রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ৪ নম্বর ফেরিঘাট সিদ্দিক কাজী পাড়ায় সোমবার সকালে দুই ঘণ্টার ভাঙনে একটি মসজিদ, ইমাম থাকার ঘরসহ গ্রামের পাঁচটি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙন আতঙ্কে যার নামে গ্রামের নামকরণ সিদ্দিক কাজীরসহ পাঁচটি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়। আতঙ্কে আরও ১৭টি পরিবার তাৎক্ষণিক অন্যত্র সরে যায়। এখনও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবার।
দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ফেরিঘাট সিদ্দিক কাজী পাড়া মসজিদের ইমাম হাফেজ জোবায়ের হোসেন বলেন, সকাল ৮টার দিকে মসজিদের পিছনে সিদ্দিক কাজীর বাড়ির বসতভিটার পাশে পানি বুদ বুদ করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে বসতভিটার কিছু অংশ দেবে তলিয়ে যায়। পরে পানি ঘুরপাক খেয়ে মসজিদের টিউবওয়েল, পাকা শৌচাগার, ওজুখানা বিলীন হয়ে যায়।
সিদ্দিক কাজী বলেন, বাপ-দাদার নিজস্ব জমিতে দীর্ঘদিন বসবাস করছি। বাবার ১৬ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মিত প্রায় ১৫-১৬ বছর আগের পাকা মসজিদটি চোখের সামনে বিলীন হয়ে গেল। পাশে ইমামের থাকার পাকা ঘরসহ আরও স্থাপনা বিলীন হয়েছে। কয়েক দিন ধরে পানির তীব্র স্রোতের ঘূর্ণিপাকে ভাঙতে থাকে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর ফসল পানির নিচে
তিনি বলেন, যেখানে জিওব্যাগ ফেলা প্রয়োজন সেখানে ফেলছে না। এনিয়ে কিছু বললে আমাদের কথা গ্রাহ্য করে না।
আবেগ আপ্লুত হয়ে সিদ্দিক কাজী বলেন, ‘ঘরের চালাসহ জিনিসপত্র নিয়ে পাশে পাকা সড়কে ফেলছি। এতদিন তো বাপ-দাদার ভিটায় ছিলাম। এখন কোথায় যাব কোন ঠিকানা পাচ্ছি না।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, সকালে ফোন পেয়ে তিনি ছুটে আসেন। তার সামনেই সব ভাঙতে থাকে। তিনি দ্রুত বিআইডব্লিউটিএকে জিওব্যাগ ফেলার অনুরোধ করেন। সবাইকে খবর জানাতে থাকা অবস্থায় সিদ্দিক কাজী পাড়ার ৫-৬টি পরিবাররে বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়।
দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনে প্রতি বছর প্রায় ২০০ পরিবার বসতভিটা হারায়। দৌলতদিয়ার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছুই চায় না। প্রতি বছর শত শত পরিবার, মসজিদ, কবরস্থান সব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এসব পরিবার আমাদের কাছে আসে, আমরা কিছুই করতে পারছিনা। দ্রুত ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জের যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মকবুল হোসেন বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে লঞ্চ ঘাট এলাকায় নিয়মিত কাজ করছি। ৪ নম্বর ফেরি ঘাট এলাকায় ভাঙনের তেমন লক্ষণ না পাওয়ায় এখানে কোন কাজ হয়নি। সকালে হঠাৎ ভাঙনের খবর পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দ্রুত জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করি।
তিনি বলেন, তীব্র স্রোত থাকায় দুই সপ্তাহ ধরে ৪ নম্বর ঘাটে ফেরি ভিড়তে পারছে না। ভাঙন দেখা দেয়ায় ঘাট বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ স্থানান্তরের চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আব্দুস সাত্তার বলেন, ভাঙন এবং তীব্র স্রোতের কারণে এখানে ঘাটের পন্টুন রাখার কোন বাস্তবতা নেই। তাই ঘাট বন্ধ করে পন্টুনটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভাঙনে ৩ নম্বর ফেরি ঘাট ঝুঁকিপূর্ণ বলে তিনি জানান।