শিম
সীতাকুণ্ডে উৎপাদিত শিম যাচ্ছে ইতালিতে, নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন
শিমের রাজ্য হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে বিস্তীর্ণ জমিতে চোখে পড়ে শিম আর শিম। শুধু ফসলি জমি নয় পাশাপাশি জমি পৃথকীকরণের সীমানার উঁচু অংশ, মেঠোপথ, রেললাইনের দুই পাশ থেকে শুরু করে পতিত ভূমিতেও চোখে পড়ে শিমের মাচা। বেড়িবাঁধ আর পাহাড়ি ঢাল- বাদ নেই কিছুই। এখানে উৎপাদিত শিম দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে এবারই প্রথমবারের মতো এই শিম ইউরোপের দেশ ইতালিতে রপ্তানি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। আর এর মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতিতে উন্মোচন হতে পারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলাকে বলা হয় ‘সবজি ভাণ্ডার’। সারা বছর বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হয়ে থাকে এই উপজেলায়। তবে শীত মৌসুমে এ উপজেলা হয়ে ওঠে শিমের রাজ্য। দিগন্ত জোড়া মাঠের যেদিকেই চোখ যাবে চার দিকে চোখে পড়বে শুধেই শিম।
চাষিরা জানান, মৌসুমে কাঁচা শিম বিক্রি হলেও শিমের শুকনো বিচি বিক্রি হয় সারা বছরই। এবারের অনুকূল আবহাওয়ায় ভালো ফলন ও বাড়তি দাম পেয়ে সন্তুষ্ট কৃষকরা।
এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, সীতাকুণ্ডের মাটি শিম চাষের উপযোগী এবং শিম চাষ বোরো ধানের চেয়ে লাভজনক। তাই এ উপজেলায় এবার ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এবার শত কোটি টাকা মূল্যের ৪৭ হাজার মেট্রিক টন শিমের ফলন হবে। শিমের কাঁচা ও শুকনো বিচির দাম হিসাব করলে তা আরো বাড়বে বলছেন কৃষিবিদরা।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় হলুদ তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে, বিঘাপ্রতি লাভ লাখ টাকা
পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড় ও টেরিয়াইল,বারৈয়াঢালা, বাড়বকুণ্ড ও ভাটিয়ারী, কুমিরা, পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে শিমের আবাদ হয়েছে। একদিকে যেমন শিমের মৌসুমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও লাভবান হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কৃষক পরিবারগুলো।
উপজেলার ইদিলপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা সৌখিন কৃষক মো. হাসান জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ‘লা আমরে ইমপেক্স’ নামক একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তার থেকে ৬০ টাকা কেজি হিসেবে ৫০০ কেজি শিম ইতালিতে রপ্তানি করার উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো কিনে নিয়ে গেছেন। প্রথমে ৫০০ কেজি শিম নিয়ে তা প্যাকেট করে পরীক্ষামূলকভাবে আকাশপথে ইতালিতে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘এ বছর দুই হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫ হাজার কৃষক শিম চাষ করেছেন। এখান থেকে ৪৭ হাজার মেট্রিক টন শিমের উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। যার বাজারমূল্য ১০০ কোটি টাকারও বেশি।’
তিনি বলেন, স্থানীয় শিম আগেও দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। তবে এবার প্রথমবারের মতো ৫০০ কেজি শিম আকাশপথে ইউরোপের দেশ ইতালিতে যাচ্ছে। এটি আমাদের দেশ ও সীতাকুণ্ডবাসীর জন্য অনেক গর্বের বিষয়। এই রপ্তানি অব্যাহত থাকলে দেশ লাখ লাখ ডলার আয় করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। সচ্ছল হবে কৃষকরা।
আরও পড়ুন: শেষ মৌসুমে ‘গৌড়মতি’ আম চাষে মামা-ভাগ্নের সাফল্য
৯ মাস আগে
চৌগাছায় ১৮০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ
শিম শীতকালীন সবজি হলেও বেশ কয়েক বছর থেকে গ্রীষ্মে এ সবজি চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। যশোরের চৌগাছায় এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। শীত মৌসুম শুরুর দিকে উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে শিমের দাম বেশি থাকে। বেশি দামে শিম বিক্রিয় আশায় যশোরের চৌগাছার চাষিরা গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
এরমধ্যে অধিকাংশ জমির প্রতিটি গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে শিম বিক্রি করে চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছেন।
শীত মৌসুম শুরুর আগে ভাগেই কৃষকরা খেত প্রস্তুত করে শিমের বীজ বপন করেন। পুরো শীতে শিম বিক্রি করে বেশ লাভবান হন তারা। শীতের শিম এখন চাষ হচ্ছে গরমেও। নতুন চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। শিমে অন্যান্য সবজির মত ভাইরাস নেই বললেই চলে। সব ধরনের মাটিতেই শিমের চাষ হয়। বাজারে শিমের চাহিদা ভালো, দামও বেশি পাওয়া যায়। তাই গ্রীষ্মের শিম চাষে ঝুঁকছেন এ জনপদের চাষিরা।
আরও পড়ুন: সবজিতে সবুজ দিগন্ত!
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চৌগাছাতে এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। রুপবান ও ইসপা-২ জাতের শিম বেশি চাষ হচ্ছে।
উপজেলার সিংহঝুলী, ফুলসারা, নারায়নপুর, স্বরুপদাহ ইউনিয়নে সরেজমিনে দেখা গেছে, চাষিরা গ্রীষ্মের শিম অত্যন্ত যত্ন সহকারে মাচায় চাষ করেছেন। অধিকাংশ জমির শিমে ইতোমধ্যে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। আর সপ্তাহ দুয়েক পরেই কৃষক তার পরিশ্রমের ফল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন।
পেটভরা গ্রামের শিম চাষি মোসত বিশ্বাস বলেন, ‘শিম মূলত শীতের সবজি, কিন্তু গ্রীষ্মেও এর চাষ হচ্ছে ,ফলনও আশানুরুপ। তাই আগাম শিম চাষ করছি।’
আরও পড়ুন: ভাসমান সবজি চাষে সাবলম্বী খুলনার ভূমিহীন কৃষকরা
চলতি মৌসুমে তিনি ১ বিঘা জমিতে রুপবান জাতের শিমের চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত তার প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কোন দুর্যোগ দেখা না দিলে লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে মনে করছেন মোস্ত বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মের শিম চাষে পোকা মাকড়ের উপদ্রুপ কিছুটা বেশি থাকে, তবে নিয়মিত জমি পরিচর্যা করলে পোকায় শিম বেশি ক্ষতি করতে পারে না। নিয়মিত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলে শীতের মতই শিম গাছের বৃদ্ধি খুবই ভালো থাকে।’
কৃষক মোস্ত বিশ্বাসের মত কৃষক আব্দুল খালেক, শরিফুল ইসলাম, হাবিবুল্লাহ এক বিঘা করে ও সাইফ দুই বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন।
উপজেলার ফুলসারা ও সিংহঝুলী ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের চাষিরা তুলনামূলক নিচু জমিতে গ্রীষ্মের শিম চাষ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে বন্যার ক্ষতি পোষাতে আগাম সবজি চাষ
কৃষকরা জানান, যে সব জমিতে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি জমে থাকে সেই জমিতে শিম চাষ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। গত সাত বছর ধরে কৃষকরা নিচু জমিতে উঁচু বেড তৈরি করে সেই বেডে শিমের বীজ রোপন করেন। একাধারে বৃষ্টিপাত হলেও এসব জমির শিম নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম থাকে।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস জানান, নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে চৌগাছার কৃষকেরা বেশ পারদর্শী। অনেক আগে থেকেই এ অঞ্চলে গ্রীষ্মের শিম চাষ হচ্ছে। কৃষকরা যাতে এ সব ফসল উৎপাদনে কোন সমস্যায় না পড়েন তার জন্য কৃষি অফিস সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে।
৩ বছর আগে
দুই কিলোমিটার সড়কজুড়ে শিম চাষ
দুই কিলোমিটার সড়কের পাশে শিম চাষ করেছেন কৃষকরা। তারা পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করেছেন শিম। পরিত্যক্ত স্থানে শিম চাষের এই দৃশ্য কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার।
৩ বছর আগে