বন্যার পরিস্থিতি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে পানি কমছে, খাবার সংকট তীব্র
বন্যায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সীমান্ত এলাকায় চরম খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। তবে পানি কিছুটা কমছে। ফলে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা কেউ কেউ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় বসতঘর থেকে পানি নিচে নামলেও, বাড়ির উঠানে এখনও হাঁটু পানি বিরাজ করছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সামান্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও সব ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তাহিরপুর সীমান্তের বীরেন্দ্রনগর থেকে লামাকাটা, জঙ্গলবাড়ী, কলাগাঁও, চারাগাঁও, বাসতলা, লালঘাট, ট্যাকেরঘাট, বড়ছড়া, রজনী লাইন, চাঁনপুরসহ লাউড়েরগড় পর্যন্ত প্রায় ১৭টি পাহাড়ি ছড়া রয়েছে। ওপারে মেঘালয় পাহাড়। বৃষ্টি হলেই এসব পাহাড়ি চড়া দিয়ে প্রবল বেগে পানি এসে সীমান্তের বাড়ি ঘরে তাণ্ডব শুরু করে। ঢলের সঙ্গে চড়া দিয়ে বালি এসে ফসলি জমি, পুকুর ও বাড়িঘর ভরে গেছে। সীমান্তের রাস্তাঘাট ক্ষণে ক্ষণে ভেঙে খালে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের জন্য ১ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানির বোতল হস্তান্তর
গত দুইদিনে বন্যার পানি একটু কমলেও এখনও উজান থেকে প্রবল ঢল আসছে। যাদুকাটা, পাটলাই ও রক্তি নদীর তীরবর্তী এলাকার বাড়িঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হুমকিতে পড়েছে লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্প, স্কুল, মাদরাসা, বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও পুরো উপজেলা গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।
সীমান্তবর্তী লালঘাট গ্রামের সরাফত আলী জানায়, বন্যায় শত শত পুকুরের মাছ ভেসে হাওরে চলে গেছে। পানি একটু কমলেও দুর্ভোগ কমছে না। সীমান্ত এলাকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানি, মোমবাতি, ও সিলিন্ডার গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে একশ্রেণির অসাধু ব্যাসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
চারাগাঁও গ্রামের সাবেক মেম্বার হাসান মিয়া জানান, একদিকে ভয়াবহ বন্যা, অপরদিকে পাহাড়ি ঢলে সীমান্তের লোকজনকে শেষ করে দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী কিছু বিতরণ করা হলেও বন্যায় আক্রান্ত সীমান্তের লোকজন বঞ্চিত হচ্ছেন।
লাকমা গ্রামের সাফিল মেম্বার জানান, বন্যায় পুকুর ডুবে মাছ চলে গেছে এবং পুকুরগুলো বালিতে ভরে গেছে। ট্যাকেরঘাট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বন্যা কবলিত, লাকমা, দুধের আউটা, পুটিয়া, জামালপুর, ভোরাঘাট, মদনপুরসহ বেশ কয়েকটি বন্যা কবলিত গ্রামের আটশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তারা এক কাপড়ে কোনরকম এখানে এসে জীবন বাঁচিয়েছেন। তারা এখন খাবার সংকট ভোগছেন।
আরও পড়ুন: বিয়ানীবাজারে বন্যার পানিতে ডুবে ব্যক্তির মৃত্যু
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রেসহ উপজেলাজুড়ে পাঁচটি টিম খাবার বিতরণ করছে। সরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণ আসতে শুরু করেছে। পর্যায়েক্রমে সীমান্ত এলাকাসহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণসামগ্রী দেয়া হবে। তিনি এই দুর্যোগে মুহূর্তে দেশ বিদেশের সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
যমুনায় পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বাঁধ ভেঙে ৫ গ্রাম প্লাবিত
উজানের ঢল ও প্রবল বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানির চাপে পৃথক দুটি স্থানে রিং বাঁধ ও কাঁচাসড়ক ভেঙে যাওয়ায় ভাটি এলাকার পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার সকালের রেকর্ড অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কাজিপুর পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়ার্টার) নাসির উদ্দিন জানান, শনিবার রাতে পানির চাপে শাহজাদপুর উপজেলার বড়াল নদীর রাউতারা রিং বাঁধ (ডুবন্ত) ভেঙে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভাটি এলাকার বহু পরিবার। রবিবার সকালে সিরাজগঞ্জ সদরের বিয়ারাঘাট এলাকায় নির্মিত একটি কাঁচা সড়ক পানির চাপে ভেঙে ভাটি এলাকার পাঁচটি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বেড়েছে, নিচু এলাকা প্লাবিত
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর বলেন, প্রায় ২ মাস আগে বিয়ারাঘাট থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের গ্রাম পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সড়কটি নির্মাণ করা হয়। রবিবার সকালে পানির চাপে এ সড়কটি ভেঙ ভাটি এলাকার বিয়ারাঘাট, পাইকপাড়া, ঘোনাপাড়া ও রামগাঁতী গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের বহু পরিবার এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া কয়েকদিন ধরে উজানের ঢল ও প্রবল বর্ষণে যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। এতে যমুনার তীরবর্তী সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের বাদাম ও পাটসহ বিভিন্ন ফসল ডুবে গেছে এবং অনেক এলাকার কাঁচা সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
যমুনায় পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় বিশেষ করে নদী তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল বন্যা কবলিত হয়ে পড়ায় অনেক পরিবার এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলছেন, যমুনা নদীতে ২২ জুন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এরপর হয়তো কমতে পারে। তবে বন্যার আশঙ্কা করা হলেও এখনো তেমন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হওয়ায় ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
তিনি জানান, চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরসহ ভাঙনকবলিত স্থানে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ নিক্ষেপ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়া বাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজর রাখা হচ্ছে।
গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বেড়েছে, নিচু এলাকা প্লাবিত
গাইবান্ধায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত না হলেও সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার ঘাঘট নদী এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার চার উপজেলার নিচু এলাকার অন্তত ৩৫ চরে হাটু ও কোমর পানিতে ডুবে গেছে।
সোমবার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্যাপক হারে পানি বৃদ্ধির ফলে গাইবান্ধা শহরের ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুজজ্জামান জানান, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া, বেলকা, শ্রীপুর এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে ফুলগাজীর ৪ গ্রাম প্লাবিত
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, অন্তত পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়িতে পানিতে ডুবে গেছে। অনেকেই নদীর ডানতীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেকেই স্বজনদের বাড়িতে চলে গেছে।
তিনি বলেন, বন্যার পানিতে গাইবান্ধার তিস্তা, যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী ফুলছড়ির কঞ্জিপাড়া, উড়িয়া, ফুলছড়ি, গজারিয়াসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: কমতে শুরু করেছে শাবিপ্রবিতে বন্যার পানি
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, আগামী কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। চরাঞ্চলে বন্যা শুরু হলেও জানমাল বাঁচাতে লোকজন বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে
সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
দেশের ১৩টি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার কাছাকাছি বা ওপরে থাকতে পারে।
শুক্রবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে আগাম বন্যা, পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ
দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর সংখ্যাসূচক আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের আসাম, মেঘালয় ও উপ-হিমালয় পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোর সঙ্গে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু জায়গায় মাঝারি থেকে ভারী ধরনের বৃষ্টিপাতের (কোথাও অতি ভারী) সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ
ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও অন্যান্য প্রধান নদ-নদীর প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
সিলেটে বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি, গ্রামাঞ্চলে অপরিবর্তিত
গত ১৩ দিন পানিতে ডুবে থাকা সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করছে। তবে নগরের পানি কমলেও গ্রামাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।
মঙ্গলবার সকালে সিলেট নগরীর উপশহরের প্রধান সড়কে সরেজমিনে দেখা গেছে, এ সড়কটি পানি পুরোপুরি সরে গেছে। এছাড়া এই আবাসিক এলাকার অন্যান্য সড়কগুলো থেকেও পানি নেমে গেছে। দুই একটি নিচু এলাকা ছাড়া নগরের বেশিরভাগ এলাকা এখন শুষ্ক বলা চলে। একই সময় তালতলা এলাকায় গিয়েও দেখা গেছে যে পুরো এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
এদিকে, ১৩ দিন পর সিলেটে সুরমা নদীর পানিও বিপদসীমার নিচে নেমেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে সুরমার পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার প্রায় ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সিলেট পয়েন্টে কমলেও কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কুশিয়ারা নদীর পানি এখনও সবকটি পয়েন্টেই বিপদসীমার ওপরে রয়েছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
অপরদিকে, গ্রামাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় জেলার ১২টি উপজেলায় এখনও কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
শহরে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমছে না নগরবাসীর। পানি নেমে যাওয়া এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। মশার উপদ্রব বেড়েছে।
নগরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, সাত দিন ঘরের ভেতরে পানি ছিল। এখন পানি নামলেও ঘরের ভেতর ড্রেনের ময়লার স্তুপ জমে আছে। দুর্গন্ধে ঘরের ভেতরে ঢুকা দায়। পুরো এলাকাজুড়েই দুর্গন্ধ।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডই জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। এখন দুই একটি এলাকা বাদে সব জায়গা থেকেই পানি নেমে গেছে।
আরও পড়ুন: ত্রাণ নিয়ে হাহাকার
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, পানি নেমে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার দল গঠন করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে মশা, মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং ময়লা দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তবে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানান, পানি নামার পর নিজেরদের বাড়িঘর নিজেদেরকেই পরিষ্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন সহযোগিতা করতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান, বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুতই পুরো জেলার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার, আমলসীদ পয়েন্টে কুশিয়ারা বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং কুশিয়ারা ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
আরও পড়ুন: তলিয়ে যাওয়া ফসল নিয়ে হাওরের কৃষকের হাহাকার
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যাওয়া বাঁধ ও ডাইক মেরামতের কাজ শুরু করবেন বলে জানান পাউবো উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা।
গত ১১ মে থেকে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। মহানগরীর প্রায় ২০টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় অনেক মানুষই বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান নেন। পাঁচ দিন পানিবন্দী থাকার পর গত ২১ মে শনিবার রাত থেকে এসব এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করে।
পঞ্চম দফা বন্যায় কুড়িগ্রামে পানিবন্দী ৬০ হাজার মানুষ
পঞ্চম দফা বন্যায় কুড়িগ্রামে সার্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি কিছুটা কমলেও বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদরসহ কয়েকটি উপজেলার শতাধিক চরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
তিস্তার পানি বিপদ সীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপরে
ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রামে ৫ম দফা বন্যায় নিচু এলাকা প্লাবিত
উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম জেলা এ বছর পঞ্চম দফা বন্যার কবলে পড়েছে। টানা ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে ধরলা ও তিস্তাসহ সব নদ-নদীর পানি বেড়ে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে।