পুঁজিবাজার
‘নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংকট শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই’
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের হতাশা ভুলে ভালো সময়ে ফেরার অপেক্ষা করছে।
কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শেয়ারবাজারের অবস্থা পুনরুদ্ধার, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কার তত্ত্বাবধান করা উচিত তা নিয়ে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ফ্লোর প্রাইস (ন্যূনতম বিক্রয় হার) এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পতনের উপর আটকে আছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, পুঁজিবাজারের অনেক হতভাগ্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর জন্য এটি বেদনাদায়ক।
নীতিনির্ধারকরা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা জানিয়ে বলেছে, নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি এবং বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে স্টক মার্কেট পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। কিন্তু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অবস্থা আশাহীন বলেই মনে হচ্ছে।
বিপুল সংখ্যক শেয়ারহোল্ডার এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগে আটকে রয়েছেন।
আব্দুল লতিফ নামে এক মুদি দোকানের মালিক এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী ইউএনবিকে বলেন, ‘কেউ, এমনকি নিয়ন্ত্রক বা স্টক মার্কেট কর্তৃপক্ষও তাদের ডাকে সাড়া দেয় না।’
তিনি জানান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনতে ২০১১ সালে তিনি ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন।
১৯৯৮ সালে স্নাতক শেষ করার পর লতিফ কোনো উপযুক্ত চাকরি খুঁজে পান না। তারপর ২০০২ সালে তার শ্বশুরের সহায়তায় মতঝিল এলাকায় একটি ছোট ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায় ভালো লাভ করেন এবং শেয়ার বাজারে টাকা বিনিয়োগ করেন।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ বাড়ছে ব্যয়বহুল ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের
২০১০ সালে লতিফ প্রায় ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, যার মধ্যে ৫ লাখ তার নিজের এবং ৮ লাখ আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার করেছিলেন।
২০১১ সালে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির কারণে তার সব বিনিয়োগ বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে আটকে যায়।
২০১১ সালে লতিফের মতো হাজার হাজার বিনিয়োগকারী তাদের কষ্টার্জিত মূলধন হারিয়েছিল এবং এরপরে কেউ কেউ মূলধন ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই প্রায় সব বিনিয়োগ হারিয়ে পুঁজিবাজার ছেড়ে যান।
এরকম আরও অনেক বিনিয়োগকারী এখনও ডিএসইতে ফেরার আশায় রয়েছেন, কিন্তু কোনো আশা পাচ্ছেন না তারা।
আগামী নির্বাচনের আগে ফ্লোর প্রাইস উঠার কোনো লক্ষণ নেই।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারের ওপর মানুষের আস্থা নেই। আগামী জানুয়ারির মধ্যে সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি।
অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জা আজিজুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এরসঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকট, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন ও জাতীয় রাজনীতিসহ সবকিছু।’
ফলে সবার আগে আস্থার সংকট দূর করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান তিনি।
অর্থাৎ, বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস দিতে হবে যে কেউ যদি কারসাজির মাধ্যমে তাদের টাকা চুরি করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়া, ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এই দুই কাজের মাধ্যমে বাজার সমস্যা দূর করা সম্ভব।
তবে এটা মোটেও সহজ নয় বলে জানান ড. আজিজুল ইসলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বলেন, বাজারে দুটি সংকট রয়েছে: একটি চাহিদার ক্ষেত্রে এবং অন্যটি বিনিয়োগকারীদের আস্থায়।
আরও পড়ুন: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির ১১.২% কর আদায়ের লক্ষ্য সরকারের
তিনি বলেন, সরবরাহের দিক থেকে সমস্যা হলো ভালো কোম্পানি কম আছে। ফলে এটা কারসাজি ও সিন্ডিকেটের জন্য উইন-উইন পরিস্থিতি।
সব মিলিয়ে শেয়ারবাজার বর্তমানে একটি অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে রয়েছে এবং ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এখান থেকে অবস্থা পরিবর্তন খুবই কঠিন বলে জানান তিনি।
বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারের অবস্থা ভয়াবহ। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
সরকারের কাছেও বাজার তার গুরুত্ব হারিয়েছে। যারা সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, তাদের জন্য শেয়ারবাজার বিরক্তির কারণ।
তাদের ভাবনাটা এরকম, শেয়ারবাজার না থাকলে দেশে কোনো সমস্যা থাকবে না। এসব কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস দিয়ে বাজার ধরে রাখতে চায় সরকার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজারের ভেতরের লোকজন জানিয়েছেন,এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার আশীর্বাদপুষ্ট সিন্ডিকেটের জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করার একটি সুযোগ করে দেয়।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম এ প্রসঙ্গে ইউএনবিকে বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে নেই। বিনিয়োগকারীদের গুজবের উপর নির্ভর করে যেকোনো কোম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগ থেকে সাবধান হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক জ্ঞানের অভাবে মানুষ অনেক সময় বড় লাভের আশায় দুর্বল শেয়ারে বিনিয়োগ করছে, যা বিনিয়োগের সঠিক উপায় নয়।
আরও পড়ুন: বেসরকারি খাতের উৎপাদকদের ক্রমবর্ধমান অর্থ বকেয়া বিদ্যুৎখাতের অন্যতম বাধা
শেয়ারবাজারে এক সপ্তাহে মূলধন বৃদ্ধি ছাড়াল ১০ হাজার ১৮৫ কোটি
পুঁজিবাজারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি মাসের ৪র্থ সপ্তাহে পুঁজিবাজার চার দিনে ১০ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা মূলধন বৃদ্ধি হয়েছে।
গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেনের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। শেষ দিনে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা।
আপরও পড়ুন: ৪ প্রতিষ্ঠান পেল টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স
অর্থাৎ মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে তা বেড়েছে দুই হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। টানা দুই সপ্তাহ বাজারে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বেড়েছে।
গত সপ্তাহে (২২ থেকে ২৬ জানুয়ারি) পাঁচ কার্যদিবসে কেনাবেচা হয়েছিল। প্রথম ব্যবসায়িক দিনে সূচকের পতন দেখা গিয়েছিল, তারপরে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার টানা চারটি ব্যবসায়িক দিনে সূচক বেড়েছে।
এই সময়ে ডিএসইতে মোট ৩৮৭টি শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৬৩টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, কমেছে ১১৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৫টির।
আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১১৪টির দাম বেড়েছে, ৬৮টির দরপতন হয়েছে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০৫টির। আগের সপ্তাহের তুলনায় দাম কমানো কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে।
তবে বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়ে যাওয়ায় ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট বেড়ে বিদায়ী সপ্তাহে ছয় হাজার ২৯৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসই’র অন্য দু’টি সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ছয় পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে এবং ডিএস-৩০ সূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ২৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সূচক বাড়লেও কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে তিন হাজার ৫০ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল তিন হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৮০০ কোটি টাকার লেনদেন কমেছে; শতাংশ হিসাবে এটি ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)ও একই অবস্থায় লেনদেন হয়েছে।
গত সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক ৮৯ পয়েন্ট বেড়ে ১৮ হাজার ৫৬৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে লেনদেন হয়েছে ৬৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১০৪ দশমিক ৫৫ কোটি টাকা।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে ৬১টির শেয়ার দর বেড়েছে, ৮৩টির দাম কমেছে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩৪টি কোম্পানির।
আপরও পড়ুন: শেয়ার বাজার কারসাজিকারীকে চিহ্নিত করতে ৬-১২ মাস সময় লাগে: বিএসইসি চেয়ারম্যান
প্রফিট শেয়ার করার জন্য হাওয়া ভবন ও পিএমওতে উন্নয়ন উইং নেই: ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী
পুঁজিবাজার বাড়াতে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক জ্ঞান আবশ্যক: বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে আর্থিক জ্ঞান এবং ভালো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উভয়ই আবশ্যক।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজার দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত, তাই জ্ঞানী বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারকে টেকসই করতে চালনা করতে পারে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) এ অনুষ্ঠিত অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: মিজোরামের মন্ত্রীর সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বৈঠক
টিপু মুনশি বলেন, উন্নত অর্থনীতিতে ৫০ শতাংশের বেশি টাকা পুঁজিবাজার থেকে নেয়া হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে সেই অবস্থা নেই। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়, যা ব্যাংকিং খাতে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। যদি ৫০ শতাংশ টাকাও পুঁজিবাজার থেকে আসে তাহলে আমাদের দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হতে বাধ্য।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নিজেদের স্বার্থে একটি গোষ্ঠী চতুরতার সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সংজ্ঞায়িত করছে, গুজব ও মিথ্যাচার ছড়াচ্ছে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
টিপু মুনশি বলেন, ‘দেশ এত উন্নতি করেছে, এবং তারা বলছে, এটা ঠিক নয়। কিন্তু দৃশ্যমান উন্নতিকে তারা আর অস্বীকার করতে পারে না। যারা এসব করছে, তারা এদেশের উন্নয়ন চায় না।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম, সভাপতিত্ব করেন অর্থ সূচকের সম্পাদক জিয়াউর রহমান।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএপিএলসি) সভাপতি আনিস উদ দৌলা, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি সাঈদুর রহমান এবং ঢাকা ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও।
আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি
ব্যবসায়ীরা কানাডা থেকে গম আমদানি করছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের আর্থিক সাক্ষরতা বাড়াতে কাজ করছে বিএসইসি: অধ্যাপক শিবলী
বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জনগণের আর্থিক সাক্ষরতা বাড়াতে কাজ করছে। যাতে তারা সচেতনভাবে ও লাভজনকভাবে বিনিয়োগ করতে পারে।
এ লক্ষ্যে, বিএসইসি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সঙ্গে সহযোগিতা করছে।
ইউএনবির সঙ্গে কথা বলার সময় অধ্যাপক শিবলী স্বীকার করেছেন যে কখনও কখনও লোকেরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করতে বা ভুল তথ্যের পিছনে ছুটতে প্রভাবিত হয়।
তিনি বলেন, ‘তারা যদি আর্থিকভাবে শিক্ষিত হতে পারে, তাহলে কেউ তাদের ঠকাতে পারবে না।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, দেশব্যাপী গড়ে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশের সঙ্গে বাংলাদেশে আর্থিক সাক্ষরতার স্কোর এখনও বেশ কম।
২০২২ সালের সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে, এসএসসির নিচে শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষ, ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, ব্যক্তি উদ্যোক্তা, ঢাকাবাসী, গৃহিণী ও কৃষকদের স্কোর সবচেয়ে কম।
বিএসইসি ২০২৩ সালের মধ্যে পুঁজিবাজারে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট বা আরইআইটি, পিঙ্ক ও অরেঞ্জ বন্ড চালু করার জন্য কাজ করছে। পিঙ্ক বন্ডের মাধ্যমে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। এবং এসএমই ও বড় উদ্যোক্তারা অরেঞ্জ বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।
অধ্যাপক শিবলী বলেন, নারী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি আর্থিক খাতে তাদের ক্ষমতায়নের জন্য উভয় রঙিন বন্ড চালু করা হবে।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজার নিয়ে বিএসইসি’র সঙ্গে আলোচনায় বসবে আইএমএফ
এছাড়া পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য বিএসইসির একটি বিশেষ বন্ড পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন।
একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা এই নিরাপদ খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে বলেও জানান তিনি।
অধ্যাপক শিবলী বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শুধুমাত্র রাজস্বের ওপর নির্ভর করে সম্পন্ন করা যায় না।
প্রকল্পভিত্তিক অবকাঠামো বন্ড ও স্টক মার্কেট থেকে তহবিল সংগ্রহের জন্য মিউনিসিপ্যাল বন্ড উন্নয়নের জন্য একটি বৈচিত্র্যময় তহবিলের সুযোগ হবে।
তিনি বলেন, যদি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্রায় ১২-১৩ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়, তবে লোকেরা তাদের অর্থ এফডিআর ও সঞ্চয়পত্রে জমা না করে প্রকল্প ভিত্তিক বন্ড মার্কেটে অর্থ বিনিয়োগ করবে।
তিনি আরও বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অবকাঠামো ও অন্যান্য সেবা খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের বিনিয়োগের চাহিদা মার্কিন ডলার ৮০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু একটি বড় অংশ পুঁজিবাজারের মাধ্যমে সম্ভব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার ধৈর্য রাখেন এবং বিনিয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করতে চান তাদের বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ করা উচিত এবং আইডিএফ ও সেভিং সার্টিফিকেট থেকে তাদের রিটার্নের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ পাওয়া উচিত।
মিউচুয়াল ফান্ড, ট্রেজারি বন্ড এবং অন্যরা পুঁজিবাজারে লেনদেন করছে, সেখানে যে কেউ বা সাধারণ মানুষ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে।
তিনি বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডগুলো গত ১০/১২ বছরে প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাদের আর্থিক জ্ঞান আছে তারা সেকেন্ডারি শেয়ার ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগ করতে পারে এবং মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করতে পারে। তাদের বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড পছন্দ করা উচিত।’
নিয়ন্ত্রক তার মেয়াদে কোম্পানির অডিট সিস্টেম চাপিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে ব্রোকারেজ হাউসের জবাবদিহিতার দিকে পুঁজিবাজারে কয়েক ডজন সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। ফলে আগামীতে পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে থাকবে।
অধ্যাপক শিবলী বলেন, ‘আমরা শুধু বীজ রোপণ করেছি, যেখান থেকে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গাছ বা গাছগুলো দৃশ্যমান হবে।’
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজার টিকিয়ে রাখতে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল দাবি বিএমবিএ’র
পুঁজিবাজার শিগগিরই দেশে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের প্রধান উৎস হবে: ভূমিমন্ত্রী
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিলো আইএমএফ
বাংলাদেশে সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। তারা এমনভাবে কাজ করতে পরামর্শ দিয়েছেন যাতে বাজারে বিভিন্ন স্তরের লোকদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
সোমবার (০৭ নভেম্বর) একটি বৈঠকে এই পরার্মশ দেন আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম ইউএনবিকে বলেন, নির্ধারিত বৈঠকে আইএমএফ দলটি সমাজের সব অংশের মানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে শেয়ারবাজারে পণ্য বৈচিত্র্যের পরামর্শ দিয়েছে।
তারা (আইএমএফ) কমোডিটি এক্সচেঞ্জ মার্কেট, রিয়েল এস্টেট এবং শেয়ার মার্কেটে অন্যান্য সেক্টরের তালিকাভুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ রিজার্ভ গড়ে তুলতে আইএমএফ এর ঋণ দরকার: বাণিজ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, আইএমএফ পুঁজিবাজারের প্রযুক্তিগত মানোন্নয়ন এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রেই সহায়তা করবে। যাতে বিশ্ব মান বজায় রেখে বাজার কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশে আইএমএফ মিশন চিফ রাহুল আনন্দ আইএমএফের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং বিএসইসির সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন।
এর আগে, আইএমএফ দল অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সঙ্গে আলোচনার জন্য বৈঠক করেন।
সোমবার চলমান আলোচনার অংশ হিসেবে আইএমএফ দল বিএসইসির শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে দেখা করে এবং নিয়ন্ত্রকের সক্ষমতা বাড়াতে কিছু পরামর্শ দেয়।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক বৈশ্বিক ঋণদাতার প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে এবং উপলব্ধি করতে ২৬ অক্টোবর সফর শুরু করে। কারণ দেশটি বাজেট সহায়তা হিসাবে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছিল।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোন বৈশ্বিক ঋণদাতার কাছে এত বড় ঋণ চায়নি। কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে প্রভাবিত করেছে।
ফলস্বরূপ, বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি বছরের জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে আইএমএফ-এর কাছে সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের জন্য আবেদন করে।
আরও পড়ুন: মর্যাদা ক্ষুন্ন হলে বাংলাদেশকে আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়ার দরকার নেই: এফবিসিসিআই
জিডিপি প্রতিবেদন প্রতি ৩ মাসে হালনাগাদ করার পরামর্শ আইএমএফের
পুঁজিবাজার নিয়ে বিএসইসি’র সঙ্গে আলোচনায় বসবে আইএমএফ
পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা এবং ফ্লোর প্রাইসসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আগামী ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে বৈঠকে বসবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর প্রতিনিধি দল।
প্রক্রিয়াটির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্ড বাজারের উন্নয়ন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ, কমপ্লায়েন্স অবকাঠামো এবং বাজারে প্রয়োগের ব্যবস্থা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করা হবে।
বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সোমবার ইউএনবিকে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বৈঠকের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে আইএমএফ দল
বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, কমিশনার ও নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান তিনি।
চলমান দরপতন ঠেকাতে চলতি বছরের ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারে বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস পদ্ধতি শুরু করে।
এরপরও বাজার বাড়লেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ বর্তমানে সর্বনিম্ন মূল্যেই আটকে আছে। বিনিয়োগকারীদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসব কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছেন না।
ফলে পুঁজিবাজারে লেনদেন ক্রমাগত কমছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশের চাওয়া সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে ওয়াশিংটন থেকে বৈশ্বিক ঋণদাতা আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ২৬ অক্টোবর ঢাকায় এসেছে।
আরও পড়ুন: আইএমএফের হিসাবে আরও কমে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ!
আইএমএফের সঙ্গে ঋণ নিয়ে আলোচনা সন্তোষজনক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র
২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা: সপ্তাহে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা কী হারিয়েছেন
সাপ্তাহিক বাজারের লেনদেন অনুসারে, গত সপ্তাহে (২৫-২৯ সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা দুই হাজার ৮২৯ কোটি টাকার লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে।
পাঁচ কার্যদিবসের বাজারে সূচকের মধ্যে তিন দিন পতন এবং দুই দিন উত্থান দেখা গেছে।
সপ্তাহে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামও কমেছে। ফলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের মূলধন কমেছে দুই হাজার ৮২৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৮৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৬১টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, ১৭৩টির দাম কমেছে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫২টির।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজার টিকিয়ে রাখতে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল দাবি বিএমবিএ’র
বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় সপ্তাহে ডিএসই সূচক ৫১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫১২ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহের তুলনায় ডিএসই এবং ডিএসইএস-এর অন্য দুটি সূচকের মধ্যে (বাংলাদেশ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) মূল্য, চার্ট, প্রোফাইল এবং অন্যান্য বাজার তথ্যসহ) ১৭ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪১৯ পয়েন্টে এবং ডিএস-৩০ সূচক ৩৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৩০ পয়েন্টে।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে গতি আনতে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সূচক ও লেনদেন কমায় সপ্তাহে বাজার মূলধনের পরিমাণ (মূলধন) কমেছে দুই হাজার ৮২৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। তবে আগের সপ্তাহে মূলধন বেড়েছে দুই হাজার ৬১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৫২২৭৬৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সপ্তাহের শেষে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষ কার্যদিবসে পুঁজি দাঁড়িয়েছে ৫১৯৯১৪ কোটি চার লাখ টাকা। মূলধন কমেছে ৫৪ শতাংশ।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজার চাঙা করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় গেল সপ্তাহে প্রধান ডিএসই সূচক ৫১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫১২পয়েন্ট। ডিএসইর অন্য দুটি সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক আগের সপ্তাহের তুলনায় ১৭পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪১৯ পয়েন্টে এবং ডিএস-৩০ সূচক ৩৫ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৩৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে অটোমেটেড ও ডিজিটাইজড করা হবে: পলক
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, শেয়ারবাজারের ফটকা কারবারি রোধে এবং বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে প্রযুক্তি সহায়তা দেবে আইসিটি বিভাগ।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির জন্য পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে অটোমেটেড ও ডিজিটাইজড করা হবে।
রবিবার রাতে রাজধানীর বারিধারায় ব্রোকারেজ হাউজ ‘আমায়া সিকিউরিটিজ লি.’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশে অর্থনীতির জন্য পুঁজিবাজারকেও শক্তিশালী করতে হবে। এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গর্ভনমেন্ট অ্যান্ড ইকোনোমি (ইডিজিই) প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের কল্যাণে অটোমেটেড ও ডিজিটাইজড করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সেজন্য আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তবে এজন্য ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে হবে।অনুষ্ঠানে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন চপ্পু’র সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আমায়া সিকিউরিটিজ চেয়ারম্যান ও কার সিলেকশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সেরনাবিয়াত, বারভিডার প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ ডন, এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন, ডিএসই ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া, সিসিবিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন: নারীদের প্রযুক্তি খাতে সম্পৃক্ত করতে না পারলে কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব না: পলক
‘ডিজিটাল ডেটা সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ হচ্ছে: পলক
পুঁজিবাজার টিকিয়ে রাখতে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল দাবি বিএমবিএ’র
পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট কাটাতে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল চেয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।
বিএমবিএ ৫-৭ বছরের জন্য ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) এর মাধ্যমে সহজ শর্তে তহবিল সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সোমবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
বিএমবিএর সভাপতি ছায়েদুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, নিয়ন্ত্রকের বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতার কারণে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পুঁজিবাজারে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে পারছে না।
আরও পড়ুন: দেশে এক দশকে স্টার্টআপ খাতে সাড়ে ৭’শ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে: আইসিটি প্রতিমন্ত্রী
তিনি বলেন,আমরা মধ্যস্থতাকারীদের জন্য কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল চাইছি। আমরা আশা করছি বাজারকে সমর্থন করতে সিএমএসএফের মাধ্যমে বন্ড ইস্যু করে আমাদের এই অর্থ দেবে কমিশন।
বিএমবিএ চিঠিতে উল্লেখ করেছে, বিএসইসির উদ্যোগ সত্ত্বেও বাজার সম্প্রতি অস্থির হয়ে উঠেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের ওপর শেয়ার বিক্রির চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে পর্যাপ্ত নগদ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানান ছায়েদুর রহমান।
তিনি আরও জানান, যদি বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের দিয়ে তহবিলগুলো সঠিকভাবে বিনিয়োগ করা হয়, তবে বর্তমান সমস্যাগুলি সমাধান করা যাবে এবং বাজারের তারল্য সংকট প্রশমিত হবে।
আরও পড়ুন: রবিবার থেকে এক কোটি পরিবারের কাছে টিসিবির পণ্য বিক্রয় শুরু: বাণিজ্যমন্ত্রী
পুঁজিবাজার শিগগিরই দেশে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের প্রধান উৎস হবে: ভূমিমন্ত্রী
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, পুঁজিবাজার শিগগিরই দেশে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের প্রধান উৎস হিসেবে আবির্ভূত হবে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আয়োজনে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিষয়ক তিন দিনব্যাপী রোড শোর প্রথম দিন সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: পুঁজিবাজারে গতি আনতে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সামষ্টিক ও ব্যষ্টিক অর্থনীতির মাঝে চমৎকার ভারসাম্য বিরাজ করছে-এর অর্থ আমরা ঠিক পথেই এগুচ্ছি।’
উপস্থিত ইউরোপীয় বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে ভ্রমণ করলে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলেই আপনারা বুঝতে পারবেন সেখানে কেমন পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশে কাজ করলেই বোঝা যাবে যে এই পরিবর্তনের নেতৃত্বে আছে আমাদের বেসরকারি খাত। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল বাংলাদেশ ঝুঁকিবিহীন বিনিয়োগে একটি নির্ভরযোগ্য নাম। আমাদের অর্থনীতি এই সময় জুড়ে দুর্দান্ত সাফল্য লাভ করেছে।’
সুইস রাষ্ট্রদূত তার দেশের বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিস্তৃত অর্থনীতি ১৬.৮ কোটি মানুষ, বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী, প্রতিভাবান উদ্যোক্তাদের দিকে ভালো করে দেখুন, ভেবে দেখুন কীভাবে এই অসাধারণ সফলতার গল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট হতে পারেন।’
আরও পড়ুন: শতভাগ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনা: ভূমিমন্ত্রী
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন ও বেসরকারি খাতের নেতারা সম্মেলনে অংশ নেন।
এছাড়া সম্মেলনে অনাবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক, স্বতন্ত্র বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।