ঘূর্ণিঝড় ইয়াস
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: খুলনা উপকূলে ৬০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে ১০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ৭ হাজার মৎস্য ঘের ও অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ৬০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
৩ বছর আগে
দুর্যোগে অরক্ষিত সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন থেকে জোয়ারের পানিতে ভেসে লোকালয়ে এসেও প্রাণে রক্ষা পাচ্ছে না হরিণ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী। ইতোমধ্যে শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় চারটি মৃত ও দু’টি জীবিত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। পটুয়াখালী ও পিরোজপুরেও ভেসে যাওয়া জীবিত হরিণ উদ্ধার হয়েছে। ভোলায় ভেসে যাওয়া হরিণ উদ্ধার করার পর জবাই করা হয়েছে।
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘প্রাকৃতিক, মনুষ্য সৃষ্ট কারণ বা দুর্যোগ যেটাই হোক, বন্যপ্রাণী সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে কেন হরিণ বা বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে, কেন লোকালয়ে চলে আসছে এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। আর পনিতে ভেসে আসার বাইরেও বনের অভ্যন্তরেও মৃত বন্যপ্রাণী থাকতে পারে। সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার। বনের অভ্যন্তরে প্রাণীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’
আরও পড়ুন: জলোচ্ছ্বাসে ডুবেছে সুন্দরবন, ভেসে আসছে বন্য প্রাণী
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বন্যপ্রাণী রক্ষায় বনের মধ্যে বেশি করে উঁচু স্থান তৈরি, মিষ্টি পানির স্থান সুরক্ষা ও সংখ্যা বৃদ্ধি করা উচিত। এছাড়া মানব সমস্যা সমাধানের মতো প্রাণিকুলের জন্যও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন ও তাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা দরকার। যাতে করে তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে ও পরে প্রতিটি নদী নালায় ঘুরে ঘুরে বন্যপ্রাণীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সুরক্ষায় কাজ করতে পারে। সর্বোপরি গবেষণা ও যাচাই-বাছাই করে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। যার মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা স্থায়ীভাবে ভিত্তি পাবে।’
খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মঈন উদ্দিন খান বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে হরিণ লোকালয়ে ভেসে যাওয়ার বিষয়টিতে বন কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। কমিউনিটি গ্রুপগুলোকেও নজরদারি জোরদার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বন ও বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে রেঞ্জভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে এবং বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাজ করছে।’
আরও পড়ুন: বন্যপ্রাণী হত্যা ও পাচার রোধে সুন্দরবনে রেড এ্যালার্ট
শরণখোলার বাসিন্দা সোলাইমান ফরাজি বলেন, ‘২৬ মে বিকালে রাজেশ্বর গ্রামের মোড় এলাকায় একটি মৃত হরিণ ভেসে আসে। এলাকাবাসী সেটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগকে খবর দেন। হরিণটির শরীরে কোনও ক্ষতচিহ্ন ছিল না। জোয়ারের পানিতে ডুবেই হরিণটির মৃত্যু হয়েছে।’
তাফালবাড়ী গ্রামের দুলাল খান বলেন, ‘জোয়ারে এত পানি আগে দেখিনি। জোয়ারের কারণে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণী ভেসে গেছে। হরিণ মরে ভেসে আসছে।’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানি ৫ থেকে ৬ ফুট উঁচু হয়। এ জোয়ারের পানিতে করমজল বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র তলিয়ে গেছে। বনের অভ্যন্তরে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। এজন্য বনের বিভিন্ন উঁচু স্থানে বন্য শুকর ও হরিণ আশ্রয় নেয়। জোয়ারের পানিতে প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের শেডগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুন্দরবনে এত পানি আগে কখনও দেখা যায়নি। এমন অবস্থায় সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে প্রায় ৫-৬ ফুট পানি উঠে যায় সুন্দরবনে। এর ফলে পানিতে ডুবে বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে। এরই মধ্যে চারটি মৃত ও দু’টি জীবিত হরিণ উদ্ধার হয়েছে। পানির তোড় ও ঝড়ো হাওয়ায় পূর্ব সুন্দরবনের ১৯টি জেটি, ৬টি জলযান (ট্রলার) দু’টি গোলঘর, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি স্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে অন্তত ছয়টি অফিসের টিনের চালা উড়ে গেছে। ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণের জন্য রেঞ্জে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন: জোয়ারে ডুবছে সুন্দরবন: ভেসে আসা ৬টি হরিণ উদ্ধার
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর একমাত্র সুপেয় পানির উৎস ছিল মিঠা পানির পুকুর। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পশ্চিম সুন্দরবনের ৫৪টি সুপেয় পানির পুকুরের মধ্যে ৫৩টি ডুবে গেছে। সাতক্ষীরার মাত্র একটি পুকুরে পানি ঢোকেনি। পুকুরে নোনা পানি ঢুকে যাওয়ায় বন্যপ্রাণীরা সুপেয় পানির অভাবে পড়বে।
তিনি বলেন, ‘প্রবল বাতাসে প্রায় ১১টি জেটি ও দু’টি কাঠের অফিস ভেঙে গেছে। জেটি থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার প্রায় ৩০টি মাটির রাস্তা জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ধুয়ে গেছে। রাস্তাগুলো আবার করতে হবে। কোনও বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার খবর এখনও পাওয়া যায়নি। গাছ-গাছালির ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কোথাও ৭ ফুট কোথাও ৮ ফুট বেশি জোয়ারের পানি উঠেছে।’
৩ বছর আগে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: ভোলায় ১১ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে দুর্গত চরাঞ্চচলের পরিবারগুলো এখন চরম সংকটে দিন কাটাচ্ছে। ইয়াস চলে গেলেও উপকূলের প্রায় ২৩ চরে তার ক্ষতবিক্ষত চিহ্ন রেখে গেছে। সহায়-সম্বল হারা পরিবারগুলো এখন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেনের মতে, এই ঘুর্ণিঝড়ে ২৩টি চরে ১ লাখ ৭০ হার মানুষ দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। জেলায় ১১ হাজার ৩০৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, ইয়াসের প্রভাবে দ্বীপজেলা ভোলার সাত উপজেলার ৫১ ইউনিয়নের ৬৫৯টি গ্রাম আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ হাজার ৩০৯টি পরিবার। গৃহহারা পরিবারের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৭৯ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৭ হাজার ৭৩০ পরিবার। এতে সরাসরি আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় পৌনে ২ লাখ মানুষ। জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার গরু- মহিষ। নিম্নাঞ্চলের মানুষ সামান্য কিছু শুকনো খাবার পেলেও ঘুরে দাড়ানোর মতো কোন সহায়তা এখনো পৌঁছেনি তাদের কাছে।
এদিকে ঘরবাড়ির পরই বেশি ক্ষতি হয়েছে গবাদি পশুর। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫০টি স্থানে প্রায় ১৬ বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লবণ পানির কারণে চরঞ্চালের পশুর মড়ক দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার রাত থেকে জোয়ারের উচ্চতা কমলেও খাল-বিলে জলাবদ্ধতায় থাকা নোনা পানির কারণে নানা সংকট দেখা দিয়েছে। এ মুহূর্তে মহিষ গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষিরা। মিঠা পানি আর গৌখাদ্যের সংকট চরমে। ঢাল চর, কুকরি মুকরি ইউনিয়নের মতোই চর নিজাম, কলাতলির চর, চর জহির উদ্দিন, মদনপুর, নেয়ামতপুর, মাঝের চর ও ভোলার রাজাপুরের দুর্গত ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্ভোগ যেন শেষ নেই।
আরও পড়ুন: ইয়াসে সাতক্ষীরায় ৪ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর, ৮ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো আসন্ন্ অমাবস্যার আগেই সংস্কার করা হবে। জোয়ারের পানি যেন ঢুকতে না পারে তার জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ইন্দ্রজিৎ কুমার মন্ডল জানান, শনিবার পর্যন্ত তারা ১৩৪টি পশু মারা যাওয়ার খবর পেয়েছেন। ক্ষয় ক্ষতির তালিকার কাজ চলছে। তবে দক্ষিণের চরগুলোতে নোনা পানির কারণে মহিষের বিভিন্ন অসুখ দেখা দিয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের টিম চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইয়াসের প্রভাবে সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে ৪টি টিম গঠন
ভোলা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে তাদের কাছে শুকনো খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যাদের ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ টাকা ও ঢেউটিন বরাদ্দ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা কি অবস্থায় আছে তা চিহ্নিত করার পর তাদের পুনর্বাসন করা হবে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমান ত্রাণসামগ্রী রয়েছে। চাহিদার সাথে সাথে দিতে পারছি। আমাদের কোন ঘাটতি নেই।’
৩ বছর আগে
ইয়াসে সাতক্ষীরায় ৪ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর, ৮ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
পরিসংখ্যানে বলা হয়, সাতক্ষীরায় ৭৮ ইউনিয়নের মধ্যে ১২ ইউনিয়নের ৫০ হাজার ৮০০ মানুষ ও চার হাজর ৭৬৫ বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৮ কোটি টাকার মাছ নদীতে ভেসে গেছে।
আরও পড়ুন: ইয়াসের প্রভাবে সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে ৪টি টিম গঠন
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে ধসেপড়া ভেড়িবাঁধের অধিকাংশ জায়গা সংস্কার করা সম্ভব হলেও দ্বীপ ইউনিয়ন শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ও আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন এখনও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে আছে। এই দুটি ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে স্থানীয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দুর্গত এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাগেরহাটে সাড়ে ৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে : মৎস্য বিভাগ
অনেক স্থানে এখনও সরকারি সহায়তা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া দুর্গত এলাকায় খাবার পানি ও শুকনা খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে বলে জানা যায়।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস : খুলনায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত
৩ বছর আগে
ইয়াসের প্রভাবে সুন্দরবনে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে ৪টি টিম গঠন
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের জন্য চারটি টিম গঠন করা হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মইউদ্দিন খান ওই চারটি টিম গঠন করেন।
তিনি জানান, ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের জন্য সুন্দরবনের চারজন রেঞ্জ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনে সরজমিনে ঘুরে দেখে আগামী সপ্তাহের মধ্যে তারা রিপোর্ট দাখিল করবে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে সুন্দরবনের বন্য প্রাণী এবং বনজ দ্রব্যের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে ভেসে যাওয়া চারটি মৃত এবং দুটি জীবিত হরিণ উদ্ধারের তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তবে সুন্দরবনের বনজদ্রব্যের তেমন ক্ষতির কোন খবর পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাগেরহাটে সাড়ে ৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে : মৎস্য বিভাগ
তথ্য মতে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব প্রথমে সুন্দরবনে পড়ে। নদ-নদী ও খালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়।
বন বিভাগ জানায়, বুধবার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সুন্দরনবনের বিভিন্ন অংশ ডুবে যায় এবং প্রায় ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। বৃহস্পতিবারও জোয়ারের সময় সুন্দরবনে দুই ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। তবে নদ-নদীতে প্রচন্ড ঢেউ ও পানির চাপ থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস : খুলনায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা এবং চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষকরা সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনে কাজ করছে।
শরণখোলা রেঞ্জর সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের কাজ শুরু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: সাতক্ষীরার ৪৪ পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ
৩ বছর আগে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাগেরহাটে সাড়ে ৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে : মৎস্য বিভাগ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটে ৪ হাজার ৪৭০টি মৎস্য ঘের ও ৪০০ পুকুর ডুবে গেছে। এসব ঘের ডুবে সাড়ে ৬ কোটি টাকা মূল্যের চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ ভেসে গেছে। পুকুর ডুবে অনেক এলাকায় মিষ্টি পানির উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে জেলা মৎস্য বিভাগ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস : খুলনায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত
তথ্য অনুযায়ী, বুধবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বাগেরহাটের বিভিন্ন নদীতে বিপদসীমার ১ ফুট ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট পানি বৃদ্ধি পায়। নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রাম এবং মৎস্যঘেরে পানি ঢুকে পড়ে। পানির চাপে একের পর এক মৎস্য ঘের ও পুকুর ডুবে যায়। এসব ঘের থেকে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ ভেসে গেছে।
মৎস্য চাষিদের তথ্য মতে, তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: সাতক্ষীরার ৪৪ পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের আট উপজেলায় ৪,৪৭০টি মৎস্য ঘের ও ৪০০ পুকুর ডুবে যায়। এসব মৎস্য ঘের ডুবে সাড়ে ৬ কোটি টাকার চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। বিশেষ করে বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল এবং মোংলা উপজেলায় মৎস্যঘের সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
৩ বছর আগে
সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে
সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব এখনো কাটেনি।
শুক্রবার সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকায় মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
এই আবহাওয়ার মধ্যে স্থানীয় লোকজন তাদের জান, সম্পদ রক্ষার্থে স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ অব্যাহত রেখেছে। যে ৪৪ টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল তার অধিকাংশ সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। আর আশাশুনি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার। এ দুই উপজেলা খোলপেটুয়া, ইছামতি চুনকুড়ি, চুন, মালঞ্চ নদনদী দিয়ে বেষ্টিত। এসব জনপদ নদনদীর পানি থেকে রক্ষা করতে রয়েছে ২০৫ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ঘেরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে এ দুই উপজেলার মানুষ টিকে আছে। প্রায় প্রতিবছর কোনো না দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয় এসব জনপদের মানুষের।
আরও পড়ুন: 'ইয়াস' মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে এ দুই উপজেলা লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায়। এখন মানুষ সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়িতে পারেনি। ঠিক এক বছর পর আবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর কবলে পরে এসব জনপদ।
সরেজমিনে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও কথা বলে দেখা গেছে, বুধবার জোয়ারে যেসব বাঁধ ভেঙ্গে ও পানি উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছিল, তার অধিকংশ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুর ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ এখনও সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। ফলশ্রুতিতে ঐ দুটি ইয়নিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ধ্বসে পড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ঐ এলাকায় শুকনো খাবার ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।
আরও পড়ুন: ভোলায় ইয়াসের প্রভাবে চরাঞ্চল প্লাবিত, ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, পদ্মপুকুর ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে ধ্বসে পড়া বেড়িবাঁধ এখনো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। অন্য স্থানে সংস্কার কাজ সম্ভব হয়েছে। দূর্গত এলাকায় শুকনো খাবার ও সুপেয় পানি পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি না পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
৩ বছর আগে
জলোচ্ছ্বাসে ডুবেছে সুন্দরবন, ভেসে আসছে বন্য প্রাণী
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ডুবে যায়। কয়েক ঘণ্টা ধরে নোনা পানি (লবণ পানি) সুন্দরবনে আটকে ছিল। বনের মধ্যে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। সুন্দরবনের মধ্যে জোয়ারের সময় পানি বাড়তে থাকায় বন্য প্রাণী দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে।
জলোচ্ছ্বাসের কারণে দুদিন জোয়ারের সময় গোটা সুন্দরবন জলোমগ্ন হয়ে পরে। বনের কোন কোন অংশে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট গাছ-পালা সম্পূর্ণ পানিতে ডুবে ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বণ্য প্রাণীর খাদ্য ও আবাসস্থল। জলোচ্ছাসে বন থেকে ভেসে যাওয়া মৃত এবং জীবিত ৬টি হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। লবণ পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবনে মিষ্টি পানির উৎস পুকুর।
আরও পড়ুন: ভারত উপকূলে আঘাত আনলো ঘূর্ণিঝড় ইয়াস
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবন বন্য প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল। জলোচ্ছাসের কারণে বনের সব ধরণের বন্য প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লবণ পানি বনে আটকে থাকার কারণে বনভূমিও অতিমাত্রায় লবণাক্ত হবে। সুন্দরবনে বন্য প্রাণীর প্রজননের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়বে। সব মিলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের উপর প্রভাব পড়বে ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসের কারণে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সুন্দরবন এক প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সুন্দরবন নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে বিভিন্ন সময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবাসীকে রক্ষা করে চলেছে। প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, বুলবুল এবং আম্ফান প্রথম তাণ্ডব চালায় সুন্দরবনে। পরে দুর্বল হয়ে এসব ঝড় উপকূলে আছড়ে পড়ে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব প্রথমে সুন্দরবনে পড়ে। নদ-নদী ও খালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়। বুধবার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সুন্দরনবনের বিভিন্ন অংশ ডুবে যায়। জোয়ারের সময় সুন্দরবনের মধ্যে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবারও জোয়ারের সময় সুন্দরবনে দুই ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয় বলে বন বিভাগ জানান।
আরও পড়ুন: ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের সম্ভব্য ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রামে প্রস্তুতি সম্পন্ন
বৃহস্পতিবার বিকালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের কাছে একটি ছোট এবং একটি বড় হরিণকে গলা সমান পানির মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে স্থানীয় সাংবাদিকরা।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন চালতেবুনিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর জমাদ্দার জানান, জোয়ারের সময় সুন্দরবনের দিক দিকে একটি বন্যশুকর ভেসে যেতে দেখেছে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
বন সংলগ্ন খুড়িয়াখালী গ্রামের জেলে তুহিন ও ইউসুফ জানান, মাছ ধরে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে তাদের আসা যাওয়া। কিন্তু বনের মধ্যে এত পানি তারা আগে কখনো দেখেনি। সুন্দরবনের মধ্যে মাথা সমান উচু পানিতে বিভিন্ন ধরণের বন্য প্রাণী ভেসে যাওয়ার কথা। এখনো বনের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে আছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) গবেষক অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে ক্রমাগত এই ধরণের ঝড় জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে। এই ধরণের দুর্যোগ মোকাবিলা করে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসতে সাধারণত ২৫ বছর সময় লাগে। কিন্তু প্রায়ই সুন্দরবনের উপর দিয়ে ঝড়-জলোচ্ছাস বয়ে যাচ্ছে।
প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে গোটা সুন্দরবনে লবণ পানি প্রবেশ করেছে। বনের মধ্যে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। পানিতে সুন্দরবনের ৫৫টি মিষ্টি পানির পুকুরে লবণ পানি প্রবেশ করেছে। মিষ্টি পানির সংরক্ষণের জন্য ওই সব পুকুর খনন করা হয়। বনের স্টাফ এবং বন্য প্রাণীরা তাদের পানির চাহিদা মিটাতো ওই সব পুকুর থেকে। পানির কারণে কিছু বন্য প্রাণী বনের মধ্যে পুকুর পাড়ে উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ছোট এবং দুর্বল প্রকৃতির কিছু হরিণ ভেসে যেতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে বন্য প্রাণীর কিছু ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী আরও জানান, ভবিষ্যতে এই ধরণের জলোচ্ছ্বাসের কথা বিবেচনায় নিয়ে সুন্দরবনে বন্য প্রাণীদের আশ্রয়ের কথা চিন্তা করে বনের মধ্যে উচু কেল্লা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
৩ বছর আগে
ইয়াসের প্রভাবে খুলনায় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে খুলনায় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি বৃষ্টি হচ্ছে। মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে সহস্রাধিক আশ্রয় কেন্দ্র
৩ বছর আগে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: বাগেরহাটে ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের নদীর তীরবর্তী শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ এবং মোংলা উপজেলার পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জোয়ারের চাপে বাগেরহাটের মোংলায় একটি ভেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় মৎস্যঘের এবং পুকুর ডুবে মাছ ভেসে গেছে। অনেক এলাকায় পুকুর ডুবে মিষ্টি পানির উৎস হারিয়েছে। বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে ৫ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যপ্রাণি এবং বনের মধ্যে মিষ্টি পানির পুকুর ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার এক ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার মোড়েলগঞ্জ ঘাটের গ্যাংওয়ে ডুবে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বাগেরহাট-শরণখোলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মোংলা বন্দরে বুধবার দুপুর থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের চাপে মঙ্গলবার রাতে এবং বুধবার দুপুরে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার কানাইনগর, দক্ষিণ কানাইনগর এবং চিলা এলাকায় বেড়িবাঁধের তিনটি স্থান ভেঙে গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। প্লাবিত হয় কাইনমারি, সুন্দরতলা, কলতলা, জয়মনি এবং দক্ষিণ কাইমারি গ্রামের বিভিন্ন এলাকা। ভেড়িবাঁধ ভেঙে এসব গ্রামের প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
জেলার মোড়েলগঞ্জে পানিগুছি নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নদীর তীরবর্তী ফুলহাতা, সাংকিভাঙ্গা, মোড়েলগঞ্জ সদর, বদনিভাঙ্গা,পত্নিতলাসহ বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। মোড়েলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাড়ে তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এছাড়া জেলার শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী রায়েন্দা, রাজৈর, জিলবুনিয়া, চাল রায়েন্দা, তাফালবাড়িসহ বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে জোয়ারের পানিতে। এসব গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: ভারত উপকূলে আঘাত আনলো ঘূর্ণিঝড় ইয়াস
স্থানীয়রা জানায়, বিভিন্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সাথে মাঝে মধ্যে দমকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর দুই এক ফুট পানি বৃদ্ধি পেলেই কোন স্থান থেকে বাঁধ উপচে গ্রামে পানি ঢুকে পড়বে। নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেক পরিবারে দুপুরে রান্না-খাওয়া বন্ধ রয়েছে। অনেকে শুকনা খাবারের আশায় রয়েছেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব পানিবন্দি পরিবারকে শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার জানান, অস্বাভাকিক জোয়ারের পানিতে মোংলায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের তিনটি স্থান তিনি পরিদর্শন করেছেন। ওই তিনটি গ্রামের ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়া চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা চলছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে নদীর তীরবর্তী বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা এবং মোংলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের সহযোগিতা দেয়া হবে। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এলাকা ঘুরে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তত করার জন্য বলা হয়েছে।
৩ বছর আগে