‘খাই আর না খাই শুকনো জাগায় থাকতে পারবো। জন্মদাতা পিতা যা কুরেছে (করেছে) তার থেকে বেশি ইনারা (তারা) কুরিছে (করেছে)। পানি হোলে (হলে) ভাত রান্তি (রান্না) যাতি (যেতে) হয় লোকের বাড়ি, এখন আর যাতি (যেতে) হবে না। প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করবো, সে আমাদের মাথার উপরে থাক। আমাদের গুরুজন নেই, সেই এখন আমাদের গুরুজন’-এমনটি বলছিলেন ভিক্ষুক রোকেয়া।
তিনি মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের হল রুমের বারান্দায় থাকতেন। দুই বছর আগে চেয়ারম্যান তাকে ইউনিয়ন পরিষদের পাশে মা ও শিশু ক্লিনিকের পিছনে একটি দো-চালা ঘর বেধে দেন। তবে সামান্য বৃষ্টি হলে ঘরের মধ্যে পানি ভরে যায়।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ঘর পেল ১ হাজার ৭০ পরিবার
কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের স্বামী পরিতাক্তা মঞ্জুয়ারা বেগম তার অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, লোকের বাড়ি খেটি তিনটি বাচ্চাকাচ্চা মানুষ কোরেছি। ঘর বাধতি পারতাম না, ভাঙাচুরো ঘরে নাড়ামাড়া জুড়ে জোড়াতালি দিয়ে ছালিবিলি নিয়ে বসবাস করতাম। খুব কষ্টে আমার দিন যাতু। আমি দিনমজুরি খেটি ২০০ টাকা পাই , তা দিয়ে চাল কিনবো না ছালিবিলির পোষাক পাতি দেব। খুব কষ্টে আমার দিন যাইতিছে। আমি ঘর আজও বানতি পারতাম না কালও বানতি পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী আমার একটা ঘর দিয়েছে আমি এখন ছেলিবিলি নিয়ে শান্তিতে থাকতি পারবো।
তিন ছেলে মেয়ে যখন ছোট তখন তার স্বামী তাকে ফেলে আর একটা বিয়ে করেন, সেই থেকে শুরু হয় মঞ্জুয়ারার জীবন যুদ্ধ জানান মঞ্জুয়ারা।
‘বৃষ্টি হলি এখন আর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতে হবে না। সারাদিন মানুষের কাছে সাহিয্য চেয়ে এসে একটু ঘুমাতে পারবো-এভাবে বলছিলেন উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের তৈয়বুর রহমান।
তিনি উপজেলা সদরের একটা মসজিদে ইমামতি করতেন। অবসর সময়ে বাচ্চাদের ও বয়স্কদের কুরআন শেখাতেন। ভালোই চলছিলো তার সংসার। ইচ্ছে ছিল একটা ঘর বাধবেন কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস ৫ বছর আগে তার কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। সেই থেকে বাজারে সাহায্য চেয়ে নিজের চিকিৎসা ও সংসার চালাতেন। ঘর পেয়ে খুশিতে তারা উল্লাসিত। রোকেয়া, মঞ্জুয়ারা ও তৈয়বুরের মতো এমনই প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন পার করা খুলনার কয়রা উপজেলায় ৩০টি গৃহহীন পরিবার পেল সেমিপাকা গৃহ ও ২ শতাংশ করে জমি।
আরও পড়ুন: ‘জীবনেও ভাবি নাই, পাক্কা ঘরে থাকবার পামু’
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী দেশের ৪৫৯টি উপজেলা প্রান্তে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৪০ পরিবারকে দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর উপহার দিয়েছেন।
এ সময় তার প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাসের হাত থেকে জমির দলিল ও ঘরের চাবি বুঝে নেন এসব পরিবার।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম, প্রাণী সম্পদ অফিসার কাজী মোস্তাইন বিল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ্যাডভোকেট কেরামত আলী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত, উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার খালিদ হোসেন, সহকারি প্রোগ্রামার লিডম পাল ও উপকারভোগীরা।