পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন
প্লাস্টিক দূষণে আন্তর্জাতিক সমঝোতা জরুরি: পরিবেশমন্ত্রী
প্লাস্টিক দূষণ রোধে আন্তর্জাতিক সমঝোতা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সবসময় এ ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে এবং জাতিসংঘের পরিবেশ সম্মেলনেও গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তিকে সমর্থন করবে।’
শনিবার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) একটি ভার্চুয়াল হাই লেভেল পলিসি ডায়লগে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার বরাবরই আগের অধিবেশনগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং আগামী ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলির পঞ্চম অধিবেশনেও অংশগ্রহণ করে প্লাস্টিক দূষণ রোধে কাজ করবে। আমরা আশা করছি যে, সারা বিশ্বের দেশগুলো একটি বৈশ্বিক চুক্তির প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন করবে, যা ইন্টারগভর্নমেন্টাল আলোচনা কমিটির প্লাস্টিক দূষণের ওপর ইউনিয়া ৫২ চুক্তিকে বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবনাকে পরিচালিত করবে।
আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল’র (সিআইইএল) জেনেভা ম্যানেজিং অ্যাটর্নি ডেভিড আজৌলে’র মতে, ‘বাংলাদেশ সরকারকে আসন্ন জাতিসংঘের পরিবেশ সম্মেলনে আলোচনার জন্য মাছ ধরার সরঞ্জাম ও টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহৃত সস্তা প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পর্কে বিশেষভাবে ফোকাস করতে হবে। এনভায়রনমেন্ট ইনভোস্টগেশন এজেন্সি – ইআইএ এর অ্যাটর্নি এবং পরিবেশ সংক্রান্ত আইনজীবী টিম গ্রাবিয়েল বিশ্ব প্লাস্টিক চুক্তির জন্য জাতীয় হস্তক্ষেপের উপর দৃষ্টি আরোপ করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের মহাসাগর নীতি ও অর্থনীতির অধ্যাপক প্রফেসর স্টিভ ফ্লেচার কীভাবে এই চুক্তি, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট মোকাবিলা করতে পারে তার ওপর জোর দিয়েছেন। আইপেনের নীতি ও প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা ভিটো এ বুসান্টে বিশ্ব প্লাস্টিক চুক্তি এবং প্লাস্টিকের বিষাক্ত প্রভাবের সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন এবং মো. জিয়াউল হক, পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে তার মূল্যবান বক্তব্য শেয়ার করেছেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘একক উদ্যোগ বিশ্ব সংকট মোকাবিলা করতে পারবে না। আমাদের উচিত অন্যান্য দেশগুলো এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা দেখা এবং গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তি পরিপূর্ণ করার জন্য এক সঙ্গে কাজ করা।’
তিনি এসডোর উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এখনি সময় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির ইউনিয়া ৫ নিয়ে আলোচনা করার।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো যেমন, নর্ডিক, ক্যারিবিয়ান এবং আফ্রিকান অঞ্চলগুলো উচ্চ-স্তরের মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণার সাথে যোগ দিচ্ছে। তাই, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দূষণের কনভেনশন এ একলা থাকছে না।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাবেক সচিব ও এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। তিনি বলেন, 'এটা সত্যিই চিন্তার কারণ যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্লাস্টিক-দূষিত দেশ। প্লাস্টিক তৈরির কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এসব সবারই জানা, কিন্তু বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কারণ এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, সমাধানটিও বিশ্বব্যাপী হতে হবে।
ইউনাইটেড নেশনসের মতে, ১২৭ দেশ প্লাস্টিক ব্যাগগুলোর সিঙ্গেল ব্যবহারের ওপর আইন পাস করেছে যাতে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন: ইএইএ, সিএইইএল, গায়া, এসডো, বিএফএফপি আইপেন, আর্থওয়ার্ক ইত্যাদির থেকে একটানা উল্লেখযোগ্য অবদানের কারণে কেনাকাটা করার সময় ভোক্তাদের পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করছে। একটি আন্তর্জাতিক আইনত বাধ্যতামূলক চুক্তি যা প্লাস্টিকের সমগ্র জীবনচক্রকে সম্বোধন করে, কাঁচামাল নিষ্কাশন থেকে উত্তরাধিকার প্লাস্টিক দূষণ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে আইনত যে বাধাগুলো আছে তা সম্বোধন করে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে আমাদের প্লাস্টিক দূষণের ওপর একটি কনভেনশন দরকার।
অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন, মো. আব্দুস সামাদ, জয়েন্ট সেক্রেটারি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়; আফরোজা বেগম পারুল, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি (বিএসএফআইসি), শিল্প মন্ত্রণালয়; মো. জিয়াউল হক, পরিচালক, ঢাকা অঞ্চল, পরিবেশ অধিদপ্তর; আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর; টিম গ্রাবিয়েল, অ্যাটর্নি এবং পরিবেশ আইনজীবী, পরিবেশগত তদন্ত সংস্থা – ইআইএ ইউকে; ডেভিড আজৌলে, জেনেভা ম্যানেজিং অ্যাটর্নি, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল (সিএইইএল), জেনেভা, সুইজারল্যান্ড; স্টিভ ফ্লেচার, রেভোলিউশন প্লাস্টিকের পরিচালক, পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য; ভিটো এ. বোনসান্টে পলিসি।
ইউনিয়া ৫.২ এবং এসডো
ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেম্বলি (ইউনিয়া) হলো বিশ্বের পরিবেশ সংক্রান্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। এটি প্রতি দুই বছর পর পর নাইরোবিতে মিলিত হয় পরিবেশের জন্য নীতি নির্ধারণ ও আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারের জন্য। এতে সারা বিশ্বের নীতিনির্ধারক, শিল্প, বিশেষজ্ঞ এবং এনজিওরা অংশগ্রহণ করেন। ইউনিয়া একটি বিশেষ গ্রুপের মাধ্যমে কীভাবে সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলা করা যায় তা আলোচনা করছে (একটি অ্যাডহক ওপেন-এন্ডেড এক্সপার্ট গ্রুপ নামে পরিচিত)। একটি ম্যান্ডেটসহ সমস্ত উৎস থেকে সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণ এবং মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিকল্পগুলি আলোচনা করা হচ্ছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি- ২ মার্চ ২০২২ এ অনুষ্ঠিত ৫তম অধিবেশন (ইউনিয়া-৫) এ বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর কাছে উপস্থাপিত বিকল্পগুলোর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন বিশ্ব কাঠামোতে একমত হওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরবর্তী পদক্ষেপ হবে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ বিশ্ব গড়তে এখনই উদ্যোগী হতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
এসডো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন অর্গানাইজেশনগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে প্লাস্টিকের ব্যবহারের ওপর বাংলাদেশ সরকার আইন জারি করে। ইউনিয়া ৫.২, এর সদস্য দেশগুলো এবং স্টেকহোল্ডারদের জন্য সাস্টেনিবিলিটি প্র্যাক্টিস করার বড় একটি সুযোগ সৃষ্টি করবে।
২ বছর আগে
জলবায়ু পরিবর্তন: দ. কোরিয়ার সহায়তা চায় বাংলাদেশ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলাসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউনের কাছে এই সহায়তা চান।
বৃহস্পতিবার সকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন। এ সময় তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, পরিবেশ সংরক্ষণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ছেড়ে যাওয়া স্থানে গাছ লাগানো হবে: পরিবেশ মন্ত্রী
এ সময় মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় প্রতিবছর চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করছে এবং পরিবেশ দূষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্ল্যানেটরি ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেছে । সরকার এসকল উচ্চাভিলাসী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করতে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা চায়।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ক্লাইমেট ভালনারাবিলিটি ফোরামের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়াও গ্লোবাল সেন্টার অব অ্যাডাপটেশনের আঞ্চলিক অফিস ঢাকায় স্থাপনের ফলে এ বিষয়ক কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের নিজেদের জাতীয় স্বার্থেই পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করে যেতে হবে।
বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র উল্লেখ করে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে দুই দেশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে যা ক্রমবর্ধমান গতিতে অব্যাহত থাকবে। কারিগরি শিক্ষা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া একযোগে কাজ করবে।
আরও পড়ুন: ‘ওয়ান টাইম প্লাস্টিক’ বন্ধে কাজ করছে সরকার: পরিবেশ মন্ত্রী
সৌজন্য সাক্ষাতকালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত কপ-২৮ আয়োজনে দক্ষিণ কোরিয়াকে বাংলাদেশের সমর্থন দানের বিষয়ে অনুরোধ করেন।
এছাড়াও, তিনি আগামী অক্টোবর মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিবেশমন্ত্রীদের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য পরিবেশমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান।
৩ বছর আগে
নিরাপদ বিশ্ব গড়তে এখনই উদ্যোগী হতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বিশ্ব গড়তে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এখনই উদ্যোগী হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিবেশের দৃশ্যমান উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে যা বিশ্ব দরবারের স্বীকৃতি পেয়েছে। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে বিশ্ববাসীকে জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও গ্রিন হাউস নির্গমন কমিয়ে আনতে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’
আরও পড়ুন: দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বুধবার ধরিত্রী দিবস ২০২১ উপলক্ষে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক আয়োজিত 'রোড টু গ্লাসগো: আমাদের পৃথিবীর পুনরুদ্ধার ও জলবায়ু সুরক্ষা' শিরোনামের ভার্চুয়াল সংলাপে ঢাকাস্থ সরকারি বাসভবন হতে যুক্ত হয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, এবারের বিশ্ব ধরিত্রী দিবস উদযাপন তাৎপর্যপূর্ণ। এর কারণ করোনা মহামারির রূঢ় বাস্তবতা আমাদের শিখিয়েছে যে, আমরা যতই অর্থ-সম্পদে বিত্তশালী হই না কেন প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকা যায় না। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মূল উপকরণগুলো আসে প্রকৃতি থেকে। আমরা বুঝতে পেরেছি প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারকে ধ্বংস করে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না। আজ আমরা যখন বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালন করছি, তখন করোনার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আরও বিপর্যয়কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে গেলে আমাদের দেশের ১৭ ভাগ ভূমি পানিতে তলিয়ে যাবে। এতে প্রায় তিন কোটি মানুষ তাদের আবাসন হারাতে পারে, হারাতে পারে তাদের আজন্মের পরিচিত গ্রাম ও অসংখ্য স্মৃতি। অথচ এই দরিদ্র ও নিরীহ মানুষগুলো নিজেরা কোনোভাবেই জলবায়ু-সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকারী উন্নত দেশ সমূহ। তাই এর দায় তাদের নিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, একটি দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য ভূখন্ডের অন্তত ২৫ শতাংশ বনাঞ্চল থাকা প্রয়োজন। সামাজিক বনায়নসহ বনায়ন কার্যক্রম ও দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণের ফলে দেশে বর্তমানে মোট বৃক্ষ আচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২.৩৭ শতাংশ। এটিকে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ২৪ শতাংশ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে বনজ সম্পদের ঘাটতি পূরণ, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বন অধিদপ্তর ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলে বনায়ন কার্যক্রম, উপকূলীয় বনায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, সামাজিক বনায়ন, বনায়ন কার্যক্রমে নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন: জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়ন করেছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- কৃষি বনায়ন, বসতবাড়ি বনায়ন, রাস্তার ধারে বনায়ন, জবরদখল করা জমিতে অংশগ্রহণমূলক বনায়ন, উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা চরে ম্যানগ্রোভ বনায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বনভূমির অবক্ষয় হ্রাসকরণ এবং বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত এলাকা ব্যবস্থাপনা উল্লেখযোগ্য।
শাহাব উদ্দিন বলেন, প্যারিস চুক্তির অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে প্রশমন ও অভিযোজনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল উত্তোলনের একটি বিধান রাখা হয়েছিল তবে এখনো এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় যোগদানের মধ্যে বিশ্ব নেতারা ‘জলবায়ু বিষয়ক নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে’ দৃঢ় ‘রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি’ ব্যক্ত করায় আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে (জলবায়ু তহবিল সম্পর্কিত ১০০ বিলিয়ন ডলার) দৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেখতে পেয়ে আশাবাদী।
তিনি বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি প্রশমনে বিশ্বনেতাদের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। আর এই প্ল্যাটফর্মে জো বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বিশ্ব ফোরামে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের মুখপাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার পাশে রাখতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে জো বাইডেনের আগ্রহের মূল কারণ ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বব্যাপী যে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে তার সঙ্গে খাপ-খাওয়াতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের কিছু আশাব্যঞ্জক কৌশল আছে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রথম দেশ হিসেবে ২০০৮ সালে জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা (বিসিসিএসএপি) গ্রহণ করে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব এবং দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজস্ব অর্থায়নে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ক্লাইমেট ট্রাস্ট তহবিল গঠন করে। নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত ক্লাইমেট চেইঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে জলবায়ু অভিযোজনমূলক বিভিন্ন সফল কর্মকাণ্ডেরর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের নজর কেড়েছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু মোকাবিলায় প্রতিবছর আমরা প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ ব্যয় করি। যা মোট জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ। শুধু তাই নয় ২০১৫ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ এই খাতে ব্যয় করবে আরও চার হাজার কোটি ডলার। ইতোমধ্যে ৬০ লাখ বাংলাদেশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুহারা হয়েছে। তারপরও আমরা ১ কোটি ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলেছি, আর সেজন্য আমাদেরকে পরিবেশগত মূল্যও চুকাতে হচ্ছে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রতিকূলতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনন্য দক্ষতা ও সাফল্য প্রদর্শনের সুবাদে সমগ্র বিশ্বের কাছে আজ একটি রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত ১০০ বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ অনুমোদিত এবং গৃহীত হয়েছে। তাছাড়াও গ্লোবাল সেন্টার অব অ্যাডাপটেশন’র আঞ্চলিক অফিস ঢাকায় স্থাপনের ফলে এ বিষয়ক কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে।
পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ অনুবিভাগ) মো. মনিরুজ্জামান, একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, জেন্ডার ও মানবাধিকার কর্মী শীপা হাফিজা, ক্লাইমেট ফিন্যান্স এন্ড ক্লাইমেট ইন্ডিউসড মাইগ্রেশন প্রকাশ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের আইবিপি ম্যানেজার আবুল বাশার, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা প্রমুখ।
৩ বছর আগে
যেকোনো মূল্যেই বনভূমি দখলমুক্ত করা হবে: মন্ত্রী
যেকোনো মূল্যেই দেশের বনভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
৩ বছর আগে
জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়ন করেছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার বাংলাদেশ, জলবায়ু সহনশীলতা অর্জনের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
৩ বছর আগে
করোনামুক্ত হয়ে বাসায় ফিরলেন পরিবেশমন্ত্রী
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষ বাসায় ফিরেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
৪ বছর আগে