আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প
প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ঘর পাচ্ছে রাজশাহীর ১১৪৯ পরিবার
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে রাজশাহীর ১১৪৯টি পরিবার ঘর পাচ্ছে। বিভাগের প্রথম ধাপে ৬৯২টি ও দ্বিতীয় ধাপে ৮৫৪টি গৃহহীন ও ভূমিহীনরা রঙিন টিনশেডের সেমিপাকা বাড়ি পেয়েছেন।
রবিবার দুপুর ১২টাযর দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, ২৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তৃতীয় ধাপে রাজশাহীর ৯ উপজেলার ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত ১১৪৯টি ঘরের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া ৪৮১টি ঘর উপকারভোগী পরিবারের অনুকূলে হস্তান্তর করবেন। অবশিষ্ট আরও ৭৮৬টি ঘর আগামী বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর আগেই গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। এছাড়াও তৃতীয় পর্যায়ে ১২৬৭টি ঘরের মধ্যে ১১৪৯টি ঘরের চাবি তুলে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: মুজিববর্ষ: ঠাকুরগাঁওয়ে জমি-নতুন ঘর পাচ্ছেন ২৬১২ ভূমিহীন
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, রাজশাহীর ৯টি উপজেলার ১২৬৭টি পরিবারের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পবায় ১৫০টি, মোহনপুরে ৯২টি, তানোরে ১৬১টি, গোদাগাড়ী ২২৯টি, বাগমারায় ১৬০টি, দুর্গাপুরে ১৫৫টি, পুঠিয়ায় ১৮০টি, চারঘাটে ৬৫টি ও বাঘায় ৭৫টি পরিবার ঘর পাচ্ছে।
তিনি জানান, বৃহৎ এই কর্মযজ্ঞে ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ষাটোর্দ্ধ প্রবীণ ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। খাস জমিতে ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান করে একক গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে।
আব্দুল জলিল বলেন, প্রতিটি বাড়িতে থাকবে দুটি বেড রুম, একটা কিচেন রুম, একটা ইউটিলিটি রুম, একটা টয়লেট ও একটা বারান্দা। দুর্যোগ সহনীয় এসব ঘর হবে টেকসই এবং প্রতিটি ঘরেই থাকবে সোলার সিস্টেম আর বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা। প্রতিটি সেমিপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং রঙিন টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি সবগুলো বাড়ি সরকার নির্ধারিত একই নকশায় হচ্ছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মাঝে যুবলীগের ঈদ উপহার
তিনি জানান, ঘরগুলো নির্মাণে কোনও প্রকার অনিয়ম দুর্নীতি যাতে না হয় সে জন্য প্রত্যেক উপজেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিষয়টি তদারকি করেছেন।
২ বছর আগে
‘খাই না খাই শুকনা জাগায় থাকতে পারুম’
‘খাই আর না খাই শুকনো জাগায় থাকতে পারবো। জন্মদাতা পিতা যা কুরেছে (করেছে) তার থেকে বেশি ইনারা (তারা) কুরিছে (করেছে)। পানি হোলে (হলে) ভাত রান্তি (রান্না) যাতি (যেতে) হয় লোকের বাড়ি, এখন আর যাতি (যেতে) হবে না। প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করবো, সে আমাদের মাথার উপরে থাক। আমাদের গুরুজন নেই, সেই এখন আমাদের গুরুজন’-এমনটি বলছিলেন ভিক্ষুক রোকেয়া।
তিনি মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের হল রুমের বারান্দায় থাকতেন। দুই বছর আগে চেয়ারম্যান তাকে ইউনিয়ন পরিষদের পাশে মা ও শিশু ক্লিনিকের পিছনে একটি দো-চালা ঘর বেধে দেন। তবে সামান্য বৃষ্টি হলে ঘরের মধ্যে পানি ভরে যায়।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ঘর পেল ১ হাজার ৭০ পরিবার
কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের স্বামী পরিতাক্তা মঞ্জুয়ারা বেগম তার অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, লোকের বাড়ি খেটি তিনটি বাচ্চাকাচ্চা মানুষ কোরেছি। ঘর বাধতি পারতাম না, ভাঙাচুরো ঘরে নাড়ামাড়া জুড়ে জোড়াতালি দিয়ে ছালিবিলি নিয়ে বসবাস করতাম। খুব কষ্টে আমার দিন যাতু। আমি দিনমজুরি খেটি ২০০ টাকা পাই , তা দিয়ে চাল কিনবো না ছালিবিলির পোষাক পাতি দেব। খুব কষ্টে আমার দিন যাইতিছে। আমি ঘর আজও বানতি পারতাম না কালও বানতি পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী আমার একটা ঘর দিয়েছে আমি এখন ছেলিবিলি নিয়ে শান্তিতে থাকতি পারবো।
তিন ছেলে মেয়ে যখন ছোট তখন তার স্বামী তাকে ফেলে আর একটা বিয়ে করেন, সেই থেকে শুরু হয় মঞ্জুয়ারার জীবন যুদ্ধ জানান মঞ্জুয়ারা।
‘বৃষ্টি হলি এখন আর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতে হবে না। সারাদিন মানুষের কাছে সাহিয্য চেয়ে এসে একটু ঘুমাতে পারবো-এভাবে বলছিলেন উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের তৈয়বুর রহমান।
তিনি উপজেলা সদরের একটা মসজিদে ইমামতি করতেন। অবসর সময়ে বাচ্চাদের ও বয়স্কদের কুরআন শেখাতেন। ভালোই চলছিলো তার সংসার। ইচ্ছে ছিল একটা ঘর বাধবেন কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস ৫ বছর আগে তার কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। সেই থেকে বাজারে সাহায্য চেয়ে নিজের চিকিৎসা ও সংসার চালাতেন। ঘর পেয়ে খুশিতে তারা উল্লাসিত। রোকেয়া, মঞ্জুয়ারা ও তৈয়বুরের মতো এমনই প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন পার করা খুলনার কয়রা উপজেলায় ৩০টি গৃহহীন পরিবার পেল সেমিপাকা গৃহ ও ২ শতাংশ করে জমি।
আরও পড়ুন: ‘জীবনেও ভাবি নাই, পাক্কা ঘরে থাকবার পামু’
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী দেশের ৪৫৯টি উপজেলা প্রান্তে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর উপহার দিয়েছেন।
এ সময় তার প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাসের হাত থেকে জমির দলিল ও ঘরের চাবি বুঝে নেন এসব পরিবার।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম, প্রাণী সম্পদ অফিসার কাজী মোস্তাইন বিল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ্যাডভোকেট কেরামত আলী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত, উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার খালিদ হোসেন, সহকারি প্রোগ্রামার লিডম পাল ও উপকারভোগীরা।
৩ বছর আগে
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর পেয়ে মহা খুশি হাজেরা
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে ভাগ্য বদলেছে সেই হাজেরা খাতুনের। এখন আর তাকে থাকতে হয় না অন্যের জমিতে। কাজ করে যা উপার্জন করেন তা দিয়ে তিনবেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারেন স্বামী-সন্তান নিয়ে।
আরও পড়ুন: মুজিববর্ষে খুলনায় ঘর পাচ্ছেন আরও ১৩৫১ গৃহহীন
মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার হাজেরা খাতুনের কয়েকমাস আগেও দিনের পর দিন কেটেছে না খেয়ে। কখনও হোটেলে কাজ করে কখনও বা অন্যের জমিতে কাজ করে যা উপার্জন করতেন, তা দিয়েই কাটাতেন বছরের পর বছর। ঘর বলতে ছিল না কিছুই। অন্যের জমিতে থাকাই ছিল ভাগ্যের নিয়তি, এমনটাই মেনে নিয়েছিলেন হাজেরা খাতুন।
হাজেরা খাতুন জানান, আগে তিনি এবং তার স্বামী যা উপার্জন করতেন তা দিয়ে মৌলিক চাহিদাগুলোই পূরণ করা সম্ভব হতো না। কিন্তু ঘর পাওয়ার পর তাদের দুজনের উপার্জন থেকে যা আসে তা দিয়েই ভালোভাবেই চলতে পারেন। চাল-ডাল কিনে ঘরে রাখতে পারেন। ছেলেমেয়েরাও আর আগের মতো অভুক্ত থাকে না। শেষজীবনে ভাগ্যে এমন আমূল পরিবর্তন আসবে, এটা তিনি কখনও কল্পনাও করেননি বলে জানান।
আরও পড়ুন: গৃহহীনদের গৃহ দেয়া মানবাধিকারের অনন্য মাইলফলক: স্পিকার
এ বিষয়ে মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম জানান, মহম্মদপুর উপজেলায় জমিও নেই ঘরও নেই, এমন পরিবার রয়েছে ২৮৭টি। তাদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩০ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় জমি ও ঘর দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব ঘর পেয়ে ছিন্নমূল মানুষেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
৩ বছর আগে
নওগাঁয় ১৭৮টি গৃহহীন পরিবার পেলো নতুন ঘর
নওগাঁ সদর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ১৭৮টি ঘর নির্মাণ করে গৃহহীন পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করেছে নওগাঁ সদর উপজেলা প্রশাসন।
৪ বছর আগে