পদ্মার ভাঙন
ফরিদপুরে পদ্মার ভাঙন, বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি
গত কয়েকদিন ধরে ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে পদ্মা নদীর ওপারে ইউসুফ আলী মাতুব্বরের ডাঙ্গী, ইমান মাতুব্বরের ডাঙ্গী, আলেক খার ডাঙ্গী ও শুকুর আলী মৃধার ডাঙ্গী এলাকায় ভাঙন চলছে।
শুকুর আলী মৃধার ডাঙ্গী এলাকায় ভাঙনের ফলে এর আগে ১১টি বসত ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে তীব্র আকারে ভাঙন দেখা দিয়েছে ইউসুফ আলী মাতুব্বরের ডাঙ্গী, ইমান আলি মাতুব্বরের ডাঙ্গী ও আলেক কার এলাকার ফসলি জমিতে ভাঙন চলছে। নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে কয়েক হাজার বসত বাড়ি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৩টি মসজিদ।
সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, গত এক মাসে পদ্মা নদীর ভাঙনের ফলে অন্তত একশ হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
পড়ুন: আড়িয়াল খাঁর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে খাদ্য সহায়তা
শুক্রবার দুপুর থেকে ওই এলাকার ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শুক্রবার থেকে এ ভাঙন রোধে কাজ শুরু করছে পাউবো। ওই এলাকায় প্রতিটি ২৫০ কেজি ওজনের পাঁচ হাজার ১০৮টি বালিভর্তি বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে যাতে ওই এলাকাকে বাঁচানো যায় তার জন্য সব কিছু করা হবে।
এ সময় ফরিদপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদুল আলম, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, সদরের নর্থ চ্যানেলের ভাঙনকবলিত এলাকায় ভাঙন রোধে কাজ শুরু করেছে পাউবো।
নির্দিষ্ট ওজনের বালুর বস্তা যাতে ফেলা হয় তা নিশ্চিত করা হবে বলে তিনি জানান।
পড়ুন: সিলেটে নদী ভাঙনে হুমকির মুখে বিশ্বনাথের গোবিন্দনগর গ্রাম
গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙনে মসজিদসহ ৫ পরিবারের বসতভিটা বিলীন
৩ বছর আগে
গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙনে মসজিদসহ ৫ পরিবারের বসতভিটা বিলীন
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ৪ নম্বর ফেরিঘাট সিদ্দিক কাজী পাড়ায় সোমবার সকালে দুই ঘণ্টার ভাঙনে একটি মসজিদ, ইমাম থাকার ঘরসহ গ্রামের পাঁচটি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন আতঙ্কে যার নামে গ্রামের নামকরণ সিদ্দিক কাজীরসহ পাঁচটি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়। আতঙ্কে আরও ১৭টি পরিবার তাৎক্ষণিক অন্যত্র সরে যায়। এখনও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবার।
দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ফেরিঘাট সিদ্দিক কাজী পাড়া মসজিদের ইমাম হাফেজ জোবায়ের হোসেন বলেন, সকাল ৮টার দিকে মসজিদের পিছনে সিদ্দিক কাজীর বাড়ির বসতভিটার পাশে পানি বুদ বুদ করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে বসতভিটার কিছু অংশ দেবে তলিয়ে যায়। পরে পানি ঘুরপাক খেয়ে মসজিদের টিউবওয়েল, পাকা শৌচাগার, ওজুখানা বিলীন হয়ে যায়।
সিদ্দিক কাজী বলেন, বাপ-দাদার নিজস্ব জমিতে দীর্ঘদিন বসবাস করছি। বাবার ১৬ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত প্রায় ১৫-১৬ বছর আগের পাকা মসজিদটি চোখের সামনে বিলীন হয়ে গেল। পাশে ইমামের থাকার পাকা ঘরসহ আরও স্থাপনা বিলীন হয়েছে। কয়েক দিন ধরে পানির তীব্র স্রোতের ঘূর্ণিপাকে ভাঙতে থাকে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর ফসল পানির নিচে
তিনি বলেন, যেখানে জিওব্যাগ ফেলা প্রয়োজন সেখানে ফেলছে না। এনিয়ে কিছু বললে আমাদের কথা গ্রাহ্য করে না।
আবেগ আপ্লুত হয়ে সিদ্দিক কাজী বলেন, ‘ঘরের চালাসহ জিনিসপত্র নিয়ে পাশে পাকা সড়কে ফেলছি। এতদিন তো বাপ-দাদার ভিটায় ছিলাম। এখন কোথায় যাব কোন ঠিকানা পাচ্ছি না।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, সকালে ফোন পেয়ে তিনি ছুটে আসেন। তার সামনেই সব ভাঙতে থাকে। তিনি দ্রুত বিআইডব্লিউটিএকে জিওব্যাগ ফেলার অনুরোধ করেন। সবাইকে খবর জানাতে থাকা অবস্থায় সিদ্দিক কাজী পাড়ার ৫-৬টি পরিবাররে বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়।
দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনে প্রতি বছর প্রায় ২০০ পরিবার বসতভিটা হারায়। দৌলতদিয়ার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছুই চায় না। প্রতি বছর শত শত পরিবার, মসজিদ, কবরস্থান সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এসব পরিবার আমাদের কাছে আসে, আমরা কিছুই করতে পারছিনা। দ্রুত ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জের যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মকবুল হোসেন বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে লঞ্চ ঘাট এলাকায় নিয়মিত কাজ করছি। ৪ নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় ভাঙনের তেমন লক্ষণ না পাওয়ায় এখানে কোন কাজ হয়নি। সকালে হঠাৎ ভাঙনের খবর পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দ্রুত জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করি।
তিনি বলেন, তীব্র স্রোত থাকায় দুই সপ্তাহ ধরে ৪ নম্বর ঘাটে ফেরি ভিড়তে পারছে না। ভাঙন দেখা দেয়ায় ঘাট বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ স্থানান্তরের চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আব্দুস সাত্তার বলেন, ভাঙন এবং তীব্র স্রোতের কারণে এখানে ঘাটের পন্টুন রাখার কোন বাস্তবতা নেই। তাই ঘাট বন্ধ করে পন্টুনটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভাঙনে ৩ নম্বর ফেরি ঘাট ঝুঁকিপূর্ণ বলে তিনি জানান।
৩ বছর আগে
পদ্মার গোলডাঙ্গিতে ১০০ মিটার ভাঙন, হুমকির মুখে ব্রিজসহ কয়েকটি গ্রাম
হঠাৎ করে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় ফরিদপুর পদ্মা নদীর কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে শহরতলীর গোলডাঙ্গি ও ডিগ্রির চর এলাকায় পদ্মার ১০০ মিটার অংশ ভেঙে পড়েছে। ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ব্রিজসহ কয়েকটি গ্রাম।
আরও পড়ুন: যাদুকাটা নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে সুনামগঞ্জের ২ গ্রাম
ভাঙন আতঙ্কে সদর উপজেলার দুই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। ভাঙ্গনের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়েছেন জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তারা।
এই ভাঙনের বিষয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলছেন, বালু খেকোদের অপরিকল্পিত ভাবে বালু তোলায় এমনটি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বালু উত্তোলন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে দিশেহারা এলাকাবাসী
ফরিদপুরের সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তকুজ্জামান জানান, গত দুই দিনে হঠাৎ করে পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ছোট আলী বিশ্বাসের ডাঙ্গি, বাসির মোল্লার ডাঙ্গি, কাইমুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গি, শুকুর আলী বিশ্বাসের ডাঙ্গিতে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও নর্থ চ্যানেল ও ডিগ্রির চর ইউনিয়নের সীমান্ত গোলডাঙ্গা ব্রীজ এলাকায় ১০০ মিটার নর্দীগর্ভে চলে গেছে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি বিলীন
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। এই ভাঙন রোধ করতে না পারলে কয়েক হাজার মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, দ্রুতই পদ্মার এ অংশের ভাঙন রোধে কাজ শুরু করার জন্য চেষ্টা করা হবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
৩ বছর আগে