ভারত
কারাদণ্ডের পর এবার লোকসভার সদস্যপদ হারালেন রাহুল গান্ধী
মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডের একদিন পর শুক্রবার ভারতের পার্লামেন্ট সিনিয়র বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীর লোকসভার সাংসদ পদ খারিজ করেছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম্নকক্ষকে ইঙ্গিত করে সংসদের একটি নোটিশে বলা হয়েছে যে রাহুল গান্ধীর ‘লোকসভার সদস্যপদ খারিজ করা হলো’।
২০১৯ সালের নির্বাচনী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপাধি সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের জন্য আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।
রাহুল গান্ধী দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার ওয়েনাড়ের সাংসদ ছিলেন।
তিনি বর্তমানে ৩০ দিনের জন্য জামিনে রয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
রাহুল গান্ধীর দল কংগ্রেস এই রায়কে ‘ভুল এবং পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে অভিহিত করেছে।
দলের সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, দল ‘আইনগত ও রাজনৈতিক উভয়ভাবেই’ রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
শুক্রবার রাজধানী দিল্লিতে বিক্ষোভ মিছিলে বিরোধী নেতাদের নেতৃত্ব দেয় কংগ্রেস।
প্রতিবাদী সাংসদরা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সরকারি বাসভবন রাষ্ট্রপতি ভবনে মিছিল করার পরিকল্পনা করেছিলেন।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খারগে গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাহুল গান্ধী শুক্রবার সংসদে কথা বলার অনুমতি চেয়েছিলেন, কিন্তু তা প্রত্যাখান করা হয়।
আরও পড়ুন: মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীর ২ বছরের কারাদণ্ড
তিনি অভিযোগ করেছেন, রাহুলের বিরুদ্ধে এই রায় মূলত আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্তের দাবির ফলাফল।
এই বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শর্ট-বিক্রেতা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রকাশিত প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও আদানি গ্রুপ আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, ‘যারা সত্য কথা বলছে তারা (সরকার) তাদের রাখতে চায় না, তবে আমরা সত্য কথা বলতে থাকব।’
কংগ্রেস বলছে আগামী দিনে তারা সরকারের বিরুদ্ধে আরও বড় পরিসরে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে।
২০১৯ সালে একটি নির্বাচনী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপাধি সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে রাহুল গান্ধীকে।
২০১৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশে বলা হয়েছে যে একজন আইনপ্রণেতা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বা তার বেশি বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে অবিলম্বে সংসদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।
সাজা স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত বা মামলায় খালাস না পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে লড়তে পারবেন না রাহুল গান্ধী।
আগামী বছর ভারতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা।
কংগ্রেস পার্টি বলেছে, সরকারের ‘অন্যায়’ প্রকাশ করার জন্য টার্গেট করা হচ্ছে রাহুলকে।
মি. রমেশ গুজরাটের আদালতের রায়কে ‘খুবই গুরুতর রাজনৈতিক সমস্যা’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন এই রায় ‘আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত’কে প্রভাবিত করতে পারে।
বৃহস্পতিবার একটি দলীয় বৈঠকের পরে তিনি বলেন, ‘এটি মোদী সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতি, হুমকির রাজনীতি, ভয় দেখানোর রাজনীতি এবং হয়রানির রাজনীতির একটি বড় উদাহরণ’।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মন্ত্রীরা অবশ্য রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য রাহুল গান্ধী ও তার দলের সমালোচনা করেছেন।
কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব বলেছেন, রাহুল গান্ধী আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস (ওবিসি) নামে পরিচিত গোষ্ঠীর সদস্যদের অপমান করেছিলেন, যার অধীনে ‘মোদি’ নামটি পড়ে।
তিনি বলেন, ‘কোনও পদবীকে অপমান করা বাক স্বাধীনতা নয়।’
গত বছর কংগ্রেস দল ছাড়া ভারতের প্রাক্তন আইনমন্ত্রী কপিল সিবাল আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘উদ্ভট’ বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, রাহুল গান্ধীর মন্তব্য ‘একজন ব্যক্তিকে’ লক্ষ্য করে, কোনও গোষ্ঠীকে নয়।
বৃহস্পতিবারের রায়ের প্রতিক্রিয়ায়, রাহুল গান্ধী মহাত্মা গান্ধীর একটি উদ্ধৃতি টুইট করেছেন, ‘আমার ধর্ম সত্য ও অহিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত। সত্য আমার ঈশ্বর, অহিংসা তা পাওয়ার মাধ্যম।’
বেশ কয়েকটি বিরোধী দল রাহুল গান্ধীর সমর্থনে নেমেছে।
শুক্রবার কংগ্রেসসহ ১৪টি দল সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল।
তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার বিজেপির বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলোর অপব্যবহার করছে।
আরও পড়ুন: রাহুল গান্ধীকে আটকের পর ছেড়ে দিল দিল্লি পুলিশ
দিল্লিতে বিক্ষোভ থেকে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা আটক
মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীর ২ বছরের কারাদণ্ড
ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে বৃহস্পতিবার দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন সুরাটের একটি আদালত।
ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে এক নির্বাচনী সমাবেশে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম নিয়ে 'অবমাননাকর' মন্তব্যের জন্য দায়ের করা মানহানির মামলায় তাকে এই কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
তবে, আদালত জামিনে রাহুল গান্ধীর জামিন মঞ্জুর করেছেন এবং তাকে উচ্চ আদালতে আপিল করার অনুমতি দিয়ে ৩০ দিনের জন্য সাজা স্থগিত করেছেন।
রায়ের পরে বিজেপি নেতারা রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করে বলেন, তিনি (রাহুল) যাই বলুন না কেন তা কংগ্রেস দল এবং দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতারা বলছেন যে বিজেপি সরকার রাহুল গান্ধীর কণ্ঠস্বরকে দমন করার চেষ্টা করছে এবং তিনি রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।
কংগ্রেস নেতারা আরও অভিযোগ করেন, বিচার বিভাগ চাপের মধ্যে রয়েছে।
দলের প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে সহ কয়েকজন কংগ্রেস নেতা এই মামলায় বিচারক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন: রাহুল গান্ধীকে আটকের পর ছেড়ে দিল দিল্লি পুলিশ
অন্যদিকে, রায়ের কয়েক ঘন্টা পরেই ভিনীত জিন্দাল নামক সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী, লোকসভার স্পিকারের কাছে কারাদণ্ডের জন্য রাহুল গান্ধীকে হাউস থেকে অযোগ্য ঘোষণা করার অভিযোগ করেন।
রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানির মামলা করেছেন সুরাট পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদি।
২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে কর্ণাটকের কোলারে একটি লোকসভা নির্বাচনী সমাবেশে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘সব মোদিরা কেন চোর হয়?’
গত সপ্তাহে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এইচ ভার্মার আদালত উভয় পক্ষের চূড়ান্ত যুক্তি শুনানি শেষ করেন এবং চার বছরের পুরনো এই মানহানির মামলায় রায় ঘোষণার জন্য ২৩ মার্চ দিন ধার্য করেন।
রায় ঘোষণার সময় ওয়ানাডের সাংসদ রাহুল গান্ধী অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
গুজরাটের প্রাক্তন মন্ত্রী পূর্ণেশ মোদি আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি আদালতের রায়কে স্বাগত জানাই।
আরও পড়ুন: অর্থ পাচারের অভিযোগে রাহুল গান্ধীকে তলব
পূর্ণেশ মোদীর আইনজীবী কেতন রেশমওয়ালা বলেছেন, রাহুল গান্ধীকে আইপিসির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
রাহুল গান্ধী গত বছরের জুনে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
এই মামলায় দলের প্রাক্তন প্রধান সোনিয়া গান্ধীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির একটি আদালত মামলায় এই দুই নেতাকে জামিন দিয়েছিলেন।
রাহুল গান্ধীর প্রপিতামহী ইন্দিরা গান্ধীও আদালতের প্রতিকূল রায়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং ১৯৭৫ সালের জুন মাসে এলাহাবাদ হাইকোর্টে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ছয় বছরের জন্য কোনো নির্বাচিত পদে থাকা থেকে বিরত ছিলেন।
এই রায়ের ফলে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইন্দিরা গান্ধীকে নির্বাচনী অসদাচরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করার সময়, বিচারপতি জগমোহনলাল সিনহা তাকে সংসদ থেকে অযোগ্য ঘোষণা করেন এবং তার ওপর যে কোনও নির্বাচিত পদে থাকার ব্যাপারে ছয় বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
আরও পড়ুন: প্রিয়াঙ্কার অবৈধ গ্রেপ্তার যোগী সরকারের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার প্রকাশ: রাহুল গান্ধী
বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে চায় ভারত
বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে চায় ভারত।
সোমবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কার্যালয়ে বিডা’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়ী সংগঠন ভারত চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান ভারত চেম্বার অব কমার্সের নেতারা।
বিডা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব লোকমান হোসেন মিয়াঁ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের জ্বালানি ও বন্দর খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী সৌদি আরব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সভায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, বিনিয়োগের বিভিন্ন খাত, বিনিয়োগ সুযোগ-সুবিধা এবং বিডা’র সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন বিডা’র মহাপরিচালক জনাব শাহ মোহম্মদ মাহাবুব।
এ সময়ে সভাপতির বক্তব্যে, বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান জনাব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, গত একযুগে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারী সত্ত্বেও, দারুণ সফলভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাংলাদেশকে বিনিয়োগের অন্যতম সেরা গন্তব্যে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ ১৭০ মিলিয়ন মানুষের বৃহৎ এবং ক্রমবর্ধমান বাজার এবং আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা ও দিন দিন বাড়ছে।
এছাড়াও আমরা ইতোমধ্য ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ২৭টি হাইটেক পার্ক স্থাপনসহ নানাবিধ বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।
যার ফলে বাংলাদেশ এক দশক পরেই একটি উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে, তাই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার এখনই সেরা সময়।
এসময়ে ভারত চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট এন জি খইতান বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, ভারত বাংলাদেশ সবসময়ে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। গত দশ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন চোখে পড়ার মত, ভারতীয় বিনীয়গকারীগণ সব সময়েই বাংলাদেশের এই উন্নয়নের সহযোগী হতে আগ্রহী।
সভায় ভারত চেম্বার অব কমার্সের সেক্রেটারি অভিক রয় বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলো যাচাইয়ের জন্য আমরা চার দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছি।
এছাড়া বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন খাত যাচাই করব। আমাদের বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনয়োগ করতে আগ্রহী।
এ সময়ে বিডা’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির প্রকোপ কমলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আরও বাড়বে: পিটার হাস
পর্তুগালের এআইসিইপি’র সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সমঝোতা স্মারক সই করল ইপিবি
চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সকলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে বাংলাদেশ: সিএনএনকে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু কোনও বিশেষ দেশের সঙ্গে নয়, সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে।
তিনি বলেন, ‘আমরা চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সবারই কাছের। যারা আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করছে, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্কে (সিএনএন)- প্রচারিত এক সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: সমাজ পরিবর্তনে জীবনমুখী চলচ্চিত্র নির্মাণ করুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে এবং এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে বাংলাদেশ চীনের ‘খুব ঘনিষ্ট’ হয়ে যাচ্ছে- সিএনএন এর সিনিয়র সাংবাদিক রিচার্ড কোয়েস্ট এর এ মন্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। চীন এখানে বিনিয়োগ করছে এবং তারা নির্মাণকাজেও জড়িত। ‘ব্যাস এটুকুই। আমরা কারও ওপর নির্ভরশীল নই।’
তথাকথিত ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঋণ গ্রহণ বা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সিংহভাগ ঋণ নিয়ে থাকে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চীনা ঋণের ক্ষেত্রে আমাদের কেস শ্রীলঙ্কা বা অন্যদের মতো নয়।’
তিনি বলেন, তার সরকার যেকোনও উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে সব সময় আয় ও সুবিধা বিবেচনা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হল আমরা সবসময় আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি। আমরা অপ্রয়োজনীয় ঋণ বা বড় প্রকল্প গ্রহণ করি না। আমরা সর্বদা বিবেচনা করি কোন প্রকল্প থেকে আমরা রিটার্ন পেতে পারি এবং মানুষ কতটা উপকৃত হবে।’
বাংলাদেশ কখনো কোনও আগ্রাসন সমর্থন করে না
প্রধানমন্ত্রী সিএনএনকে আরও বলেন, বাংলাদেশ কখনোই কোনও ধরনের আগ্রাসন সমর্থন করে না, বরং আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করে।
তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি। কোনও বিরোধ থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। আমরা কখনই কোনও ধরনের আগ্রাসন বা সংঘাতকে সমর্থন করি না।’
আরও পড়ুন: ‘ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা ও মোদি
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিষ্কার ও স্বচ্ছ: ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়।’
তিনি বলেন, ‘সুতরাং, যখন আমরা কাউকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা আক্রমণ করতে দেখি, অবশ্যই আমরা এর বিরোধিতা করি।’
তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি মনে করি যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ববাসীর এগিয়ে আসা উচিত। কারণ, মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।
তিনি বলেন, যুদ্ধ এক পক্ষের দ্বারা সংঘটিত হতে পারে না, উভয় পক্ষের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি দেশেরই স্বাধীনভাবে তার ভূখণ্ডে বসবাস করার এবং তাদের নিজস্ব অঞ্চল রক্ষার অধিকার রয়েছে।’
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাংলাদেশের কী প্রয়োজন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মিয়ানমার ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না।
তিনি বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে চীন, আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহ, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে কথা বলেছে এবং তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ করেছে।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, মিয়ানমার সরকার কারও কথাই শুনছে না। এটাই সমস্যা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা (১২ লাখ) বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বড় বোঝা’ হয়ে উঠছে, কারণ আমাদের দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও, তাদের (রোহিঙ্গাদের) মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি খাবারের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার ওপর চাপ দিয়ে কোনও কাজ হবে না: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে। আমাকে তাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।’
সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব মঙ্গলবার ভোরে প্রচারিত হয়েছে এবং দ্বিতীয় পর্বটি শিগগিরই প্রচারিত হবে।
ভারত উন্নত যোগাযোগের জন্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের বন্দর ব্যবহার করতে পারে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত চাইলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বন্দর ব্যবহার করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য রাম মাধব তার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কে এম শাখাওয়াত মুন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার আঞ্চলিক সংযোগের ওপর জোর দিচ্ছে যার ফলশ্রুতিতে জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও ভালো হবে।
রাম মাধবের সাক্ষাতকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ওআইসি সদস্যদের দায়িত্ব নিতে হবে: মোমেন
ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্ব রয়েছে এবং আগামী দিনেও এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ সময় রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: ‘ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা ও মোদি
৩ বছর পর সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট তিন বছর বন্ধ থাকার পর থেকে আবারও চালু করা হয়েছে এর কার্যক্রম। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার সোনামসজিদ জিরোপয়েন্টে ফিতা কেটে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এসময় সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান, সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, মহদিপুর স্থলবন্দরের কাস্টমসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়, সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইসমাইল হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এখন থেকে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা সোনামসজিদ-মহদিপুর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াত করতে পারবেন।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট বন্ধ হয়ে যায়।
তবে, দীর্ঘ তিন বছর পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল বন্ধ থাকলেও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিলো।
আরও পড়ুন: ৩ বছর পর সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন খুলছে ১২ মার্চ
ওমিক্রনের নতুন সংক্রমণরোধে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে বাড়তি সতর্কতা
পূজার ছুটি শেষে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে কার্যক্রম শুরু
ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্পে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তকরণে একমত ভারত ও থাইল্যান্ড
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, ভারত ও থাইল্যান্ড ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক প্রকল্পে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত হয়েছে।
তবে, মিয়ানমার এখনও এ বিষয়ে তাদের মতামত জানায়নি।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তৃতীয় 'ফরেন অফিস কনসালটেশন' বৈঠকের পর সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র সচিব এ কথা বলেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এই ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে যোগ দিতে আমাদের আগ্রহ দেখিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে ভারতীয় এবং থাইদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা এটিতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রশ্ন হলো মিয়ানমার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। কারণ, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের এই বিষয়ে জড়িত করার সুযোগ পাইনি।’
বৈঠকে মহাসড়ক সংযোগ ছাড়াও বিমান ও সামুদ্রিক যোগাযোগের সমস্যাগুলোও আলোচনা করা হয়।
মাসুদ বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ বাড়াতে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য প্রস্তুত।
প্রেস ব্রিফিংয়ে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকা-ব্যাংকক রুটে সাপ্তাহিক ৩৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।
এর আগে, থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব সারুন চারোয়েনসুওয়ানের নেতৃত্বে একটি থাই প্রতিনিধিদল থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা ও অন্বেষণ করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করে।
আরও পড়ুন: ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক পুনস্থাপনকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ: মোমেন
থাইল্যান্ডকে একটি সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, ‘আমরা আমাদের সম্পর্কের সম্ভাবনা দেখেছি এবং আমরা বিশ্বাস করি যে যদিও বর্তমান বাণিজ্যের মাত্রা প্রায় এক বিলিয়নের কিছু বেশি, তবে অদূর ভবিষ্যতে এটি সহজেই দ্বিগুণ হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশে ব্যবসা করার সুযোগ ও প্রয়োজনীয় শর্ত তৈরি করতে সরকার কাজ করছে।
এদিকে, থাই পররাষ্ট্র সচিব সারুন চারোয়েনসুওয়ান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেছেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে এলডিসি থেকে উন্নীত হতে চলেছে, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে পেরে খুব খুশি। কারণ, আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে অপরকে সমর্থন করার সম্ভাবনার দিক দেখতে পাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সড়ক ও বন্দর ব্যবহারে ভুটানকে অনুমোদন
সালাহউদ্দিনকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের উদ্যোগ চায় বিএনপি
প্রতিবেশী দেশে ২০১৫ সালে অনুপ্রবেশের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সম্প্রতি ভারতের শিলংয়ের বিচারক আদালত খালাস পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সালাউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। কোনো বৈধ কারণ ছাড়াই তাকে আট বছর কারাগারে এবং ভারতে গৃহবন্দী থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারতীয় আদালতে খালাস পাওয়ায় তাকে ফিরিয়ে আনা সরকারের দায়িত্ব।
ফখরুল বলেন, 'সালাউদ্দিন আহমেদকে একজন মুক্ত মানুষ হিসেবে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।'
এ ব্যাপারে তিনি ভারত সরকারের সহযোগিতাও চেয়েছেন। ‘আমরা আমাদের প্রিয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে অবিলম্বে আমাদের কাছে ফিরে পেতে চাই।’
সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার মানবাধিকার নিশ্চিত করে মর্যাদার সঙ্গে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট’ আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়নের শিকারদের মধ্যে সালাহউদ্দিন অন্যতম।
বিএনপি নেতা বলেন, সালাহউদ্দিনকে ‘মিথ্যা মামলা’ জড়িয়ে ৮ বছর ভারতে নির্বাসনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। ‘অবৈধভাবে সে দেশে প্রবেশের জন্য তাকে ভারতের একটি আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল। বিচারিক আদালত ও আপিল আদালতের রায়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ খালাস পান।
বেকসুর খালাসের মাধ্যমে ফখরুল বলেন, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের ‘অবৈধ’ সরকারের সীমাহীন নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। ‘আমরা তাকে এখন নিঃশর্তভাবে ফিরে পেতে চাই।’
আরও পড়ুন: আ.লীগ সরকারও শ্রীলঙ্কার মতো গণঅভ্যুত্থানের মুখোমুখি হবে: মোশাররফ
তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশের যেকোনো উন্নত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের শিলংয়ের বিচারিক আদালত একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়কে বহাল রাখেন। যা ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে খালাস দেয়।
এর আগে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবরে প্রথম শ্রেণির বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট, ডিজি খারশিং-এর আদালত সালাহউদ্দিন আহমেদকে মামলায় খালাস দিয়েছিলেন এবং রাজ্য সরকারকে তার অবিলম্বে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন।
প্রায় দুই মাস নিখোঁজ থাকার পর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিনকে ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের রাজধানী শিলং-এ পাওয়া যায়।
কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিদেশি আইইনে মামলা হয়েছে।
পরে শিলং পুলিশ মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।
তবে বিএনপি দাবি করেছে যে সালাহউদ্দিনকে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা, যারা নিজেদের গোয়েন্দা পরিচয় দেয়।
আরও পড়ুন: আদানির সঙ্গে বিদ্যুতের চুক্তি বাতিলের দাবি বিএনপির
আদানির সঙ্গে বিদ্যুতের চুক্তি বাতিলের দাবি বিএনপির
ভারতীয় আদানি গ্রুপের সঙ্গে সরকারের বিদ্যুত চুক্তিকে রাষ্ট্রবিরোধী আখ্যা দিয়ে বিএনপি অবিলম্বে এই চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ইতোমধ্যে আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তির একটি অনুলিপি পেয়েছে। এটি একটি চরম অসম চুক্তি, যা একটি হীন উদ্দেশ্য নিয়ে সাক্ষরিত হয়েছে।’
বৃহস্পতিবার এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন পোস্ট আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুত চুক্তির বিষয়টি প্রকাশ করায়, একটি দেশের সরকার কীভাবে এ ধরনের চুক্তি করতে পারে তা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রশ্ন উঠেছে।
তিনি বলেন, ‘আদানির সঙ্গে এই চুক্তি দেশ ও জনগণের বিরোধী। আমি বলতে চাই এই চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ক্ষতিপূরণ আইন প্রত্যাহার করা উচিত।’
অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এইবি) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বিদ্যুত খাতে বিপর্যয়: গভীর সংকটে অর্থনীতি’- শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে মূল বক্তব্য রাখেন এইবির মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার হাসিন আহমেদ।
আরও পড়ুন: আ.লীগ সরকারও শ্রীলঙ্কার মতো গণঅভ্যুত্থানের মুখোমুখি হবে: মোশাররফ
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কোনও সহানুভূতি ও দায়বদ্ধতা না থাকায় আওয়ামী লীগ সরকার আদানির সঙ্গে চুক্তি করতে পারে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে এই সরকারের কোনও জবাবদিহিতা নেই। তারা টাকা চুরি করে বিদেশে বাড়ি তৈরি করে, ব্যবসা করে এবং আমাদের সাধারণ মানুষের পকেট কেটে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে।’
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ব্যবহার করার জন্য জনগণের অর্থ লুটপাট করছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘তারা আবার টাকা দিয়ে নির্বাচনে কারচুপি করবে। তারা নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেবে... টাকা ভরা খাম প্রিজাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে পুলিশ, বিজিবি, এমনকি যারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে তাদের সকল স্তরে যাবে। এটি ২০১৮ সালের মতোই সত্য।’
তিনি বলেন, তারা জানতে পেরেছে আগামী নির্বাচনে ভোট কারচুপির জন্য আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের ব্যবহার করতে সরকার নতুন কৌশল নিচ্ছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, সরকার বিভিন্ন কেন্দ্রের ফলাফল পরিবর্তন করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। ‘(মনিরুল হক) কুমিল্লার সাক্কু এদেরই একজন শিকার।’
আরও পড়ুন: আ.লীগ সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ‘লুট’ করেছে: নজরুল
জাতীয় নির্বাচনে আ.লীগকে আর প্রহসন করতে দেয়া হবে না: ফখরুল
তিস্তার পানি প্রত্যাহারে ভারতের আরও দুটি খাল খনন পরিকল্পনায় বিএনপির উদ্বেগ প্রকাশ
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অধীনে আরও দুটি খাল খনন করে একতরফাভাবে সাধারণ নদী থেকে আরও বেশি পানি প্রত্যাহার করার জন্য কথিত পদক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরও পড়ুন: চৌহালী উপজেলা বিএনপির ৭ নেতাকর্মীর পদত্যাগ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘(স্থায়ী কমিটির) বৈঠকে মনে হয়েছে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে একটি চুক্তি সই না করেই আরও দুটি খাল খননের পরিকল্পনা বাংলাদেশকে (অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য অংশ থেকে) বঞ্চিত করার চেষ্টা।’
সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ‘হাঁটু গেড়ে’ বৈদেশিক নীতি এবং পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নেয়ায় বাংলাদেশের মানুষ তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তারা ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ভারতীয় সংবাদ আউটলেট দ্য টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের অধীনে আরও দুটি খাল খনন ও সেচের পানি চ্যানেলাইজ করতে প্রায় এক হাজার একর জমির অধিগ্রহণ করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিস্তা ও জলঢাকা থেকে পানি তোলার জন্য একটি ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত খনন করা হবে এবং তিস্তার বাম তীরে আরেকটি ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল তৈরি করা হবে। এতে প্রায় এক লাখ কৃষক উপকৃত হবে।
তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি ১৯৭৫ সালে ভারত সূচনা করেছিল। উত্তরবঙ্গের ৯ দশমিক ২২ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার পরিকল্পনার মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানি নদীর উভয় তীরে খালের মাধ্যমে চ্যানেলাইজ করে।
বাংলাদেশের পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী থেকে পানি ভারতের প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর অংশ শুকিয়ে যাওয়ায় এই প্রকল্পটি কৃষি, বাস্তুতন্ত্র এবং দেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট নিরসনের জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের অপেক্ষায় থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এর বিরোধিতা করে আসছেন।
আরও পড়ুন: চবি সিন্ডিকেট নির্বাচনে বিএনপিপন্থী সাদা দলের বিজয়
পঞ্চগড়ে কাদিয়ানিদের জলসায় হামলাকারীর বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক: তথ্যমন্ত্রী