বাঘ
বাঘ বাঁচাতে সাইকেলে চড়ে ডাচ রাষ্ট্রদূতের সুন্দরবন যাত্রা
সুন্দরবনকে বাঁচানোর উপায় বরাবরই কেবল কথা নয়, বরং তার চেয়েও বেশি কিছুর দাবি রাখে। এর জন্য প্রয়োজন হয় ঘর্মাক্ত শরীর, ফোসকা পড়া পা ও এমন একগুঁয়েমি, যাতে সূর্যের প্রখর রোদে শরীর পুড়লেও যাত্রা ব্যাহত হবে না; কঠিন পরিস্থিতিতেও চলবে অগ্রযাত্রা।
গত ২৮ থেকে ৩০ মার্চ এমন কিছুই করে দেখিয়ে দিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কারসটেন্স। কূটনীতির করিডোর ছেড়ে সাইকেলে চেপে তিনি বেরিয়ে পড়েন ধুলি ওড়া, কঠিন পথে। বরিশাল থেকে বাঘের ডেরা সুন্দরবনের জয়মণিতে অবস্থিত ওয়াইল্ডটিমের কনজারভেশন বায়োলজি সেন্টার ‘টাইগারহাউস’ পর্যন্ত ১৬৩ কিলোমিটার পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন এই কূটনীতিক।
ছেলে কারস্টেন্স ইয়াকোবাস হেরমানাস ও দুই বন্ধু নিলস ফন ডেন বের্গে (নেদারল্যান্ডস পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য) ও ইয়ংমান কারিনকে সঙ্গে নিয়ে এই যাত্রা করেন তিনি। এ সময় আড়ম্বর করে প্রতিনিধি দল কিংবা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে নেননি এই কূটনীতিক; এটি ছিল নীরব-নিভৃতে সচেতন এক অভিযাত্রা।
আরও পড়ুন: সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এনআইসি সদস্য হলেন এনায়েতউল্লাহ খান
তার এই কর্মকাণ্ড এক যুগ আগের এমনই আরেকটি যাত্রার কথা মনে করিয়ে দেয়। তখন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ, কূটনীতিক ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের একটি দল দেশজুড়ে রিকশা চালিয়েছিলেন। সেই সময়ের লক্ষ্য ছিল বাঘের অস্তিত্ব সংকটকে জনসমক্ষে তুলে ধরা।
আর এবারের মিশন ছিল সুন্দরবনের হৃদস্পন্দন—এর উত্তাপ, কানাকানি ও নাজুক অস্তিত্বের ভার সরেজমিনে অনুভব করা।
গত ১০ ও ১১ জানুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের উপপ্রধান ড. বেয়ার্ন্ড স্পানিয়েরের সঙ্গে প্রথমবার ওয়াইল্ডটিমস কনজারভেশন বায়োলজি সেন্টার পরিদর্শন করেন কারসটেন্স। এরপর ৮০ দিনেরও কম সময়ের ব্যবধানে তিনি সেখানে ফিরে যান। তবে এবার শুধু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, তাদের আবাসস্থল ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো নিজে অনুভব করে এসব বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সচেতনতা বৃদ্ধিই ছিল তার লক্ষ্য।
আন্দ্রের মতে, ‘মানুষ ভাবে সুন্দরবন শুধুই একটি বন, কিন্তু সত্যিকার অর্থে এটি বাংলাদেশের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া জীবন্ত রক্ষাকবচ। আপনি যখন এর ভেতর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাবেন, তখন বুঝতে পারবেন—এটি আমাদের কত কিছু দিচ্ছে এবং ঠিক কতটা হারাচ্ছে।’
নিলস ফন ডেন বের্গে নেদারল্যান্ডসের সংসদ সদস্যই শুধু ছিলেন না, ডাচ ওয়াখেনিনগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পরিবেশবিদ হিসেবে স্নাতকও সম্পন্ন করেছেন। বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তপ্রায় এই বাঘের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের আবাসস্থল বাংলাদেশের সুন্দরবন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বের্গে বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশটি যেভাবে এই বনটিকে আগলে রেখেছে, তা দেখে আমি অভিভূত। ওয়াইল্ডটিমের মতো সংস্থা ও কমিউনিটি—যারা এটি সম্ভব করেছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
‘আমার প্রিয় লেখক অমিতাভ ঘোষের ‘হাংরি টাইডের’ এই ভূখণ্ডে এটি আমার তৃতীয় ভ্রমণ। অর্থাৎ তৃতীয়বারের মতো আমি সুন্দরবন এসেছি। কিন্তু সাইকেল চালিয়ে এটিই আমার প্রথম সুন্দরবন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। অসাধারণ এক যাত্রা ছিল এটি। যেখানেই গিয়েছি, সেখান থেকেই সহযোগিতা পেয়েছি। গ্রামের ছেলেরা সরু অস্থায়ী সেতুর ওপর দিয়ে সাইকেল নিয়ে যেতে আমাদের সহযোগিতা করেছে। এর সঙ্গে ছিল রেস্তোরাঁয় বিনামূল্যের চা ও চমৎকার সব আড্ডা,’ বলেন তিনি।
‘দ্য হাংরি টাইড’ ভারতীয় লেখক অমিতাভ ঘোষের চতুর্থ উপন্যাস। সুন্দরবনের প্রেক্ষাপটে এটি লেখেন তিনি। কথা সাহিত্যের জন্য ২০০৪ সালে ‘হাচ ক্রসওয়ার্ড বুক অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত হয় বইটি।
আরও পড়ুন: ওএএনএ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করলেন এনায়েতউল্লাহ খান
টাইগারহাউসে সাইক্লিস্টরা পৌঁছানোর পর পুরোনো বন্ধুদের মতো সম্ভাষণ জানান টাইগারস্কাউটরা—স্থানীয় তরুণ সংরক্ষণবাদী, যারা সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকেন। এছাড়া ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমও (ভিটিআরটি) তাদের স্বাগত জানায়। মানুষ ও বাঘের সংঘাত নিরসনে কাজ করতে এই টিমকে প্রশিক্ষণ দেয় ওয়াইল্ডটিম।
এই কেন্দ্রটি আইইউসিএনের সমন্বিত বাঘের আবাসস্থল সংরক্ষণ কর্মসূচির (আইটিএইচসিপি) অধীনে ওয়াইল্ডটিমের কাজের প্রাণকেন্দ্র। জার্মানি ও কেএফডব্লিউ উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় এটি পরিচালিত হয়। এটি এমন একটি কেন্দ্রস্থল যেখানে বিজ্ঞানের সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইয়ের মিলন ঘটে।
১৮ দিন আগে
সুন্দরবনে বাঘ বেড়েছে ১১টি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালের তুলনায় চলতি বছরের জরিপে ১১টি বাঘ বেশি পাওয়া গেছে।
একই সঙ্গে বাঘের ঘনত্ব ও শাবকের সংখ্যা বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে 'সুন্দরবন বাঘ জরিপ-২০২৪' এর ফলাফল ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা।
জরিপে দেখা যায়, ২০১৮ সালের জরিপে ১১৪টি বাঘ পাওয়া গিয়েছিল, নতুন জরিপে ১১টি বেড়ে ১২৫টি বাঘ পাওয়া গেছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সার্বিক বিচার বিশ্লেষণে ২০২৩-২০২৪ সালে সুন্দরবনে পরিচালিত বাঘ জরিপে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটার বনে বাঘের ঘনত্ব পাওয়া যায় ২ দশমিক ৬৪।
তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০১৫ সালের তুলনায় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে আধুনিক পদ্ধতি ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ জরিপ করা হয়। সেই জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১০৬টি এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ১৭। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘ জরিপে ১১৪টি বাঘ পাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ বর্গ কিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ৫৫। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে বাঘ বেড়েছে ৮টি এবং বাঘ বাড়ার শতকরা হার ছিল প্রায় ৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন: বাঘ সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২৪ পালন
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে তৃতীয় পর্যায়ে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা, চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে চালানো বাঘ জরিপে বাঘের ছবি পাওয়া যায় ৭ হাজার ২৯৭টি। এত বিপুলসংখ্যক বাঘের ছবি এর আগে পাওয়া যায়নি।
২০২৩-২৪ সালের বাঘ জরিপে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, তবে বাঘ শাবকের সংখ্যা জরিপের ফলাফলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কারণ ছোট থেকে পূর্ণবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বাঘ শাবকের মৃত্যুর হার অনেক বেশি হয়ে থাকে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ২০২৩-২৪ সালের বাঘ জরিপে ২১টি বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে, যেখানে ২০১৫ ও ২০১৮ সালের বাঘ জরিপে মাত্র ৫টি করে বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গিয়েছিল।
বাঘ সংরক্ষণে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিয়েছে বলে জানান রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, বাঘসহ সুন্দরবনের অন্যান্য বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও প্রজননের উদ্দেশ্যে বনের ৫৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এলাকাকে রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। সেখান থেকে সব ধরনের বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের ফেন্সিং তৈরি করা হচ্ছে।
এছাড়াও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় বাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আশ্রয়ের জন্য বনের ভিতরে ১২টি মাটির উঁচু কিল্লা বা ঢিঁবি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, বাঘের প্রজননের জন্য সুন্দরবনের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আগামীতে বাঘের সংখ্যা আরও বাড়বে।
এই জরিপে তিন কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলেও জানান সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক আবু নাসের মোহসিন হোসেন।
আরও পড়ুন: বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে সুন্দরবনের শিশু-কিশোরদের নিয়ে ওয়াইল্ডটিমের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান
১৯৪ দিন আগে
বাঘ সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ব বাঘ দিবস ২০২৪ পালন
বাঘ সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং তাদের আবাসস্থল কমতে থাকা, গুপ্তশিকার ও মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংঘাতের মতো জরুরি হুমকি মোকাবিলায় গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস।
বাঘের ওপর প্রভাব ফেলে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়। বিশেষত গুপ্তশিকার, অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার এবং আবাসস্থল কমে আসার কারণে বাঘবিলুপ্তির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বাঘের অস্তিত্ব রক্ষা করতে মানুষকে একত্রিত করা, জনসমর্থন অর্জন এবং টেকসই প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নেওয়াই বিশ্ব বাঘ দিবসের লক্ষ্য। বাঘ সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত সম্ভাবনা ও অসুবিধাগুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গ্রহের জীববৈচিত্র্য বজায় রাখাই এই দিবসের উদ্দেশ্য।
এ বছর বিশ্ব বাঘ দিবসে সর্বশেষ বাঘ শুমারির ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও কারফিউয়ের কারণে নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় বন কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করতে না পারায় তা স্থগিত করা হয়েছে।
বাঘ শুমারির ফলাফল আগামী মাসে ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে এই শুমারি করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জে এই শুমারি করা হয়।
চলতি বছরের শুরুর দিকে চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জেও একই ধরনের সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। ৪০ দিনের ব্যবধানে প্রতিটি রেঞ্জের ১৪৫টি পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা বসানো হয়।
এছাড়াও সুন্দরবনে খাল জরিপের মাধ্যমে বাঘের পায়ের ছাপ সংগ্রহ করা হয়। বাঘ শুমারির সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহের কাজ প্রায় চার মাস আগে শেষ হয়েছিল।
বাঘ সংরক্ষণের প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, একই বাঘের একাধিকবার ছবিসহ প্রায় সাড়ে সাত হাজার বাঘের ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিটি বাঘের জন্য একটি করে 'ইউনিক আইডি' তৈরি করা হয়েছে। এসব ছবি বিশ্লেষণের জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে এ বছরের বিশ্ব বাঘ দিবসে এই গণনার তথ্য প্রকাশ করার কথা ছিল। তবে সাম্প্রতিক অস্থিরতা ও কারফিউর কারণে কাজ শেষ করা যায়নি।
আগামী মাসে ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
২০১৮ সালে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করে বন বিভাগ সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘের উপস্থিতি পেলেও এবার বাঘের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
২৬৫ দিন আগে
সুন্দরবন থেকে বাঘের মরদেহ উদ্ধার
সুন্দরবনের খাল থেকে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলাধীন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের আন্ধারিয়া খালে ভাসমান অবস্থায় বন বিভাগ বাঘটির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।
ওই দিন রাতে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বাঘটির ময়নাতদন্ত করা হয়। বন বিভাগের ধারণা গরমের কারণে বাঘটি হিট স্ট্রোকে মারা গেছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের খাল থেকে মৃত বাঘ উদ্ধার
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, বন বিভাগের সদস্যরা মঙ্গলবার বিকালে সুন্দরবনের জোংড়া এলাকার আন্ধারিয়া খালে টহলে ছিল। এসময় তারা একটি বাঘের মরদেহ ভাসতে দেখে উদ্ধার করে। ওই রাতে বাঘটির মরদেহ করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে আনা হয়। পরে সেখানে বনবিভাগ ও দাকোপ উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে প্রাণীসম্পদ বিভাগ বাঘটির ময়নাতনন্ত সম্পূর্ণ করে।
তিনি আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে গরমের কারণে ৩ থেকে ৪ দিন আগে বাঘটি হিটস্টোকে মারা গেছে। বাঘের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বাঘের মরদেহ থেকে বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষার জন্য। রিপোর্ট পাওয়ার পর বাঘের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, প্রচন্ড গরমের কারণে খালে পানি খেতে এসে বাঘটি মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভাসমান অবস্থায় অর্ধগলিত বাঘের মরদেহ উদ্ধার করার পর মঙ্গলবার রাতে করমজলে আনা হয়। বাঘের চামড়া পচে গেছে। ময়নাতদন্ত করে বাঘের দাঁত ও হাড়গোড় সংরক্ষণ করা হয়েছে। ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষার জন্য বাঘের লালা, চামড়া, লিভার, রক্তসহ বিভিন্ন আলামত সংরক্ষণ করা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, সুন্দরবনে বাঘের নিরাপ্তা নিশ্চিত করতে টহল ফাঁড়ির কার্যক্রমের পাশাপাশি স্মার্ট পেট্রোল করা হচ্ছে সুন্দরনে। বাঘ যাতে সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে বের হতে না পারে এজন্য বনের সীমানা এলাকায় বন বিভাগের টহল বাড়ানো হয়েছে।
সার্বক্ষণিক বন বিভাগ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে ডিএফও জানান।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ সদস্যকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ
৩৫৪ দিন আগে
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা দুটি বাঘের বিনিময়ে দুই জলহস্তী পাচ্ছে
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নতুন অতিথি হিসেবে আসছে দুটি জলহস্তী। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানা থেকে জলহস্তী জোড়া আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
এর পরিবর্তে ঢাকা চিড়িয়াখানাকে দেওয়া হচ্ছে এক জোড়া বাঘ।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জলহস্তী রাখার জন্য তৈরি করা হচ্ছে নতুন খাঁচা।
আরও পড়ুন: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ: ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা
দিন দিন দেশ বিদেশের বিচিত্র সব পশু-পাখিতে সমৃদ্ধ হওয়া চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এখন পর্যন্ত মোট ৬৮ প্রজাতির পশু-পাখি রয়েছে।
কুমিরের আগের জায়গায় নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে চিড়িয়াখানার নতুন অতিথি জলহস্তীর বাসস্থান। আর কুমিরের খাঁচা তৈরি করা হয়েছে পাহাড়ের পশ্চিম পাশে লেকের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে।
চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আনা হচ্ছে এক জোড়া জলহস্তী। বিনিময়ে ঢাকা চিড়িয়াখানাকে দেওয়া হচ্ছে এক জোড়া বাঘ। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ১৬টি বাঘ আছে।
চলতি বছর ১৬ মার্চ চট্টগ্রাম আনা হয় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এক জোড়া সিংহ। একই সময় আনা হয় চার জোড়া ওয়াইল্ড বিস্ট।
দরপত্রের মাধ্যমে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকায় সিংহ, ম্যাকাও, ওয়াইল্ড বিস্ট, ক্যাঙ্গারু ও লামা আমদানি করা হয়। ফ্যালকন ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রাণীগুলো আমদানি করে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুছাইন মোহাম্মদ বলেন, দুই দশক আগে মৃতপ্রায় এই চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের জন্য আনা হয়েছে ম্যাকাউ, সিংহ, ক্যাঙ্গারু, ওয়েলবিস্ট ও লামাসহ অনেক প্রাণী। জলহস্তী যুক্ত হওয়ার পর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রাণীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৬২০টিতে।
৩৪ বছর বয়সী এই চিড়িয়াখানায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৬৮ প্রজাতির পশু-পাখি রয়েছে। এর মধ্যে- ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৪ প্রজাতির পাখি ও চার প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী আছে। যা দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে।
প্রতিদিন এই চিড়িয়াখানায় ৪-৫ হাজারের মতো দর্শনার্থী আসছেন। আর শুক্র ও শনিবারসহ যে কোনো বন্ধের দিনে তা ১০ হাজার পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নতুন অতিথি আফ্রিকার ২ সিংহ ও ৮ ওয়াইল্ড বিস্ট
করোনা: অনির্দিষ্টকালের জন্য মিরপুর ও রংপুর চিড়িয়াখানা বন্ধ
৫৮৬ দিন আগে
সুন্দরবনে গত ৫ বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে গত ৫ বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১১৪ টিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ ৫ বছরে সুন্দরবনের বাঘ বেড়েছে অনেক।
সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘ রয়েছে বলে ক্যামেরা ট্রাকিং জরিপে উঠে এসেছে।
সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারীদের দৌরাত্ম্য কমা এবং বনবিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
বিশেজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। তবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমিকে তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ করা গেলে দ্রুত বাঘের সংখ্যা আরও বাড়বে।
বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘ গণনার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পশ্চিম বিভাগের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর থেকে পূর্ব বিভাগে গণনার কাজ শুরু করা হবে। তবে পশ্চিম বিভাগে ক্যমেরা ট্র্যাকিং শেষে বাঘ বৃদ্ধি পাওয়ার আশা করছে বন বিভাগ।
সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অবাধ বিচরণ ও প্রতিনিয়ত বাঘের শাবকের দেখা মিলছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে ও বাওয়ালীরা।
বন বিভাগের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি এবং এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়।
১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান।
২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি।
১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের বাঘের মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন আব্দুল ওয়াজেদ
৬২৯ দিন আগে
সুন্দরবনে অর্ধগলিত বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার
বন বিভাগ সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী বনস্টেশন অফিসের সদস্যরা সুন্দরবন থেকে একটি অর্ধগলিত বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।
রবিবার সকাল ৯টার দিকে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) নূর আলমের নেতৃত্বে বনকর্মীরা সুন্দরবনে কলাগাছিয়া সংলগ্ন মুরালী খাল নামক বনের ভিতর থেকে অর্ধগলিত বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের ফরেস্ট অফিসের কাছে ৩ বাঘ, আতঙ্কিত বনরক্ষীরা
বনস্টেশন কর্মকর্তা (এসও) নূর আলম জানান, সকালের দিকে জেলেদের কাছে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল থেকে একটি অর্ধগলিত বাঘের লাশ উদ্ধার করা হয়।
বাঘটি আনুমানিক এক মাস আগে মারা গেছে বলেও তিনি জানান।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) একেএম ইকবাল হোসেন চৌধুরী সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মৃত বাঘের হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় শ্যামনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
তবে বাঘটি মৃত্যুর কারণ জানা যায় নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল ইসলাম বাদল সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মৃত বাঘ উদ্ধারের ঘটনায় শ্যামনগর থানায় জিডি হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন থেকে গরু আনতে গিয়ে বাঘের মুখে কৃষক
বাঘের চামড়াসহ ২ চোরা শিকারী আটক
৭৯৮ দিন আগে
বাঘের চামড়াসহ ২ চোরা শিকারী আটক
সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়াসহ দুই বাঘ শিকারীকে আটক করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৬ খুলনার সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান অধিনায়ক কর্নেল মোসতাক আহমেদ।
অধিনায়ক জানান, সাতক্ষীরা ক্যাম্পের র্যাব গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী অবৈধভাবে কৌশলে শিকার করে সেসব চামড়া ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চোরাচালানের মাধ্যমে পাচার করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার র্যাবের সাতক্ষীরা ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদে জানতে পারে, জেলার শ্যামনগর থানা এলাকায় পাচারকারী চক্রের সদস্যরা বাঘের একটি চামড়া পাচার করার উদ্দেশে অবস্থান করছেন।
সেই সংবাদের ভিত্তিতে আভিযানিক দলটি গতকাল সন্ধ্যায় হরিণনগর ধল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে কুমিরসহ ১৮ বন্যপ্রাণী অবমুক্ত
তখন মো. হাফিজুর শেখ (৪৭) ও মো. ইসমাইল শেখকে (২৪) আটক করা হয়।
এ সময় উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আটক করা আসামিদের কাছ থেকে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা স্বীকার করেছেন মাছধরা ও গোলপাতা সংগ্রহের পাশ নিয়ে সুন্দরবনে যান। পরে ছাগলের মাংসের সঙ্গে কীটনাশক ব্যবহার করে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী শিকার করেন।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া দেশে ও দেশের বাইরে শৌখিন মানুষদের কাছে কোটি টাকায় বিক্রয় করেন।
তিনি আরও বলেন, পাঁচ লাখ টাকার লোভে আসামিরা মাছ ধরা ও গোলপাতা সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করে। এরপর ছাগলের মাংসের সঙ্গে বিষাক্ত কীটনাশক মিশিয়ে বাঘসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী শিকার করে।
এছাড়া গত ২৭ জানুয়ারি শ্যামনগর এলাকা থেকে বাঘটি শিকার করে তারা। পরে চামড়া ছাড়িয়ে পাচারকারীর কাছে সরবরাহের চেষ্টা করছিল তারা।
তিনি জানান, র্যাব-৬ সাতক্ষীরার কমান্ডার মেজর গালিব অভিযান চালিয়ে বাঘের চামড়াসহ তিনজনকে আটক করেন। পরে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দু’জনকে আটক করা হয়। বাকি একজনকে মুচলেকায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনের ফরেস্ট অফিসের কাছে ৩ বাঘ, আতঙ্কিত বনরক্ষীরা
৮০১ দিন আগে
সুন্দরবনের ফরেস্ট অফিসের কাছে ৩ বাঘ, আতঙ্কিত বনরক্ষীরা
সুন্দরবনের সুপতি স্টেশনাধীন চান্দেশ্বর ফরেস্ট অফিস এলাকায় তিনটি বাঘের উপস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বনরক্ষীরা। শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে দুটি বাঘ ওই অফিস প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে এবং শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল পর্যন্ত বাঘগুলো বনে ফিরে যায়নি।
গত ২৪ ঘণ্টা ধরে বাঘগুলো একই স্থানে ঘোরাঘুরি করছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। এই অবস্থায় ওই ক্যাম্পের ৫ বনরক্ষী আতঙ্কিত হয়ে অফিসেই অবস্থান করছেন।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় লোকালয়ে বাঘ, আতঙ্কে গ্রামবাসী
চান্দেশ্বর ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ইনচার্জ ফারুক জানান, শুক্রবার দুপুরে আসা দু’টি বাঘের সঙ্গে রাতে আরও একটি যোগ দিয়েছে। রাতে বনরক্ষীরা পুকুর পাড়ে টর্চ লাইটের আলো জ্বেলে তিনটি বাঘের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন। সকালেও বাঘ তিনটি পুকুর পাড়ের অদূরে বনে ঘোরাঘুরি করছিল। এখনও বাঘগুলো অফিসের দক্ষিণ পাশে নদী তীরে অবস্থান করছে।
তিনি জানান, বনরক্ষীরাও সতর্ক অবস্থানে থেকে বাঘের গতিবিধি লক্ষ্য করছেন।
এ ব্যাপারে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সামসুল আরেফীন জানান, এই সময়টা বাঘের প্রজননকাল। তাই সঙ্গীসহ বাঘগুলো নিজের মতো করে চলাচল করছে। তাদের কোনো ক্ষতি না করতে বনরক্ষীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত
মতলবে খাঁচায় বন্দি মেছো বাঘ, জনমনে আতঙ্ক
৮০৫ দিন আগে
অর্থসংকটে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত মৌয়ালদের পরিবার
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যতিন্দ্রনগর গ্রামের হালিমা খাতুন।
২০০৬ সালে বন বিভাগ থেকে পাশ দিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য যান তার স্বামী গোলাম গাজী। দু’দিন পরে খবর আসে গোলাপ গাজী বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এর কয়েকদিন পরে তার ছিন্ন-বিছিন্ন লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে তার সঙ্গে যাওয়া অন্য মৌয়ালরা।
সেই থেকে হালিমা খাতুন তার ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে বাস করছেন। বর্তমানে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তার ছেলে।
স্বামীকে হারিয়ে ছেলে ও পুত্রবধূর সঙ্গে খুব কষ্টে দিনযাপন করছেন হালিমা খাতুন।
সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের হাতে প্রাণ হারানো অপর ব্যক্তি শ্যামনগরের গাবুরা গ্রামের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন।
মোশাররফের মা খালেদা বেগম ইউএনবিকে জানান, ২০১২ সালে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন মোশাররফ।
একই উপজেলার হরিনগর গ্রামের সুন্নত আলী শেখের স্ত্রী কোহিনূর বেগম জানান, ২০১৪ সালে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি তার স্বামী সুন্নত আলী শেখ।
তিনি জানান, পরে শুধু তিনি শুনেছেন, তার স্বামীকে বাঘে খেয়েছে। আর কোনো সন্ধান তিনি পাননি তার প্রিয় স্বামীর।
অন্যদিকে নিহত মৌয়াল শ্যামনগরের কাউসার গাইনের ভায়রা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চলতি বছরের ২০মে বাঘের আক্রমণে মারা যান কাউসার।
একইভাবে ২০২১ সালে প্রাণ হারান হাবিবুর মোল্লা ও জিয়াউল ইসলাম নামের দুজন মৌয়াল।
গত এক দশকে ছয়জন মৌয়াল সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এরা সকলেই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বাসিন্দা।
নিহতদের কোন পরিবার আর চায়না তাদের পরিবারের কেউ আর সুন্দরবনের সঙ্গে জড়িত থাকুক।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় লোকালয়ে বাঘ, আতঙ্কে গ্রামবাসী
সুন্দরবন বাংলাদেশ তথা বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন। দেশের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলা নিয়ে বিস্তৃত এ বন। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। যার মধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার, আর ভারতের পশ্চিম বাংলায় রয়েছে প্রায় ৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
পৃথিবী বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য সুন্দরবন বিখ্যাত। এ ছাড়া হরিণ, বানর, কুমির সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও রয়েছে এ বনে।
সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদীতে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার মাছ। আর রয়েছে মধু, এ বনের মধু পৃথিবী বিখ্যাত।
পর্যটকদের জন্য বরাবরই সুন্দরবন একটি আকর্ষণীয় জায়গা। আর পদ্মাসেতু হওয়ার পর পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধু পর্যটন নয়, এই বনকে ঘিরে কয়েক লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। কেউ বনজীবী, জেলে বা মংস্য সংগ্রহকারী আবার কেউ মৌয়াল বা মধু সংগ্রহকারী।
এই সুন্দরবনকে ঘিরে অনেকে যেমন জীবিকা নির্বাহ করে তেমনি অনেকে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের শিকার হয়েছেন বা আক্রমণে মারা গেছেন। এদের অধিকাংশই ছিল মৌয়াল।
সম্প্রতি প্রথমবারের মতো খুলনায় মৌয়াল, চাষি, বণিক, গবেষক ও ভোক্তা জাতীয় জোটের উদ্যোগে বাঘের আক্রমণে নিহত মৌয়ালদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
এসময় মেয়র বলেন, মৌয়াল, চাষি, গবেষক ও ভোক্তা জাতীয় জোট বাঘের আক্রমণে নিহতদের পরিবারকে অর্থিক সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, মৌয়াল, চাষি, গবেষক ও ভোক্তা জাতীয় জোটের এই সহযোগিতা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. মো. মোহসীন হোসেন বলেন, মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে যারা নিহত হন, বন বিভাগ তাদের বিষয়ে সচেতন।
তিনি আরও বলেন, বন বিভাগ সবসময়ই তাদেরকে সহযোগিতা করে থাকে।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত
সুন্দরবনে বাঘের হামলায় নিহত জেলের মরদেহ উদ্ধার
৮৭২ দিন আগে