স্বাধীনতা যুদ্ধ
স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের আত্মত্যাগের উজ্জ্বল উদাহরণ জাহানারা ইমাম: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেছেন, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের আত্মত্যাগের উজ্জ্বল উদাহরণ হলেন আমাদের শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।
শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহকে 'দুর্যোগ' হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন- মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি ও তার পরিবারের যেই আত্মত্যাগ, সেই ইতিহাস ও আদর্শ আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। তুলে ধরতে হবে আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানে না দেশের জন্য জাহানারা ইমামের ভূমিকা কত বলিষ্ঠ।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের জন্যই সম্মিলিতভাবে এ দায়িত্ব নিতে হবে। তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপনের একমাত্র পথ হতে পারে এটিই।
এছাড়া শহীদ জননীর ইতিহাস যেন দেশের বাইরেও ছড়িয়ে দেওয়া যায় সে লক্ষ্যে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লেখনি অনুপ্রাণিত করেছে।
বিশেষ করে যাতক দালাল নির্মূল কমিটির যখন আন্দোলন চলছিল, যুদ্ধাপরাধীদের আস্ফালনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি জাহানারা ইমাম।
জাতির পক্ষ থেকে এই মহান আত্মত্যাগের জন্য জাহানারা ইমামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতায় হয়রানি হলে সুরক্ষা দেবে সরকার: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
অপতথ্য রোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করার কথা জানালেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী
৭ মাস আগে
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া আর নেই
ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১১ নম্বর সেক্টরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন তিনি।
গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মৃত্যুকালে তিন মেয়ে, আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার স্ত্রী আনোয়ারা রাব্বি ২০২০ সালের মে মাসে মারা যান।
আরও পড়ুন: সাবেক সচিব এটিএম শামসুল হক আর নেই
ডেপুটি স্পিকারের এপিএসের বরাত দিয়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেলের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল নাজমুল হাসান ইউএনবিকে বলেন, ‘ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৫৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিউইয়র্কে তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’
তার মরদেহ দেশে আনতে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে বলেও জানান তিনি।
নাজমুল বলেন, তারা আশা করছেন আগামীকাল দুপুরের মধ্যে সব কাগজপত্র প্রস্তুত হয়ে যাবে এবং সন্ধ্যায় ফ্লাইট পাবেন।
তিনি একজন স্বনামধন্য সংগঠক ছিলেন এবং বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে অনেক অবদান রেখেছেন।
অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী ১৯৪৬ সালের ১৬ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৯ থেকে ৮৬ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা আইন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।
আরও পড়ুন: একুশে পদক বিজয়ী বিচারপতি কাজী এবাদুল হক আর নেই
তিনি ১৯৭৮-৭৯ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা বার এর নির্বাচিত সম্পাদক ছিলেন।
অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী ১৯৮০ থেকে ৮১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর ভলান্টারি স্টেরিলাইজেশন (বিএভিএস), গাইবান্ধার চেয়ারপার্সন ছিলেন।
তিনি তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় অনেক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
২ বছর আগে
বাংলাদেশে বিরোধী দলের বন্ধ্যাত্ব
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তির পর প্রবাসী সরকার দেশে ফিরে এসেই রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তাকে সামনে রেখেই গঠিত হয় গণপরিষদ যার কাজ একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্বলিত সংবিধান প্রণয়ন করা। ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত পূর্ব পাকিস্তানের অংশের এমএনএ (মেম্বার অব নেশনাল এসেম্বলি) ও এমপিএ ( মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল এসেম্বলি) গণ এ গণপরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। এ পরিষদে অন্য দলের দু একজন ছাড়া বাকি সকলেই আওয়ামী লীগের। কারণ ৭০ এর নির্বাচনে নির্বাচিত সকলেই ছিল আওয়ামী লীগের। সঙ্গত কারণেই মুক্তিযুদ্ধকালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। জাতীয় স্বার্থে অন্য সকল দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে।
অবশেষে সংবিধান প্রণীত হলো। তার আলোকে ১৯৭৩ সালে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা এলো।
স্বাধীন দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা অটুট থাকবে এটাই সবার কাম্য ছিল। কিন্তু ১৯৭২ সালেই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়। আওয়ামী লীগ কিংবা বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা অন্য কোনো দল সাহস না করলেও ছাত্রলীগের একাংশ তা করে। ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে মুখোমুখি দু’পক্ষ পৃথক সম্মেলনের আয়োজন করে এবং উভয় দলই বঙ্গবন্ধুকে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রচার চালায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নূরে আলম সিদ্দিকী ও আব্দুল কুদ্দুস মাখনের নেতৃত্বাধীন অংশের সম্মেলনে যোগ দেন। এ অংশ মুজিববাদী ছাত্রলীগ নামে পরিচিত হয়। বঙ্গবন্ধুর সমর্থন হারা অংশটি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী ছাত্রলীগ নামে পরিচিত হয় যার নেতৃত্বে ছিলেন আ স ম আবদুর রব ও শাহজাহান সিরাজ। তারা সরাসরি সরকারের সমালোচনায় লিপ্ত হয় যা ছিল সেসময়ে অকল্পনীয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ আওয়ামী লীগের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে সংগঠিত ছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। পাকিস্তানে এ দলটি ওয়ালী ন্যাপ নামে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দলটি ওয়ালীর পরিবর্তে মোজাফফর নামে ব্রাকেটবন্দি হয়। তারা মস্কোপন্থী নামেও পরিচিত ছিল। এ দলটি স্বাধীনতাত্তোর সরকারের সমালোচনা এড়িয়ে চলে। মূলত তারা ব্যস্ত ছিল মহান সোভিয়েত ইউনিয়নের গুন গান গাইতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ছাত্রবৃত্তি সহ সুযোগ সুবিধাগুলো তারাই বেশি ভোগ করে। অবশ্য লড়াকু মনোভাবের পরিবর্তে সোভিয়েতপন্থীরা সব সময়ই নৃত্য গীত ও রাস্তায় চিকা মারার মধ্যেই বিপ্লব খুঁজতেন যার উল্টোটা ছিল ছাত্রলীগ।
তৃতীয় অবস্থানে ছিল ভাসানীপন্থী তথা চীনপন্থী ন্যাপ। তবে এ দলটি বিপ্লবের মত ও পথ নিয়ে অনেক ভাগে ভাগ হয়ে পড়ে। মাওলানা ভাসানী অনেক জনপ্রিয় ছিলেন কিন্তু লোকসংখ্যা ও সমর্থক কম থাকায় দলটি শক্তিহীন ছিল। তবে মাওলানা ভাসানী স্বাধীনতার পর থেকেই সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন ও ভুখা মিছিল, হরতাল ইত্যাদি কর্মসূচি প্রদান করেন।
মোটামুটি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে ন্যাপ মোজাফফর, ন্যাপ ভাসানী ও নব্য গঠিত জাসদের নাম উল্লেখ করা যায়।
সংবিধান পাস হওয়ার পর সংসদীয় ব্যবস্থায় সরকার ও বিরোধী দলে কে থাকবে কি ভূমিকা হবে তার ব্যাপক আলোচনা চলতে থাকে। এর মধ্যে ন্যাপ মোজাফফর হঠাৎ করে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম করে তোলে। ১৯৭৩ এর ১ জানুয়ারি ন্যাপ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো চিলির নিহত নেতা সালভাদর আলেন্দের সমর্থনে রাজধানীতে এক মিছিল বের করে। তারা পল্টনের মার্কিন তথ্য কেন্দ্রে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। পুলিশের গুলিতে মতিউল কাদের নিহত হয়। স্বাধীন দেশে নিজেদের পুলিশের গুলিতে প্রথম মৃত্যু। পুলিশের হস্তক্ষেপে আন্দোলন স্তিমিত হয়। এর পরই ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সারা দেশে মোজাফফর ন্যাপের অফিসগুলোতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা হামলা চালায়। স্থানে স্থানে অগ্নিসংযোগ ঘটে। অবশেষে ন্যাপের নেতাকর্মীরা হার্ড লাইন ছেড়ে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। একটা অলিখিত আপোষ হয়। তখন থেকেই ন্যাপ আওয়ামী লীগের বি টিম হিসাবে পরিচিত।
১৯৭৩ সালে নতুন সংবিধান অনুযায়ী দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রজাতন্ত্রের প্রথম নির্বাচনই কলংকিত, প্রার্থী হাইজ্যাক, বাক্স ছিনতাই, জালভোট, খুন খারাবি দিয়ে। জনগণের প্রত্যাশা মিটল না। বিসমিল্লায় গলদ রয়ে গেল যা ৫০ বছরেও ঠিক হলো না। পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। হাতে গোনা কয়েকজন বিরোধী দলীয় সদস্য। তিন শত আসনের মাঝে আওয়ামী লীগ বিরোধীরা মাত্র ৭টি আসন লাভ করে যা দিয়ে বিরোধী দল গঠন করা সম্ভব নয়। শুরু থেকেই সরকার ও বিরোধীদলের কাধে কাধ মিলিয়ে যে গণতন্ত্রের সূচনা হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর মুসলিম লীগ বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং বিরোধী দলকে রাস্তায় দাড়াতেই দেয়নি। বাংলাদেশের অবস্থাও তাই হলো। ক্ষমতাসীন দলের বাইরে কাউকে কল্পনা করা যায়নি।
বিরোধী দল গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা পরিষ্কার। প্রথম জাতীয় সংসদে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ( মোজাফফর) যথাযথ বিরোধী দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। সরকারি দলের নেতারাও মাথা নিচু করে সরকারি দলকে সমর্থন দেয়ার কারণ ছিল সরকারের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের সখ্যতা। কারণ বৃহৎ শক্তি আমেরিকা ও চীনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল বলেই রাশিয়া একমাত্র মিত্র ছিল।
চীনপন্থী ভাসানী ন্যাপ আদর্শ কিংবা অতি বিপ্লবী চরিত্রের কারণে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়। তাই তারা সাংগঠনিকভাবে বিরোধী দল গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাছাড়া চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে থাকায় চীনপন্থী দলগুলো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে।
নবগঠিত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( জাসদ) সংসদে দুজন প্রতিনিধি প্রেরণ করেছিল যা বিরোধী দল গঠনের সহায়ক ছিল না। এক সময় জাসদের দুর্দিন নেমে আসে। তারা পল্টনের জমায়েত থেকে ঘোষণা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাস ভবন ঘেরাও করে। পুলিশের গুলিতে আ স ম আব্দুর রবসহ অনেকে আহত হন। অনেকে গ্রেপ্তার হন। জাসদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
১৯৭৪ সালে বাকশাল গঠিত হলে বিরোধী দলের অংশ গ্রহণের সুযোগ ছিল না। খোদ আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত হয়।
১৯৭৯ সালে পরবর্তী সংসদে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী দল হিসেবে সংসদে বসে যার নেতৃত্বে ছিলেন খন্দকার আসাদুজ্জামান। আওয়ামীলীগের এক অংশ মিজান চৌধুরীর নেতৃত্বে ভিন্নমতের আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করে। আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় লীগ বিরোধী অবস্থানে থাকলেও জনসমর্থন ছিল না।
এরপর সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে জেনারেল এরশাদ দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে মার্শাল ল জারি করে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেন। পুরনো দল ভেঙে মিজানুর রহমান চৌধুরী, আতাউর রহমান খান, মওদুদ আহমেদ, কাজী জাফরের মত নেতারা এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। আতাউর রহমান খান তার দলীয় প্রতীক লাঙ্গল এরশাদ সাহেবের কাছে বিক্রয় করে দেন। এরশাদ সাহেবের আমলে নির্বাচন হয় এবং সংসদে জাতীয় পার্টি সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। আ স ম আব্দুর রব বিরোধী দলের নেতার পদ গ্রহণ করলেন। দেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে গৃহপালিত বিরোধী দল শব্দটি সংযোজিত হলো
এরশাদের স্বৈরাচরী সরকারের পতন হলে নির্বাচিত সরকারের সূচনা হয়। এখানে গ্রহণযোগ্য একটা বিরোধী দল সচল থাকলেও তারা সংসদ বর্জন, আন্দোলন করে যা স্থিতিশীল একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সহায়ক হয়নি। পরবর্তী নির্বাচনে সরকারি ও বিরোধী দল তাদের স্থান অদল বদল করলেও উভয় পক্ষই তাদের চরিত্র পাল্টায়নি।
এরপর দেশে ওয়ান ইলেভেন আসে। দু বছর পর নির্বাচন হলে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় যা দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে। বিরোধী দলের কার্যক্রম আরও সংকীর্ণ হয়ে ওঠে। সরকারি দল নির্ধারিত করে দেয় কে বা কারা সংসদ সদস্য হবে। বিরোধী দল গৃহপালিত রয়ে গেলো। সাথে যোগ হয় উচ্ছিষ্ট ভোগী নেতা সর্বস্ব দলের বিরোধী দলে অবস্থান। হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ইত্যাদি নেতারা সরকারি দল নির্ধারিত বিরোধী দলে সংসদে বসে। প্রহসনের নির্বাচনের পক্ষ নিয়ে এসব নেতারা দেশের জন্য কি অবদান রেখেছেন তা প্রশ্নবোধক হয়ে থাকল। চ্যালেঞ্জহীন সরকারি দল শত ভাগ লাভেও অপরিতৃপ্ত যা প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন। এমনকি স্বৈরাচারী এরশাদও একবার বলেছিলেন যে তিনি বিরোধী দল খুঁজে পান না।
প্রশ্ন থেকে যায় পঞ্চাশ বছরেও কোনো দল বিরোধী অবস্থানে শক্ত ভিত নিয়ে এগোতে পারেনি কেন? এর জন্য দায়ী রাজনৈতিকদের নীতিহীনতা ও অর্থ লোভ। এর নির্লজ্জ প্রকাশ ঘটেছে সরকারি দলের শক্তিতে টিকে থাকা বিরোধী নেতারা যখন সরকার বিরোধী বক্তব্য দেন ও হুমকি ধামকি দেন। এটা খুবই ব্যাঙ্গাত্মক বিষয়।
বিরোধী দল দাড়াতে না দেয়ায় সরকারের দোষ খুঁজে লাভ নেই। কারণ ক্ষমতা যেখানে হাতের তালুয় সেটা অন্য কারও হাতে যেতে দেয়া বোকামি। স্যাক্রিফাইস শব্দটা দেশের রাজনীতিতে আর নেই। নেতারা ক্ষমতা কুক্ষিগত, আকড়ে রাখাকে নীতি হিসেবে ধারণ ও লালন করে আসছে। ভবিষ্যৎ এর জন্য ভালো কিছু স্থায়ী করার চিন্তাও মাথায় রাখেননি।
দেশের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনের কথা প্রথম থেকেই ভাবা উচিত ছিল। জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক খোলাখুলিভাবেই বলেছিলেন বিরোধী দলের জন্য কিছু সিট ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে সচল রাখতে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি ইন্দিরা গান্ধীর নীতির কথাও উল্লেখ করেছিলেন। সে উপদেশ বিবেচনায় এনে যদি তা কার্যকর হতো তাহলে আজ সংসদ নেতার অন্ধকারে বিরোধী দলের অস্তিত্ব হাতড়াতে হতো না। সরকারি দলের অবস্থান হতো গৌরবের।
লেখক: কলামিস্ট কর্নেল (অব.) মো. শাহ জাহান মোল্লা
(প্রকাশিত মতামতের দায় লেখকের, ইউএনবির নয়)
পড়ুন: গণতন্ত্রের মোহমুক্তি
সমস্যা কি শুধুই ইউক্রেনের?
২ বছর আগে
ইতিহাস নিয়ে নতুন প্রজন্মের আগ্রহে প্রধানমন্ত্রীর সন্তুষ্টি প্রকাশ
স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের ইতিহাস জানতে চাওয়া এবং এ ব্যাপারে গর্ববোধ করায় তরুণদের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, 'এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে অবশ্যই সমৃদ্ধির উচ্চ শিখরে পৌঁছাবে এবং আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হব।'
বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ নয়জন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে ২০২১ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিলে তা ১৯৭৫ এর পর হারিয়ে যেতে বসেছিলে।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান
তিনি বলেন, 'আমরা সেই আদর্শ আবার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছে, আমরা অব্যশই মুক্তিযোদ্ধারা যা করেছেন সেটাকে স্বীকৃতি দিব।’
আরও পড়ুন: প্রত্যেক জেলায় পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলা হবে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে স্মরণ করে সেজন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ভবিষ্যত প্রজন্ম দেশের জন্য কিছু করতে উদ্বুদ্ধ হবে এবং তারা নিশ্চয় তাদের মেধা ও সৃজনশীলতা ব্যবহার করবে।
হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীন জনগণ সব সময় বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।
তিনি বলেন, 'যেটা আমরা চেয়েছি, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই আমরা কারো কাছে করুণা ভিক্ষা করব না।'
আরও পড়ুন: উন্নয়নশীল বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী বললেন, সংগ্রামের মাধ্যমে এই সম্মান এসেছে
এর আগে তিনি পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের মাঝে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পদক প্রদান করেন।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা একেএম বজলুর রহমান, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ এবং আখতারুজ্জামান বাবুকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। তাদের পরিবারের হাতে স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অসামান্য অবদানের জন্য ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী, সাহিত্যে কবি মহাদেব সাহা, সংস্কৃতিতে আতাউর রহমান এবং গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সমাজসেবায় অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন এবছর স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। এছাড়া গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এবং পদকপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে আতাউর রহমান বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর স্বাধীনতা পুরস্কার দেয় সরকার।
৩ বছর আগে
ছাপড়া ঘরে বীরাঙ্গনা চারুবালার বসবাস, দেখতে গেলেন ওসি
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের দুর্গম চরাঞ্চলের রমেশ বালার ডাঙ্গী গ্রামে অসুস্থ বীরাঙ্গনা চারুবালাকে (৬৭) দেখতে গেলেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এ সময় তিনি অসুস্থ চারুবালার হাতে বিভিন্ন রকমের ফল তুলে দেন।
৩ বছর আগে
মহান বিজয় দিবস পালিত
দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বুধবার দেশে পালিত হলো ৫০তম মহান বিজয় দিবস।
৪ বছর আগে