মাদকাসক্তি
বাইপোলার ডিসঅর্ডার: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার
একটি সুস্থ মানসিক অবস্থা একটি উন্নত জীবনযাত্রার রূপকল্প। অন্যদিকে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ক্রমশ বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে নিত্য দিনের জীবনধারাকে। শুধু তাই নয়, গুরুতর রোগের মতোই তা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে মানবদেহের ওপর। বাইপোলার ডিসঅর্ডার মনস্তত্ত্বের ঠিক তেমনি একটি অবস্থা, যেখানে মেজাজের স্বাভাবিক কার্যকলাপে দেখা দেয় অসংলগ্নতা। চলুন, মানসিক এই সমস্যাটির কারণ ও লক্ষণ জানার পাশাপাশি এ থেকে উত্তরণের উপায় সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার কি
মেজাজের ভারসাম্যহীনতার মাধ্যমে যে মানসিক সমস্যার প্রকাশ ঘটে সেটি বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা দ্বিপ্রান্তিক ব্যাধি নামে পরিচিত। ‘বাইপোলার’ শব্দটির মাধ্যমে মেজাজের দুই বিপরীত মেরুকে বোঝানো হয়, যার একটি উন্মাদনা, এবং অন্যটি বিষণ্নতা। উন্মাদনার মাধ্যমে ব্যক্তির মাঝে উচ্ছ্বাসের অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি বিরাজ করে। অন্যদিকে, বিষণ্নতা মুহূর্তগুলোতে ব্যক্তি গভীর দুঃখ ও হতাশার ভেতর দিয়ে সময় কাটান।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগের কারণ
বাইপোলার ডিসঅর্ডার মূলত কতগুলো দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সমষ্টি, যা ধীরে ধীরে ব্যক্তিকে অসামঞ্জস্য আচরণের দিকে ধাবিত করে। প্রধানত তিনটি কারণে এমন অবস্থার অবতারণা ঘটে। এগুলো হলো-
জিনগত কারণ
বাবা-মা এবং ভাইবোনদের মধ্যে একজনের এ সমস্যা থাকলে পরবর্তীতে অন্যজনের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ওয়েবএমডি অনুসারে, বাবা বা মা যে কোনো একজনের এই ব্যাধি থাকলে তাদের সন্তানদের এই ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ। আর দুজনেরই থাকলে এই সম্ভাবনা ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়। যমজ ভাইবোনের মধ্যে একজনের এই ব্যাধি থাকলে অন্যজনের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ।
আরো পড়ুন: অটিজম কী? অটিজম সচেতনতা ও সহমর্মিতা কেন জরুরি?
জীবনের কোনো স্পর্শকাতর ঘটনা
যাদের পরিবারের পূর্বে কারো দ্বিপ্রান্তিক ব্যাধি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনাগুলো ট্রিগার হিসেবে কাজ করতে পারে। তাছাড়া জিনগত বৈশিষ্ট্য না থাকলেও ট্রমাজনিত অভিজ্ঞতাগুলো এই ব্যাধির দিকে ধাবিত করতে পারে। যেমন শৈশবের কোনো অপ্রিয় ঘটনা, প্রিয়জনের মৃত্যু, জীবনের বড় পরিবর্তন, চাকরি, সম্পর্ক বা আর্থিক চাপ উন্মাদনা বা বিষণ্নতার দশাগুলোর সূচনা ঘটাতে পারে।
মাদকাসক্তি
উত্তেজক রাসায়নিক, ওষুধ বা অ্যালকোহল নেওয়া মেজাজের ভারসাম্যতাকে বিনষ্ট করে। শুধু মাদকের নেশাই নয়, প্রয়োজনীয় ওষুধ ঘন ঘন সেবনের ফলেও মেজাজের অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়াও অনেক বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেদের অবস্থার উন্নতির জন্য নিজে থেকে ঔষধ সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এতে তাদের ব্যাধির উপসর্গগুলো উল্টো বেড়ে গিয়ে মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগে কারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়
জিনগত কারণগুলো থেকে এই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ। শৈশবের কোনো অপ্রিয় ঘটনা এবং প্রিয়জনের ক্ষতি থেকে সৃষ্ট ট্রমা সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করে। মাদক সেবন থেকে এই মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতার ক্ষেত্রে সর্বাধিক বিপদের মধ্যে রয়েছে তরুণরা।
আরো পড়ুন: রক্তের গ্রুপ: কে কাকে রক্ত দিতে পারবে?
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগের লক্ষণ
মেজাজ ও কার্যকলাপের মাত্রার নাটকীয় পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হতে শুরু করে উন্মাদনা ও বিষণ্নতা এই দুই ভিন্ন পর্যায়ে।
উন্মাদনাকেন্দ্রিক উপসর্গ
এই উপসর্গগুলোর মাধ্যমে মূলত ব্যক্তির শারীরিক সক্ষমতা ও কার্যকলাপের মাত্রার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হয়।
· উচ্ছ্বাস বা বিরক্তি: কোনো কোনো সময় ব্যক্তি অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস অনুভব করেন বা নিজেকে সর্বাধিক সুখী মনে করেন। এই অনুভূতির আরেক নাম ইউফোরিয়া। কিছু সময় (অনির্দিষ্ট) পরেই তিনি আকস্মিকভাবে প্রচণ্ড ক্রোধ অনুভব করেন। বিশেষ করে যখন কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করেন তখন তিনি রীতিমতো আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় অবস্থান নেন।
· চিন্তা ও কথাবার্তায় দ্রুততা: এ ধরনের ব্যক্তিরা একাধিক বিষয়ের চিন্তায় নিমজ্জিত থাকে। অথচ নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হন। তার বহিঃপ্রকাশ তাদের কথাবার্তায়ও দেখা যায়। প্রতিটি বাক্য খুব দ্রুতগতিতে বলার কারণে প্রায় পুরোটা সময় শ্রোতাদের কাছে তা দুর্বোধ্য মনে হয়।
· আবেগপ্রবণতা এবং যে কোনো কিছু ভুলভাবে বিচার করা: এ সমস্যার ভূক্তভোগীরা আর্থিক সিদ্ধান্ত, সম্পদের অপব্যয় বা বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের মতো বিষয়গুলোতে আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া জীবনের নানা লেনদেন বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সময় সবকিছুকে ভুল ব্যাখা দাঁড় করান।
· অনিদ্রা বা অতিরিক্ত ঘুম: এ সমস্যায় জর্জরিত ব্যক্তিদের কখনো স্বাভাবিকের চেয়ে কম ঘুমের দরকার হয়। আবার কখনো দেখা যায় যে, দীর্ঘক্ষণ যাবত ঘুমের পরেও জেগে থাকতে (বিশেষ করে দিনের বেলা) সমস্যা হচ্ছে।
আরো পড়ুন: বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার উপায়
বিষণ্নতার উপসর্গ
মানসিক অবস্থার এই পর্যায়ে মেজাজ এবং আচরণের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়।
· ক্রমাগত দুঃখ বা হতাশা: এক্ষেত্রে ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে হতাশার মাঝে নিমজ্জিত থাকেন এবং সর্বদা দুঃখী অনুভব করেন।
· আগ্রহ বা আনন্দ কমে যাওয়া: এক সময় যে বিষয়গুলো অত্যন্ত উপভোগ্য ছিল, সেগুলোর প্রতি আর ভালো লাগা কাজ করে না।
· ক্লান্তি: প্রতিদিনের সাধারণ এবং সহজ কাজগুলোতে অত্যধিক ক্লান্তি অনুভূত হয়। সেই সঙ্গে স্পৃহা না থাকায় সব মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে কর্মদক্ষতা লোপ পায়।
· মনোযোগ নিবদ্ধ করতে অসুবিধা: সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে মনোযোগে অপারগতা দেখা দেয়। এর ফলে ব্যক্তি যথেষ্ট প্রচেষ্টার পরেও যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন।
মিশ্র উপসর্গ
অধিকাংশের মধ্যে এই বিষণ্নতা এবং উন্মাদনা একই সঙ্গে শুরু হয়। এতে করে এমন এক মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যেখানে ভুক্তভোগী অযাচিত কোনো ভুল করে বসেন বা বড় কোনো ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন। মনের এই মিশ্র অবস্থা সবথেকে গুরুতর, কেননা চরম পর্যায়ে এটি ওই ব্যক্তিকে আত্মহত্যার দিকেও ঠেলে দিতে পারে।
আরো পড়ুন: এমপক্সের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
জিনগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে বাইপোলার ডিসঅর্ডার এড়ানোটা জটিল। তবে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা না গেলেও এর ক্ষতির মাত্রা কমানো যেতে পারে। যে পদক্ষেপগুলো এখানে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে সেগুলো হলো-
· নিয়মিত সঠিক ব্যায়াম, ইয়োগা ও ধ্যান করার অভ্যাস করা
· প্রতিদিনই পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো
· যে কোনো মূল্যে মাদক থেকে বিরত থাকা
· মেজাজে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এমন ওষুধ এড়িয়ে চলা
· নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি বজায় রাখা
· সুষম খাদ্যাভ্যাস চালু রাখা
· সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত হওয়া
· ইতিবাচক সম্পর্ক লালন করা
আরো পড়ুন: অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়
বাইপোলার ডিসঅর্ডার রোগ প্রতিকারের উপায়
শারীরিক ব্যাধির মতো এই মানসিক অবস্থার আসলে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক নেই। তবে জীবনযাত্রার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনসহ কিছু থেরাপিতে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে মানসিক অবস্থার উন্নতি করা যায়। এই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে-
ওষুধ
এ ক্ষেত্রে সাধারণত যে ওষুধগুলো গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয় সেগুলো হলো- মুড স্টেবিলাইজার, অ্যান্টিসাইকোটিক্স ও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট্স। এখানে লিথিয়ামের মতো মুড স্টেবিলাইজারগুলো মিশ্র উপসর্গগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে, অ্যান্টিসাইকোটিকগুলো উন্মাদনাকে নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। এখানে খেয়াল রাখা উচিত যে, ওষুধগুলোর অনিয়ন্ত্রিত ডোজ সেবনে উল্টো উন্মাদনাকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তাই এগুলো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া অত্যাবশ্যক।
সাইকোথেরাপি
জ্ঞানগত-আচরণগত থেরাপি (সিবিটি) ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং আচরণগত অসামঞ্জস্যতাগুলোর চিকিৎসায় বেশ কার্যকর। ইন্টার্পাসনাল ও সোশ্যাল রিদম থেরাপি দৈনন্দিন রুটিন বজায় এবং সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে। এই কৌশলগুলো ব্যক্তির ঘুম, খাবার ও অন্যান্য কার্যকলাপের সময়সূচি স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: এসির বাতাসে শিশুকে নিরাপদ রাখবেন যেভাবে
জীবনধারার পরিবর্তন
এই ডিসঅর্ডার থেকে আরোগ্য লাভের সবচেয়ে মোক্ষম উপায় হলো জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা। তবে এটি বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। নিয়মিত ব্যায়াম দীর্ঘ মেয়াদে মেজাজকে স্বাভাবিক ও আবেগকে স্থিতিশীল রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর ঘুম ও পুষ্টিকর খাবার সর্বাঙ্গীনভাবে মানসিক সুস্থতাকে বিকশিত করে।
মানসিক সমর্থন
জীবনধারাকে পরিবর্তিত করতে যে বিষয়টি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে তা হলো পরিবার, বন্ধু ও থেরাপিস্টের মানসিক সমর্থন। দ্বিপ্রান্তিক ব্যাধির মূল চিকিৎসাটিই হচ্ছে এই সমর্থন নিশ্চিত করা। এগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তির মনস্তত্ত্বে অনেকটা সাপ্লিমেন্টের মতো কাজ করে।
শেষাংশ
বাইপোলার ডিসঅর্ডার সনাক্ত করার জন্য এর কারণ ও লক্ষণগুলো গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই করা প্রয়োজন। মানসিক সমস্যাটির নেপথ্যে রয়েছে জিনগত বৈশিষ্ট্য, মানসিক আঘাত ও মাদকাসক্তি। লিঙ্গ বা বয়স নির্বিশেষে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলোকে সূচনালগ্নেই খেয়াল করা উচিত। এর ফলে প্রাথমিক অবস্থাতেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
অপরদিকে, এরইমধ্যে এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওষুধ ও থেরাপির পাশাপাশি দরকার মানসিক সমর্থন। উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা বজায় রাখার সার্বিক প্রচেষ্টাকে সফল করে তুলতে পারে।
আরো পড়ুন: ভিমরুলের কামড় কতটা ভয়ংকর? সাবধানতা ও করণীয়
২ মাস আগে
সিলেটে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মিলল যুবকের ঝুলন্ত লাশ
সিলেটে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে আদিল আহমদ নামে এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে মহানগরের পাঠানটুলার পল্লবী মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন: বরিশালে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে রোগী হত্যার অভিযোগ
মৃত আদিল আহমদ (২৯) সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার মান্দারুকা গ্রামের আব্দুল মসব্বিরের ছেলে। তিনি পল্লবী মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি ছিলেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ওই নিরাময় কেন্দ্রের শয়ন কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রশি দিয়ে ঝুলানো আদিলের লাশ দেখতে পান মাদকাসক্তি কেন্দ্রের লোকজন। পরে থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: সাভারে পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক
মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মাহফুজুরকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, ১৪ জন আটক
১ বছর আগে
জঙ্গিবাদ ইসলামের মর্যাদা বাড়ানোর পরিবর্তে অসম্মানিত করেছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে নির্দেশনা দিতে আলেম ও ওলামাদের (ইসলামী পণ্ডিতদের) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সারাদেশে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনের সময় বলেন, ‘এগুলো পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করছে।’
তিনি সবাইকে, বিশেষ করে শিশুদেরকে জঙ্গিবাদে না জড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ইসলামকে মর্যাদা দেয়ার পরিবর্তে অসম্মান করছে।’
শিশু ও যুবকরা জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক ও শিক্ষকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ইসলামের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধির মাধ্যমে আমরা অপশিক্ষা, মতভেদ, দ্বন্দ্ব, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুছে দিয়ে আমাদের সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মাধ্যমে মানুষ ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করবে।
এটি ধর্মের নামে বিভ্রান্ত না হওয়ার পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নারীর ওপর দমন-পীড়ন বন্ধে ব্যাপক অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, ইসলামের নামে কেউ যাতে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে, সেজন্য সরকার মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদর্শ মসজিদ ইসলাম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করবে-যা শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের ধর্ম।
তিনি বলেন, ‘এটি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও নারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করতে সাহায্য করবে। মানুষের মধ্যে ইসলামিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রকৃত জ্ঞান প্রদান করবে।’
আরও পড়ুন: ইসলামের মর্মবাণী প্রচারে আরও ৫০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
আলেম ও ওলামাদের ‘ওরাসাতুল আম্বিয়া’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, দেশের মানুষ মসজিদের খতিব ও ইমামদের সম্মান করে।
তিনি বলেন, ‘নিশ্চিত করুন কেউ যেন আমাদের ধর্ম ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে। আপনারা আপনাদের প্রতিদিনের খুতবা ও জুমার খুতবার মাধ্যমে মাদকাসক্তি, বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, খাদ্যে ভেজাল এবং দুর্নীতির মতো সামাজিক ব্যাধিতে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য মানুষকে শিক্ষিত করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ধর্মকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ধর্মকে ব্যবহার করে নির্যাতন ও নিপীড়নের অবসান ঘটানো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম সব ধর্মের মানুষের জন্য অবাধে ধর্ম পালন নিশ্চিত করে।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক পরিচয় ও মতামত নির্বিশেষে প্রতিটি ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আমরা একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে পারি।”
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ বরাবরই ‘ইসলামের সেবক’ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেস, জুয়া ও মদ বিক্রি বন্ধ করেছিলেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ইসলামকে সমুন্নত রাখতে বঙ্গবন্ধু মাদরাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও ইজতেমা মাঠের জন্য জমি বরাদ্দ করেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং দেশকে ওআইসি’র সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।’
জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে তিনি বলেন, ইসলামের মর্যাদা রক্ষায় তারা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এ পর্যন্ত সারাদেশে ১০০টি মডেল মসজিদ খুলেছেন এবং বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া হবে।
সরকার এখন প্রতি উপজেলায় তিনতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং প্রতি জেলায় চারতলা মসজিদ নির্মাণ করছে।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান বক্তব্য দেন।
কুমিল্লা জেলার রাজশাহী, শরীয়তপুর ও চৌদ্দগ্রাম থেকেও কর্মসূচিতে যুক্ত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ।
অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও-ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
আরও পড়ুন: ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০২৩ এর উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর
বিজয়ের মাসে ১০০ মহাসড়ক জাতির জন্য উপহার: প্রধানমন্ত্রী
১ বছর আগে
বরিশালে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে রোগী হত্যার অভিযোগ
বরিশালের নবগ্রাম রোডে হলি কেয়ার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে চন্দন সরকার (২৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্বজনরা দাবি করেছেন, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে হলি কেয়ার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের চতুর্থ তলার মেঝ থেকে যুবকের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
মৃত চন্দন সরকার বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বড়পাইকা এলাকার চিত্তরঞ্জন সরকারের ছেলে।
লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক শাহজালাল মল্লিক। তিনি জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত ওই যুবকের গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: বিএনপিও জানে জিয়ার লাশ চন্দ্রিমা উদ্যানে নেই: প্রধানমন্ত্রী
ওই যুবকের মামা নিবাস মহুরী বলেন, ‘ভোর রাতে হলি কেয়ার থেকে মোবাইলে আমাকে জানানো হয় চন্দন আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করি না। আমার ভাগ্নেকে টর্চার করে মেরে ফেলা হয়েছে। আত্মহত্যা করলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করবে। কিন্তু এখানে হলি কেয়ারের লোকজনই বাথরুম থেকে লাশ ফ্লোরে এনে রেখেছে। এটি হত্যাকান্ড, আমি এই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
হলি কেয়ারের ব্যবস্থাপক মাইনুল হক তমাল দাবি করেন, হলি কেয়ার মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মোট ২৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। এরমধ্যে একজন দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এখন ২৭ জন রয়েছে। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। বিস্তারিত তারাই বলতে পারবেন।
হলি কেয়ারের চতুর্থ তলার দায়িত্বে থাকা ভলান্টিয়ার সরোয়ার বলেন, ‘রাত সোয়া তিনটার দিকে আমাকে ডেকে তোলা হয়, একজন টয়লেটে আত্মহত্যা করেছে বলে। উঠে দেখি চন্দন সরকার গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আমরা তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে মেঝেতে এনে রাখি।’
আরও পড়ুন: বুড়িগঙ্গা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার
বাথরুমের উচ্চতায় কেউ আত্মহত্যা করতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সরোয়ার বলেন, তা বলতে পারবো না, তবে লাশ সেখান থেকে উদ্ধার করেছি।
এদিকে ভর্তি অন্যান্য রোগীরা জানান, ভলান্টিয়ারের দায়িত্বে থাকা সরোয়ার কথায় কথায় রোগীকে মারধর করে। গতকাল রাত সাড়ে দশটার দিকে চন্দন সরকারকে মারধর করা হয়। শেষ রাতে জানানো হয়, তিনি মারা গেছেন।
অভিযুক্ত সরোয়ার এ বিষয়ে বলেন, ‘গতকাল রাতে চন্দন সরকার পশ্চিম দিকে পা দিয়ে শুলে আরেক রোগী তারিকুল তা নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চন্দন তারিকুলকে ঘুষি মারেন। এসময়ে চন্দনকে নিবৃত্ত করতে গিয়ে কয়েকটি থাপ্পড় দিয়েছি। কিন্তু তাকে কোনও নির্যাতন করিনি।’
৩ বছর আগে
টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা শিশু গীতাঞ্জলি রাও
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে দূষিত খাবার পানি, সাইবার বুলিং, মাদকাসক্তি এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যা মোকাবিলায় অ্যাপস তৈরি করে প্রথমবারের মতো টাইম ম্যাগাজিনের ‘কিড অব দ্য ইয়ার’ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর ১৫ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞানী।
৪ বছর আগে
মাদকাসক্তির দায়ে চাকরি হারালেন ১০ পুলিশ সদস্য
ডোপ টেস্টে পজিটিভ অর্থাৎ মাদকাসক্তির প্রমাণ পাওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ১০ সদস্যকে স্থায়ী এবং ১৮ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
৪ বছর আগে