অ্যান্টিবায়োটিক
অসম্পূর্ণ কোর্স বা অতিরিক্ত সেবনে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি
২০২০ সালে করোনা আক্রান্ত হলে জিহান আরাকে (৩৮) বেশ কয়েকটি পরীক্ষার নির্দেশ দেন চিকিৎসক। এরপরই জানতে পারেন ১৪টি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী (রেজিস্ট্যান্স) হয়ে উঠেছে তার শরীর।
এর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন যেসব অ্যান্টিবায়োটিক তার শরীরে প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে, সেগুলোর কোনোটাই তিনি কোর্স সম্পন্ন করেননি অথবা অতিমাত্রায় নিয়েছেন। বাকি মাত্র কয়েকটা অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলো তার শরীরে কাজ করবে।
বছর ছয়েকের আফরিন নাবার মাঝে মাঝেই জ্বর-ঠান্ডাজনিত নানা অসুখ হয়। তার মা মনিরা আক্তার জানান, বেশি জ্বর হলে ডাক্তারের কাছে নিতাম। সাধারণ জ্বরের বা ঠান্ডার ঔষধ দিত। জ্বর বাড়লে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে বলতেন। ৭ দিনের কোর্স থাকলে তিন দিন পর জ্বর কমে গেলে আমি আর অ্যান্টিবায়োটিক দিতাম না। বুঝতে পারিনি যে এটার কোর্স শেষ করতে হবে জ্বর থাকুক বা না থাকুক। এভাবে ৪টি অ্যান্টিবায়োটিক আমার মেয়ের শরীরে প্রতিরোধী হয়ে যায়।
এসব ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, শরীর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত হুমকি। এ তাই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।
রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, সংসদ অনুমোদিত ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট, ২০২৩ নিবন্ধিত চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের বিক্রি নিষিদ্ধ করে।
আরও পড়ুন: শেকড় হারানো মায়েদের আশ্রয়স্থল ‘আপন ভুবন’
ঢাকার বেশ কয়েকটি ফার্মেসিতে ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ফার্মাসিস্ট হয় নতুন আইন সম্পর্কে জানে না এবং হাতে গোনা কয়েকজন নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলছেন।
বিশ্বব্যাপী, ১৮ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত, অ্যান্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ পালন করা হয়, যা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ক্রমবর্ধমান সমস্যাকে তুলে ধরে। বিশেষজ্ঞরা প্রাসঙ্গিক আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের কারণ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করছেন।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী কী?
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক শামসুজ্জামান বলেন, 'মানুষের শরীরে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ অথবা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা না হলে শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে নিজ থেকেই প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। একে বলা হয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী।’
নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে এই সমস্যা আরও বেড়ে যাবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যত বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, তত বেশি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।’
প্রতিরোধের কারণ
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বর্তমান প্রধান ডা. সাজ্জাদ বিন শহীদ ইউএনবিকে বলেন, বাংলাদেশে সর্দি বা জ্বরের মতো সাধারণ রোগের জন্য প্রায়শই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, যার ফলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠতে সহায়তা করে।
তিনি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বিস্তারকে সংক্রামক রোগের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে যেতে পারে, যা সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু রোগীর ৫০ শতাংশই ঢাকার, এরপরেই রয়েছে চট্টগ্রাম-বরিশাল
অনেক উন্নত দেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কেনা যায় না। তবে বাংলাদেশে এর উল্টো। এখানে অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
ড. শহীদ আরও বলেন, অনেক লোক বুঝতে পারে না যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে অকার্যকর, যা শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতার জন্য ৯৯ শতাংশ দায়ী।
নতুন আইনে নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধ হবে বলে তিনি আশাবাদী। আগে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা ফার্মেসিগুলোকে শাস্তি দেওয়া হতো না, কিন্তু এখন ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন প্রয়োগ ও জরিমানা করতে পারে।
ঔষধ প্রশাসনের বক্তব্য
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) সাবেক উপপরিচালক এবং আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের কারণে প্রতি বছর ৫০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
তিনি বলেন, পূর্ববর্তী জনস্বাস্থ্য আইনগুলো যথাযথ ছিল না। এ কারণে নিবন্ধিত চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ করার জন্য নতুন বিধিবিধানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই আইনের অধীনে আইন ভঙ্গকারীদের ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং তাদের ফার্মেসির লাইসেন্স বাতিলও হতে পারে।
প্রতিরোধ ও সমাধান
অধ্যাপক শামসুজ্জামান অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের আগে অ্যান্টিবায়োটিক কালচার সেনসিটিভিটি টেস্ট করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কোন অ্যান্টিবায়োটিক নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর হবে তা এই পরীক্ষাগুলোতে চিহ্নিত করা হলেও খরচ ও সময় ব্যয়ের কারণে বাংলাদেশের মাত্র ১ শতাংশ রোগী এই পরীক্ষা করান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে অবৈধভাবে স্টেরয়েডের ব্যবহার বাড়ছে, ঝুঁকিতে মানবস্বাস্থ্য
বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিম্নলিখিত পরামর্শ দেন-
• প্রেসক্রিপশনের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশিকা অন্তর্ভুক্ত করাসহ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।• রোগীদের নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পন্ন করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।• অপব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক প্রচার শুরু করতে হবে।• সমস্ত স্তরের হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে কালচার টেস্টের ব্যবস্থা করতে হবে।• অ্যান্টিবায়োটিকের অননুমোদিত বিক্রয় কঠোরভাবে প্রতিরোধে আইন প্রয়োগ করতে হবে।
প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ফার্মেসিকে জরিমানা
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশরাফ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, ২০২৩ সালের ঔষধ ও কসমেটিকস আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিতরণ করলে ফার্মেসিগুলোকে ২২ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এই নিয়ম আইনগতভাবে প্রয়োগ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন পরিচালনা করা হবে, যার ফলে দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া এবং দণ্ড কার্যকর করা হবে। আইন অমান্যকারীদের লাইসেন্স বাতিল হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এ ধরনের আইন লঙ্ঘন রোধে ফার্মেসি মালিক ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করার জন্য ফার্মেসিগুলো পরিদর্শন করবে এবং বৈধ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কেউ ঔষধ সরবরাহ করলে তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, চাপ সৃষ্টি হচ্ছে ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর
২ মাস আগে
খাদ্য নিরাপদ করতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার কমানোর আহ্বান উপদেষ্টার
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মানুষের খাদ্য প্রাণীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য পেতে হলে প্রাণীর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যা খাই যেমন— সবজি, ফল বা মাছ-মাংসের মধ্যে থেকে যাওয়া অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে আমাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে। যার ফলে রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলেও তা আর কাজ করে না।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দেলদুয়ার উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত উপজেলা পরিষদ হল রুমে দেলদুয়ার উপজেলার পোল্ট্রি, গবাদিপশু ও মৎস্য খামারিদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় উপদেষ্টা এসব কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন: ইতালির ভিসা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে, আশা উপদেষ্টা তৌহিদের
কোম্পানি থেকে মাছ-মুরগির খাদ্য না কিনে খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে খামারিদের প্রতি আহ্বান জানান উপেদষ্টা।
সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর খামারিদের পাশে থাকবে।
খামারিরা মুরগির বাচ্চা ও খাবার মূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা স্বাধীন খামারি হবেন, কন্ট্রাক্ট খামারি হবেন না।
তিনি আরও বলেন, কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো ব্যবসা করে যাচ্ছে। ফলে তারা লাভবান হচ্ছে। প্রকৃত খামারিরা লাভবান হচ্ছে না।
উপদেষ্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, নদী-নালা-খাল-বিল ভরাট হলে কীভাবে কাজ করা যাবে?
এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা এগুলো বাঁচাতে প্রয়োজনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করবেন বলে মত বিনিময় সভায় আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি অবৈধভাবে নদী-নালা-খাল-বিল দখলদারদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন।
উপদেষ্টা আরও বলেছেন, নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে পোল্ট্রি শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে এবং এর ফলে নারীরা অনেকক্ষেত্রেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা আবদুল্লাহ আল-নূরের সভাপতিত্বে আরও বক্তৃতা দেন- টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম।
এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা ছাড়াও ৫০ জন প্রাণিসম্পদ খামারি ও ৪০ জন মৎস্য খামারি এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার অবস্থান জানে না সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
২ মাস আগে
অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ: কেন অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না?
১৯২৮ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং-এর পেনিসিলিন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয় অ্যান্টিবায়োটিক। গিণিপিগ হিসেবে পশুর উপর সর্বপ্রথম অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ শুরু হয় ১৯৮০-এর দশকে। অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ক্যান্সারের চিকিৎসা, অঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করেছে, যা ওষুধ শিল্পে অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ এবং কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
ভুল সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার রোগাক্রান্ত অবস্থার আরো অবনতি ঘটায়। প্রেসক্রিপশন ছাড়া রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ তো আছেই, কোন কোন ক্ষেত্রে অনেক ডাক্তারও ছোট ছোট ক্ষেত্রে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক নেয়ার পরামর্শ দেয়। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে অ্যান্টিবায়োটিকটি এক সময় কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। চলুন, অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ না করার সাথে অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগের সম্পর্কটি নিরূপণ করা যাক।
বিশ্বজুড়ে অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ
শিশুদের আপাত ভাইরাল শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রধানত ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হওয়া সত্ত্বেও, ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। শিশুদের কানে টিউবযুক্ত সমস্যায় কানে অ্যান্টিবায়োটিক ইয়ারড্রপ না দিয়ে মুখে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোহয়। এতে অবাঞ্ছিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। সাঁতারুদের কানে অ্যান্টিবায়োটিক ইয়ারড্রপ দিয়ে চিকিৎসা করা উচিত, মুখে অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়ে নয়।
পড়ুন: তীব্র গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়
মানসম্মত নির্দেশিকা ছাড়া অনেক দেশে এমনকি উন্নত বিশ্বেও প্রায়শই স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকরা জনসাধারণকে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
চিকিৎসা ছাড়াই সমাধানযোগ্য সাইনোসাইটিস-এর সমস্যার ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক নিতে বলা হয়। প্রায়ই রোগীর ব্যাকটেরিয়াজনিত কনজাংটিভাইটিস আছে কিনা তা নিশ্চিত না হয়েই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়া থাকে যা নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষায় সনাক্ত করা হয়। এখানে ব্যক্তির মূত্রনালীর সংক্রমণের লক্ষণ না থাকলেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে ধাবিত করা হয়। মুখ দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ একজিমার চিকিৎসা নয়। শুষ্ক ত্বক বা অন্যান্য উপসর্গের চিকিৎসায় লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
অস্ত্রোপচারের ক্ষতগুলো সারানোর জন্য নন-অ্যান্টিবায়োটিক মলম বা কোনও মলমের চেয়ে ভালো কাজ না করলেও টপিক্যাল অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগের কুফল
যখন প্রথম সারির অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা সংক্রমণের চিকিৎসা করা যায় না, তখন আরও ব্যয়বহুল ওষুধ ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে। এতে অসুস্থতা এবং চিকিৎসার দীর্ঘ সময়কাল প্রায়ই হাসপাতালটিতে চিকিৎসা খরচ বাড়ায়; সেইসাথে পরিবার এবং সমাজের উপর আর্থিক বোঝা গেড়ে বসে। কখনো কখনো এর কারণে মৃত্যুর আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলায় সমূহ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। অঙ্গ প্রতিস্থাপন, কেমোথেরাপি এবং সিজারিয়ানের মত অস্ত্রোপচারগুলো অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এন্টিবায়োটিকগুলো কম কার্যকর হওয়ার কারণে সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান তালিকা - যেমন নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, রক্তে বিষক্রিয়া, গনোরিয়া এবং খাদ্যজনিত রোগের চিকিৎসা করা কঠিন এবং কখনও কখনও অসম্ভব হয়ে উঠছে।
যে কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি আগে থেকেই অ্যালার্জি থাকলে, সেই রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যাবে না। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে ত্বকের ফুসকুড়ির মতো উপসর্গগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে, যাকে অ্যানাফিল্যাক্সিস বলা হয়। এই রোগে শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে এবং ঠোঁট বা জিহ্বা এবং মুখ ফুলে যেতে পারে।
পড়ুন: ডায়রিয়া বা উদরাময়: কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
অ্যান্টিবায়োটিক-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বরূপ পেট খারাপ বা ফুসকুড়ির মতো হালকা উপসর্গ থেকে শুরু করে মারাত্মক অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া, কিডনির আঘাত এবং লিভারের ক্ষতি পর্যন্ত হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক কাজ না করার কারণ: অ্যান্টিবায়োটিক নিরোধক
অ্যান্টিবায়োটিক নিরোধক হল সেই অবস্থা, যখন ব্যাকটেরিয়াকে তাকে ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে আর ধ্বংস করা যায় না। অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অপব্যবহারের ফলাফল-ই হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক নিরোধক।
অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ তখনি ঘটে যখন ব্যাকটেরিয়া এই ওষুধগুলো ব্যবহারের প্রতিক্রিয়াতে আর সাড়া দিতে পারে না। আর এই সময়টি হলো যখন অ্যান্টিবায়োটিক অত্যধিক হারে ব্যবহার করা হয়।
পড়ুন: হঠাৎ প্রেসার কমে গেলে করণীয়
যতবারই একটি নতুন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রবর্তিত হয়, তার সাথে সাথে ঔষধের প্রতিরোধী হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিকও আসে। পেনিসিলিনের প্রথম ক্লিনিকাল ট্রায়ালের এক দশকের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক নিরোধকের আবির্ভাব ঘটে। অতঃপর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকে।
শেষাংশ
অ্যান্টিবায়োটিক-এর অপপ্রয়োগ সমগ্র জাতিকে ঠেলে দিচ্ছে এক পোস্ট-অ্যান্টিবায়োটিক যুগের দিকে, যেখানে ছোটখাটো আঘাতই মৃত্যু ঘটাতে পারে। চিকিৎসকদের অপর্যাপ্ত পেশাদার দক্ষতা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের সাথে সম্পর্কিত জটিলতাগুলোকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। প্রেসক্রিপশন বা রোগ নির্ণয় ছাড়াই শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা এবং উচ্চ কার্যকারিতা অত্যধিক ব্যবহার বিশেষ করে অপব্যবহারের দিকে পরিচালিত করছে। তাই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের নিমিত্তে শিগগিরই অ্যান্টিবায়োটিক নিরোধকের ব্যাপকতা রুখতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন অ্যান্টিবায়োটিকের অপপ্রয়োগ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা।
পড়ুন: টেক্সট নেক সিন্ড্রোম: অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল
২ বছর আগে
কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক নিশ্চিতে প্রযুক্তি বিনিময়ের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
সাশ্রয়ী মূল্যে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধায় ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের প্রতি প্রযুক্তি বিনিময় ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আসুন আমরা এই সময়ে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) প্রতিরোধে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করি।’
মঙ্গলবার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বিষয়ক গ্লোবাল লিডারস গ্রুপের (জিএলজি) দ্বিতীয় সভায় আগে থেকে ধারণ করা ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এএমআর চ্যালেঞ্জে মোকাবিলায় বিভিন্ন সেক্টরে ধারাবাহিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। এই বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে দেখে আমি সন্তুষ্ট। ওয়ান হেলথ প্রস্তাবসহ বহুখাতের ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানে অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে জন্য জিএলজির অগ্রাধিকারকে সমর্থন দিতে পেরেও আমি আনন্দিত।’
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিলেই স্কুল খুলতে প্রস্তুত আছি: গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জিএলজির কাজের পরিধি বাড়ানোর জন্য আমাদের ভূমিকা পালন করব।’
এসময় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, গবেষণা ও উন্নয়ন এবং নতুন উদ্ভাবনে ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল প্রাপ্তি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন।
নিজের দেশ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স কন্টেন্টমেন্টের ওপর বাংলাদেশ একটি ছয় বছরের (২০১৭-২২) জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা এবং জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করেছে। বাংলাদেশে এএমআর রেসপন্স এলায়েন্স গঠন করা হয়েছে।
আর পড়ুন: নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না: আইসিডিডিআর,বি
৩ বছর আগে
নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না: আইসিডিডিআর,বি
বাংলাদেশে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না বলে আইসিডিডিআর,বি ও ম্যাসাচুসেটস জেনেরাল হসপিটালের (এমজিএইচ) যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক এ.কে.এম. তারিফুল ইসলাম খানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইসিডিডিআর,বি এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটাল (এমজিএইচ)- এর এক গবেষণাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে রোগজীবাণু প্রতিরোধী হয়ে উঠছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সেটা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন : ঢাকায় ৭১ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি: আইসিডিডিআরবি
আইসিডিডিআর,বি-এর নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস ডিভিশনের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. মোহাম্মদ জোব্বায়ের চিশতি এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন।
ড. চিশতি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত অ্যান্টিবায়োটিক ও শ্বাসতন্ত্রের উন্নততর চিকিৎসা পাওয়ার পরেও ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কয়েক ডজন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা গেছে।’
নিউমোনিয়া ফুসফুসের একটি সংক্রমণ। যার ফলে বায়ু থলিগুলোতে তরল পদার্থ ও পুঁজ জমা হয় এবং এতে কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়। কার্যকর চিকিৎসা ছাড়া এই সংক্রমণ মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: কোভিডের বিরুদ্ধে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা আশাব্যঞ্জক: আইসিডিডিআর,বি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ নিউমোনিয়া। কমবয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ভাইরাসের কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে, তবে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়ার কারণেও নিউমোনিয়া হতে দেখা যায়। আরও উদ্বেগের বিষয় যেসব শিশুর ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ ছিল না তাদের তুলনায় অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর সম্ভাবনা ১৭ গুণ বেশি ছিল।
৩ বছর আগে
হোমিকরসিন: বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত নতুন অ্যান্টিবায়োটিক
হোমিকরসিন নামে একটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের মাধ্যমে ইতিহাস রচনা করলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা। পাটের বীজ থেকে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া থেকে তারা খুঁজে বের করেছেন এই অসামান্য অ্যান্টিবায়োটিকটি, যা শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু রোগীর প্রাণ বাঁচাবে। গত ২৭ মে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা ন্যাচারের ‘সাইন্টিফিক রিপোর্ট্স’ জার্নাল তাদের এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। চলুন, এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের ব্যাপারে আরো কিছু জেনে নেই।
আবিষ্কারের পটভূমি
পাট অনেক আগে থেকেই মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছে। তাই বিভিন্ন অঙ্গনে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ কাজও হয়েছে এই সোনালী আঁশ নিয়ে।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য জিনতত্ত্ববিদ প্রয়াত ড. মাকসুদুল আলম ২০১০ সালে আবিষ্কার করেন পাটের জিন নকশা। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা মোবারক আহমেদ খান পাট থেকে ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিস করেছেন। তার মধ্যে ২০০৯ সালে জুটিন (ঢেউটিন) এবং ২০১৮ সালে সোনালী ব্যাগ (পলিথিন) উল্লেখযোগ্য।
আর ২০২১ এর এই মাঝামাঝিতে সেই পাট থেকেই দেশের গবেষকরা খুঁজে বের করলেন জীবন বাঁচানোর ঔষধ। ব্যাকটেরিয়া ও পাটের বৈজ্ঞানিক নাম থেকেই ‘হোমিকরসিন’ অ্যান্টিবায়োটিকটির নামকরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় প্রথম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে সফল তড়িৎ বিশ্বাস
অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির গবেষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুপ্রাণ ল্যাবে ৩ বছর ধরে চলমান গবেষণাটিতে কাজ করেছেন ৭ জন গবেষক। তন্মধ্যে বায়োজ্যেষ্ঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপিকা হাসিনা খান, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম এবং জীন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিন ছিলেন নেতৃস্থানীয়। তাদের সাথে কাজ করেছেন বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের (বিসিএসআইআর) সদস্য এএইচএম শফিউল ইসলাম মোল্লা। এছাড়া গবেষক হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিভাগের ৩ জন শিক্ষার্থী শাম্মী আক্তার, মাহবুবা ফেরদৌস, বদরুল হায়দার এবং আল আমিন।
দীর্ঘদিন ধরে পাট নিয়ে গবেষণারত হাসিনা খান পাটের জীবন রহস্য উদঘাটনের সময় এর ভেতর তিনি সন্ধান পান বিভিন্ন ধরনের অণুজীবের। মুলত এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জানার আগ্রহ থেকেই শুরু হয় নতুন গবেষণার।
গবেষণায় বেরিয়ে আসে দারুণ সব তথ্য। পাটের তন্তুর খাঁজে খাঁজে ৫০টিরও বেশি অণুজীব বাস করে। এদের মধ্যে ‘স্টেফাইলো কক্কাস হোমিনিস’ নামক একটি ব্যাকটেরিয়া আছে যা নিজের শরীর থেকে এমন কিছু তৈরি করে, যাতে অন্য ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যায়। অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়াটি রীতিমত একটি সাক্ষাত অ্যান্টিবায়োটিকের মতো আচরণ করছে। এই অ্যান্টিবায়োটিকের ৫টি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করেছেন গবেষকগণ। এর মধ্যে দুটির ব্যাপারে ইতোমধ্যে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা আছে। বাকি ৩টির কার্যকারিতা নিয়ে এখনো কাজ চলছে।
আরও পড়ুন: মনপুরায় জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা দুটি হরিণ শাবক অবমুক্ত
হোমিকরসিন-এর কার্যকারিতা
যাদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না এমন রোগীদের দেহে খুব ভালোভাবেই কাজ করতে পারে হোমিকরসিন। বেশ কিছু শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে মোক্ষমভাবে লড়াই করতে পারে এই অ্যান্টিবায়োটিক। সুপার বাগ নামে পরিচিত এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে, যার প্রচলিত কোন অ্যান্টিবায়োটিকেই প্রতিকার হয় না। এগুলোর ক্ষেত্রেও সফল হয়েছে এই নতুন এন্টিবায়োটিক।
অ্যান্টিবায়োটিক মূলত দুই ধরনের হয়। একটি হলো ব্রড স্পেক্ট্রাম, যেটা সব ধরনের অণুজীবে কাজ করে। আরেকটা হচ্ছে গ্রাম-পজিটিভ এবং গ্রাম-নেগেটিভ। শুধুমাত্র একটি ব্রড স্পেক্ট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে একসাথে অনেক জীবাণুর বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। তাই গবেষকরা এই ক্যাটাগরিকেই খুব বেশী কার্যকর মনে করে এসছেন। কিন্তু সমস্যার ব্যাপার হচ্ছে- একবার যদি তার বিপক্ষে বিপক্ষ অণুজীবটি প্রতিরোধ দাঁড় করিয়ে ফেলে, তখন অ্যান্টিবায়োটিকটি আর কাজ করে না। আনন্দের ব্যাপার হলো- হোমিকরসিন ব্রড স্পেক্ট্রাম ক্যাটাগরিতে পড়েনি। শুধু তাই নয়, এটি গবেষকদের গ্রাম পজিটিভ-নেগেটিভ ক্যাটাগরির ব্যাপারেও পূর্বের ধারণা পাল্টে দিয়েছে।
পরিশেষ
হোমিকরসিন অ্যান্টিবায়োটিক কত দ্রুত জনসাধারণের নিকট পৌছাবে সেটা নির্ভর করছে সরকার ও ফার্মাসিউটিক্যাল্স কোম্পানিগুলো থেকে পর্যাপ্ত ফান্ডিংয়ের উপর। সাধারণত যে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক বাজারজাত করতে কমপক্ষে ৫ বছর লেগে যায়। তাই প্রাণ রক্ষাকারী এই ঔষধের দ্রুত যোগান নিশ্চিতকরণে সরকারী ও বেসরকারী সব মহলের যৌথ উদ্যোগ সময়ের দাবী।
আরও পড়ুন: যশোরে ৫৯টি বিষধর গোখরা সাপের ডিম উদ্ধার
৩ বছর আগে
অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে বিশ্বকে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে বিশ্বকে সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
৪ বছর আগে
ডা. জাফরুল্লাহর ফুসফুস কোভিড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তার ফুসফুস কোভিড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
৪ বছর আগে