রেহানা মরিয়ম নূর
এর আগে আমি পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করিনি: বাঁধন
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর পর দেশের কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধনকে। তবে সেই বিরতি ঘুচতে যাচ্ছে এবার।
সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হলেন সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হতে যাওয়া ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ সিনেমায়। এতে প্রধান চরিত্রে দেখা যাবে এই তারকাকে।
এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বনানীর একটি রেস্টুরেন্টে সিনেমার নাম ঘোষণা ও লোগো উন্মোচন করা হয়।সেখানে সিনেমা প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, ‘সিনেমার নাম পড়েই বোঝা যাচ্ছে যে এটি একটি খুনের গল্প। তবে এর পরতে পরতে রয়েছে রহস্য। গল্প নিয়ে এর বেশি কিছু বলব না। ছবিটির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছি, যাতে নিজের সেরাটা দিতে পারি। শুটিং শেষ করে, মুক্তির আগে বাকি সব অনুভূতি জানাব।’
আরও পড়ুন: খুফিয়া: চোখ আটকে গেল বাঁধনে
বাঁধন চলতি সময়ে নারীপ্রধান চরিত্রকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এই সিনেমাতেও তেমনটা হতে যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে বাঁধন বলেন, ‘আমি পরিচালককে সব সময় বলেছি যে আপনি কেন সবসময় কোনো পুলিশ হিসেবে ছেলেকে দেখেন? কোনো নারীকে কেন ইনভেস্টিগেটিভ অফিসার হিসেবে দেখেন না? সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী আর পুলিশে অনেক নারী কর্মচারী–কর্মকর্তা আছেন। তাদেরও তো চরিত্র আছে। আছে গল্প। সে রকম জায়গা থেকে পরে ভাইয়া এই গল্প ঠিক করেন। এর আগে আমি পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করিনি। এটা আমার জন্য নতুন একটা অভিজ্ঞতা হবে। তাই কাজ করার আগে মন্তব্য করতে চাই না।’ সংবাদ সম্মেলনে সিনেমার পরিচালক সানী সানোয়ার বলেন, ‘অ্যাকশন থেকে বের হয়ে এবার খুনের রহস্যে ঢুকে গেলাম। ২০০৯ সালে ঘটে যাওয়া এই কেসের তদন্তে আমি নিজে যুক্ত ছিলাম। সেটা নিয়ে সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম ‘ঢাকা অ্যাটাক’ মুক্তির পরপরই।’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ডিসেম্বরে ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ ছবির শুটিং শুরু হবে। মুক্তি পাবে আগামী বছরের রোজার ঈদে।
সিনেমাটিতে বাঁধন ছাড়াও আরো অভিনয় করবেন মিশা সওদাগর, শতাব্দী ওয়াদুদ, সুমিত সেনগুপ্তসহ অনেকে।
আরও পড়ুন: নেটফ্লিক্সে বাঁধনের ‘খুফিয়া’ আসছে ৫ অক্টোবর
চরিত্রটি আমি আড়াই বছর বহন করেছি: ‘গুটি’-তে অভিনয় প্রসঙ্গে বাঁধন
১১ মাস আগে
সংকটের মধ্যেও ২০২১ সালে সরগরম ঢালিউড
ঢালিউডে সিনেমার খরা ছিল বেশ কয়েকটি বছর। তবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের দিকে নতুন উদ্যোমে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় ঢালিউড। সিনেমা মুক্তির সংখ্যা কম থাকলেও নির্মাণের সংখ্যা বেড়েছিল ওই বছরগুলোতে। পুরোনো তারকাদের সঙ্গে নতুন অনেকেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন। শুধু তাই নয়, ঢাকাই সিনেমায় উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগতে শুরু করে সেসময়। বলা যায়, ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন বীজ বোনা শুরু হয়, যার ফলের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার অপেক্ষা ছিল ২০২০ সাল।
২০২০ সালের বছরের শুরুটা ভালোই ছিল। কিন্তু বাধ সাধে মহামারি করোনাভাইরাস। কয়েকটি বড় বাজেটের সিনেমা মুক্তির পরও শেষ পর্যন্ত নামিয়ে নিতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল কাজী হায়াৎ পরিচালিত শাকিব খান অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘বীর’ । নির্মাণের ঘোষণার পর থেকেই তুমুল আলোচনায় ছিল এই সিনেমাটি। কিন্তু বিগ বাজেটের এই সিনেমা মুক্তির কয়েক সপ্তাহ পরেই আসে লকডাউনের ঘোষণা।
শুধু সিনেমা নয়, লকডাউনের কারণে সেসময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দেশের সকল সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। এমন অবস্থার পর গত বছরটা খুব একটা ভালো না গেলেও ২০২১ এর শুরুর দিকে নতুন সম্ভাবনা দেখে ঢালিউড। কিন্তু আবারও মহামারির হানা। তবে এবারের চিত্রটা পাল্টে দেয় ৩ জুন কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিশিয়াল সিলেকশনে বাংলাদেশের সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নির্বাচিত হওয়ার পর।
আরও পড়ুন: মেহজাবীন-রাজীবের প্রেমের গুঞ্জন সত্যি হলো!
বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এই চলচ্চিত্র উৎসবে ঢালিউডের অংশগ্রহণ ইন্ডাস্ট্রিকে নতুন এক মোড়ে নিয়ে আসে। দেশের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যমের চোখ তখন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ এর দিকে। সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। নাম ভূমিকায় অভিনয় করে দীর্ঘদিন পর আলোচনায় এসেছেন অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন।
‘রেহেনা মরিয়ম নূর’ নিয়ে আলোচনা চলতে থাকলেও তখন পর্যন্ত দেশের অন্য সিনেমাগুলোর জন্য সময়টা ছিল প্রেক্ষাগৃহ খোলার অপেক্ষা। যার অবসান হয় অক্টোবরে। এতদিন পর হল খোলার পর সংশ্লিষ্ট সবার মুখে হাসি ফুটেছিল। একই মাসে মুক্তি পায় আলোচিত তিন সিনেমা। সেগুলো হলো- পদ্মপূরাণ, চন্দ্রাবতীর কথা ও ঢাকা ড্রিম।
চলতি বছরের সিনেমার ব্যবসা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যৈষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা তো গত বছর থেকেই খুব ভালো অবস্থায় নেই। তবে এই বছর অনেকটাই ভালো অবস্থার মধ্য দিয়ে কেটেছে। দর্শকরাও হলমুখি হয়েছে। যে কয়টি সিনেমা আমাদের সিনেপ্লেক্সে চলেছে সেগুলো স্বাভাবিক দর্শক ছিল। আসলে করোনার সঙ্গে গত বছর মোকাবিলার অভিজ্ঞতা ছিল নতুন। তাই হলে আশা নিয়েও বেশিরভাগ দর্শকের মধ্যে দ্বিধা কাজ করেছে। তবে এবারের চিত্রটা ভিন্ন। মাঝে হল বন্ধ থাকার পর যখন আবারও খোলা ঘোষণা এলো, শুরুতেই বেশ কয়েকটি বাংলা সিনেমা মুক্তি পায়। এটি অবশ্যই ইন্ডাস্ট্রির জন্য বেশ ইতিবাচক দিক। আর সবগুলো সিনেমাই ছিল আলোচিত। ব্যবসায়িক জায়গা থেকে আমরা সন্তুষ্ট। আগামী বছর আরও কয়েকটি বড় বাজেটের সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে।’
আরও পড়ুন: স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেল ‘স্পাইডার ম্যান: নো ওয়ে হোম’
নভেম্বর মাসও ছিল ঢালিউডের আলোচনার মাস। যার কেন্দ্রবিন্দু ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। কান চলচ্চিত্র উৎসব জয় করা আসা সিনেমাটি মুক্তি পায় ১২ নভেম্বর। যা এদেশের দর্শকদেরও হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই সিনেমার মধ্য দিয়ে প্রথমবার প্রকাশ্যে এসেছিলেন পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বাঁধনসহ তার টিম নিয়ে প্রচারণাও চালিয়েছেন সাদ।
৩ ডিসেম্বর মুক্তি পায় এ বছরের বিগ বাজেটের সিনেমা ‘মিশন এক্সট্রিম’। দেশের বাইরেও একই দিনে মুক্তি দেয়া হয় সিনেমাটি। সাড়াও মিলেছে বেশ ভালো। সানি সানোয়ার পরিচালিত এই সিনেমা দিয়ে দীর্ঘদিন পর পর্দায় দেখা দিলেন আরিফিন শুভ। এবার তার সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাবেক ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী।
এত আশার মাঝে খানিকটা হতাশার কথা ব্যক্ত করলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ।
তিনি বলেন, ‘সিনেমার সোনালী সময় আমরা দেখে এসেছি। আর এখন কী অবস্থা দেখছি! সারা দেশে ভালো মানের হলের সংখ্যা একশও নেই। যার কারণ ভালো মানের সিনেমার অভাব। এখন সেগুলো দিয়ে ব্যবসা হয় না। আমরা বলেছিলাম এদেশে বিদেশি সিনেমার বাজার খুলে দেয়া হোক। আমরা চাই কলকাতার ও হিন্দি সিনেমার বাজার এখানে গড়ে উঠুক। এতে যেমন ব্যবসা হবে তেমনি প্রতিযোগিতাও বাড়বে। এখন সাফটা (সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া) চুক্তির মাধ্যমে এই সুবিধা পাওয়া গেলেও সেটিতে উপকার হচ্ছে না। একটি হিন্দি সিনেমা ভারতে যেদিন মুক্তি দেয়া হবে সেদিন আমাদের দেশেও দিতে হবে। তাহলে আসল ব্যবসাটা হবে।’
সরকার থেকে হল সংস্কারের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাড়ছে না হলের সংখ্যা। এই প্রসঙ্গে ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ আরও বলেন, ‘হল সংস্কারের জন্য লোন বরাদ্দ হয়েছে এটি খুবই আনন্দের খবর আমাদের জন্য। এর জন্য সরকারকেও সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সমস্যা হলো ব্যবসা করার মতো সিনেমাই তো নির্মাণ হচ্ছে না। তাহলে একজন হল মালিক লোন নিয়ে সেটা ফেরত দেবেন কীভাবে! মাল্টিপ্লেক্সের সময় এখন। বাজারের টিকে থাকতে হলে সেভাবেই সবাইকে গড়তে হবে। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন ব্যবসায়িক উন্নতি। এর জন্য দেশের সিনেমারও উন্নতি প্রয়োজন।’
অন্যদিকে দেশের সিনেমার উন্নতি বা সিনেমা হলের সংকট নিয়ে যে সমস্যা, সেটি দীর্ঘদিন থাকবে না বলে মনে করেন এ বছরেরর আলোচিত সিনেমা ‘পদ্মপুরাণ’-এর পরিচালক রাশিদ পলাশ।
আরও পড়ুন: মিস ইউনিভার্স ২০২১: কে এই হারনাজ সান্ধু
তিনি বলেন, ‘দর্শক এখন ভালো পরিবেশে সিনেমা দেখতে অভ্যস্ত হচ্ছেন। সিঙ্গেল স্ক্রিনের হলগুলোর অবস্থা ভালো নয়। সেগুলোর আধুনিকায়ন প্রয়োজন। মাল্টিপ্লেক্সগুলোয় কিন্তু দর্শক আসছে। এখন যেহেতু মাল্টিপ্লেক্সের সংখ্যা কম তাই ব্যবসার অগ্রগতিও কম। কিন্তু আমি আশাবাদী। কারণ এখন মাল্টিপ্লেক্স বাড়ছে। আগামীতে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। আমরা নতুন এক সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যার বীজটা এখন বোনা হচ্ছে। ফল পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
এ বছর এখনও দুটি সিনেমার মুক্তি বাকি রয়েছে। যার মধ্যে নির্মাতা রনি ভৌমিকের পরিচালনায় ‘মৃধা বনাম মৃধা’ মুক্তি পাবে ২৪ ডিসেম্বর। যেখানে প্রথমবার জুটি বেঁধেছেন সিয়াম আহমেদ ও নোভা ফিরোজ। এছাড়াও ৩১ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে মীর সাব্বির পরিচালিত ‘রাত জাগা ফুল’। সরকারি অনুদানের এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন আবু হুরায়রা তানভীর, জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, মীর সাব্বির প্রমুখ। বছরের শেষ দুটি সিনেমা নিয়েও আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। এখন অপেক্ষা মুক্তির।
২ বছর আগে
এবার হংকংয়ের ‘নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড‘ জিতলো রেহানা মরিয়ম নূর
এবার আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত দেশের বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র রেহানা মরিয়ম নূর হংকং এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২১-এ ‘নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ জিতে নিলো।
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ উৎসবের জুরি বোর্ডের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরস্কার বিজয়ী হিসাবে এই চলচ্চিত্রের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
এই বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো হলো - ব্যালাড অব আ হোয়াইট কাউ (ইরান), কোস্টা ব্রাভা (লেবানন), কিম মিন-ইয়ং অব দ্য রিপোর্ট কার্ড (দক্ষিণ কোরিয়া), ইনক্রিজিং ইকো (তাইওয়ান), শাঙ্কারস ফেইরি (ভারত) এবং হোয়াইট বিল্ডিং (কম্বোডিয়া)।
মনোনয়নের বিষয়ে উৎসবের জুরি বোর্ড বলেছে, `রেহানা মরিয়াম নূর স্পষ্টভাবে একটি ক্লাস্ট্রোফোবিক এবং নিপীড়নমূলক পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে একজন ব্যক্তিকে তার বিবেক-বুদ্ধির প্রান্তে ঠেলে দেয়া হয়। হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরায় ধারণকৃত গতিশীল কিছু দৃশ্যের মাধ্যমে সৃষ্ট সিনেমাটোগ্রাফি, দর্শককে প্রধান চরিত্রের কঠিন মানসিক বাস্তবতা বুঝতে সাহায্য করেছে।
চলচ্চিত্রটির প্রধান চরিত্রে অভিনয়কারীর অভিনয়ের প্রশংসা করে জুরি বোর্ড বলেছে, আজমেরী হক বাঁধনের দুর্দান্ত অভিনয়ের কারণে তার চরিত্রের উচ্চতা অনেক বেড়ে গেছে। তার অভিনয়ে তীব্র মানসিক সঙ্কট বাস্তব হয়ে ফুটে উঠেছে। চরিত্রটি ন্যায়বিচারের জন্য তার লড়াইয়ে অবিচল।’
আরও পড়ুন: ১২ প্রেক্ষাগৃহে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’
সম্প্রতি চলচ্চিত্রটির পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ ১৪তম এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস (এপিএসএ) এ ‘জুরি গ্র্যান্ড প্রাইজ’ পেয়েছেন। এছাড়া অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন ‘সেরা অভিনেত্রী’ বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন।
গত শুক্রবার (১২ নভেম্বর) চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে। বর্তমানে সারাদেশে সফলভাবে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হচ্ছে।
২০২১ সালের কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের 'আন সার্টেন রিগার্ড' বিভাগে প্রদর্শিত হওয়া প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হিসাবে মনোনীত এটি প্রিমিয়ারে ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
কানের পরে রেহানা মরিয়ম নূর একে একে মেলবোর্ন, বুসান এবং লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত হয়। চলচ্চিত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হিসাবে আসন্ন অস্কার ২০২২-এর জন্য মনোনীত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘রেহানা মরিয়ম নূর’: এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাদ ও বাঁধন
আমেরিকার প্রেসকট চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত অমিতাভ রেজার 'রিকশা গার্ল'
৩ বছর আগে
১২ প্রেক্ষাগৃহে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’
বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়ানোর পর নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের বহুল আলোচিত ছবি ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ শুক্রবার দেশের ১২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। ছবিটির নাম ভূমিকায় অভিনয়কারী অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে দর্শকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে চলচ্চিত্রটির নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু বলেন, `আমরা আমাদের চলচ্চিত্রটির জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অবিশ্বাস্য রকম সাড়া পেয়েছি। তবে আমরা আমাদের দেশের দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য সত্যিই উন্মুখ হয়ে আছি। বরাবরের মতো, আমরা এখনও ধীরে এগোতে চাই। ঢাকার দর্শকদের আগ্রহ দেখে-বুঝে আমরা আগামী সপ্তাহে অন্যান্য জেলায় যেতে চাই।’
চলচ্চিত্রটির মুক্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে প্রথমবারের মতো পরিচালক সাদসহ রেহানা মরিয়ম নূর’ এর টিম মেম্বাররা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
এসময় চলচ্চিত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পরিচালক সাদ বলেন, ‘আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে এমন একটি টিম পেয়েছি। আমার টিমের প্রত্যেক সদস্যই তাদের সেরাটা দিয়েছেন এবং ফলস্বরূপ আমাদের চলচ্চিত্রটি এই পর্যায়ে এসেছে। আমি কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে বিশ্বাস করেছিল। এখন দর্কদের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’
আরও পড়ুন: ‘রেহানা মরিয়ম নূর’: এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাদ ও বাঁধন
বাঁধন বলেছেন, ন্যায়বিচারের জন্য রেহানার একগুঁয়েমি, সমাজের প্রতি হতাশা এবং একজন বিধবা কর্মজীবী মায়ের সংগ্রাম- আমাদের সমাজের একটি সাধারণ দৃশ্য। এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তবে চরিত্রটির সকল কৃতিত্ব সাদের। ও এত ভালো দিকনির্দেশনা দিয়েছে, অভিনয় করার সময় ও বারবার আমাকে গাইড করেছে।
বুধবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর স্টার সিনেপ্লেক্সের এসকেএস টাওয়ার শাখায় ছবিটির বিশেষ প্রেস স্ক্রিনিংয়ের আয়োজন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে সাদ বলেছেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম আমাদের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির আগে সমালোচকেরা ছবিটি দেখুক, কারণ আপনাদের মতামত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান।’
উল্লেখ্য, চলচ্চিত্রটি কাহিনী ঢাকার একটি মেডিকেল কলেজের ৩৭ বছর বয়সী সহকারী অধ্যাপক ডা. রেহানা মরিয়ম নূরের জীবন নিয়ে তৈরি।
বাঁধন তার দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য বৃহস্পতিবার ১৪তম এশিয়া-প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস (এপিএসএ) এ 'সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার' জিতেছে। চলচ্চিত্রটির পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ জুরি গ্র্যান্ড পুরস্কার পেয়েছেন।
এটি ২০২১ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ‘ইউএন সার্টেন রিগার্ড’ বিভাগে প্রদর্শিত প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। কানের পর 'রেহানা মরিয়ম নূর' মেলবোর্ন, বুসান ও লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত হয়।
এটি বাংলাদেশের সেন্সর বোর্ড থেকে আনকাট সার্টিফিকেট পেয়েছে এবং চলচ্চিত্রটি ২০২২ সালের অস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছে।
বাঁধনের পাশাপাশি ছবিটিতে অভিনয় করেছেন সাবেরী আলম, আফিয়া জাহিন, কাজী সামি হাসান, আফিয়া তাবাসসুম ও ইয়াসির আল হক।
আরও পড়ুন: বাগদানের খবর জানালেন মিম
কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলালিংকের বিরুদ্ধে জেমসের মামলা
৩ বছর আগে
‘রেহানা মরিয়ম নূর’: এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড পেলেন সাদ ও বাঁধন
সারাদেশে মুক্তির আগের দিন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ টিম ১৪তম এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস এ দু’টি পুরস্কার পেয়েছে। বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে ১৪তম এশিয়া প্যাশিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
চলচ্চিত্রটির পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ জুরি গ্র্যান্ড পুরস্কার ও নায়িকা আজমেরী হক বাঁধন সেরা অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলন করে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ টিম এ তথ্য জানায়।
এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডসের জন্য এ অঞ্চলের ২৫টি দেশকে মনোনীত করা হয়। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, মিশর, হংকং, ভারত, ইরাক, ইরান, ইসরাইল, জাপান, লেবানন, নিউজিল্যান্ড, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও ভিয়েতনাম।
অভিনেত্রী বাঁধন ইউএনবিকে বলেন, ‘আমি আমার খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করতে পারছি না। আমি বরাবরই বলে থাকি, আমাদের পরিচালক সাদ ও সম্পূর্ণ দল ছাড়া এসবের কিছুই সম্ভব হত না। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের দলের জন্য সম্মানের বিশেষ করে মুক্তির আগে এবং আমরা আগ্রহ নিয়ে আমাদের চলচ্চিত্র নিয়ে প্রিয় দর্শকদের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’
শুক্রবার সারা দেশের ১২টি সিনেমা হলে 'রেহেনা মরিয়ম নূর’ মুক্তি পাবে।
চলচ্চিত্রটি ২০২২ সালের অস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছে।
এর আগে ৭ জুলাই ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি ‘ইউএন সার্টেন রিগার্ড’ বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: রেহানা মরিয়ম নূর: কানের সম্মানজনক তালিকায় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
অ্যাপসা’য় সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পেলেন বাঁধন
৩ বছর আগে
কানে ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ পেল বাংলাদেশের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’
এখন সারা বিশ্বের বিনোদন জগতের নজর রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম প্রচীন ও গৌরবময় চলচ্চিত্র উৎসব কানের দিকে। আজ বাংলাদেশের মানুষের এই উৎসবের দিকে নজর একটু বেশিই ছিল। কানের ৭৪ তম আসরে সম্মানজনক জায়গা পাওয়া বাংলাদেশের সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে আবার পরিচিত করলো। তরুণ নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের পরিচালনায় ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ কানে প্রশংসতি হয়েছে। বুধবার প্রদর্শিত হওয়ার পর চলচ্চিত্রটি ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ পেয়েছে।
কান পালে দো ফেস্টিভ্যাল ভবনের সাল দুবুসি থিয়েটারে বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩টা ১৫ মিনিটে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী শুরু হয়। প্রদর্শনের পর ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ অর্থাৎ দর্শক দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন এবং হাততালি দেন।
আরও পড়ুন: স্পাইক লি: কান উৎসবের এক অন্যন্য যাত্রার শুরু
এ সময় চলচ্চিত্রটির পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন, সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমি চুয়া, সিনেমাটোগ্রাফার তুহিন তামিজুল, প্রযোজনা ডিজাইনার আলী আফজাল উজ্জ্বল, শব্দ প্রকৌশলী শায়েব তালুকদার, কালারিস্ট চিন্ময় রায় এবং নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল বাবু উপস্থিত ছিলেন।
এটি দ্বিতীয় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র যা বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতামূলক বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সারা বিশ্বে চলচ্চিত্রপ্রেমী এবং সমালোচকদের মধ্যে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী দেখার জন্য উৎসব অনুষ্ঠানের বাইরে বিপুল সংখ্যক দর্শককে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: রেহানা মরিয়ম নূর: কানের সম্মানজনক তালিকায় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
উৎসবে চলচ্চিত্রটি আরও দুই বার প্রদর্শিত হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২ টা এবং দুপুর ২ টায় প্রদর্শিত হবে।
প্রায় দু’বছর পর মঙ্গলবার পর্দা উঠল বিশ্বের অন্যতম এই মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৪ তম আসরের। এবারের উৎসবের পর্দা উঠেছে লিওস ক্যারাক্সের ‘অ্যানেট’ সিনেমার প্রিমিয়ারের-শো এর মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: বলিউড জুটি আমির-কিরণের বিচ্ছেদ
প্রথমবারের মতো এই আসরের মূল আয়োজনে অংশ নিয়েছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। এটি কানের অফিসিয়াল বিভাগ ‘আঁ সার্তেইন রিগার্দ’-এ জায়গা করে নিয়েছে।
৩ বছর আগে
রেহানা মরিয়ম নূর: কানের সম্মানজনক তালিকায় বাংলাদেশি চলচ্চিত্র
প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হিসেবে কান-এর ৭৪তম আসরে সম্মানজনক জায়গা পেলো রেহানা মরিয়ম নূর। আগামী ৬ থেকে ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কান চলচ্চিত্র উৎসব। আর তাই মহাসমারোহে গত ৩ জুন এক যোগে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সহ কানের সবগুলো সামাজিক মাধ্যম থেকে ঘোষণা করা হয় নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলোর নাম।
কানের আন সার্তেইন রিগার্দ বিভাগের ১৮টি ছবির তালিকায় সহমহিমায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের রেহানা মরিয়ম নূর-এর নাম। বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পে এ এক বিশাল অর্জন। চলুন, নতুন এই চলচ্চিত্রটি ও এর অর্জনের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেই।
রেহানা মরিয়ম নূর চলচ্চিত্রের পটভূমি
একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষিকা ৩৭ বছর বয়সী রেহানা মরিয়ম নূর আর দশজনের মতোই তার কর্ম ও সংসার জীবনকে শত ঝামেলার মাঝেও চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার জীবনটা হঠাৎ বদলে যেতে শুরু করে যখন একদিন সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বেরোনোর সময় তিনি কলেজের এক ছাত্রীকে জড়িয়ে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেখে ফেলেন। এরপর থেকে তিনি এক ছাত্রীর পক্ষ নিয়ে সহকর্মী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে সেই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এদিকে স্কুলে তার ৬ বছরের মেয়ে অপ্রীতিকর আচরণের সম্মুখীন হয়। এমন প্রতিকূল অবস্থায় রেহানা চিরাচরিত নিয়মের বেড়াজাল কাটিয়ে সেই ছাত্রী ও তার সন্তানের জন্য ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন।
চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ
চিত্রনাট্য লেখা এবং সিনেমায় রূপ দান দুটোই করেছেন তরুণ সিনেমা নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়াকালীন টিভি নাটকের চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শর্টফিল্মও নির্মাণ করেন।
নির্মাতা ওয়াহিদ তারেকের ‘আলগা নোঙর’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন সাদ। পূর্বে ২০০৯ সালে ওয়াহিদ তারেক পরিচালনা করেছেন সাদের লেখা ‘অগাস্টে লেখা গল্পসমগ্র’, ‘লিটল অ্যাঞ্জেল আই অ্যাম ডায়িং’ এবং ‘একটি যথাযথ মৃত্যু’সহ বেশ কিছু টিভি নাটক।
তার প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ (২০১৬) ২৭ তম সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা পরিচালক এবং সেরা পারফরম্যান্সের (মোস্তফা মনোয়ার) জন্য সিলভার স্ক্রিন পুরষ্কার লাভ করে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব রটারড্যামে (আইএফএফআর) এটি প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে সম্পূর্ণরূপে ফিচার করা হলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পাড়ায় বেশ সাড়া পড়ে যায়। এছাড়া ২০১৭ সালে ছবিটি ফাইভ ফ্লেভার এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে মনোনয়ন পায়। সাদাকালো পর্দার এই ছবিতে একাধিক ভিগনেটের মাধ্যমে ঢাকা শহর ছেড়ে যাবার চেষ্টায় এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির যন্ত্রণার চিত্র তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: বিল গেটসের সাবেক প্রেমিকা ও বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রেমকাহিনী
চলচ্চিত্রের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও সাদ লো-প্রোফাইল থাকতেই বেশী পছন্দ করেন। তাই ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ মুক্তির বছর ২০১৯ সালে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন অনেকটা গোপনেই। দেড় বছরের মধ্যে শেষ করেছেন ছবির শুটিং-এর কাজ। এমনকি ছবির নাম, প্লট, নায়ক-নায়িকা নিয়েও মিডিয়ার সামনে তেমন কিছুই প্রকাশ করেন নি।
অবশেষে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ তৈরি হয় পোটোকল ও মেট্রো ভিডিওর ব্যানারে। ছবিটির প্রযোজনায় আছেন সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমি চুয়া ও সহ-প্রযোজনায় সেন্সমেকার্স প্রডাকশনের পাশাপাশি আছেন রাজীব মহাজন, আদনান হাবিব ও সাঈদুল হক খন্দকার। নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে আছেন এহসানুল হক বাবু। এছাড়া চিত্রগ্রহণে তুহিন তমিজুল, পোশাক পরিকল্পনায় নাবিলা হক, শিল্প নির্দেশনায় মাসুম মেহেদি এবং সাউন্ড ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন শৈব তালুকদার। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ ছবির আন্তর্জাতিক পরিবেশনার জন্য পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে ইতোমধ্যেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছে জার্মান ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ফিল্মস বুটিক।
রেহানা মরিয়ম নূর নাম ভূমিকায় বাঁধন
রেহানা মরিয়ম নূর ছবির প্রধান চরিত্রে কাজ করেছেন লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার ২০০৬ এর রানার আপ আজমেরি হক বাঁধন। ছোট পর্দায় বেশী নিয়মিত এই অভিনেত্রী ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘নিঝুম অরণ্যে’ (২০১০) নামক একটি মাত্র সিনেমায় কাজ করেছেন। মাঝে মিডিয়া থেকে প্রায় দেড় বছরের একটা বিরতি নিয়ে এই সিনেমায় কাজ শুরু করেন বাঁধন। অতঃপর এ সিনেমায় কাজ করাটা তার ক্যারিয়ারের সব থেকে ভালো সিদ্ধান্ত ছিলো বলে তিনি মনে করেন। সহকর্মী থেকে শুরু করে সাংবাদিক সব মহল থেকেই বাঁধনসহ সব কলাকুশলীরা অভিনন্দিত হয়ে আসছেন তাদের এই অসামান্য অর্জনের জন্য।
আরও পড়ুন: ২০২১ সালের অন্যরকম ৭টি বাংলা থ্রিলার সিনেমা
১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিটের এই সিনেমাটিতে বাঁধন ছাড়াও আরও যারা যারা কাজ করেছেন তারা হলেন সাবেরী আলম, আফিয়া জাহিন জায়মা, আফিয়া তাবাসসুম বর্ণ, কাজী সামি হাসান, ইয়াসির আল হক, জোপারি লুই, ফারজানা বীথি, জাহেদ চৌধুরী মিঠু, খুশিয়ারা খুশবু অনি, অভ্রদিত চৌধুরী প্রমুখ।
কানের আন সার্তেইন রিগার্দ
কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনের চারটি বিভাগের মধ্যে প্রতিযোগিতা বিভাগের পরের বিভাগটিই ‘আন সার্তেইন রিগাদ’। প্রতিযোগিতা বিভাগের পর এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি নিয়ে মৌলিক ও ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্রগুলোর মুলত এ বিভাগে স্থান পেয়ে থাকে। বিশ্বজুড়ে প্রতিভাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের লাইমলাইটে নিয়ে আসার লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে বিভাগটি চালু করা হয়। আন সার্তেইন রিগাদ ফরাসী শব্দ যার অর্থ হলো ‘অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে’। সুতরাং চলচ্চিত্র বিচারের ক্ষেত্রে এখানে চিরাচরিত নিয়মের বাইরের কাজগুলোকে বেশী মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।
প্রতি বছর দক্ষিণ ফ্রান্সের সাগর তীরবর্তী শহর কান-এর পালে দ্যা ফেস্টিভাল ভবনে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত এই ভবনটির স্যালে ডিবাসি প্রেক্ষাগৃহে আন সার্তেইন রিগার্দ বিভাগের ছবিগুলোর প্রদর্শনী হয়ে থাকে।
এ বছর বাংলাদেশ সহ মোট ১৫টি দেশের ১৮টি ছবি নির্বাচিত হয়েছে বিভাগটিতে। গত ৩ জুন প্যারিসের ইউজিসি নর্ম্যান্ডি হলে অন্যান্য সিনেমাগুলোর সাথে ঘোষণা করা হয়েছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর নাম। সেখান থেকেই সরাসরি অনলাইন মাধ্যমগুলোতে সম্প্রচার করা হয়। আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন কান উৎসবের জেনারেল প্রতিনিধি থিয়েরি ফ্রেমো এবং সভাপতি পিয়েরে লেস্কিউর। উৎসবের শেষ দিন ১৭ জুলাই বিচারকদের সভাপতি স্পাইক লি স্বর্ণ পাম বিজয়ী চলচ্চিত্রের নাম ঘোষণা করবেন।
বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মাণে একটি বড় পদক্ষেপ
এর আগে প্রথমবারের মত কান চলচ্চিত্র উৎসবে নাম লেখায় প্রয়াত নির্মাতা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ ছবিটি। ২০০২ সালে ৫৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে নির্বাচিত হয়েছিলো এটি। এছাড়া সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সমালোচক (ফিপ্রেস্কি) পুরষ্কার অর্জন করে।
আর এবারে আন সার্তেইন রিগার্দ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এই অর্জন এখন সিনেমাটির পোস্টারেও সংযুক্ত হবে এবং সর্বসাকুল্যে প্রতিটি প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের মান বহন করবে। সর্বপরি এটাই প্রমাণিত হবে যে, বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ এখন বাংলাদেশেও সম্ভব।
আরও পড়ুন: সন্তানদের অভিভাবকত্ব নিয়ে আবারও আলোচনায় ‘ব্র্যাঞ্জেলিনা’ জুটি
পূর্বে যদিও বেশ কিছু বাংলা সিনেমা ও নির্দেশক কানসহ আরো মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় বাংলা চলচ্চিত্রকে সগর্বে তুলে ধরেছে। কিন্তু বাংলাদেশ জন্ম নেয়ার পর বাংলাদেশি নির্মাতাদের তৈরি বাংলা সিনেমার নাম করা হলে নিঃসন্দেহে উঠে আসবে তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ এবং আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’।
সাদের সিনেমা কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে থাকার খবর পেয়ে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ তাকে অভিনন্দন জানান।
শেষ কথা
আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ নির্মিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ বাংলাদেশে সমসাময়িক একটি অবস্থাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত একটি সিনেমা। সমস্যার জটিলতার পাশাপাশি এর নিরূপণেরও একটি যথোপযুক্ত বার্তা দেয়ার এক সুনিপূণ প্রয়াস। কান চলচ্চিত্র উৎসবে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে এধরনের রূপরেখা নিয়ে আরো কাজ করার উৎসাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। অতঃপর এই বিশাল অর্জন বিশ্বমানের সিনেমা নির্মাণের তাগিদে বাংলাদেশের তারুণ্য নির্ভর পরিশ্রমী দলের প্রয়োজনীয়তা জানান দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ তরুণ নির্মাতাদের আরো বেশী এগিয়ে আসতে হবে চলচ্চিত্র নির্মাণে। তবেই তথাকথিত মুলধারার সিনেমার সীমানা পেরুনো সম্ভব।
৩ বছর আগে