বৈদেশিক মুদ্রা
বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি নেই, প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করুন: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক সভা শেষে ড. মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, 'বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রায় কোনো ঘাটতি নেই, যে কেউ এলসি খুলতে পারবেন ‘
বাজারে চাহিদা পূরণে প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. মনসুর ব্যবসায়ীদের দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি পরামর্শ দেন, 'এলসি খুলুন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করুন এবং বাজারের চাহিদা মেটান।’
আরও পড়ুন: পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে চালের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করল সরকার
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর তার বক্তব্যে একটি মুক্তবাজার অর্থনীতিতে তার বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন। আস্থা প্রকাশ করেন যে, বাজার শক্তি বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, 'আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব, তবে পরিস্থিতি শান্ত হতে সময় লাগবে।’
ড. মনসুর রেশনিং কর্মসূচি সম্প্রসারণসহ মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি ঘোষণা করেন সরকার শিগগিরই ১ কোটি সুবিধাভোগী পরিবারের প্রত্যেকের জন্য বর্তমান পাঁচ কেজি থেকে বাড়িয়ে ১০ কেজি করে প্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণ করবে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্যের সহজলভ্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) উদ্যোগের জন্য ট্রাকের সংখ্যা বাড়াচ্ছি।’
মুদ্রাস্ফীতিকে সরাসরি মোকাবিলা করে ড. মনসুর জোর দেন, মুদ্রাস্ফীতি ‘শেষ পর্যন্ত একটি আর্থিক ঘটনা’ এবং এটি অবশ্যই কার্যকর মুদ্রানীতির মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। তিনি অতিরিক্ত বাজার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন এবং অতীতের ঘটনাগুলোও স্মরণ করিয়ে দেন। যেখানে কঠোর পদক্ষেপের ফলে পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: এলএনজি-সার, সয়াবিন তেল, চিনি ও ছোলা আমদানির অনুমোদন
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করি তবে পণ্যগুলো বাজার থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে। ১/১১-এর সময়কালে এবং সাম্প্রতিক ডিম সংকটের সময়ও আমরা তা দেখেছি। বরং এর পরিবর্তে, তিনি ‘সহনশীল ও কার্যকর পর্যবেক্ষণের’ পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমরা সংলাপের মাধ্যমে চাপ দিচ্ছি, অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণ নয়।’
বাজার নিয়ন্ত্রণে একটি পরিমিত পদ্ধতির উপর জোর দেন, আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করেন ড. মনসুর। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির লক্ষ্য রাখি। এ প্রেক্ষাপটে হঠকারী সিদ্ধান্তের কোনো সুযোগ নেই। আমরা বিশ্বাস করি যে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে - এটি কেবল সময়ের প্রয়োজন।’
সরবরাহ বাড়ানোর সরকারি প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত স্বস্থি আনতে সহায়তা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: খেলাপি ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংক ১১% বললেও প্রকৃত চিত্র ২৫%: ড. আহসান এইচ মনসুর
২ সপ্তাহ আগে
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে: স্থিতিশীলতার আশ্বাস দিলেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং স্থিতিশীল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
রবিবার ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'আগের সরকারের আমলে রিজার্ভ প্রতি মাসে ১.৩ বিলিয়ন ডলার করে কমে আসছিল, তবে এখন তা একটি ইতিবাচক প্রবণতাঢ ফিরছে।’
তিনি বলেন, ‘সার, বিদ্যুৎ ও আদানি-শেভরনের বকেয়া পাওনার জন্য এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: আইএমএফের পদ্ধতি অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ ২০.৪৬৭ বিলিয়ন ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
শুধু গত দুই মাসেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক জ্বালানি ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সেবার বকেয়া ১.৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে অপরিশোধিত বিল ২.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে এনেছে।
৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিপিএম৬ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৯.৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এবং মোট রিজার্ভ ২৪.৯৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাথমিক লক্ষ্য আগামী দুই মাসের মধ্যে বাকি ঋণ পরিশোধ করে নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণমুক্ত হওয়া। ‘এটি অর্জন করা সম্ভব হলে, বাজারে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এই বকেয়া পরিশোধ করলে অর্থনীতির উপর চাপ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার ফলে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ ত্বরান্বিত হবে।
অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গভর্নর অবশ্য দেশের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন; যা এখন ১০৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এ কারণে ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে।
তা সত্ত্বেও ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান ঋণের চ্যালেঞ্জ সফলভাবে কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নেট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
১ মাস আগে
এপ্রিল থেকে ১০.৩ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে মে মাসে
মে মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা এপ্রিলের তুলনায় ১০ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের মধ্যে রেমিট্যান্সের এই প্রবৃদ্ধি সুখবরই বলা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ রেমিট্যান্স হালনাগাদে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১.৭ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়াও গত এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসের রেমিট্যান্স ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে মার্চ মাসে ২.০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের উচ্চতর বিনিময় হার এবং ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। যে কারণে রেমিট্যান্সের অভ্যন্তরীণ প্রবাহে এমন প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে প্রবাসীদের কাছ থেকে ১০.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স প্রবাহ উৎসাহিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগের পর এই পাঁচ মাসে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ২ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২.১১ বিলিয়ন, ফেব্রুয়ারিতে ২.১৬ বিলিয়ন, মার্চে ১.৯৯ বিলিয়ন, এপ্রিলে ২.০৪ বিলিয়ন এবং মে মাসে ২.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে বাংলাদেশে।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর ইউএনবিকে বলেন, রেমিট্যান্স প্রদানকারীদের জন্য বৈধ চ্যানেলে আর্থিক ও অ-আর্থিক সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশ আরও বেশি রেমিট্যান্স অর্জন করতে পারে।
তিনি বলেন, অবৈধ উপায়ে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ৫ থেকে ৭ টাকা বেশি হওয়ায় রেমিট্যান্সকারীরা হুন্ডিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। বিনিময় হারের তারতম্যের কারণে বৈধ রেমিট্যান্সের বদলে অবৈধ হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছেন তারা।
সরকার স্বাস্থ্য কার্ড, বীমা কভারেজ, পেনশন সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা ঘোষণার মাধ্যমে এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর।
৫ মাস আগে
শাহ আমানত বিমানবন্দরে প্রায় ৩ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট (বিজি-১৪৭) থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকার বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ মে) রাতে ওই ফ্লাইটের ১৭এ সিটের ওভারহেড বিনের ভেতরে যাত্রীবিহীন পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি ব্যাগ উদ্ধার করে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পরে স্ক্যানিং করলে ব্যাগটির ভেতর ১ হাজার ৮৭৫ পিস সৌদি রিয়াল এবং ১০০ পিস মার্কিন ডলারের নোট পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বিদেশি সিগারেট ও স্বর্ণালংকার জব্দ, ২ জন আটক
বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ কমান্ডার তাসলিম আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মো. আকরাম হোসেন বলেন, ব্যাগটি স্ক্যানিং করে ১ হাজার ৮৭৫ পিস ৫০০ সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশি ২ কোটি ৭৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা) ও ১০০ পিস মার্কিন ডলার (১১ লাখ টাকা) পাওয়া যায়।
উদ্ধার করা মার্কিন ডলার ও সৌদি রিয়াল বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
বিমানবন্দরের চট্টগ্রাম কাস্টমসের এয়ারপোর্ট ও এয়ারফ্রেইড ইউনিট জানান, উদ্ধার করা বৈদেশিক মুদ্রা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে ৯০ হাজার দিরহামসহ যাত্রী আটক
শাহ আমানত বিমানবন্দরে ১ কেজি স্বর্ণ জব্দ
৬ মাস আগে
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে ও মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রা সংস্কার জরুরি: বিশ্বব্যাংক
কোভিড-১৯ মহামারি থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়ালেও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, অর্থপ্রদানে ভারসাম্যের ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মহামারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট হালনাগাদে বলা হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি কমাতে জরুরি মুদ্রা সংস্কার এবং একক বিনিময় হার ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ হবে। বৃহত্তর বিনিময় হারের নমনীয়তা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, 'দেশের শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনীতির মূলনীতি অতীতের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে।’
দ্রুত ও শক্তিশালী রাজস্ব, আর্থিক খাত ও আর্থিক সংস্কার বাংলাদেশকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং প্রবৃদ্ধি পুনরায় ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করতে পারে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের গল্প অনেক দেশের জন্য অনুপ্রেরণা: বিশ্বব্যাংক এমডি
বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি বলেছে, অবকাঠামো ও মানব মূলধনে বিনিয়োগকে সমর্থন করার জন্য সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর পদক্ষেপসহ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে এবং মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সহনশীলতা গড়ে তুলতে কাঠামোগত সংস্কার মূল চাবিকাঠি হবে।
ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করেছে। একইসঙ্গে কঠোর তারল্যের শর্ত, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানি বিধিনিষেধ এবং জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন থেকে উদ্ভূত উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে।
২০২৪ সালে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও ধীর হয়েছে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগে ব্যাপক মন্দার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
ব্যাংকিং খাতে নন-পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) অনুপাত বেশি এবং শিথিল সংজ্ঞা ও প্রতিবেদনের মান, সহনশীলতা ব্যবস্থা ও দুর্বল নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগের কারণে ব্যাংকিং খাতের চাপ কমছে।
২০২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি কমানো হয়েছে এবং চলতি অ্যাকাউন্টে উদ্বৃত্ত রয়েছে।
প্রতিবেদনের সহযোগী অংশে 'জবস ফর রেজিলিয়েন্স' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দুই বছর দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চল হিসেবে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৬ দশমিক শূন্য শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৬ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।’
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবৃদ্ধি মূলত ভারত ও বাংলাদেশের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি। সেই সঙ্গে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পুনরুদ্ধারও।
কিন্তু এই দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি বিভ্রান্তিকর বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি এখনও প্রাক-মহামারি স্তরের নিচে রয়েছে এবং সরকারি ব্যয়ের ওপর নির্ভরশীল।
ক্রমাগত কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলো টেকসই প্রবৃদ্ধিকে হ্রাস করার হুমকি দেয়, এই অঞ্চলের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জলবায়ু প্রভাবের প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষমতাকে বাধাপ্রাপ্ত করে।
দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি দ্রুত মন্থর হয়ে পড়েছে এবং দ্রুত বর্ধমান কর্মক্ষম জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য এই অঞ্চলে যথেষ্ট কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা উজ্জ্বল থাকলেও ভঙ্গুর রাজস্ব অবস্থা ও ক্রমবর্ধমান জলবায়ু অভিঘাত হতাশা তৈরি করেছে।’
এতে বলা হয়, ‘প্রবৃদ্ধি আরও সহনশীল করতে দেশগুলোকে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে।’
দক্ষিণ এশিয়ার কর্মক্ষম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ছাড়িয়ে গেছে।
কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার অংশ ২০০০ সাল থেকে হ্রাস পাচ্ছে।
২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মসংস্থানের অনুপাত ছিল ৫৯ শতাংশ, যেখানে অন্যান্য উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির অঞ্চলে এই হার ৭০ শতাংশ।
এটি একমাত্র অঞ্চল যেখানে গত দুই দশকে কর্মক্ষম পুরুষদের হার হ্রাস পেয়েছে এবং এই অঞ্চলে কর্মক্ষম বয়সের নারীদের কর্মসংস্থান সবচেয়ে কম অংশ রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সিসকা ওনসোর্গ বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া তার জনতাত্ত্বিক লভ্যাংশকে পুরোপুরি পুঁজি করতে এই মুহূর্তে ব্যর্থ হচ্ছে। সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যদি এই অঞ্চলে অন্যান্য উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির মতো কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার একটি বৃহত্তর অংশ যোগ হয়, তবে এর ফলাফল ১৬ শতাংশের বেশি হতে পারে।’
আরও পড়ুন: নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের বিশেষ তহবিল চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
৭ মাস আগে
ডলার এনডোর্সমেন্ট কী, কীভাবে করবেন
উচ্চশিক্ষা, বিদেশ ভ্রমণসহ নানাবিধ আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ের আর্থিক কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনার জন্য প্রয়োজন পড়ে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের। আর এখানেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো ডলার এনডোর্সমেন্ট।
বিশ্ব অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি পাওয়ার হাউস হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারকে বিশ্বব্যাপী সাধারণ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
কোনো একটি দেশের পণ্য বা সেবা ক্রয় করার সময় এই মুদ্রার এনডোর্সমেন্ট সংশ্লিষ্ট দেশটির মুদ্রা ব্যবহারে বৈধতা প্রদান করে। চলুন, এই ডলার এনডোর্সমেন্ট কী এবং কীভাবে করবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ডলার এনডোর্সমেন্ট কী
এই আর্থিক কার্যক্রমটির মানে হলো দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে যে কোনো লেনদেনে ডলার ব্যবহারের অনুমোদন। এর মাধ্যমে বিদেশি পণ্য বা সেবা নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার ব্যবহারের বৈধতা পাওয়া যায়। এই ডলারগুলো পরবর্তীতে সরাসরি কিংবা প্রয়োজনের স্বাপেক্ষে বিশেষত বিদেশ ভ্রমণের সময় সেই দেশের মুদ্রায় পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।
এটি শুধু বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি প্রক্রিয়াই নয়, ডলার এনডোর্সমেন্ট ছাড়া ডলার সংক্রান্ত কোনো রূপ লেনদেনে জড়িত হওয়া বেআইনি।
আরও পড়ুন: অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার
ডলার এনডোর্সমেন্টের সুবিধা
যে কাজগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পৃক্ত, এমন প্রতিটি কাজেই প্রয়োজন হয় ডলার খরচ করার। আর এই প্রয়োজনীয় খরচ সামাল দিতেই এনডোর্স করে নিতে হয় সেই পরিমাণ ডলারটি।
যেমন বিদেশে ভ্রমণ, উচ্চশিক্ষা, ও চিকিৎসার জন্য সেই দেশে যাওয়ার সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডলার সঙ্গে নিতে হয়। চাকরি ও ব্যবসার কাজে যে দেশেই যাওয়া হোক না কেন, প্রাথমিক ব্যয়ের খাতগুলো নিরবচ্ছিন্ন রাখতে দরকার হয় ডলারের। ফলে অবধারিত হয়ে পড়ে সেই সংখ্যক ডলার সঙ্গে রাখার অনুমতি নেওয়া।
এছাড়া দেশের ভেতরে থেকেও বৈদেশিক কাজগুলো আঞ্জাম দিতে হলে ডলারের কোনো বিকল্প নেই। বিদেশি স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ, বিদেশি মার্কেট থেকে কেনাকাটা, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দেশে ফিরে ডলারের বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তরের জন্যও ডলার অনুমোদনের গুরুত্ব অপরিসীম।
দেশের ভেতরে যারা ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোসহ ইন্টারনেটের অন্যত্রে বিজ্ঞাপন দেন, তাদের প্রায় ক্ষেত্রে ডলারের বৈধতা নিশ্চিত করে নিতে হয়।
এছাড়া আমদানি বা রপ্তানি ব্যবসার কাজগুলো বৈধভাবে কার্যকার করার জন্যও দরকার হয় ডলার আদান-প্রদানের অনুমতি।
আরও পড়ুন: খোলা বাজারে ১৫ টাকা বেশি দামে ডলার বিক্রি
ডলার এনডোর্সমেন্ট করার উপায়
আইনগতভাবে ডলার ব্যবহারের ক্ষমতা অর্জন করতে হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর অনুমোদন নিতে হয় পাসপোর্টে সীলের মাধ্যমে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইস্যু করা হয়ে থাকে সনদপত্র, যেখানে উল্লেখ থাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক ডলারের অংক।
শুধু তাই নয়, এখানে একটি বড় বিষয় হচ্ছে অনুমোদনটি কে দিচ্ছে সেটা। অর্থাৎ ডলারগুলো কোত্থেকে ক্রয় করা হচ্ছে ও ডলার বিক্রয়ের জন্য তাদের যথাযথ অনুমোদন আছে কি না সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের ভেতরে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ব্যাংক, মানি এক্সচেঞ্জার ও ডিলাররা আইনগতভাবে ডলার কেনা-বেঁচা করতে পারে। এছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডলারের লেনদেনে জড়ানো বেআইনি।
চলুন, এবার এই এনডোর্সমেন্ট পদ্ধতিটির আরও খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া যাক।
ব্যাংক থেকে ডলার এনডোর্স করার প্রক্রিয়া
দেশের যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক পাসপোর্ট বইয়ের শেষের দিকে এনডোর্সমেন্ট পাতায় সীল দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলারের পরিমাণ লিখে দেয়। এটিই হলো অনুমোদনকৃত ডলারের পরিমাণ, যেটি এনডোর্সকারি কাগুজে ডলার উঠিয়ে কিংবা অনলাইনে ব্যবহার করতে পারেন।
এই ডলারপ্রাপ্তির জন্য এনডোর্সকারী সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা প্রদান করেন। এই পরিমাণটি ঠিক হয় বর্তমানে ডলার থেকে বাংলাদেশি টাকায় বিনিময় হার যত চলছে সে অনুসারে। এই হারটি অবশ্য একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে কমবেশি হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ব্যাংকে ডলারের সরবরাহ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি: বাংলাদেশ ব্যাংক
সোনালী ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকে ডলার এনডোর্সমেন্টের ভিন্নতা
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু সোনালী ব্যাংকে ডলার এনডোর্সের জন্য সেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকার বা নতুন করে করার প্রয়োজন পড়ে না। শুধুমাত্র পাসপোর্ট নিয়ে গেলেই কাজ হয়ে যায়। ব্যাংক কর্মকর্তা ঐ দিনের ডলার রেট অনুসারে টাকা হিসাব করে সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলারের অংক উল্লেখ করে পাসপোর্টে সীল মেরে দেন।
অন্যদিকে, বাকি সকল ব্যাংকে এই কার্যকলাপের জন্য অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত লোকাল শাখাগুলোতে এনডোর্স করা হয় না। এই সুবিধা দিয়ে থাকে শুধুমাত্র এডি বা অনুমোদিত ডিলার, শাখা বা ফরেইন এক্সচেঞ্জগুলো। বিভাগীয় শহর ও কিছু বাণিজ্যিক এলাকা ছাড়া কোথাও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এডি শাখা নেই।
লোকাল শাখাতে এনডোর্স করতেই হলে সেখানে একটা ফরওয়ার্ডিং লেটার দিয়ে ডলার পরিবর্তনের চেষ্টা করা যেতে পারে।
এছাড়াও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রত্যেকটিতে ডলার এনডোসিং-এর শর্তগুলোতে কিছু ভিন্নতা থাকে। তাই চূড়ান্তভাবে এনডোর্সমেন্টের পূর্বে অবশ্যই সেগুলোর সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি।
ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের বিপরীতে ডলার এনডোর্স
গত কয়েক বছর ধরেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের ডুয়েল কারেন্সি কার্ড সেবাগুলো। অনেকেই সরাসরি ডলার না তুলে এই আন্তর্জাতিক ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে বৈধভাবে ডলার জমা করে নিচ্ছেন।
এই সেবার মাধ্যমে দেশ থেকে কার্ডে ডলার জমা করে বিদেশে নিয়ে গিয়ে সেখানে খরচ করা যায়। এমনকি প্রয়োজনে অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রাতেও পরিবর্তন করে নেওয়া যায়। তাছাড়া অনলাইন কেনাকাটার সুবিধা তো থাকছেই। এমনকি দেশের ভেতরে থেকেও বিশ্বের বিখ্যাত সব ই-কমার্স মার্কেটগুলো থেকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই নানা সেবা ও পণ্য কেনা যায়।
বিদেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে খরচ করার জন্যও দেশি ব্যাংকের এই কার্ডগুলো বেশ উপকারি।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে: বাংলাদেশ ব্যাংক
এলসির মাধ্যমে ডলার এনডোর্সমেন্ট
এলসি বা লেটার অফ ক্রেডিট মুলত যারা আমদানি বা রপ্তানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতে তাদের জন্য দরকারি। এই ক্ষেত্রে ডলার এনডোর্সের জন্য এলসি করা হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। এটি মূলত সেই আমদানি বা রপ্তানি কাজের জন্য ডলার বিনিময়ে বৈধতা দানকারী সনদপত্র।
মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার ক্রয় করার নিয়ম
ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো অপেক্ষা মানি এক্সচেঞ্জারগুলোর ডলার এনডোর্সিং-এর প্রক্রিয়া তুলনামূলক ভাবে সহজ। যে কোনো বৈধ পাসপোর্টধারি ঐ দিনের রেট অনুযায়ী সমপরিমাণ টাকা দিয়ে ডলার তুলে নিতে পারবেন এই এক্সচেঞ্জারগুলো থেকে। এক্সচেঞ্জ ফি দেয়া ছাড়া এখানে ব্যাংকের মতো ডকুমেন্টেশনের বাড়তি বিড়ম্বনা নেই।
তবে এই এনডোর্সমেন্ট ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য নয়। ভিসার জন্য শুধুমাত্র ব্যাংকের ডলার এনডোর্সমেন্ট গ্রহণযোগ্য।
অনেকেই অল্প কিছু টাকা বাঁচাতে যেয়ে এনডোর্স ছাড়া ডলার নিয়ে ইমিগ্রেশনে যেয়ে বিপদে পড়েন। কেননা প্রায়ই ক্ষেত্রে সেখানে ডলারের পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্টটা চেক করা হয়। তাই সার্বিক দিক থেকে ঝক্কি-ঝামেলা মুক্ত থাকার জন্য ডলার পাসপোর্টে এনডোর্স করে নেওয়া উচিৎ।
আরও পড়ুন: আপনি কি মার্কিন ডলার না কিনে বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন?
কত ডলার এনডোর্স করা যায়
ডলার এনডোর্সের পরিমাণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুষ্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি বিদেশ গমনকালে এক বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার বা সমমানের বৈদেশিক মূদ্রা এনডোর্স করতে পারবেন। যারা ১২ বছরের নিচে রয়েছেন তারা এর অর্ধেক অর্থাৎ ৬ হাজার ডলার ব্যবহারের অনুমোদন নিতে পারবেন।
চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলারের অনুমোদন নেওয়া যাবে, তবে এর জন্য অবশ্যই উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে হবে। এর চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলে যথাযথ কারণ ও প্রমাণ সহ যোগাযোগ করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে।
ডলার এনডোর্সের মেয়াদ কত দিন
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুসারে, ডুয়েল কারেন্সি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের বিপরীতে পাসপোর্টের মেয়াদ যতদিন ততদিন থাকবে এনডোর্সমেন্টের মেয়াদ। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে:
- খরচের পরিমাণ এনডোর্সকৃত ডলারের সর্বোচ্চ লিমিট অর্থাৎ ১২ হাজার অতিক্রম করতে পারবে না।
- সম্পূরক কার্ডধারিরা বিদেশ ভ্রমণকালে তাদের ভ্রমণ কোঠার আওতাতেই এই সুবিধা পাবেন।
- তবে ভ্রমণ কোটার যে অংশটুকু বাকি থাকবে, তা ব্যবহারের জন্য পরের বছরে স্থানান্তর করা যাবে না।
- এই সুবিধা প্রবাসী বাংলাদেশি বা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
শেষাংশ
সর্বসাকুল্যে, বাংলাদেশিদের জন্য যাবতীয় আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজতর করার জন্যই এই ডলার এনডোর্সমেন্ট প্রক্রিয়া। অপেক্ষাকৃত সীমিত ডকুমেন্টেশনের আনুষ্ঠানিকতা থাকায় সোনালী ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারগুলো এক্ষেত্রে সুবিধা প্রদানে এগিয়ে রয়েছে। এরপরেও প্রযোজ্য শর্তগুলো সতর্কতার সঙ্গে মেনে অগ্রসর হলে বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকেও পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা।
পরিশেষে, ডলার কী উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হবে তা নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা থাকলে এনডোর্সমেন্টের নিয়মগুলোর সদ্ব্যবহার সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন যেসব দেশে
১০ মাস আগে
আইএমএফ শর্ত শিথিল করলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নিট রিজার্ভের শর্ত শিথিল করা সত্ত্বেও ২০২৩ সালের শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ।
আইএমএফের ঋণের নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে বছর শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদও আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয় বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি। এমনকি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
আইএমএফের নতুন শর্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে প্রকৃত রিজার্ভ ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে ২০ দশমকি ১০ বিলিয়ন ডলার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আর্থিক খাতের অংশীজনরা এই লক্ষ্য অর্জন হবে কি না তা নিশ্চিত করতে পারছে না।
প্রকৃত রিজার্ভ হলো- আইএমএফের এসডিআর, ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে রাখা ডলার এবং এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (এসিইউ) বিলের জন্য জমা করা ডলারবাদ দিয়ে গণনা করা রিজার্ভ।
আরও পড়ুন: ৬৯০ মিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তিতে শর্তারোপ আইএমএফের
এ ছাড়া রিজার্ভের আরও দুটি হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো মোট রিজার্ভ। আরেকটি আইএমএফ অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম হলো বিপিএম৬ এর অধীনে রক্ষণাবেক্ষণ করা রিজার্ভ।
২০২৩ সাল শেষে মোট বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ বিলিয়ন ডলারে। তবে আইএমএফ শুধু নিট বা সত্যিকার রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক ইউএনবিকে বলেন, আইএমএফ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করেছে।
আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর ইউএনবিকে বলেন, আইএমএফ নির্ধারিত আগের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েও পূরণ করা যায়নি, যা অপ্রত্যাশিত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা পরিবর্তন না করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৪ সালের মার্চে আইএমএফের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখতে পারবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন মনসুর।
আরও পড়ুন: আইএমএফ ফর্মুলায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির পর বাংলাদেশের রিজার্ভ ২০.২৫ বিলিয়ন ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
১০ মাস আগে
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ১.০৮ বিলিয়ন ডলার যোগ হতে পারে
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে বাংলাদেশ ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পেতে পারে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেছেন, আগামী ১২ ডিসেম্বর এডিবি বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, একই দিনে আইএমএফের বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮১ মিলিয়ন ডলার অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি।
উভয় ঋণ প্রস্তাব আগামী সপ্তাহে অনুমোদিত হলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ১ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার যোগ হতে পারে।
এটি বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে স্বস্তি আনবে। যা আমদানি বিল পরিশোধ এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের বিদেশে শিক্ষা ও চিকিৎসার অর্থ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ডলারের ঘাটতি মেটাবে।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার আশা বাংলাদেশ ব্যাংকের
৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের পরবর্তী কিস্তির জন্য আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি সই
আইএমএফ ৪.৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা শিথিল করেছে
১১ মাস আগে
বৈদেশিক মুদ্রা আমানতের ওপর ব্যাংকগুলো ৭ শতাংশ সুদ দেবে: বাংলাদেশ ব্যাংক
রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিটের (আরএফসিডি) ওপর ব্যাংকগুলো ৭ শতাংশের বেশি সুদ দেবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়া, এ ধরনের অ্যাকাউন্ট থেকে দেশের বাইরে টাকা পাঠানো, একাধিক কার্ড ইস্যু করাসহ বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যাবে।
দেশে চলমান ডলার সংকট নিরসনে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আরও পড়ুন: নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ১ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পেয়েছে: বাংলাদেশ ব্যাংক
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়েছে, কেউ আরএফসিডি হিসেবে ১০ হাজার ডলার জমা রাখতে পারেন। এখন থেকে ব্যাংকগুলো বেঞ্চমার্ক হারের সঙ্গে এই আমানতের উপর কমপক্ষে দেড় (১ দশমিক ৫) শতাংশ সুদ দেবে।
এই হিসেবে, আমানতের বিপরীতে দুটি সম্পূরক কার্ড ইস্যু করা যেতে পারে। শিশু বা ভাইবোনসহ নির্ভরশীলরা কার্ডটি ব্যবহার করতে পারেন।
এই অ্যাকাউন্ট থেকে বিদেশে শিক্ষার খরচ পাঠানো যাবে। আবার স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান, ভাইবোন এবং নির্ভরশীল বাবা-মায়ের চিকিৎসার খরচও এখান থেকে বহন করা যায়।
আরও পড়ুন: ব্যাংকে ডলারের সরবরাহ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি: বাংলাদেশ ব্যাংক
নগদকে ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদনপত্র হস্তান্তর করল বাংলাদেশ ব্যাংক
১১ মাস আগে
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি: বিশ্লেষকরা
চলমান রাজনৈতিক ও শ্রমিক অসন্তোষ দেশের অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলীয় জোট সরকারকে পদত্যাগের জন্য চাপ দিতে দেশব্যাপী হরতাল ও অবরোধ পালন করছে।
অন্যদিকে, মজুরি বৃদ্ধির জন্য গার্মেন্টস শ্রমিকদের অব্যাহত বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, হতাহত ও যানবাহনে; প্রধানত বাসে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারবিরোধীদের বিক্ষোভ দেশের অর্থনীতিতেও আঘাত হেনেছে। কোভিড-১৯ বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অর্থনীতি এখন বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, টাকার মান ৩০ শতাংশের বেশি কমে যাওয়া, দুই অংকের মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি ও শ্রমের উচ্চমূল্যের সঙ্গে লড়াই করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং এর সাবেক গভর্নরদের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
আলোচনাসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আমন্ত্রিত অর্থনীতিবিদরা মার্কিন ডলার সংকট, স্থিতিশীল বিনিময় হার ও মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে আনতে নীতি পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন।
আলোচনায় উপস্থিত বিশ্লেষকেরা অভিমত দিয়েছেন, গার্মেন্টস সেক্টরে উচ্চ মজুরির জন্য শ্রমিক অসন্তোষও এই খাতের তৈরি পোশাক কারখানার মালিক ও নীতি নির্ধারকদের মাধ্যমে সমাধানযোগ্য।
আরও পড়ুন: চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে ৬ শতাংশ করেছে আইএমএফ
তবে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আগামী নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমতের পরামর্শ দেওয়া ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা সম্পর্কে তাদের কিছু বলার নেই।
ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব অর্থনীতিকে বড় অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থার শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই পরিস্থিতির ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিণতি হতে পারে।
মনসুর বলেছেন, ‘কিন্তু এখন পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের মনোভাবে নমনীয়তার কোনো লক্ষণ নেই। কয়েক দিনের জন্যও উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হলে, তা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। এটি মুদ্রাস্ফীতির চাপ, ডলারের সংকট ও কর্মসংস্থানের সুযোগের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান মনসুর বলেন, আমদানি-রপ্তানি, বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব সংগ্রহ এবং অন্যান্য সব খাত এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তারা জানায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মূল উৎস রপ্তানি খাত। প্রতি মাসে গড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আসে পণ্য রপ্তানি থেকে।
তারা আরও জানায়, গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অক্টোবরে পণ্য রপ্তানি ১৪ শতাংশ কমেছে। সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৩ শতাংশ। ২০২৩-২৪ সালের অক্টোবর মাসে ৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি আয় হয়েছে। যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার কম।
আরও পড়ুন: আমদানি নিয়ন্ত্রণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। এতে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে অনেক জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা মনে করে যেভাবেই হোক রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়া উচিত। সবাইকে দেশের অর্থনীতি ও স্বার্থ বিবেচনা করতে হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ইউএনবিকে বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব ও সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বাংলাদেশি পণ্যের ক্রেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
সময়মতো পণ্য হাতে না পাওয়ার অনিশ্চয়তার কারণে কিছু ক্রেতা ব্র্যান্ড রপ্তানির অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘ক্রেতারা উদ্বিগ্ন; তারা আমাদের পরিস্থিতি বুঝতে চায়। ঢাকায় ক্রেতা ফোরামের পক্ষ থেকে একটি বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, একদিনের হরতালে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
অবরোধের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতিও বিশাল। অবরোধ চলাকালে কিছু দোকানপাট খোলা থাকে, তবে ক্রেতা আসে গুটিকয়েক। বিক্রিতে দৈনিক পাঁচ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত লোকসান হতে পারে।
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে সমস্যার দ্রুত সমাধান এবং অর্থনীতিকে বাঁচাতে সমঝোতায় পৌঁছানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সবাইকে দেশের স্বার্থ সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।
কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন জানান, অবরোধে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।
বিক্ষোভের দিনগুলোতে বাজারে পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমেছে।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ ইউএনবিকে বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অর্থনীতির সব খাতে প্রভাব ফেলে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতেই এর সমাধান করা উচিত।
তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে অর্থনীতিতে দ্বিগুণ আঘাত আনবে।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হচ্ছে, উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অনিশ্চয়তার কারণে ক্রেতাদের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে। উৎপাদনে ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি হ্রাসের প্রবণতা বেশ উদ্বেগজনক। মূলধন আমদানি হ্রাস মানে আউটপুট হ্রাস পাবে। এতে রপ্তানি আরও কমবে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ২০২৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমাল বিশ্বব্যাংক
বিভিন্ন আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস রপ্তানি খাত। কিন্তু এ খাত থেকেও আয় কমেছে।
পণ্য রপ্তানি থেকে মাসে গড়ে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়। কিন্তু গত অর্থবছর ২০২২-২৩ সালের একই মাসের তুলনায় অক্টোবরে পণ্য রপ্তানি ১৪ শতাংশ কমেছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাকের কাঁচামাল আমদানি ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ কমেছে।
পোশাক উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল তুলার আমদানি প্রায় ৩৯ শতাংশ কমেছে। সুতা, কাপড়সহ অন্যান্য কাঁচামালও প্রায় একই হারে কমেছে। পোশাক ছাড়া অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি ৩৬ শতাংশের বেশি কমেছে।
১ বছর আগে