ভূমিকম্প
সন্তানদের রক্ষায় নিজেরাই ঢাল হয়ে গেল হাতিরা
বিপদ টের পেলে সবার আগে বাচ্চাদের আগলে রাখার চেষ্টা করে মানুষ। নিজেদের প্রাণ গেলেও সন্তানদের রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন তারা। এ এক চিরন্তন মায়া, যার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। এবার মানুষের মতো সন্তানদের প্রতি অদ্ভুত ভালোবাসা দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একদল হাতি।
ঘটনাটি সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালের। পাঁচ দশমিক দুই মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানদিয়াগো শহর। মাটিতে কম্পন শুরু হওয়ার সাথে সাথে বাচ্চাদের রক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে শহরটির চিড়িয়াখানার সাফারি পার্কের একদল হাতি।
পার্কের বাইরে থেকে তোলা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সকালের আলোতে দাঁড়িয়ে ছিল পাঁচটি আফ্রিকান হাতি। হঠাৎ কম্পন শুরু হলে তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে।
এ সময়ে বয়স্ক তিন হাতি—এনডিলুলা, উমনগানি ও খোসি—সাত বছর বয়সী দুই বাছুর জুলি ও এমখায়াকে ঘিরে বলয় তৈরি করে ফেলে, যাতে কোনো বিপদ এসে তাদের ক্ষতি করতে না পারে। সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে সন্তানদের বাঁচাতে তারা ঢাল হয়ে গেল মুহূর্তেই।
বিপদ কেটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বলয়ের মধ্যে কয়েক মিনিট তারা ঘেঁষাঘেঁষি করে ছিল। তখন বয়স্ক হাতিগুলো বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল, যেকোনো বিপদ মোকাবিলায় তারা যেন প্রস্তুত। তাদের প্রসারিত কান ঝাপটাচ্ছিল তখন।আরও পড়ুন: কর্ণফুলীতে বন্য হাতির তাণ্ডব দমনে ব্যর্থ প্রশাসন, সড়ক অবরোধ
সানদিয়াগো থেকে শুরু করে ১২০ মাইল দূরের লস অ্যাঞ্জেলেস থেকেও অনুভূত হয়েছিল এই ভূকম্পন। এতে সানদিয়াগো কাউন্টির সড়কগুলোতে পাথরের চাঁই আছড়ে পড়ে। ভূমিকম্পের উৎপাত্তিস্থলের কাছের ছোট্ট পাহাড়ি শহর জুলিয়ানে দোকানের তাক থেকে জিনিসপত্র নিচে পড়ে যেতে দেখা গেছে।
যদিও এতে বড় ধরনের হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বাচ্চাদের জন্য হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে হাতিরা। বিপদ মোকাবিলায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যায় তারা।
সানদিয়াগো চিড়িয়াখানা সাফারি পার্কের স্তন্যপায়ী প্রাণীর কিউরেটর মিন্ডি অলব্রাইট বলেন, ‘বাছুরগুলোকে ঘিরে বলয় তৈরি করার পর বিপদ কোথা থেকে আসছে, তা উপলব্ধি করতে চেষ্টা করে হাতিরা।’
খুবই বুদ্ধিদীপ্ত ও সামাজিক প্রাণী বলা হয় বৃহত্তর স্থলচর এই প্রাণীকে। পায়ের মাধ্যমে তারা আওয়াজ অনুভব করতে পারে। যখন তারা বিপদ টের পেয়ে যায়, তখন সতর্কতামূলক পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি বৃত্তের মতো তৈরি করে দাঁড়িয়ে যায়। বাচ্চা হাতিরা ওই বলয়ের মাঝে থাকে, আর বিপদ মোকাবিলায় বাইরের দিকে থাকে বড়রা।
সোমবারের ভিডিওতে দেখা যায়, বয়স্ক হাতিদের মধ্যে আশ্রয় খুঁজতে দৌড়াচ্ছিল বাছুরগুলো। এই মা হাতিগুলোই বাচ্চাদের বড় করেছে। কিন্তু নিজের সাহস দেখাতে একমাত্র পুরুষ হাতিটি বৃত্তের কিনারে দাঁড়িয়েছিল। তখন স্ত্রী হাতি খোসি শুঁড় দিয়ে তার পিঠে ও মুখে চাপড় দিয়ে বলতে চাচ্ছিল, ‘সবকিছু ঠিক আছে। কিচ্ছু হবে না। তুমিও বৃত্তের মধ্যে চলে এসো।’
১ দিন আগে
ঢাকাসহ আশপাশে ভূমিকম্প অনুভূত
ঢাকাসহ রাজধানীর আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল চার।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকাল ৪টা ৫২ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে এই কম্পন অনুভূত হয় বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প বিষয়ক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার আগারগাঁওয়ের আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে ১০৫ কিলোমিটার দূরে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দিকে।
ভূমিকম্পের মাত্রা ‘মৃদু’ ছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউরোপিয়ান-মেডিটেরানিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টারও (ইএমএসসি) এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছে।
ইএমএসসির তথ্য বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল কুমিল্লা থেকে ৬৮ কিলোমিটার উত্তরে এবং ভারতের আগরতলা থেকে ২৬ কিলোমিটার উত্তরে দুদেশের সীমান্তের দিকে। ভূগর্ভের ১০ কিলোমিটার গভীরে এই কম্পনটির উৎপত্তি হয়।
ভূমিকম্পটি মৃদু এবং স্বল্পস্থায়ী হলেও এর প্রভাবে বিভিন্ন স্থাপনা কেঁপে ওঠে। এর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেককে এ বিষয়ে পোস্ট দিতে দেখা যায়। অনেকে তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সবাইকে নিরাপদ থাকার জন্য পরামর্শ দেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
৫ দিন আগে
ভূমিকম্প: মিয়ানমারে তহবিল সংগ্রহে ‘সিংহ নাচ’
মিয়ানমারে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ইয়াঙ্গুনের ব্যস্ততম চায়না টাউনের প্রাণকেন্দ্রে ‘সিংহ নাচ’ পরিবেশনের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করছেন দেশটির তরুণরা।
ফেং ই ড্রাগন ও লায়ন ড্যান্স অ্যাসোসিয়েশনের ৩০ জনেরও বেশি তরুণের একটি দল চলতি মাসের ৩ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত অভিনব এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
এ কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন বলে জানান তারা। ওই তরুনরা বলেন, অনেক পথচারীই তাদের নাচে আকৃষ্ট হয়েছেন এবং উৎসাহ দিয়েছেন।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে দলটি মিয়ানমারেরে মুদ্রায় ৫ মিলিয়ন কিয়াট (প্রায় ২ হাজার ৩৮০ মার্কিন ডলার) সংগ্রহ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তারা।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের ভূমিকম্পের পর ৮৯ আফটারশক অনুভূত
ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে দলটির সদস্যরা বলেন, সংগৃহীত অর্থ সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মান্দালয় ও সাগাইং শহরে বাসিন্দাদের সহায়তায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
লায়ন ড্যান্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য মিয়ো মং মং মিন্ট (৩৫) বলেন, ‘তহবিল সংগ্রহ ও জরিপ শেষে বাসিন্দাদের সরাসরি সহায়তা করতে আমরা সেখানে যাবো। তাদের কি ধরনের সহায়তা প্রয়োজন বা কোনটি আগে প্রয়োজন সেটি জানতে আগেই একটি জরিপ করেছি আমরা।’
ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের এই অর্থ দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসনের পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে বলে জানান মিয়ো।
অ্যাসোসিয়েশনের আরেক সদস্য বলেন, ‘এভাবে তহবিল সংগ্রহ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। বিশেষত রোদের মধ্যে সিংহ নাচের পোশাক পরে নাচ করা বেশ কঠিন। তবে আমরা এতে অভ্যস্ত।’
৭ দিন আগে
মিয়ানমারের ভূমিকম্পের পর ৮৯ আফটারশক অনুভূত
মিয়ানমারে গত মাসের শেষ নাগাদ একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিন সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সাত দশমিক ৯ মাত্রার ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পের পর এ পর্যন্ত মোট ৮৯টি আফটারশক (পরাঘাত) অনুভূত হয়েছে দেশটিতে।
স্থানীয় সময় রবিবার (৬ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে মিয়ানমারের আবহাওয়া ও জলবিদ্যা বিভাগ।
কম্পনগুলো ২.৮ থেকে ৭.৫ মাত্রার মতো ছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। গত মাসের ২৮ মার্চ দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি সংঘটিত হওয়ার পর থেকে এই আফটারশকগুলো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব আফটারশকে দেশটির ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের অবশিষ্টাংশ ধ্বংস করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যে কারণে অনেকেই নিজেদের বাড়ির আশেপাশের রাস্তায় তাঁবু টানিয়ে বা খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন: সোনার শহর মান্দালয় এখন ধ্বংসস্তূপ, দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে গৃহযুদ্ধ
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের ভূকম্পনবিদ উইল ইয়েকের মতে, ‘ভূমিকম্পের মূল ধাক্কার কারণে পৃথিবীর চাপের যে পরিবর্তন হয়, তাতেই আফটারশক হয়ে থাকে।’
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মাটির উপরিভাগের ৭০০ কিলোমিটার নিচেও ভূমিকম্প হতে পারে। আর মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পটি হয়েছিল মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে। অর্থাৎ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল অনেক অগভীরে হওয়ায় কম্পনের পরিমাণ বেশি ছিল।
ইউএসজিএস জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পটি অনেক বড় ছিল। জাপানের হিরোশিমায় আঘাত হানা মার্কিন পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি শক্তি উৎপাদিত হয়েছে এই ভূকম্পন থেকে।
যখন পৃথিবীর দুটি খণ্ড হঠাৎ করে পরস্পর থেকে সরে যায়, তখনই ভূমিকম্প হয়ে থাকে। যেখান থেকে ভূখণ্ডটি সরে যায়, সেটিকে ভূগর্ভের ফাটল বলা হয়। কখনো-কখনো ভূমিকম্পের ফোরশক (পূর্বাঘাত) হয়ে থাকে। বড় ভূমিকম্পের আগে যে ছোট ছোট কম্পন হয়, সেটাই ফোরশক।
ভূমিকম্পের প্রধান আঘাতকে মেইনশক (মূলকম্পন) বলা হয়। এই মূলকম্পনের পরে অনেক সময় আফটারশক হয়ে থাকে। এগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প, যেটা মূলকম্পনটি যেখানে ঘটে, সেখানেই হয়ে থাকে।
মূলকম্পনের ওপর ভিত্তি করে কয়েক সপ্তাহ, মাস কিংবা কয়েক বছরও এই আফটারশক হতে পারে।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত প্রায় ৩ হাজার, জীবিতদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে
২৮ মার্চ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। ভুমিকম্পে এ পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি।
গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মিয়ানমার জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
ইউএসজিএসের তথ্যমতে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হতে পারে।
মিয়ানমার ছাড়াও থাইল্যান্ড ও চীনেও আঘাত হেনেছে এই ভূমিকম্প। তবে গৃহযুদ্ধ, খাদ্যসংকট ও অর্থনৈতিক অবনতির মধ্যে মিয়ানমারে নতুন বিপর্যয় ডেকে এনেছে এই দুর্যোগ। এতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্দালয়। সোনার পাত উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ঝলমলে এই শহরটির বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে পড়েছে, যার নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক লাশ।
১০ দিন আগে
ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত প্রায় ৩ হাজার, জীবিতদেরও উদ্ধার করা হচ্ছে
উদ্ধারকর্মীরা যখন মিয়ানমারের ধ্বংসস্তূপ থেকে ৬৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করছিলেন, তখন তার মতো আরও অনেকের ফিরে আসার আশা ফিকে হয়ে গেছে। গৃহযুদ্ধকবলিত দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এরইমধ্যে প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে, এই সংখ্যাটা বেড়ে কোথায় গিয়ে ঠেকবে; তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে আশার কথা, এখনো জীবিতদের উদ্ধার করা হচ্ছে।
গৃহযুদ্ধের কারণে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির মানবিক সংকট বহু পুরোনো। এই ভূমিকম্প সেই সংকটকে আরও ভয়াবহ মাত্রায় নিয়ে গেছে। রাজধানী নেপিদোর উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ভবন ধসে পড়ার পর ইট-পাথরের স্তূপের নিচে ঢাকা পড়েছিলেন ওই নারী। কিন্তু তাকে সফলভাবে তুলে আনা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে আঘাত হানে ভূমিকম্প। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর জীবিতদের উদ্ধারের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে।
দেশটির রাজধানী নেপিদোর একটি ফোরামে জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৭১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। চার হাজার ৫২১ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ৪৪১ জন।’
মিয়ানমারের বিভিন্ন অংশ থেকে অনুভূত হয়েছে এই বিধ্বংসী ভূমিকম্প। এতে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। সড়ক ও সেতু ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে একদিকে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
বেশিরভাগ প্রাণহানি হয়েছে মান্দালয় ও নেপিদোতে। ইউনিসেফের মিয়ানমার প্রতিনিধি জুলিয়া রিস বলেন, ‘এখানে ব্যাপক সহায়তা দরকার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা আরও বাড়ছে। জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কমে আসছে। আক্রান্ত এলাকাগুলোতে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরবরাহের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।’
উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। এতে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও হাত দিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করতে হচ্ছে অনেককে।
মিয়ানমার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রোগ্রাম উপ-পরিচালক লরেন ইলারি বলেন, ‘কী মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বর্তমান পর্যায়ে এসে আমরা পরিষ্কার হতে পারছি না। মান্দালয়ের আশি শতাংশ ভবন ভেঙে পড়েছে।’
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে নিহত বেড়ে ২ হাজার, ধীর গতির উদ্ধার অভিযান
দেশটির তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, ‘আঘাত ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। রক্ত সরবরাহ, চেতনানাশক, অপরিহার্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রয়োজন।’
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।
১৫ দিন আগে
মিয়ানমারে দ্বিতীয় দফায় পাঠানো হলো ত্রাণ, ওষুধ ও উদ্ধারকারী দল
মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় দ্বিতীয় দফায় জরুরি ওষুধ, চিকিৎসক দল, ত্রাণসামগ্রী ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে আজ (মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ও বিমান বাহিনীর দুটিসহ মোট তিনটি পরিবহন বিমান উদ্ধার সরঞ্জামাদিসহ একটি উদ্ধারকারী দল, জরুরি ওষুধ সামগ্রীসহ একটি চিকিৎসক দল এবং ১৫ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোর উদ্দেশে যাত্রা করেছে।
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে নিহত বেড়ে ২ হাজার, ধীর গতির উদ্ধার অভিযান
৩৪ জন উদ্ধারকারী ও ২১ জন চিকিৎসাকর্মী মিলিয়ে মোট ৫৫ জনের একটি দল এই মিশনে অংশ নিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর কর্নেল মো. শামীম ইফতেখারের নেতৃত্বে মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও জরুরি চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করবে দলটি।
উদ্ধারকারীদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ২১ জন, নৌবাহিনীর দুজন, বিমানবাহিনীর একজন ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১০ সদস্য রয়েছেন। চিকিৎসা সহায়তা দলে রয়েছেন সেনাবাহিনীর ১০ জন, নৌবাহিনীর একজন, বিমানবাহিনীর দুজন ও অসামরিক ৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দ্বিতীয় দফায় পাঠানো ১৫ টন ত্রাণ সহায়তার মধ্যে রয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, তাঁবু, স্বাস্থ্যবিধি পণ্য ও ঔষুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী।
আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
এর আগে, রবিবার (৩০ মার্চ) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে প্রথম দফায় মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয়। সেই মিশনে ওষুধ, তাঁবু, শুকনো খাবার ও একটি মেডিকেল টিম অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গত শুক্রবার দিনের মাঝামাঝি সময়ে এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে মিয়ানমারে। এরপর থেকে সেখানে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬৫ জনের লাশ উদ্ধার করেছে দেশটির সামরিক সরকার। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩ হাজার ৯০০ মানুষ। ধ্বংসস্তুপের নিচে আরও প্রায় ২৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
১৬ দিন আগে
মিয়ানমারে নিহত বেড়ে ২ হাজার, ধীর গতির উদ্ধার অভিযান
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দুই হাজারে পৌঁছেছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধার অভিযান ধীর গতিতে চলছে। গেল শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে দেশটিতে। এরপর থেকে নিহতের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, একটি মঠ ভেঙে ২০০ বৌদ্ধ ভিক্ষু নিহত হয়েছেন। একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় ধসে পড়লে ৫০টি শিশুর প্রাণহাটি ঘটেছে। আর জুমাতুল বিদার নামাজ আদায়ের সময়ে সাত শতাধিক মুসল্লি নিহত হয়েছেন।
সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পটি উৎপত্তি স্থল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে। এতে শহরের বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সড়কগুলো ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। আর ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে শত শত ভবন।
জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি করে জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে মিয়ানমারে খাদ্যসংকট ও রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। গৃহযুদ্ধে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় আগে থেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে সেখানে। এই দুর্যোগ সেই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।আরও পড়ুন: জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জ্বালানি সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। এতে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও হাত দিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করতে হচ্ছে অনেককে।
ভেঙেপড়া মান্দালয়ের ইউ হ্লা থেন মঠের উদ্ধারকারীরা বলছেন, ‘তারা এখনো ১৫০ ভিক্ষুকের মরদেহ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।’
মিয়ানমার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রোগ্রাম উপ-পরিচালক লরেন ইলারি বলেন, ‘কী মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বর্তমান পর্যায়ে এসে আমরা পরিষ্কার হতে পারছি না। মান্দালয়ের আশি শতাংশ ভবন ভঙে পড়েছে।’
দেশটির তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, ‘আঘাত ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। রক্ত সরবরাহ, চেতনানাশক, অপরিহার্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।
১৬ দিন আগে
জুমার নামাজের সময় ভূমিকম্প, মিয়ানমারে নিহত অন্তত ৭০০ মুসল্লি
মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার বিধ্বংসী ভূমিকম্পে নিহতদের মধ্যে সাত শতাধিক মুসল্লি রয়েছেন। সোমবার (৩১ মার্চ) দেশটির একটি মুসলিম সংস্থা এমন তথ্য জানিয়েছে।
গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে রমজানের শেষ দিকে জুমাতুল বিদার দিনে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তখন জুমার নামাজ আদায়ে মসজিদে ছিলেন বেশিরভাগ মুসল্লি।
জান্তা সরকার বলছে, এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০’র বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
তবে সেসব মুসল্লিদের নিহতের তথ্য সরকারি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা, তা পরিষ্কার নয়।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ইরাবতিতে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ভূমিকম্পে বেশ কিছু মসজিদ ভেঙে পড়ছে। লোকজন ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ জায়গায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মিয়ানমারের বসন্ত বিপ্লবের মুসলিম নেটওয়ার্কের পরিচালনা কমিটির সদস্য টুন কিই বলেন, মান্দালয়ের এই ভূমিকম্পে ৬০টির বেশি মসজিদ ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবনগুলো অনেক পুরোনো হওয়ায় আগে থেকেই ঝুঁকিতে ছিল বলে জানান তিনি।
জান্তা সরকারের মুখপাত্র জো মিন তুন জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ১ হাজার ৭০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৩ হাজার ৪০০ জন। এখনও আরও ৩ শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
ভূমিকম্পে অসংখ্য ভবন মাটিতে মিশে গেছে, রাস্তাঘাট ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে, সেতুগুলো ধসে পড়েছে। দেশটির সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন পড়েছে।
ব্রিট্শি দৈনিক গার্ডিয়ানের খবর বলছে, উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য স্থানীয়দের কাছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার নেই।
রেডক্রসের কর্মকর্তাদের দাবি, গত ১০০ বছরে এই মাত্রার বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়নি এশিয়া।
উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, ‘যাদের সহায়তা দরকার, তারা আমাদের ডাকছেন। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে তাদের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারছি না।’
এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও ১৮ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। দেশটির একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভেঙে পড়ায় এই প্রাণহানি ঘটেছে।
১৭ দিন আগে
ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত বেড়ে দেড় সহস্রাধিক, বাড়তে পারে আরও
মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৬৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এক বিবৃতিতে দেশটির জান্তা সরকার এমন তথ্য দিয়েছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দিনের মাঝামাঝিতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির মধ্যাঞ্চলের সাগেইং শহরে সাত দশমিক সাত মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছে। পরবর্তীকে বেশ কয়েকটি আফটারশক (পরাঘাত) হয়েছে। এরমধ্যে একটি আফটারশকের মাত্রা ছিল ছয় দশমিক সাত মাত্রার।-খবর ডনের।
প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডও কেঁপে ওঠে ভূমিকম্পে। দেশটিতে ১০ জনের নিহতের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভূমিকম্পে মিয়ানমারের বহু ভবন ও সেতু ভেঙে পড়েছে। রাস্তায় ফাটল ধরে চৌচির হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর মান্দালয়। শহরটিতে এক কোটি ৭০ মানুষ বাস করেন।
জান্তা সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে তিন হাজার ৪০৮ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৩৯ জন।
গেল একশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার হওয়া সম্ভব হয়নি। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিল্ডিং কোড-মহাপরিকল্পনা অনুসরণ না করলে বিপর্যয় ডেকে আনবে ভূমিকম্প
দেশটিতে কয়েক শত বছরের পুরোনো একটি প্যাগোডা মাটিতে মিশে গেছে। প্যাগোডার পাশেই তল্লাশিচৌকিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক সেনা বলেন, ‘হঠাৎ করে কম্পন শুরু হয়েছে। পরে তা মারাত্মক রূপ নিয়েছে। মঠও ভেঙে গেছে। একজন সন্ন্যাসী নিহত হয়েছেন। কয়েকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
দীর্ঘদিন ধরে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধকবলিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে ব্যাপক মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পের ফলে সড়ক ও সেতু ভেঙে পড়ায় চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে ত্রাণ কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না।
১৮ দিন আগে
বিল্ডিং কোড-মহাপরিকল্পনা অনুসরণ না করলে বিপর্যয় ডেকে আনবে ভূমিকম্প
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের অধিকাংশ বড়, মাঝারি ও ছোট শহরগুলোই ভূমিকম্প দুর্যোগ মোকাবিলায় একেবারেই অপ্রস্তুত বলে মনে করে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, শুক্রবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারে সংঘটিত ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পজনিত ক্ষয়ক্ষতি ও আশপাশের দেশ ও অঞ্চলে তার সামগ্রিক প্রভাব আরও একবার বাংলাদেশের নগরগুলোর ভূমিকম্প প্রস্তুতি না থাকা এবং ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড এবং মহাপরিকল্পনা ও ভূমি ব্যবহার জোনিং না মানার প্রবণতার কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট অনেকগুলো ভূমিকম্প বড় আকারের ভূমিকম্পের আসন্ন পূর্বাভাস দিলেও প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শূন্য। ফলে যেকোনো সময়ে ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটার আগেই ভূমিকম্প-ঝুঁকি কমাতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে এখনই যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়েছে আইপিডি।
সংস্থাটি বলেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করলেও দেশের পরিকল্পিত নগরায়ন, টেকসই আবাসন ও ভবনের নিরাপত্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো কমিশন করেনি। এ বিষয়টি তারা অনভিপ্রেত বলে মনে করে।
বিষয়টি আইপিডিসহ অনেকের কাছেই বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে ঢাকা মহানগরীতে যত্রতত্র নির্বিচারে বহুতল ভবন বানানোর স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডের অনুমোদন করার জন্য সাতজন উপদেষ্টাকে নিয়ে ড্যাপ সংশোধনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করেছে। অথচ ভূমিকম্প কিংবা যেকোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানুষের আশ্রয় নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় এলাকাভিত্তিক পার্ক, খেলার মাঠ ও উদ্যানের মতো উন্মুক্ত স্থান কীভাবে নগরে বাড়ানো যায়, সেই আলোচনা সরকারি মহলে কোথাও শোনা যাচ্ছে না। তার ওপর কাঁঠালবাগান ও সংলগ্ন এলাকার জন্য দূর্যোগের সময়ে ঠাঁই নেওয়ার একমাত্র খোলা জায়গা পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষার্থে একশ দিনের সামাজিক আন্দোলনেও সরকার নির্লিপ্ত আচরণ করছে।’
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পের উচ্চঝুঁকিতে বাংলাদেশ, নির্দেশনা জারি
‘রাজউক এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনেকের বিরুদ্ধেই আবাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিভিন্ন আঁতাত করে দূর্নীতির মাধ্যমে যত্রতত্র অনুমোদনহীন ভবন গড়ে উঠতে দেওয়া এবং পরবর্তীতে মহাপরিকল্পনা সংশোধনের নামে সেইসব ভবন ও প্রকল্পের বৈধতা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এই দূর্নীতিগ্রস্ত সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করার এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং এই চক্রের সঙ্গে আপোষের মাধ্যমে রাজউক ও মন্ত্রণালয় ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ও ইমারত বিধিমালা সংশোধন করার সাম্প্রতিক যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে ঢাকায় ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি আরও ব্যাপক হারে বাড়বে।’
সরু রাস্তায় বহুতল ভবন নির্মাণের অবাধ স্বাধীনতা কিংবা ১০ তলা পর্যন্ত আবাসিক ভবনকে বহুতল বিবেচনা না করে কাঠামোগত ও অগ্নি নিরাপত্তায় ছাড় দেওয়ার উদ্যোগগুলো অত্যন্ত বিপদজনক উল্লেখ করে আপিডি জানিয়েছে, নাগরিক, পেশাজীবী ও পরিকল্পনাবিদদের পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলোকে বারবার তুলে ধরা হলেও রাজউক ও মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করে আবাসন ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
আইপিডি আরও মনে করে, ‘ঢাকার ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনায় মাটির ভূতাত্ত্বিক গঠন ও গুণাগুণকে বিবেচনায় নিয়ে ভূমি ব্যবহার এবং ভবনের আকার-আয়তন নির্ধারণ করা প্রয়োজন। অথচ ঢাকার নগর পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলোকে সেভাবে বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে না।’
‘ঢাকার পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলসহ নগরীর চারদিকে বন্যা প্রবাহ অঞ্চল ও জলাশয়-জলাভূমি ভরাট করে অধিকাংশ অনুমোদনহীন যেসব আবাসিক প্রকল্প গড়ে উঠেছে, সেখানে ইতোমধ্যেই অসংখ্য বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। দুর্বল মাটির ওপর গড়ে ওঠা এসব ভবনের ভূমিকম্প ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।’
‘সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের ভূমিকম্পেও এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে। ঢাকার ড্যাপে এলাকাভিত্তিক ভিন্নতাকে মাথায় নিয়ে ভবনের আকার-আয়তন নির্দিষ্ট করার প্রস্তাবনা থাকলেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার সংশোধন প্রস্তাবনায় মন্ত্রণালয় এলাকাভিত্তিক ভিন্নতাকে বাদ দিয়ে পুরো ঢাকা মহানগরীর জন্য একইধরনের এফএআর বা ফার মান প্রস্তাব করেছে। পৃথিবীর কোনো শহরের নগর পরিকল্পনায় এ ধরনের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কৌশল না থাকলেও এভাবেই চলছে ঢাকার মত অত্যন্ত অবাসযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ শহরের নগর পরিকল্পনা।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এই ধরনের আত্ম-বিধ্বংসী প্রবণতা থেকে বের না হতে পারলে ঢাকার কাছাকাছি এপিসেন্টারে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। আমাদের নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের জনবসতির লোকজনের জন্যেও এই ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক আকারে হতে পারে, যা হাইতির ভূমিকম্পে দেখা গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে মিয়ানমারে সহস্রাধিক প্রাণহানি, ব্যাপক মানবিক সংকট
এ অবস্থায় ঢাকাসহ দেশের নগর এলাকার ভূমিকম্প ঝুঁকি কমাতে আইপিডি দশটি সুপারিশ করছে। সেগুলো হলো:
১) নগরে জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ নিতে নগর পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা কমিশন গঠন।
২) বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) বাস্তবায়নে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি (বিবিআরএ) গঠন করা।
৩) মাটির ভূতাত্ত্বিক গঠন ও গুণাগুণকে বিবেচনায় নিয়ে নগর এলাকার ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন।
৪) ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে ভবনের রেট্রোফিট বা শক্তি বৃদ্ধিকরণ ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ভবন পূনর্নির্মাণ।
৫) নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের মানুষের বসতি এলাকার ভবনগুলোর বৈশিষ্ট্য ও এলাকাভিত্তিক ভিন্নতাকে বিবেচনায় নিয়ে ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা কৌশল ও কর্মপন্থা নির্ধারণ।
৬) সরু রাস্তার পাশে এবং জলাশয়-জলাভূমির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন না দেওয়া এবং গ্যাস-বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন পরিষেবা লাইনগুলার নিয়মিত তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণ।
৭) দূর্যোগের সময় আপৎকালীন আশ্রয়ের জন্য এলাকাভিত্তিক পার্ক, উদ্যান, খেলার মাঠ ও খোলা পরিসর তৈরি এবং সংরক্ষণ করা।
৮) মহাপরিকল্পনা ও ইমারত বিধিমালা, অগ্নি নিরাপত্তা সম্পর্কিত আইন প্রণয়নে ব্যবসায়িক গোষ্ঠীস্বার্থে আপোষ না করে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রাধিকার দেওয়া।
৯) উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ভবন নির্মাণ ও পরিকল্পনা তদারকি সক্ষমতা বাড়ানো।
১০) ভূমিকম্প ঝুঁকি কমাতে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা।
১৮ দিন আগে