সাইবার ক্রাইম
কোনো মতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা যায় না: আইনমন্ত্রী
কোনো মতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা আইন। এ আইনকে কোনো মতেই বাতিল করা যায় না।’
আরও পড়ুন: বাক স্বাধীনতা কিংবা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের জন্য আইসিটি আইন করা হয়নি: আইনমন্ত্রী
রবিবার (০২ এপ্রিল) দুপুরে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
আইনমন্ত্রী বলেন, আইজিপির সঙ্গে প্রতিনিয়ত মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে আলোচনা হয়। অনেক মামলা, সেগুলো যাতে আদালতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেসব জটিলতা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করি। এছাড়া মামলা জট কমানোর জন্য আলাপ-আলোচনা করি। সেই আলোচনার জন্য তিনি এসেছিলেন। এতটুকুই হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা খুব ভালো করেই জানেন যে আমি সাব-জুডিস ম্যাটারে (বিচারাধীন বিষয়) কারো সঙ্গে আলোচনা করি না। এছাড়া এটা আদালতের ব্যাপার, আদালত যে পদক্ষেপ নেবে সেটাই আমাদের মানতে হবে।
আরও পড়ুন: সুলতানার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হয়েছে: আইনমন্ত্রী
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনাগুলো বিবেচনা করা হবে: আইনমন্ত্রী
১ বছর আগে
কিশোর গ্যাং বন্ধ করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাইবার ক্রাইম ও কিশোর গ্যাং-এর প্রবণতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রবিবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদর দপ্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সাইবার ক্রাইম মনিটর করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’
তার সরকার দেশকে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' হিসেবে গড়ে তুলেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটালাইজেশনের পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ক্রাইমও বেড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা, দুর্দশা সৃষ্টি করা নয়।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ক্রস-পার্টি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা
তিনি বলেন, ‘কিছু রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ যত অগ্রগতিই অর্জন করুক না কেন, তারা কিছুই দেখতে পায় না। আর একটি অংশ আছে যারা বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের বদনাম করে এবং এর মাধ্যমে আর্থিক বা অন্যান্য সুবিধা অর্জন করে।’
র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বাহিনীটির সদস্যদের তাদের সম্পর্কে অন্যরা যা বলে তাতে কান না দিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমাদের দেশ যা রক্তের আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে… আমরা জানি কে কী করে এবং আমরা সেই অনুযায়ী মূল্যায়ন করব। আমাদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
আরও পড়ুন: জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ-ভারত জ্বালানি পাইপলাইন: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা অপপ্রচার চালায় ও বাংলাদেশের বদনাম করে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কেন তারা এটা করছে এবং তাদের উদ্দেশ্য আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশিরা বিচার করতে পারে কে ভালো বা মন্দ কাজ করেছে। কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, তাহলে আমাদের অবশ্যই তা নিয়ে কথা বলতে হবে। কিছু মানুষ কী বলছে তা নিয়ে মর্মাহত হবেন না। আপনাদেরকে আত্মসম্মান এবং আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
কিশোর গ্যাংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সংস্কৃতি বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি অভিভাবক, শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে। কিশোর গ্যাং বন্ধ করতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের শিশুদের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
১ বছর আগে
সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে: আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে সাইবার অপরাধও বেড়েছে। এগুলো মোকাবিলায় সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) প্রণয়ন করেছে।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) ও পিপিদের (পাবলিক প্রসিকিউটর) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব গোলাম সারওয়ার।
এসময় মন্ত্রী বলেন,‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলেছেন, যা অনেক গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধানে নেই। বঙ্গবন্ধু সংবিধানে এটিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে যুক্ত করেছেন এবং তার কন্যা এমন কোনো আইন পাস করবেন না, যা বাকস্বাধীনতা বা গণমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা সত্য যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু অপব্যবহার হয়েছে।’
আরও পড়ুন: ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য: আইনমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, এর আগে দেখা গেছে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলেই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি যে মামলা করার সঙ্গে সঙ্গে কাউকে গ্রেপ্তার করা উচিত নয়। আদালত যদি এটিকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে করে, তাহলে এই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মন্ত্রী বলেন, সময়মতো বিচার না পেলে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা হারাবে।
তিনি বলেন, ‘সুতরাং যেকোন মামলার সমাধানের জন্য আমাদের সময় কমিয়ে আনতে হবে। এত সময়ের প্রয়োজন নেই। আমরা আদালত ও বিচারকের সংখ্যাও বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছি।’
সাক্ষ্য আইন আপডেট করা হচ্ছে, এই আইনের ১৫৫ (৪) ধারা বাতিল করা হচ্ছে। এনআই অ্যাক্ট, ১৮৮১ সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ওপরও জোর দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেওয়ানি আদালতে অনেক আপসমূলক মামলা ঝুলে আছে। এডিআর পদ্ধতিতে এসব মামলা নিষ্পত্তি হলে মামলাজট কমবে।
আরও পড়ুন: বিচার বিভাগও বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার: আইনমন্ত্রী
মানব পাচার প্রতিরোধে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন: আইনমন্ত্রী
২ বছর আগে
বিচারক ও পুলিশের ওপর হামলার উদ্দেশ্যেই দেশে আসেন মনির
বিচারক ও পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে মনির আব্দুল রাজ্জাক (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট। রবিবার রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মনির বাহরাইন প্রবাসী এবং ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন গাজওয়াতুল হিন্দের সদস্য।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে ফেনসিডিল জব্দ, গ্রেপ্তার ২
জিজ্ঞাসাবাদে মনির জানিয়েছে, সংগঠনের হয়ে তার মিশন সম্পন্ন করতে বিচারক ও পুলিশের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে তিনি ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন।
সাইবার-ক্রাইম ইউনিট সূত্র জানায়, বাহরাইনে অবস্থানকালে মনির মানুষকে চরমপন্থী কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ করতে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন।
তার বিরুদ্ধে ডিএমপির রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নড়াইলে আনসার আল ইসলামের ২ সদস্য গ্রেপ্তার: র্যাব
২ বছর আগে
চুয়াডাঙ্গায় ‘কিশোর গ্যাং’এর ৮ সদস্য আটক
চুয়াডাঙ্গা শহরের আরামপাড়া থেকে কিশোর গ্যাংয়ের ৮ সদস্যকে আটক করেছে ঝিনাইদহ র্যাব-৬। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এই আটজন কিশোরকে আটক করা হয়।
মঙ্গলবার ঝিনাইদহ র্যাব-৬ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আটক আট কিশোর অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, মোটরসাইকেলে বিরক্তিকর হর্ন বাজিয়ে প্রকাশ্যে মানুষকে উত্ত্যক্ত করাসহ বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে জড়িয়ে বিশেষ করে রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, চুরি, ইভটিজিং, সাইবার ক্রাইমসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কাজ করে আসছিল। সোমবার আরামপাড়ায় অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাংয়ের এই আটজনকে আটক করা হয়েছে। এসময় তদের কাছ থেকে সাতটি মোবাইল ও ১৪টি সীম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
আটক কিশোররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের অপরাধ স্বীকার করে এবং নিজেদের সংশোধনের জন্য র্যাবের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর থানার সমাজ সেবা অধিদপ্তর, সিজিএম কোর্ট-এর প্রবেশন অফিসারের কাছে এই আট কিশোরকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম থেকে পাচার হওয়া কিশোরী ঢাকায় উদ্ধার, আটক ৩
হাজীগঞ্জে গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, কিশোরের মৃত্যু
২ বছর আগে
আপনজনদের হাতে ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের শিকার ৬৯ শতাংশ
ইন্টারনেটে একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ছড়ানোর মাধ্যমে যৌন নিপীড়নে ভুক্তভোগীদের ৬৯ দশমিক ৪৮ শতাংশই আপনজনদের হাতে শিকার হন।
এর মধ্যে ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ও অপরাধীর মধ্যে প্রেম ঘটিত সম্পর্কের তথ্য উঠে এসেছে এবং ৩৫ দশমিক ৭১ শতাংশ ঘটনায় অপরাধী ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বিষয়ে দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা না হলে এই সামাজিক ব্যাধি মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন:ইন্টারনেটে নারীর নিরাপত্তায় পুলিশের নতুন শাখা
রবিবার প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।
‘বাংলাদেশে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে যৌন নিপীড়ন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) চ্যাপ্টারের গবেষণা সেলের সদস্যরা।
দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকাগুলো থেকে সংগৃহীত ২০২০ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫৪টি অপরাধের ঘটনা বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
আরও পড়ুন:অশ্লীল ছবি প্রকাশের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি, মাগুরায় যুবক গ্রেপ্তার
এ উপলক্ষে রবিবার সকাল ১১টায় আয়োজিত ওয়েবিনারে সংগঠনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ, ঢাবির অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ ইউনিটের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম।
গবেষণা প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংগঠনের রিসার্চ সেলের আহ্বায়ক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিরভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার মনিরা নাজমী জাহান।
অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে কিশোর বয়স থেকে সন্তানদের মধ্যে যথাযথ প্যারেন্টিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। পিতামাতা দুজনেই চাকরিজীবী হলে সন্তানদের মনিটরিং করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তরুণ-তরুণীদের স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ধারাবাহিক যথাযথ সেক্স এডুকেশন খুব প্রয়োজন। একই সাথে ধর্মীয়-সামাজিক শিক্ষা ও সময়ের যথাযথ ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত কাজ দিতে হবে তরুণদের।
খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, অপরাধের মাত্রায় বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে ভিন্নতা দেখা যায়। বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে অনলাইন কার্যক্রম বেড়েছে। ফলে এ ধরনের অপরাধ করার জন্য সময় বেশি পাচ্ছে। এজন্য অপরাধ প্রতিরোধে বেশি বেশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় কলেজছাত্রীর অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে প্রচারের হুমকি, যুবক গ্রেপ্তার
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, অপরাধের শিকার হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা বেশিরভাগই সামাজিক কারণে আপনজনদের সঙ্গে আলোচনা করে না। এটি একদমই উচিত নয়। ঘটনার শুরুতেই কাউকে না জানালে পরবর্তীতে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে যায়। এটি সচেতনতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিজ নিজ জায়গা থেকে অপরাধ প্রতিরোধে আওয়াজ তুলতে হবে, তাহলে অপরাধের প্রবণতা কমবে।
সৈয়দ নাসিরুল্লাহ বলেন, আইন না জানার কারণে অনেকে অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতামূলক কাজ করা প্রয়োজন। কারিগরী জ্ঞান যাদের রয়েছে তাদের অপরাধ করার প্রবণতা বেশি। সাধারণত মধ্যবয়সীরা এর মধ্যে পড়ে। প্রতি থানায় সাইবার ইউনিট করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এটি হলে অপরাধ আরও নিয়ন্ত্রণ হবে।
তানজিম আল ইসলাম বলেন, বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য সাইবার অপরাধ বিষয়ক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি খুব প্রয়োজন। এছাড়া সাইবার অপরাধের বিচার কার্যক্রম কেন দীর্ঘায়িত হচ্ছে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই নিয়ে গবেষণা হতে পারে।
গবেষণায় গত এক বছরে পুরো দেশব্যাপী এ ধরনের অপরাধপ্রবণতা, অপরাধীর আদ্যোপান্ত, ভুক্তভোগীর অবস্থান ও হয়রানির মাত্রা এবং সামগ্রিক অর্থে সাইবার স্পেসে ব্যক্তির নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইবার স্পেসে যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ ভুক্তভোগীই নারী। এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়স্ক ভুক্তভোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যা প্রায় ৫৬.৪৯ শতাংশ এবং ৩২.৪৭ শতাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের নিচে)। জেন্ডারভিত্তিক ভুক্তভোগীর বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে ১৮ থেকে ৩০ বছর এবং ১৮ বছরের নিচে পুরুষের তুলনায় নারী ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক ভুক্তভোগীর ক্ষেত্রে পুরুষের সংখ্যা বেশি।
অঞ্চলভেদে ভুক্তভোগীর সংখ্যা:
সবচেয়ে বেশি যৌন নিপীড়নের সংবাদ পাওয়া গেছে ঢাকা বিভাগে, যার পরিমাণ ৩৩.১২ শতাংশ। এর পরেই ১৬.৮৮ শতাংশ নিয়েই অবস্থান করছে চট্টগ্রাম। এছাড়া জেলা অনুযায়ী যৌন নিপীড়নের অধিকাংশ ঘটনা বিভাগীয় শহরে ঘটছে।
যৌন নিপীড়নের ধরন ও পরিণতি:
ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও প্রচারের ভয় দেখিয়ে যৌন নিপীড়নমূলক অপরাধ প্রবণতার মধ্যে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, আত্মহত্যা, আত্মহত্যার চেষ্টা, যৌনপণ, হত্যা-চেষ্টার মতো ঘটনাগুলোকে পরিসংখ্যানমূলক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হয়রানিমূলক যৌন নিপীড়নের সংখ্যা শতকরা ৬২ দশমিক ৯৯ শতাংশ, যা সর্বাপেক্ষা বেশি। অন্যদিকে ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীর সংখ্যা শতকরা ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ, যৌনপণ ১৩.৬৪ শতাংশ, আত্মহত্যা ৩.২৫ শতাংশ, আত্মহত্যার চেষ্টা ১.৯৫ শতাংশ, খুনের চেষ্টা ০.৬৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ১.৯৫ শতাংশ ।
সাইবার স্পেসে যৌন নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যম:
সাইবার স্পেসে যৌন নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড (ছবি ও ভিডিও) ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে এবং ভুক্তভোগীকে নিষ্ক্রিয় কিংবা হয়রানিমূলক পরিস্থিতিতে ফেলতে নিপীড়নকারী গোপনে, চাপ প্রয়োগ করে কিংবা প্রতারণা-প্রলোভনের আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন আপত্তিকর বিকৃত কন্টেন্ট সংগ্রহ করতে যে মাধ্যমগুলো হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করে তার বিশ্লেষণমূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরলে দেখা যায় যে ভিডিও এবং স্থির চিত্র আকারে ধারনকৃত কন্টেন্টের সংখ্যা যথাক্রমে ৫১.৯১ শতাংশ এবং ৩৫.৫২ শতাংশ, যা অন্যান্য মাধ্যমের বিবেচনায় তুলনামূলক সর্বাধিক।
যৌন নিপীড়নমূলক কন্টেন্টগুলোর মধ্যে ৩৫.৭১ শতাংশ প্রকাশ্যে সাইবার স্পেসে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে বিভিন্ন প্রকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । ৪০.৯১ শতাংশক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নকারী কন্টেন্ট ব্যক্তিগতভাবে ভুক্তভোগীকে দেখিয়ে তার উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করেছে। এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে সর্বাধিক সংখ্যক কন্টেন্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর জন্য নিপীড়নকারী আশ্রয় নিচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের কূট কৌশল ও প্রতারণার।
ভুক্তভোগী এবং অপরাধীর মধ্যে সম্পর্ক:
ভুক্তভোগী এবং অপরাধীর মধ্যেকার বিদ্যমান সম্পর্ক বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে যে, ৩৫.৭১ শতাংশ ক্ষেত্রে অপরাধী ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত। এছাড়া প্রায় ৩৩.৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী এবং অপরাধীর মধ্যে প্রেম ঘটিত সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। অন্যদিকে অপরিচিত নিপীড়নকারীর দ্বারা আক্রান্ত ভুক্তভোগীর সংখ্যা শতকরা ১৪.২৯ শতাংশ।
যৌন নিপীড়নের কারণ:
যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য হিসেবে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে অন্যতম মুখ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে, যা ৬৩.০৭ শতাংশ ঘটনায় পাওয়া গেছে। পাশাপাশি কারণ হিসেবে প্রতিশোধমূলক প্রবৃত্তি ৬.২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে, অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার প্রবণতা ২৩.৮৬ শতাংশ ক্ষেত্রে।
এছাড়াও চাকরির বদলি সংক্রান্ত তদবির, খামখেয়ালিপনা এবং অন্যান্য বিবিধ কারণগুলো প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে যথাক্রমে ০.৫৭, ০.৫৭ এবং ৫.৬৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ।
প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ:
প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশগুলোর আদলে নারী ও শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ণ ও সচেতনতা তৈরিসহ ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে গণমাধ্যমে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচার, প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা, যথাযথ প্রক্রিয়ায় সেক্স-এডুকেশন বৃদ্ধি, ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে প্রশিক্ষিত জনবল বৃদ্ধি, ভুক্তভোগী ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে যথাযথ সমন্বয় নিশ্চিত করা, বেকারত্ব দূরীকরণ ও অপরাধপ্রবণ বয়সসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে তরুণদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা, পর্ণোগ্রাফিক আগ্রাসন ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসন বন্ধে দেশীয় সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ও পৃষ্ঠপোষকতা, সন্তানদের সাইবার এক্টিভিটির ওপর পিতামাতার নজরদারি।
৩ বছর আগে