ঈদ
ঈদে ঢাকা ছাড়েন এক কোটি ৭ লাখ সিম ব্যবহারকারী
ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ৯ দিনের সরকারি ছুটিতে ২৮ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত এক কোটি সাত লাখ ২৯ হাজার ১৫৫ মোবাইল সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটক এই চার কোম্পানির সিম ব্যবহারকারীদের ওপর ভিত্তি করে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)।
এ ব্যাপারে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টের মাধ্যমে জানান, ঈদের ছুটির সাত দিনে এক কোটি ৭ লাখ সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ত্যাগ করেছেন। বিপরীতে ৪৪ লাখ মোবাইল সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন।
আরও পড়ুন: ঈদ শেষে পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ
ঈদে কতজন ঢাকা ছেড়ে অন্য গন্তব্য যান, এর সঠিক হিসাব না থাকায় প্রাথমিকভাবে প্রতিবছর সিম ব্যবহারকারীদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি ধারণামূলক হিসাব করা হয়। এতে যারা মোবাইল ব্যবহার করেন না, বিশেষ করে শিশুরা তাদেরকে হিসাব থেকে বাদ দিতে হয় এবং যারা একাধিক সিম ব্যবহার করেন, তাদের সংখ্যাও হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন ঈদের আগের দিন ৩০ মার্চ। এদিন ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬১ ব্যবহারকারী ঢাকা ছাড়ার তথ্য জানিয়েছে বিটিআরসি।
২৮-৩১ মার্চ এই চারদিনে ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯৮৫ সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন।
ঈদের পরেও ব্যাপক মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন, যা উঠে এসেছে সিম ব্যবহারকারীদের তথ্য যাচাই করে। ঈদের পরদিন অর্থাৎ ১ এপ্রিল থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ২৯ লাখ ৮৩ হাজার ১৭০ সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন।
রোববার (৬ এপ্রিল) থেকে সরকারি অফিস-আদালত এবং ব্যাংক চালু হওয়ায় ঢাকা ফিরতে শুরু করেছে বাড়ি ফেরত মানুষ। ইতোমধ্যে ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ২৭৯ সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। গত শুক্রবার সর্বোচ্চ ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫৭৯ সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় ফিরেছেন।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের হিসাবে, ঢাকার জনসংখ্যা এখন সোয়া দুই কোটির মতো। এর মধ্যে এক কোটির বেশি মানুষ ঈদে অন্য কোনো জেলায় যান বলে ধারণা করা হয়।
আরও পড়ুন: ঢাকাসহ ৪ বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে
৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর ধরে আগেই ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। এর আগে-পরে (২৯ ও ৩০ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিল) চার দিন ছুটি দেওয়া হয়েছিল নির্বাহী আদেশে। ঈদের ছুটি শুরুর আগে ২৮ মার্চ পড়েছে শুক্রবার। ছুটি শেষে অফিস খোলার কথা ছিল ৩ এপ্রিল। সেদিনও নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
তার পরের দুই দিন আবার সাপ্তাহিক ছুটি। সে হিসাবে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা নয় দিনের ছুটিতে সরকারি চাকরিজীবীরা। ছুটি শেষে অফিস খুলবে আগামীকাল রবিবার (৬ এপ্রিল)।
১১ দিন আগে
টানা ছুটিতে কীভাবে চলছে রাজধানীর হাসপাতালগুলো
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিন ছুটিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ও ব্যাংক বন্ধ থাকলেও হাসপাতাল বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। ঈদের সময় হাসপাতালগুলোতে রোগীরা আদৌ কাঙ্ক্ষিত সেবা পান কিনা এবং কোন প্রক্রিয়ায় এ সেবা দেওয়া হয়—সেসব নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল জাগে।
ঈদের ছুটিতে সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই পর্যাপ্ত রোগী আছে। যদিও ছুটির এ সময়ে অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসকদের পদচারণা কম; তবে রোগীদের ভাষ্যমতে, মেডিকেল অফিসার ও জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের খোঁজ খবর রাখছেন; আছেন নার্সরাও।
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ঈদের দিন প্রায় ৫০০’র মতো রোগী আছে হাসপাতালটিতে। এদের মধ্যে অনেকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দেওয়া হয়নি ছাড়পত্র। ঈদের সময় জ্যেষ্ঠ ডাক্তাররা আসবেন কিনা বা এই সময়ে কতটুকু চিকিৎসাবা পাবেন—এ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ রোগীদের কপালে।
কিডনিতে পাথর নিয়ে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সোহরাওয়ার্দীতে ভর্তি আছেন হবিগঞ্জ জেলার আহাদ মিয়া (৬০)।
পেশায় দিনমজুর আহাদ বলেন, ‘ডাক্তার কিডনি ওয়াশ করছে। তবে এখনও কিছু পাথর আছে। ডাক্তারই বলছে ঈদ এখানে করতে। এখন পর্যন্ত চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি হয় নাই। ঈদের এ কয়দিনের ছুটিতে ডাক্তার রেগুলার আসছে। দেখি সামনের দিনগুলাতে কী হয়!’
বরগুনা থেকে মূত্রথলিতে টিউমার নিয়ে ২০ দিন ধরে হাসপাতালে আছেন সফেদ হাওলাদার (৭২)। এবারের ঈদ তাকে হাসপাতালেই কাটাতে হয়েছে। চিকিৎসকরা আগামী ৫ এপ্রিল ঈদের ছুটির মধ্যেই তার অস্ত্রোপচার করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান সফেদের মেয়ে পারভীন আক্তার (৪০)।
তিনি বলেন, ‘ঈদের এ কয়দিনের ছুটিতেও ভালো সেবা পাচ্ছি। তবে বড় ডাক্তার না থাকায় ঈদের পর অপারেশন হবে। আগের থেকে আব্বার অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো।’
ঈদের সময় ডাক্তার-নার্স কম থাকা নিয়ে হাসপাতালটির সিনিয়র স্টাফ নার্স সাধনা হালদার বলেন, ‘অন্যান্য সময়ের থেকে ঈদের ছুটির এ সময়ে হাসপাতালে ডাক্তার-নার্স স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা কম থাকে। তবে এটা ভাবার কারণ নেই যে, হাসপাতাল নার্স-ডাক্তারশূন্য থাকবে। যেকোনো রোগীর জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য সার্বক্ষণিক একজন ডাক্তার মজুত থাকেন। ঈদের নামাজের সময় বা দুপুরের দিকে অন্য ধর্মাবলম্বী ডাক্তার-নার্সরা ডিউটি করেন। এতে করে সংকটময় কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় না।’
হাসপাতালটির আরেক সিনিয়র স্টাফ নার্স বিউটি গোমেজ বলেন, ‘ঈদের আগে অনেকেই নিজ থেকে রিলিজ চায়। তবে সিরিয়াস রোগীদের রিলিজ দেওয়ার সুযোগ নেই। ওষুধ দেওয়া, ড্রেসিং করানো, ইনজেকশন পুশের মতো কাজ রোগী বাসায় নিজে করতে পারবে না, আবার এর জন্য তার সিনিয়র ডাক্তারদেরও প্রয়োজন নেই। হাসপাতালে থাকলে প্রাথমিক সেবাগুলো নার্স ও মেডিকেল অফিসারই নিশ্চিত করতে পারেন।’
রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ঘুরেও দেখা যায় একই দৃশ্য। ঈদের ছুটিতে জরুরি বিভাগে ডাক্তারদের তোড়জোড় থাকলেও ভর্তি থাকা রোগীদের ওয়ার্ডে সিনিয়র ডাক্তারদের আনাগোনা অনেকটাই কম।
হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর স্ত্রী শিল্পী খাতুন (৪৫) বলেন, ‘ডাক্তারদের সেবায় কোনো গাফলতি নেই। কিন্তু শুনছি ঈদে বড় ডাক্তাররা আসবেন না। তাদের দেখলে মনে জোর পাই। তারা না আসলে একটু ভয় ভয় লাগে।’
গোপালগঞ্জ থেকে আসা আরেক রোগীর আত্মীয় মিশকাত (২৮) বলেন, ‘ছুটির মধ্যে সেবা পাচ্ছি, কিন্তু যা পাচ্ছি সেটি আসলে আশানূরূপ নয়। তবে শুনেছি যেকোনো প্রাইভেট হাসপাতালের চেয়ে ঈদের ছুটিতে সরকারি হাসপাতালে সেবা ভালো হয়।’
জরুরি বিভাগে প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ জরুরি বিভাগ ও লেবার রুম, ইমার্জেন্সি ওটি (জরুরি অস্ত্রোপচারকক্ষ) ও ল্যাব সার্বক্ষণিক চালু রাখতে দেশের হাসপাতালগুলোকে ১৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হাসপাতালে পর্যাপ্ত জনবল নিশ্চিত করতে ঈদের আগে ও পরে সমন্বয় করে ছুটি নির্ধারণ করা হবে।
ঈদের তিন দিন বন্ধ সরকারি হাসপাতালের আউটডোর সেবা। এ ব্যাপারে ছুটি শুরুর আগে কথা হয় বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন ও পরদিন আউটডোর সেবা বন্ধ থাকবে। তবে এর মানেই এই না রোগী আসলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আউটডোরে রোগী আসলে তাদের জরুরি বিভাগের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা হয়। রোস্টার অনুযায়ী জরুরি বিভাগ চলে।’
‘চেষ্টা থাকে ঈদের দিনটা অন্য ধর্মাবলম্বী ডাক্তারদের দিয়ে জরুরি বিভাগ চালানোর। তবে ঈদের ছুটি হোক বা অন্যকিছু, রোগীদের সেবার ক্ষেত্রে মিস ম্যানেজমেন্ট (অব্যবস্থাপনা) এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে কর্তৃপক্ষের।’
তবে সরকারি হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে সেবার মান ভালো দাবি করা হলেও ঈদের দিন প্রাইভেট হাসপাতালে ল্যাব কার্যক্রম প্রায়ই বন্ধ পাওয়া যায়—এমন অভিযোগ এসেছে রোগীদের কাছ থেকে।
ভুক্তভোগী এমন একজন রোগী সাব্বির হোসেন (৩৭) বলেন, ‘এক বছর আগে ঈদের দিন অসুস্থ হয়ে পড়ি। সকালে ডাক্তারের পরমার্শ অনুযায়ী ইমার্জেন্সি টেস্টের জন্য কম করে হলেও পাঁচ-ছয়টা হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হয়েছে। পরে আরেক ডাক্তার আত্মীয়ের মাধ্যমে তদবির করে টেস্ট করানো গেছে।’
প্রাইভেট হাসপাতালে ঈদের আগে রোগীদের একরকম জোরপূর্বক রিলিজ দিয়ে দেওয়া হয়, সিনিয়র ডাক্তাররা আসেন না, নার্সদের সেবা পাওয়া যায় না—এমন সব অভিযোগের ব্যাপারে রাজধানীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. খান রাওয়াত বলেন, ‘ঈদের আগে রোগীরা নিজেরাই বাসায় ফেরার জন্য উতলা হয়ে ওঠেন। অনেক সময় ডাক্তারের সাজেশন না মেনেই তারা বাসায় ফিরতে চান। তাদের মনের অবস্থাটাও আমরা বুঝি। কে না চায় নিজ পরিবারের সঙ্গে শান্তিমতো ঈদ করতে! তাই আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে ঈদের আগে খুব সিরিয়াস কিছু না হলে যেসব রোগী রিলিজ চাইছেন, তাদের বাড়ি যেতে দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, ঈদের দিনে ডাক্তার-নার্স ছাড়া হাসপাতালগুলো বিরানভূমিতে পরিণত হয়। আসলে মোটেও এমন কিছু নয়। নামাজের পর, আবার দুপুরের পর সিনিয়র ডাক্তারা হাসপাতালে এসে ঘুরে যান; রোগীদের খোঁজখবর নেন। সিরিয়াস কিছু হলে মেডিকেল অফিসাররা যখন তখন তাদের (সিনিয়র ডাক্তার) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তাই এটা ভাবার কারণ নেই যে, ঈদ বা ছুটি বলে রোগীদের চিকিৎসাসেবার বিন্দুমাত্র গাফলতি হয়।’
এদিকে, ঈদের দিন হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য বিশেষ অ্যাপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সকালে রোগীদের সেমাই খাওয়ানো হয়েছে; সঙ্গে ছিল পাউরুটি, কলা, দুধ, ডিম ও বিস্কুট। দুপুরে পোলাওয়ের সঙ্গে মুরগির রোস্ট, রেজালা, ডিম কোরমা ও কোক দেওয়া হয়। অনেক হাসপাতালে রোগীদের খাওয়া শেষে আপেল কিংবা কমলাও দেওয়া হয়। আর রাতে নিয়মানুযায়ী থাকে ভাত, ডাল ও সবজি।
তবে আপ্যায়ন যেমনই হোক, হাসপাতালে ঈদ কাটানো একেবারেই কাম্য নয় রোগীদের। আর বাধ্য হয়ে যদি হাসপাতালে থাকতেই হয়, তাহলে পূর্ণাঙ্গ সেবার প্রত্যাশা রোগী ও তাদের আত্মীয়দের।
১৬ দিন আগে
কুষ্টিয়ায় দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিএনপির ‘স্বস্তির’ ঈদ
দীর্ঘ ১৭ বছর পর মুক্ত পরিবেশে ও ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঈদ উদযাপন করছেন স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশে স্বস্তির ঈদ উদযাপন করতে পেরে খুশি তারা। দীর্ঘ দিনের হামলা-মামলার কষাঘাতে জর্জরিত নেতা-কর্মীরা বলছেন, ১৭ বছর যে অত্যাচার-নির্যাতন আওয়ামী লীগ করেছে, তা যেন ভবিষ্যতে আর ফিরে না আসে।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হৃদয় হাসান। তার কয়েকটি ঈদ কেটেছে কারাগারে। তার অপরাধ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা।
হৃদয় হাসান বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কারণে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলা-মামলার কারণে দীর্ঘদিন পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। আওয়ামী সরকার পতনের পর এ বছর পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারছি। ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক দল ফ্যাসিস্টের ভূমিকায় এদেশে আর ফিরে আসতে না পারে।
আরও পড়ুন: ঈদের একাল-সেকাল: প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় ত্রিমাত্রিক উদযাপন ঢাকায়
১৬ দিন আগে
ঈদের একাল-সেকাল: প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় ত্রিমাত্রিক উদযাপন ঢাকায়
আজ থেকে অর্ধশত বছর আগে রাজধানী ঢাকায় যেভাবে ঈদ উদযাপন হতো, সময়ের ব্যবধানে সেসব এখন সুদূর অতীত। ষাটের দশকের জেন-এক্স প্রজন্মের কাছে বর্তমান সময়ের জেন-জি প্রজন্মের ঈদ উদযাপন একেবারেই অচেনা। এর মাঝে পড়ে ঈদ নিয়ে বড় রকমের স্মৃতি কাতরতায় ভোগে নব্বইয়ের দশকের মিলেনিয়ালস প্রজন্ম।
পাকিস্তান আমলের আগে রাজধানী ঢাকার ঈদ উদযাপনের রূপ দেখতে চাইলে ইতিহাসের দ্বারস্থ হতে হবে। তবে পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পর সত্তরের দশকের ঢাকার ঈদ উদযাপনের সঙ্গে বর্তমান ঈদের তেমন কোনো মিল নেই—বলছে জেন-এক্স প্রজন্ম।
বিশেষ করে একবিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেওয়া জেন-জি প্রজন্মের সঙ্গে ১৯৬৫ সালের দিকে জন্ম নেওয়া মানুষের ঈদ উদযাপনের স্মৃতির তেমন কোনো মিল নেই বললেই চলে। যদিও জেন এক্স প্রজন্মের মানুষদের দাবি, তাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যারা ১৯৬৫ সালের আগে জন্ম নিয়েছেন, অর্থাৎ যাদের খাতা-কলমে ‘বেবি বুমার জেনারেশন’ বলা হয়, তাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে বেশ মিল ছিল জেন এক্সদের।
স্মৃতির পাতায় পুরান ঢাকার ঈদ
পুরান ঢাকায় প্রায় চল্লিশ বছর ধরে যন্ত্রাংশের ব্যবসা করেন শাহ আলি মিয়া (৬২)। শৈশবের স্মৃতিচারণা করে রাজধানীর ঈদ উদযাপন নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
স্মৃতির পাতা খুলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা তখনও এতটা বিস্তৃত হয়নি, অভিজাত হয়ে উঠেনি গুলশান-বনানী এলাকা। ঈদের আসল আনন্দ মানেই ছিল পুরান ঢাকার ঈদ উদযাপন।’
‘চাঁদ রাতের সবচেয়ে বড় উৎসব ছিল ইফতার শেষ করেই চাঁদ দেখতে সদরঘাট-সোয়ারিঘাটে বুড়িগঙ্গার পারে চলে যাওয়া। নদীর পাড়ে বসে স্বচ্ছ জলে চাঁদ দেখার যে চেষ্টা সেটি আজও ভোলার মতো না।’
‘আমাদের বাপ-দাদাদের থেকে শুনেছি সে সময়ের অভিজাতরা আগে থেকেই নৌকা ভাড়া করে রাখতেন। ইফতারের পর নৌকায় করে মাঝ নদীতে যেতেন বন্দুক হাতে চাঁদ দেখতে। নদীর স্বচ্ছ জলে চাঁদ দেখা গেলে বন্দুকে ফাঁকা আওয়াজ করে সবাইকে জানানো হতো আগামীকাল ঈদ। একবার ফাঁকা গুলি ছোড়া শুরু হলে বিভিন্ন নৌকা থেকে ঘণ্টাব্যাপী চলতো এই উদযাপন।’
ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলে চলেন শাহ আলি।
‘ঈদের দিন সকালে প্রথম যে মিষ্টান্ন খেয়ে সবাই নামাজে যেতাম, সেটির নাম ছিল শির খুরমা। সুপারি কাটার সর্তা দিয়ে পাতলা করে কাটা খেজুর আগের রাতে ঘন করে জ্বাল দেওয়া গরুর দুধে ভিজিয়ে রাখা হতো। সকালে এই পানীয় খেয়েই নামাজে রওনা হতাম আমরা।’
শৈশবে শির খুরমা পেয়েছিলেন ৩৫ বছর বয়সী সফিউল রহমানও। তবে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পায়েস আর সেমাই সেই জায়গাটি দখল করে নেয় নেয় বলে জানান এই করপোরেট চাকুরে।
বেচারাম দেউড়ি এলাকার এই বাসিন্দা বলেন, ‘বাপ-দাদাদের সময়েও যে সেমাইয়ের প্রচলন ছিল না, তা নয়। কিন্তু প্যাকেটজাত সেমাইয়ের কদর না থাকায় সে সময়ে চুটকি নামের এক মেশিনে আগের রাতে সেমাই প্রস্তুত করা হতো। নামাজ শেষে ঘরে ফিরলে সেমাই পরিবেশিত হতো।’
‘আশির দশক থেকেই প্যাকেটজাত সেমাইয়ের দৌরাত্ম্য বাড়ায় আমাদের ঘর থেকে চুটকি বিদায় নিল। আর শির খুরমার জায়গায় লাচ্ছা সেমাইয়ের সঙ্গে মিষ্টি বাকরখানি হয়ে উঠল ঈদের জনপ্রিয় খাবার।’
বর্তমান সময়ে এসেও মিলেনিয়ালস ও জেন-এক্সরা ঈদের দিন সেমাই কিংবা পায়েস খেতেই চান। তবে প্রজন্মের পরিবর্তনে জেন-জির রুচিতে এসেছে পরিবর্তন। তাদের মধ্যে পুডিং, ফালুদা, ফ্রুট কাস্টার্ডের মতো খাবারের কদর বেশি।
কলেজছাত্র সাইমুন (১৯) তো শির খুরমার নাম পর্যন্ত শোনেননি। ঈদের দিন সকালের ভোজ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন সকালে বাসার সবাই পায়েস খায়। পায়েস ফ্রিজে রাখলে ভালো লাগে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে ডিম, ডাব কিংবা ভ্যানিলা পুডিং। সাত সকালে সেমাই-পায়েস খেতে ইচ্ছা করে না, তাই আম্মু আগের রাতেই পুডিং বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দেয়।’
চাঁদ রাতের ক্বাসিদার জায়গা নিয়েছে নেটফ্লিক্স
পুরান ঢাকায় প্রায় তিন দশক ধরে ছিলেন হোসেন সরদার (৬৭)। পরবর্তীতে বাড্ডায় বাড়ি করে বাস করছেন আরও দুই দশকের বেশি সময় ধরে।
চাঁদ রাত ও ঈদের রাতের আনন্দ নিয়ে হোসেন সরদার বলেন, ‘কৈশোরে সেহরির সময়ে ক্বাসিদা গাইতাম আমরা। এর জন্য আমাদের আলাদা একটি দলই ছিল। এক দলের সঙ্গে আরেক দলের ক্বাসিদা গাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো।’
‘চাঁদ রাতের দিন পুরান ঢাকার গলিতে গলিতে প্যান্ডেল টাঙিয়ে ঈদের দিনের কাওয়ালির প্রস্তুতি নিতো ক্বাসিদার দলগুলো। ঈদের রাতে চলত কাওয়ালি গানের আসর। গভীর রাত অবধি এসব আসরে ছেলেবুড়ো সবাই অংশ নিত।’
তবে বর্তমান সময়ে ঢাকার ঈদ আনন্দে কাওয়ালির স্থান একেবারেই নেই।
ঈদে নব্বইয়ের দশকের প্রজন্মের বিনোদনের বড় খোরাক ছিল ভিসিআরে সিনেমা দেখা। সেইসব দিনের স্মৃতিচারণ করেন ইয়াসমিন জাহান রুমকি (৩৮)।
তিনি বলেন, ‘পুরো ঢাকা শহরজুড়ে সিডির দোকানগুলোতে সিডি ও ভিসিআর ভাড়া দেওয়া হতো। ঈদের রাতে যাদের বাসায় টিভি আছে, তারা ভিসিআর ভাড়া আনত। আশপাশের সবাই জড়ো হতো সেসব বাসায়। রাতভর চলতো সিনেমা দেখা। অনেকে ঈদের দিন হলে গিয়ে নতুন মুক্তি পাওয়া সিনেমা দেখত। ঈদে সিনেমা দেখা ছিল ঈদ আনন্দের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ।’
জেন-জি প্রজন্ম সিনেমা দেখলেও সেটি এখন আর হলকেন্দ্রিক নেই, হয়ে গেছে সিনেপ্লেক্স-কেন্দ্রিক।
পুরান ঢাকার অলি-গলিতে সাউন্ড বক্সে হিন্দি গান ছেড়ে অনেকে এখন ঈদ উদযাপন করে। একবিংশ শতাব্দীতে যারা জন্ম নিয়েছেন তাদের অনেকেরই পছন্দ, ঈদের রাতে বন্ধুদের সঙ্গে নেটফ্লিক্সে মুভি দেখা কিংবা গেমিং জোনে গেম খেলা।
স্কুলছাত্রী রুশনা (১৬) ঈদ উদযাপন নিয়ে বলে, ‘ঈদের রাতে বাসায় সব ভাইবোন মিলে নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখা কিংবা কার্ড খেলা একরকমের ট্রেডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধুদের অনেকে আবার প্লে-স্টেশনে সবাই মিলে টুর্নামেন্ট খেলে। এদিন পড়ালেখার চাপ থাকে না। তাই ঈদ উদযাপনও যে যার মতো করে করে।’
ঘোড়দৌড়ের মাঠ থেকে ঈদ আনন্দ ঢুকেছে রেস্তোরাঁয়
মুঘল আমলে সম্রাট-সুবেদাররা ঈদের নামাজ পড়তে যেতেন হাতির পিঠে চড়ে। জেন-এক্স হাতির বহর না দেখলেও ঘোড়ার স্মৃতি তাদের মানসপটে আজও অমলিন।
সিরাজুল হক (৬৯) বলেন, ‘আগে ঈদের দিন তৎকালীন রেসকোর্সে ঘোড়দৌড় ছিল এক রকমের ঐতিহ্য। স্বাধীনতার পর রেসকোর্স থেকে ঘোড়দৌড় তুলে দেওয়া হলেও ঢাকার প্রায় প্রতিটি মাঠে স্বল্পপরিসরে ঘোড়দৌড়ের ব্যবস্থা থাকত। ঘোড়দৌড়কে কেন্দ্র করে মাঠে এবং এর আশপাশে মেলা বসত। শিশুকালে এই মেলার রঙ-বেরঙয়ের হাতেগড়া খেলনাই ছিল আমাদের ঈদ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।’
নব্বইয়ের দশকেও ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে ঘোড়দৌড় ও নৌকাবাইচ ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করতো। এছাড়া ঘোড়দৌড় কমে গেলেও ঈদ মেলা ছিল বহুকাল ধরে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
ব্যাংক কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম (৩২) বলেন, ‘আমি একেবারে যখন ছোট, বয়স পাঁচ-সাত হবে, তখন বাজারে এক ধরনের খেলনা আসল; নাম কাটিস পিস্তল। স্টিলের এই পিস্তলে বারুদের পাতা ভরে চাপ দিলেও ঠাস করে শব্দ হতো। ১৫ টাকা দামের সেই পিস্তল কেনার জন্য ছেলেরা বাবার কাছে বায়না ধরত। মেয়েদের আগ্রহ থাকত নানান রঙের বেলুন, পুতুল, বাঁশি আর হরেক রকমের লিপস্টিকের দিকে।’
একবিংশ শতাব্দীতে এসে ঈদ মেলা তার জৌলুশ হারিয়েছে। জেন-জি প্রজন্মের বড় অংশের পছন্দ ঈদের দিন দুপুরে কিংবা দুপুরের পড়ে বন্ধুদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় আড্ডা দেওয়া। অনেকে আবার ঢাকার আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরতে যাওয়াও পছন্দ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সাফওয়ান (২৩) বলেন, ‘বেশিরভাগ ঈদে গ্রামে যাওয়া পড়ে। কিন্তু ঢাকায় ঈদ করা মানেই দুপুরে কিংবা বিকালে সবাই মিলে রাজধানীর ভালো রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দেওয়া, খাওয়া দাওয়া করা। ঈদের দিন ঢাকার রাস্তা ফাঁকা থাকে বলে অনেক সময়ে বাইকে করে ঢাকার নানা জায়গা ঘুরে বেড়ানোও হয়।’
ঢাকায় রেস্তোরাঁর আধিক্য প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক শোয়েব-উর-রহমান বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের কাছে রাজধানীর ঈদ অনেকটাই রেস্টুরেন্ট-কেন্দ্রিক। সিঙ্গাপুরের শহরেও এত রেস্টুরেন্ট দেখা যায় না। পরিকল্পিত নগরায়নের ধার না ধেরে তরুণ প্রজন্মের আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে হাজারের মতো রেস্টুরেন্ট। আর এসব রেস্টুরেন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে রাজধানীতে উদযাপিত ঈদ আনন্দ।’
ঈদ সালামির রূপান্তর
ঈদ আনন্দের আরেকটি বড় অংশ সালামি দেওয়া। মধ্যপ্রাচ্যের আদলে বর্তমানে অনেকে এটিকে ঈদি বললেও সালামির বুৎপত্তিগত প্রচলনে আসেনি বড় কোনো পার্থক্য, শুধু বদলে গেছে সালামি দেওয়ার মাধ্যম।
ষাটোর্ধ্ব হুসনে আরা স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘আমাদের সময়ে ধারণা ছিল, বাচ্চাদের হাতে টাকা দিলে তারা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই একেবারে বাচ্চাদের টাকা না দিয়ে খেলনা বা খাবার জাতীয় উপহার দেওয়া হতো সালামি হিসেবে। যাদের বয়স ১২ পেরিয়ে গেছে—এমন বাচ্চাদের নতুন নোটে সালামি দেওয়া হতো।’
হুসনে আরার কথায় সায় দিয়ে নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া রাওয়াতুন নবীও (২৯), ‘এখনও নতুন নোটে সালামি পেতে খুব ভালো লাগে। সালামির পাশপাশি আরেকটি সুন্দর উপহার ছিল ঈদ কার্ড। ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত ছিল ঈদ কার্ডের দাম। অতি যত্নে নতুন টাকার নোট আর ঈদ কার্ড জমিয়ে রাখতাম আমরা।’
তবে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) আর ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের হাত ধরে বড় পরিবর্তন এসেছে চিরেচনা সালামি আর ঈদ শুভেচ্ছায়।
একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে শিক্ষানবিশ আদিবা আফরোজ লিলি (২৩) বলেন, ‘অনেক সময়ই সালামি দেওয়ার মতো নতুন নোট থাকে না হাতে। অনেক সময় যার কাছে সালামি চাচ্ছি সে আবার কাছে নেই। ডিজিটাল মাধ্যমে সালামি দিলে এসব কোনো ঝামেলাই না। ঈদ কার্ডের জনপ্রিয়তা এখনও আছে। তবে শুধু হাতে দেওয়া ঈদ কার্ডের বদলে এখন মোবাইলে মোবাইলে ডিজিটাল কার্ড পাঠানো হয়।’
উদযাপনেও হাতুড়ির ঘা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ঢাকার মূল নগরী পুরান ঢাকায় ১ কোটি ২ লাখের বেশি মানুষ বাস করে। সেখানকার বেশিরভাগ পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জনের নিচে।
এমনিতেই জেন-জি প্রজন্মকে বলা হয় আত্মকেন্দ্রিক। তার মধ্যে যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবারের জয়জয়কারে ঈদের মতো এমন আনন্দ উৎসবও দিন দিন সীমিত হয়ে উঠছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকার ঈদ এখন সীমিত ও সংকীর্ণ। যেসব মাঠে মেলা বসতো, পাড়া-মহল্লার ছেলেরা একসঙ্গে খেলাধুলা করে বন্ধু হয়ে উঠতো, উৎসবে-আনন্দে এক হয়ে উদযাপন করতো, সেসব মাঠই এখন বিলীন হয়ে গেছে। পরিবার ও সমাজের যৌথ কর্মকাণ্ড ভেঙে যাওয়ায় ঈদ আনন্দও ছকে বাধা গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
ঢাকার ঈদকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করতে চাইলে সবার আগে নগরের এই গুমোট অবস্থায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মাধ্যমে মানুষে মানুষে বন্ধন মজবুত হবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের দূরত্ব ঘুচবে এবং উৎসবের আনন্দও ছড়িয়ে যাবে মানুষে মানুষে—এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
১৬ দিন আগে
যত বাধাই আসুক, ঐক্যবদ্ধ নতুন বাংলাদেশ গঠন করবই: ড. ইউনূস
ঈদের দিন জাতির উদ্দেশে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শত বাধা সত্ত্বেও ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে আমরা নতুন বাংলাদেশ গঠন করবই।
সোমবার (৩১ মার্চ) জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে মোনাজাতের আগে তিনি এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে জাতির পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান অধ্যাপক ইউনূস। বলেন, ‘ঈদ মোবারক! আজ বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি বাজারে, প্রতিটি গঞ্জে, প্রতিটি শহরে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জামাতে যারা শরিক হয়েছেন, আমরা জাতির পক্ষ থেকে তাদের ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।’
‘যারা ঈদের জামাতে শরিক হওয়ার সুযোগ পাননি, তাদেরও ঈদ মোবারক জানাচ্ছি। আমাদের মা-বোনেরা যারা ঘরে আছেন, তাদেরও আমরা ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।’
প্রবাসীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের প্রবাসী শ্রমিকেরা, যারা বিদেশে আছেন, সারা বছর কষ্ট করেছেন, ঈদের জামাতে হয়তো যেতে পারবেন, হয়তো যেতে পারবেন না, তাদেরও ঈদ মোবারক জানাই। যেসব বাংলাদেশিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছেন, তাদের আমরা ভুলে যাইনি, তাদেরও ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।’
‘অনেকে হাসপাতালে আছেন, রোগী, বিভিন্ন কারণে ঈদের জামাতে যেতে পারেননি, তাদেরও ঈদ মোবারক জানালাম।’
আরও পড়ুন: ঈদের নামাজ আদায় করলেন প্রধান উপদেষ্টা
এ সময় জুলাই যোদ্ধাদের স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ দিয়েছেন বীর সন্তানেরা, আত্মাহুতি দিয়েছেন, আমরা যেন মোনাজাতে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। যারা আহত হয়েছেন, যারা স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছেন, এই দেশের জন্য নিজেদের স্বাভাবিক জীবন ত্যাগ করতে যারা বাধ্য হয়েছেন, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষমতা দেওয়ার জন্য, রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে যেন আমরা প্রার্থনা করি আজকের দিনে।’
১৭ দিন আগে
ঈদের নামাজ আদায় করলেন প্রধান উপদেষ্টা
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে মোনাজাতের আগে প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন।
এ সময়ে দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত সব বাংলাদেশিকে ঈদ মোবারক জানিয়ে তিনি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘জাতির পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।… আজ একটা অটুট ঐক্য গড়ে তোলার দিন। স্থায়ীভাবে এই ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। ঈদের জামাতে আমাদের এই কামনা।’
আরও পড়ুন: জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এদিন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জামাতে অংশ নেন।
আজ (সোমবার) বিকাল ৪টায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ড. ইউনূস ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
১৭ দিন আগে
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত
এক মাস সিয়াম সাধনার পর সাম্য-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার বার্তা নিয়ে আবার এসেছে খুশির ঈদ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক। এছাড়া মোকাব্বিরের দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
জাতীয় ঈদগাহে এবার প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির ঈদের নামাজের জন্য স্থান প্রস্তুত করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করেন। তার সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জামাতে অংশ নেন।
এদিন সকাল থেকেই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জড়ো হতে থাকেন মুসল্লিরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ময়দানজুড়ে ছিল কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
নামাজ শেষে মোনাজাতের আগে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন। এ সময়ে দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত সবা সব বাংলাদেশিকে ঈদ মোবারক জানিয়ে তিনি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
১৭ দিন আগে
বায়তুল মোকাররমে ঈদের ৫ জামাতে ইমাম থাকবেন যারা
প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ঈদের নামাজের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা পর পর চারটি ঈদের জামাত হবে। এছাড়া বেলা পৌনে ১১টায় আরেকটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
রবিবার (৩০ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
এতে বলা হয়, সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল সাতটায় বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন মসজিদটির পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মুহিববুল্লাহিল বাকী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ আতাউর রহমান।
দ্বিতীয় জামাতের ইমাম থাকবেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মুকাব্বির থাকবেন মসজিদটির প্রধান খাদেম নাসিরউল্লাহ।
তৃতীয় জামাতে ইমাম থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস ড. মাওলানা মুফতি ওয়ালিউর রহমান খান। মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদের খাদেম আব্দুল হাদী।
আরও পড়ুন: ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত বাণিজ্য মেলার মাঠ
আর চতুর্থ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের সম্পাদক ড. মুশতাক আহমদ। মুকাব্বির থাকবেন বাইতুল মোকাররমের খাদেম মো. আলাউদ্দীন।
সর্বশেষ জামাতে ইমাম থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. আব্দুল্লাহ। খাদেম থাকবেন জাতীয় মসজিদের খাদেম রুহুল আমিন। এই পাঁচ জামাতের কোনো একটির ইমাম অনুপস্থিত তাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মাওলানা জাকির হোসেন।
১৭ দিন আগে
ছুটিতে প্রাণহীন জাবি, ক্যাম্পাসেই ঈদ নিরাপত্তারক্ষীদের
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছুটি হয়েছে ক্যাম্পাস। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী, ঈদের আগের দিন চলছে শেষ মুহূর্তের ঘরে ফেরার তোড়জোড়। ফলে সবুজ-শ্যামল ক্যাম্পাসে নেই প্রাণচাঞ্চল্য; নেই রিকশার টুংটাং বেলের শব্দ, গাড়ির হর্ণের বিরক্তিকর আওয়াজ, চিরচেনা কোলাহল। স্থবিরতা নেমে এসেছে চারদিকে।
শহিদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীদের জটলাও চোখে পড়ছে না। ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরিতেও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। চিরযৌবনা ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) যেন মলিন হয়ে আছে। আবাসিক হলগুলোর ক্যান্টিন-ডাইনিংয়ে ঝুলছে তালা। বটতলার দোকানিরা তাদের দোকানের শাটার নামিয়ে কবেই বাড়ি ফিরেছে! রেইনট্রি গাছে শুধু কাকেদের ডাক শোনা যায়। খাবার না পেয়ে ক্যাম্পাসের কুকুর-বিড়ালগুলোও পাশের এলাকায় আস্তানা গেড়েছে।
সাংবাদিক সমিতির অফিসটার সামনে ধুলার আস্তরণ জমে গেছে। কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে পায়চারি করছেন দুই-তিনজন নিরাপত্তারক্ষী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে কয়েকটি রিকশা অপেক্ষা করছে, যদি কেউ বের হয়—এই আশায়।
বলছিলাম জাঁকজমকের রাজধানী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কথা। ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিতে ভরপুর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সবসময় প্রাণচাঞ্চল্যে মুখর থাকলেও ঈদের ছুটিতে জনমানবহীন হয়ে পড়েছে।
ক্যাম্পাস ছুটি হয়েছে গত ২০ মার্চ। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে ফাঁকা হতে শুরু করে ক্যাম্পাস। যারা টিউশনি করান, কোচিংয়ে ক্লাস নেন কিংবা অন্য কোনো পার্ট টাইম কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের কারও কারও এখনও বাড়ি ফেরা বাকি। এদের মধ্যে যারা বাড়ি ফিরবেন, ঈদের আগমুহূর্তে তারা ব্যাগ গোছানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন সকাল থেকেই।
আরও পড়ুন: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জাবিতে হামলা: ২৮৯ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, ৯ শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত
১৭ দিন আগে
জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়বেন প্রধান উপদেষ্টা
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রবিবার (৩০ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা আগামীকাল (১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেবেন।
এছাড়া, ঈদের দিন বিকাল ৪টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তিনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বলেও জানান তিনি।
১৮ দিন আগে