্টসহ শিক্ষক উপদেষ্টাদের আন্তরিকভাবে স্বাস্থ্য সেবা তাদের মানসিক ভীতি দূর করতে সহায়তা করবে। আমরা চাই প্রতিটা শিক্ষার্থী মানসিক সুস্থতার মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন পার করে তাদের ভবিষ্যত জীবনেও সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক।শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের সবধরনের সমস্যা নিরসনে আমাদের শিক্ষকরা কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি বিভাগ, হলসহ সকল দপ্তরে শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিকতার কমতি নেই। এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের প্রতিটি দপ্তরে নির্দেশনা দেয়া আছে। স্ব স্ব জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় সকলে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
৩ বছর আগে
কোভিড-১৯: শিশু-কিশোর এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপনার করণীয়
কোভিড-১৯ মহামারির দরুণ দৈনন্দিন জীবনের পরিবর্তন আপনার পরিবারের শিশু, কিশোর এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রতিদিনকার করোনা আগ্রাসন এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রার স্থবিরতা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় আপনার নিজের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করার পাশাপাশি আপনার প্রিয় মানুষগুলোর মাঝে তা ছড়িয়ে দিতে পারেন। চলুন, কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরিবারের শিশু, কিশোর এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে জেনে নেই।
করোনাকালে শিশুদের মানসিক বিকাশ
শিশুদের আবেগ প্রকাশের ধরন যে কোন বয়সের মানুষের থেকে আলাদা। কেউ অস্বাভাবিকভাবে নীরব হয়ে উঠে আবার কেউ অতিরিক্ত রাগ এবং চিৎকার করে। তাই পরিবারের বড়দের এক্ষেত্রে ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে।
কখনো কখনো খেলাধুলা ও চিত্রাঙ্কনের মত বিভিন্ন সৃজনশীল ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে তাদের মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন।
শিশুদেরকে নিজেদের বিরক্তিকর অনুভূতি যেমন রাগ, ভয় এবং দুঃখ প্রকাশ করার জন্য ইতিবাচক উপায় খুঁজে পেতে সাহায্য করুন।
আরও পড়ুন: করোনা মহামারি থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন কীভাবে?
তাদেরকে যতটা সম্ভব একটি নির্দিষ্ট রুটিনের ভেতর রাখুন। প্রতিটি সময়ে তাদেরকে একটি করে কাজে নিযুক্ত রাখুন।
শিশুদেরকে সহিংসমূলক ঘটনা থেকে দূরে রাখুন। এরকম অভিজ্ঞতা তাদের স্বাভাবিক আচরণের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তাদের বুঝিয়ে বলুন যে করোনা সংক্রমণের জন্য কাউকে দোষারোপ করা উচিত নয়। কোভিড -১৯ সম্পর্কে খবর দেখা, পড়াশোনা বা আলোচনা করার সময় সংক্রমণ ও মৃত্যুর কথা উপেক্ষা করে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠার ঘটনাগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করুন। অন্যান্য সৃজনশীল ও মজাদার বিষয়গুলোর প্রতি তাদের আকৃষ্ট করুন।
যদি পরিবারে কেউ অসুস্থ হয় বা কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, অথবা যদি কোন মৃত্যু হয়, তাহলে শিশুরা অতিরিক্ত উদ্বেগ অনুভব করতে পারে। এমতাবস্থায় যতটুকু সম্ভব তাদেরকে সবকিছুর আড়ালে কোন অভিভাবকের সাথে রাখার চেষ্টা করুন। ভয় কাটানোর জন্য তাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে সহজ রাখার চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুন: সাইক্লিং, দৌড় কিংবা সাঁতার: ওজন কমাতে কোনটি বেশি কার্যকরী?
শিশু দুর্ব্যবহার করলে বা কোন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করলে শান্তভাবে কথা বলুন। দুরন্ত শিশুদের মধ্যে অনেকেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্রোধ প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে যখন তারা শান্ত হয়ে যাবে তখন ধীরে ধীরে জিজ্ঞাসা করুন তারা কেমন অনুভব করছে। সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং শান্ত্বনামূলক উপায়ে বুঝিয়ে বলুন যে তারা যে আচরণ করেছিলো তা ঠিক নয়। নেতিবাচক আচরণের পিছনে কারণ বোঝার চেষ্টা করুন।
পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাদের খারাপ লাগা সময়গুলোতে তাদেরকেই জিজ্ঞেস করুন পরিবারের বাইরে তাদের পছন্দের কারো সাথে দেখা করবে কিনা।
শিশুদেরকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নিয়ম সম্পর্কে শেখান। তাদের শরীরের ব্যাপারে যে কোনো অস্বস্তিকর স্পর্শ বা অনিরাপদ অঙ্গভঙ্গির ব্যাপারে তাদের সতর্ক করুন। তাদের অভিযোগগুলো মনযোগ দিয়ে শুনুন।
আপনার শিশু সম্পর্কিত যে কোন বিশেষ প্রয়োজনে কল করুন চাইল্ডলাইন ১০৯৮-তে।
আরও পড়ুন: বর্ষা মৌসুমে যেসব পুষ্টিকর সবজি খেতে পারেন
করোনাকালে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক সমর্থন
করোনাভাইরাস সংক্রমণ কিশোর-কিশোরীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বয়সন্ধিঃকাল জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এ সময়ে করোনা প্রাদুর্ভাব মানসিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে যার মানসিক আঘাত সারা জীবনভর থেকে যেতে পারে।
যে কোন হৃদয়বিদারক ঘটনা, মানসিক চাপ কিশোর-কিশোরীদের অতিরিক্ত উদ্বেগের কারণ হতে পারে, যার প্রতিফলন ঘটতে পারে তাদের খাওয়া-দাওয়ায় বা ঘুমের অভ্যাসে। এমনকি পারস্পরিক কথাবার্তার সময় মনোযোগ এবং একাগ্রতার অভাব হতে পারে। এ সময় তাদের অস্থিরতা কাটাতে তাদেরকে সঙ্গ দিন। তাদেরকে মন খুলে কথা বলার জায়গা তৈরি করে দিন।
আরও পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
এই মহামারির সময় মানুষের অসুস্থ হওয়া রোধকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোতে কিশোর-কিশোরীদের ভালো রোল মডেল হতে উৎসাহিত করুন। যদি তারা প্রায়ই হাত ধোয়, অন্যদের থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকে এবং নিজেদের এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য সর্বত্র মাস্ক পরে, তাহলে ছোট বাচ্চারা এমনকি তাদের সমবয়সীরাও তাদেরকে দেখে শিখবে।
কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতে এবং প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখতে অনুপ্রেরণা দিন। তাদেরকে এই নীতি অনুসরণ করতে সাহায্য করুন যে, এ সময়টি খারাপ নয় বরং ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরির মোক্ষম সময়। এটি তাদের সুস্থ ও মনোযোগী থাকতে সাহায্য করবে। শুধু তাই নয়, অনলাইন মাধ্যমগুলোতে নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে নিজেদের উপার্জন শুরু করতে পারবে। এই করোনা মহামারীর মধ্যে অনেক কিশোর-কিশোরী নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করছে।
স্মার্টফোন, ভিডিও চ্যাট, সোশ্যাল মিডিয়া, এমনকি ভিডিও গেমের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে দিন। স্কুল-কলেজগুলো অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে তাদের সামাজিক এবং মানসিক চাহিদাগুলোকে পরিপূর্ণ করার জন্য শিক্ষনীয় নির্দেশনা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: মশার উপদ্রব থেকে সুরক্ষিত থাকার কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়
করোনাকালে বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা
বিষণ্নতা এবং গুরুতর উদ্বেগ বার্ধক্যের ক্ষেত্রে কোন স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বয়স্করা করোনাভাইরাসের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। এই ব্যাপারটি তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা, ভয় ও হতাশা উদ্রেকের মাধ্যমে তাদেরকে চূড়ান্তভাবে বেঁচে থাকার আশা হারিয়ে ফেলার দিকে ধাবিত করতে পারে। তাই এর জন্য তাৎক্ষণিক ক্লিনিকাল চিকিৎসা এবং সামাজিক সহায়তা আবশ্যক।
বর্তমান সংকট সামাজিক দূরত্বের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে প্রত্যেকের রুটিনকে বদলে দিচ্ছে। এতে স্বাভাবিক সামাজিক সহায়তা এবং বৃদ্ধ মানুষগুলোর অন্যদের সাথে যোগাযোগ হ্রাস পাচ্ছে। পরিবার এবং প্রতিবেশী এখন যে কোনও নিয়মিত যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে কাজ করতে পারে। এমনকি সামাজিক পরিষেবাগুলোর (যেমন খাবার সরবরাহ কর্মী) সাথে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। আসলে সামাজিক দূরত্ব মানে তো পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া নয়।
বার্ধক্যের সময়ে মানুষ বন্ধু বা পরিবারের কারো মৃত্যু, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও আর্থিক বিপর্যয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলা প্রভৃতি অভিজ্ঞতাগুলোর সম্মুখীন হয়। যদিও অনেকেরই দুঃখ এবং ক্ষতিগুলোকে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা থাকে। তবুও কারো কারো জন্য শোক কাটানোটা জটিল হয়ে উঠতে পারে। এই অভিজ্ঞতাগুলোর সাথে কোভিড-১৯ মহামারির চাপ মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে। তাই এ সময় আপনি ছায়া হয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। তাদেরকে শুধু আশা দেয়া নয়, তাদের মধ্যে এই নিশ্চয়তার অনুভূতিটা জাগ্রত রাখুন যে, তাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক বা মানসিক সমস্যায় আপনি তাদের সাথে আছেন।
আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক: করণীয় এবং প্রতিরোধে যে সকল পদক্ষেপ নিতে হবে
তাদের প্রতিদিন রুটিনে যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখুন। বিশেষ করে খাওয়া, ওষুধ নেয়া, ব্যায়াম করা ইত্যাদির প্রতি জোর দিন। এছাড়া প্রতিবেশীদের সাথে আড্ডাতেও তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করুন। অবশ্যই করোনাভাইরাস নিয়ে ইতিবাচক আলোচনাতে উৎসাহ দিন।
এছাড়া আপনার বন্ধু, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের মধ্যে যারা বৃদ্ধ তাদের নিয়মিত খোঁজ-খবর নিন।
যেহেতু অনেকে ম্যাসেজ বিনিময় এবং সোশ্যাল মিডিয়া সংযোগে সাবলীল নাও হতে পারে, তাই তাদের সাথে সরাসরি কল বা ভিডিও-চ্যাট করুন।
এই সময়টা তারা কীভাবে পার করছে, তাদের রুটিনে কেমন পরিবর্তন করতে হতে পারে এবং হতাশা মোকাবিলায় তারা কী ধরনের কাজ করছে তা জিজ্ঞাসা করুন।
আরও পড়ুন: কোলেস্টেরল কমানোর কার্যকরী ঘরোয়া উপায়
কোভিড চলাকালীন তাদেরকে কিছু মজার ক্রিয়াকলাপ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে পারেন। যেমন: দৈনন্দিন হাঁটা, গান শোনা বা বাজানো, প্রিয় গল্পের বই পড়া, হাস্যরস উপভোগ করা, ধাঁধা, খেলা, ছোট ছোট বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম এবং ধ্যান বা প্রার্থনা।
তাদের অভিজ্ঞতা এবং মেধার ভিত্তিতে তাদের কাছ থেকে আপনার জীবনের জন্য বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা নিন। তাদের কাজ থেকে পাওয়া যে কোন সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। সর্বোপরি, তাদের জীবন -যাপনের পদ্ধতিতে কোন জিনিসটি আপনার ভালো লাগে তা ব্যক্ত করুন।
পরিশেষে, কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিশু, কিশোর এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার্থে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ কাজের ব্যস্ততায় আপনি ঘরের বাইরে থাকলেও তারা নিজেদের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে পারবে। এমনকি, এই করোনাকালীন অনিশ্চিত অবস্থায় যখন আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তখন তারা আপনার যত্ন নিতে পারবে।
আরও পড়ুন: বর্ষায় পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন
৩ বছর আগে
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে বাংলাদেশি সংস্থার পাশে ফেসবুক
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলার জন্য নতুন কিছু সেবা চালু করতে চলতি মাসে বাংলাদেশি কয়েকটি সংস্থার সাথে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি।
৩ বছর আগে
সাংবাদিকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে করোনাভাইরাস: আইসিএফজে
বিভিন্ন খাতের চাকরির পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে কাজ করা সাংবাদিক ও তাদের নিউজরুমে মারত্মকভাবে প্রভাব ফেলছে বলে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জার্নালিস্টসের (আইসিএফজে) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে।
৪ বছর আগে
মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
সবার সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে নেয়ার প্রতি জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
৪ বছর আগে
করোনায় বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ক্ষতিগ্রস্ত: ডব্লিউএইচও
করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ (৯৩ শতাংশ) দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা বাধাগ্রস্ত অথবা বন্ধ হয়ে গেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক জরিপে উঠে এসেছে।
৪ বছর আগে