মৌসুমি ফল
কদবেলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
কদবেল এমন একটি মৌসুমি ফল, যার বাইরের আবরণটি শক্ত, রুক্ষ ও বাদামী। ভেতরটা গাঢ় বাদামী সজ্জা বিশিষ্ট কুঁচকানো রজনী লোমের বীজযুক্ত। ভেতরের এই নরম শাঁসালো খাওয়ার অংশটি ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত। টক স্বাদের কারণে এটি জ্যাম এবং চাটনি তৈরির জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। কদবেল মূলত ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় ফল। আজকের নিবন্ধটি কদবেলের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে।
মৌসুমি ফল কদবেলের পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম কদবেলের মধ্যে ১৩৪ ক্যালরি শক্তি, সাত গ্রাম প্রোটিন, চার গ্রাম ফ্যাট, দুই গ্রাম খনিজ, পাঁচ গ্রাম ফাইবার, ১৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১১০ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে।
কদবেলে রয়েছে ফাইটোকনস্টিটিউয়েন্ট মারমেনল, মারমিন, মারমেলোসিন, মারমেলাইড, সোরালেন, অ্যালোইম্পেরেটোরিন, রুটারেটিন, স্কোপোলেটিন, এজেলিন, মারমেলিন, ফ্যাগারিন, লিমোনিন, এ-ফেল্যান্ডরিন, বেটুলিনিক অ্যাসিড এবং অ্যানহাইড্রোমারমেলিন।
আরও পড়ুন: খেজুর খাওয়ার উপকারিতা: সারাদিন রোযা রেখে ইফতারে কেন খেজুর খাবেন?
এছাড়াও ট্যানিন, রিবোফ্লাভিন এবং অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড এবং ম্যালিক অ্যাসিডের মত বিভিন্ন জৈব অ্যাসিডে ভরপুর কদবেল।
কদবেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
ডায়রিয়া প্রতিরোধ এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি
কদবেলে ডায়রিয়া প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ই. কোলাই এবং শিগেলা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট পাকস্থলীর সংক্রমণ বন্ধ করতে পারে। কদবেলের অপরিপক্ক ফল অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করা বন্ধ করতে পারে। আয়ুর্বেদ এবং লোকজ ওষুধ বহু শতাব্দী ধরে ডায়রিয়ার জন্য কদবেল ব্যবহার করে আসছে। এর ভেতরের রাসায়নিক উপাদান রাইবোফ্লাভিন এবং থায়ামিন শরীরকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এর রস কিডনির রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং অন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
বদহজমের প্রাকৃতিক ঔষধ
উচ্চ ফাইবার সামগ্রী এবং রেচক গুণের কারণে কদবেল কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজমের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা হিসেবে সহায়ক।
আরও পড়ুন: রন্ধন পাঠশালা: ঢাকায় কোথায় রান্না শেখার কোর্স করতে পারবেন?
ছত্রাক, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া বিরোধী
কদবেলে এমন যৌগ রয়েছে যা রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাসিলাস সাবটিলিস, স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস, ই. কোলাই এবং সিউডোমোনাস অ্যারুগিনোসার মতো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর। এছাড়াও মেনিনজাইটিস, হেমোরেজিক কনজাংটিভাইটিস, মায়োকার্ডাইটিস এবং এনসেফালাইটিস রোগগুলোর জন্য দায়ী কক্সস্যাকি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কদবেলের অ্যান্টি-ভাইরাল কার্যকারিতা রয়েছে।
হাঁপানির বিরুদ্ধে কার্যকারিতা
হাঁপানির উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য কদবেল পাতার নির্যাসের আয়ুর্বেদিক ব্যবহার আছে। উদ্ভিদের অ্যালকোহলযুক্ত নির্যাসটিতে অ্যান্টিহিস্টামাইন কার্যকলাপ রয়েছে, যা অ্যালার্জির ট্রিগারের কারণে অ্যাজমার উপসর্গগুলোকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। এটি ফুসফুসের হিস্টামিন প্ররোচিত সংকোচন উপশম করতে সাহায্য করে।
মধুর সাথে ৮ থেকে ১৬ গ্রাম তাজা কদবেল পাতার নির্যাস হাঁপানির বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর। কারণ কদবেল ফলের পাতায় থাকে অ্যালকালয়েড এবং এজেলিন দায়ী।
আরও পড়ুন: গোল্ডেন মিল্কের জাদুকরি উপকারিতা
ক্যান্সার থেকে প্রতিরক্ষা
কদবেলের নির্যাস স্তন ক্যান্সার সৃষ্টিকারি কোষের বিস্তার বন্ধ করতে পারে। লুপেওল, ইউজেনল, সিট্রাল, সিনেওল এবং ডি-লিমোনিনের মত ফাইটোকেমিক্যালগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধের মতো কাজ করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
কদবেল ফল উচ্চ কোলেস্টেরল পরিচালনায় সহায়ক হতে পারে। এর পাতার গুঁড়া অপরিশোধিত ফাইবারের একটি সমৃদ্ধ উৎস। জলীয় নির্যাসে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যালকালয়েড এবং ফেনোলিক্স মানবদেহে লিপিড-হ্রাসকারী প্রভাবের জন্য দায়ী। তাই এই ফলের রস দেহের জন্য একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হতে পারে।
আলসার নিরাময়
কদবেল পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হতে পারে, কারণ এতে আলসার নিরাময়ে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কদবেলে ট্যানিক এবং ফেনোলিক উপাদান রয়েছে, যা মুলত উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর তাই পাইলস এবং আলসারের চিকিৎসায় এটি সহায়ক হতে পারে।
আরও পড়ুন: পুষ্টিগুণ অটুট রেখে শীতকালীন সবজি খাওয়ার সঠিক উপায়
কিডনির স্বাস্থ্য এবং রক্তচাপের জন্য ভালো
কদবেল একটি মূত্রবর্ধক, যা কিডনিকে সাহায্য করে প্রস্রাবের আকারে শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম অপসারণ করতে। ফলে রক্তচাপ কমে যেয়ে রক্ত শিরা এবং ধমনী থেকে চাপ কমে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
শরীরে কার্বোহাইড্রেটের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে কদবেল ডায়াবেটিসের অগ্রগতি ধীর করে দেয়। এই সময় এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর চিনির বৃদ্ধি প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
কদবেলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কোষ্ঠকাঠিন্য
অতিরিক্ত কদবেল খাওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য পাচন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং ডায়রিয়ার লক্ষণগুলো পরিচালনার জন্য এই ফল খাওয়ার পরিমাণ সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
আরও পড়ুন: লাল চাল: কেন খাবেন এবং কারা এড়িয়ে চলবেন?
হাইপোগ্লাইসেমিয়া
রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর সম্ভাবনা থাকায় কদবেল একটি উপকারি ফল। কিন্তু এর অত্যধিক ব্যবহার রক্তে শর্করার মাত্রা খুব কমিয়ে দেয়। এতে মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি এবং চেতনা শূন্যতা অনুভূত হতে পারে। এই ধরনের হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
এলার্জি প্রতিক্রিয়া
এই মৌসুমি ফলে বেশ কিছু ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান রয়েছে, যা কখনো কখনো অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বমি বমি ভাব, বমি, পেট খারাপ, শ্বাসকষ্ট, ত্বকে ফুসকুড়ির মতো আরও গুরুতর লক্ষণের মাধ্যমে এই প্রতিক্রিয়াগুলো প্রকাশ হতে পারে।
কাদের জন্য কদবেল খাওয়া উচিত নয়
ফল খাওয়া ভালো কিন্তু অতিরিক্ত ফল খাওয়া বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে। তাই অন্যান্য ফলের মতো এই ফলের বেলায়ও বিশেষজ্ঞগণ ভারসাম্য বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন: কঠোর ডায়েটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসমূহ জেনে নিন
থাইরয়েড সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের এই ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদেরও এই ফল পরিত্যাগ করা উচিত। দীর্ঘ সময় ধরে কদবেল খেলে এতে থাকা ট্যানিন অন্তঃসত্ত্বা নারীদের দ্রুত গর্ভপাতের দিকে ধাবিত করতে পারে।
যারা বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এই ফলটি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। বেশি পরিমাণে এই ফল খাওয়ার ফলে গ্যাস, ফোলাভাব এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর ফলে পরিপাকতন্ত্র সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
নানা পরিবেশনে কদবেল ফল
একটি ছুরি দিয়ে কদবেল ফলের বাইরের শক্ত আবরণে ছিদ্র করার সাথে সাথেই এর ভেতরের শাঁসের ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যায়। পুরো ফলটিকে আপেলের মতো খোসা ছাড়িয়ে বা অর্ধেক করে কেটে ভেতরের অংশ বের করে নেয়া যেতে পারে। তবে বেশ শক্ত কদবেলের জন্য এটিকে ভারী ধারালো ছুরি কয়েকবার সজোরে আঘাত করতে হতে পারে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ডালিমের খোসার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার
ভেতরের শাঁসটি যেমন আছে ঠিক তেমন ভাবেই খেয়ে নেয়া যায়। তবে বেশি টক হলে তাতে কিছুটা গুড় বা মধু মেশিয়ে নেয়া যেতে পারে। গুড়ের সাথে কদবেলের শাঁস মিশিয়ে তাতে একটু পানি যোগ করা যেতে পারে। তারপর তাতে গোলমরিচ এবং এলাচ গুঁড়ো দিলেই দারুণ একটি সতেজ পানীয় তৈরি হয়ে যাবে।
কদবেলের আবরণের ভেতরেই সজ্জায় চিনি, লবণ এবং মরিচ ভালোভাবে মিশিয়ে সুস্বাদু নাস্তা তৈরি করা যায়। তারপর তাতে ছোট কাঠি দিয়ে রাস্তাঘাটে বিক্রি করা হয়। এটি জনপ্রিয় একটি স্ট্রিট ফুড। এছাড়াও চাটনি এবং জ্যাম তৈরিতে কদবেল একটি বহুল ব্যবহৃত ফল।
পরিশিষ্ট
কদবেল এমন জায়গায় বেড়ে উঠতে সক্ষম, যেখানে অন্য গাছ টিকতে পারে না। এর গাছ মাটির প্রতিকূল পরিবেশ, জলাবদ্ধতা এবং অস্বাভাবিকভাবে ব্যাপক তাপমাত্রায় অনেকটাই সহনশীল। তবে এর বৃদ্ধি খুব ধীর গতি সম্পন্ন। প্রথম ফল আসতে কমপক্ষে ১৫ বছর সময় লাগে।
আরও পড়ুন: গ্রীন কফি: উপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বানানোর নিয়ম
মৌসুমি ফল কদবেলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার জন্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর বহুল ব্যবহার আছে। সবচেয়ে বড় ব্যবহারটি হলো কিডনির সমস্যার ওষুধ তৈরিতে। চিকিৎসার পাশাপাশি কদবেল ব্যবহারের আরও কিছু জায়গা আছে। থাইল্যান্ড এবং মায়ানমারের নারীরা কদবেলের শক্ত অংশটিকে প্রসাধনী বানানোর কাজে ব্যবহার করেন। কদবেলের বহিরাবরণটি ছোট বাক্স বা গোলাকার আকৃতির পাত্রে পরিণত করা যেতে পারে। কদবেলের আঠা বিভিন্ন রঙ এবং কালি উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
২ বছর আগে
ঠাকুরগাঁওয়ে লিচুর দাম আকাশচুম্বি
ঠাকুরগাঁওয়ে অবিশ্বাস্যভাবে লিচুর দাম বেড়ে গেছে। বর্তমানে জেলায় লিচুর দাম এখন আকাশচুম্বি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আকারে কিছুটা বড় চায়না থ্রি জাতের লিচুর দাম অনেক। ১০০ লিচুর দাম ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। বোম্বে জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা প্রতি’শ হিসাবে।
সদর উপজেলার পোকাতি গ্রামের আব্দুল হামিদ জানান, তার বাগানের প্রতি একশ বেদানা জাতের লিচু কিছুদিন আগে ৮০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এই দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।
আরও পড়ুন: জমিদার হরিপদের কাছারি বাড়ি থেকে লিচু চাষ শুরু
সিঙ্গিয়া গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, তিনি আগেই বাগান কিনেছেন। বাগানেই চায়না থ্রি জাতের লিচু প্রতি হাজার ৯ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এই দামে তিনি ঢাকার এক ব্যবসায়ীর কাছে ২০ হাজার লিচু বিক্রি করেছেন।
আরও পড়ুন: লিচু দিয়ে রূপচর্চা
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন জানান, এ বছর জেলায় প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। ফলন হয়েছে কম। তবে দাম বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড খরায় মাগুরায় লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
৩ বছর আগে
মেহেরপুরে শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও হার্টের সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
মেহেরপুরের গাংনীতে শ্বাসকষ্ট, সর্দিজ্বর ও হার্টের সমস্যা নিয়ে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।
৪ বছর আগে