সিআরবি
চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ সিআরবিতে হাসপাতাল হচ্ছে না, আন্দোলন সমাপ্তি ঘোষণা
চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ খ্যাত সিআরবিতে কোন ধরনের হাসপাতাল প্রকল্প হবে না বলে সরকারি আশ্বাসের পর দীর্ঘ ৪৮৩ দিনের আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
তবে সিআরবিকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে জাতীয় উদ্যান করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের নেতারা।
শনিবার (৫ নভেম্বর) বিকালে সিআরবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চট্টগ্রামবাসী।
সমাবেশে নেতারা জানান, সিআরবিতে আর হাসপাতাল প্রকল্প হচ্ছে না। সিআরবি প্রাকৃতিক ও ঐতিহ্যগত সম্পদ হিসেবেই থাকবে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, চট্টগ্রামবাসী ৪৮৩ দিন ধরে আন্দোলন করছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। চট্টগ্রামের যত সংসদ সদস্য আমরা একটা দরখাস্ত লিখলাম রেলমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। সকল এমপি, মন্ত্রী সিআরবিতে হাসপাতাল না করার সেই দরখাস্তে সই করেছেন।
দরখাস্ত নিয়ে আমরা রেলমন্ত্রীর কাছে গেলাম। সঙ্গে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং নওফেলও ছিলেন। সেটা আমরা হস্তান্তর করি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনগণের নেত্রী। মানুষের যে দাবি এখানে হাসপাতাল না করার জন্য, যখন সকল মন্ত্রী এমপি একমত। প্রধানমন্ত্রীও একমত হবেন।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন কথা দিয়েছেন এখানে হাসপাতাল হবে না। সারাদেশসহ বিভিন্ন দেশে যারা চট্টগ্রামের লোক আছে তারা কোনদিন চায় না এখানে হাসপাতাল হোক।
আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীও একমত হবেন। প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ড থেকে জনসভায় নিজে ঘোষণা দিবেন সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না।
বিশেষ অতিথি তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ টেলিফোনে যুক্ত হয়ে বলেন, সিআরবিকে রক্ষা করার জন্য যারা আন্দোলন করেছেন তারা সবাই আছেন। আমরা রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। রেলমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়গুলো অবহিত করার পর তিনি বলেছেন, পরিবেশ প্রকৃতি নষ্ট করে কিছু হবে না। কেউ কেউ ভুলবশত পরিবেশের ক্ষতিকারক প্রকল্প নিয়ে ফেলে। প্রধানমন্ত্রী সবসময় পরিবেশ প্রকৃতির প্রতি আন্তরিক।
নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ড. অনুপম সেন’র সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম এর সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামবাসী না চাইলে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না: রেলপথমন্ত্রী
সিআরবিতে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না: চসিক মেয়র
পদ্মা সেতুর আদলে হবে চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেল সেতু
অবশেষে ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুটি নির্মাণে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।
পদ্মা সেতুর আদলে হবে চট্টগ্রামের কাক্ষিত কালুরঘাট রেল সেতু। পদ্মা সেতুর মত দ্বিতল ডিজাইনে কালুরঘাট সেতুর ওপরে দুই লেনের সড়ক ও নিচে ট্রেন চলাচল উপযোগী করে নকশা প্রণয়ণের কাজ চলছে। রেল সেতুতে ব্রড ও মিটার গেজ ট্রেন চলাচল উপযোগী রেল লাইন বসানো হবে।বুধবার দুপুরে পূর্বাঞ্চলীয় রেলের সদর দপ্তরের (সিআরবি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সেতুর প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে সেতু নির্মাণের স্থান, নকশা, ব্যয় ও নির্মাণকাল নিয়ে প্রাথমিক প্রস্তাবনা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছে দাতা সংস্থা কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক।সভায় জানানো হয়, নতুন ডিজাইনে সেতুটি নির্মাণের জন্য আগের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ব্যয় করতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরেই কালুরঘাট সড়ক কাম রেল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে পারে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুতে জয়-পুতুলের সঙ্গে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাইরালবৈঠক শেষে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কালুরঘাট সেতু নিয়ে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে। আমাদের জানানো হয়েছে, ব্রিজের ওপরের ডেকে থাকবে সড়ক, নিচের ডেকে থাকবে রেললাইন। উভয়ই ডাবল লাইন হবে। রেল ডাবল লাইন হবে, সড়কও ডাবল লাইন। পদ্মা সেতুর আদলে আগামী বছরের শুরুতে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। সেতুটির ৭৮০ মিটারের ওপরে চলবে গাড়ি আর নিচে ট্রেন। দুটিই হবে ডাবল লাইনের। ফলে ট্রেন-গাড়ি একই সময়ে যেতেও পারবে, আসতেও পারবে। প্রাথমিকভাবে ব্রিজের দৈর্ঘ্য আমাদের বলা হয়েছে ৭৮০ মিটার, বায়াডাক্ট ৫ দশমিক ৬২ মিটার। স্প্যান হবে ১০০ মিটার। ব্রিজের উচ্চতা হবে ১২ দশমিক ২ মিটার।’তিনি আরও বলেন, ‘আগামী মাসে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক ফাইনাল ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট জমা দেবে। এরপর টেন্ডার হবে। আমাদের টেন্ডার শেষ করতে প্রায় ছয় থেকে আট মাস সময় লাগবে। তারপর ইডিসিএফ ফান্ড দেবে। ফান্ড দিলে কাজ শুরু হবে। টেন্ডারের পর সেতুটি নির্মাণের প্রায় চার বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের খরচ ছয় হাজার ৩৪১ কোটি টাকার মতো বলা হয়েছে।’প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে কাজ শুরুর সময় থেকে চার বছর। আর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একনেকে অনুমোদন, দরপত্রসহ আনুষাঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে তারা সেতুর কাজ শুরু করতে পারবে। সেক্ষেত্রে সেতুটি নির্মাণ শেষ হতে বর্তমান সময় থেকে পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে।
এ সময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও প্রকল্প পরিচালক গোলাম মোস্তফা, ইউশিন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের কান্ট্রি ম্যানেজার কোণ উক পার্ক, কালুরঘাট রেল কাম সড়ক সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. গোলাম মোস্তফা, ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্টস লিমিটেডের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মো. আনোয়ারুল হক, ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালটেন্টস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মো. রিয়াজুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মাইলফলক: প্রধানমন্ত্রী
যুবলীগ-ছাত্রলীগের ৬৩ নেতাকর্মীর বিচার শুরু
রেলওয়ের টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় যুবলীগ ছাত্রলীগের ৬৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিন চার্জ গঠন করেন। একই সঙ্গে আগামী ২৫ মে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছেন আদালত। এছাড়া চার্জশিটভুক্ত আসামি অমিত মুহুরি মারা যাওয়ায় তাকে বাদ রেখে বাকিদের বিচার শুরুর আদেশ দেয়া হয়েছে। এসময় কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন এজাহারভুক্ত ৫৪ জন আসামি।
চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, সিআরবি এলাকায় চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের মামলায় আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জ গঠন করেছেন আদালত। একইসঙ্গে আদালত আগামী ২৫ মে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছেন।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ: আহত ১
তিনি জানান, অভিযুক্ত ৬৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ অর্থবিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, ছাত্রলীগের বহিস্কৃত নেতা সাইফুল আলম লিমন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ৫৪ জন আসামি। আগামী ২৫ মে থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি সাবেক যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী, সাইফুল আলম লিমন ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুসহ উপস্থিত আসামিদের অভিযোগ পড়ে শোনান। রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পিপিকে মামলার চার্জ গঠনে সহযোগিতা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট কেশব চন্দ্র নাথ, সাব্বির আহমেদ শাকিল ও সাহাব উদ্দিন।
উল্লেখ্য, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৪৮ লাখ টাকা মূল্যের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২০১৩ সালের ২৪ জুন যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর এবং ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল আলম লিমনের অনুসারীদের মধ্যে চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিতে প্রাণ হারান যুবলীগ কর্মী সাজু পালিত (২৮) ও পথচারী শিশু মোহাম্মদ আরমান (৮)।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া নিয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৮
এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানার এসআই মহিবুর রহমান বাদী হয়ে বাবর-লিমনসহ ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এই মামলায় বাবর-লিমন দুজনই গ্রেপ্তার হন। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।
২০১৫ সালের নভেম্বরের ৬২ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। সে সময় আসামি পক্ষের নারাজী আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ আড়াই বছর পর পিবিআই নতুন করে দুজনকে যুক্ত করে ৬৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক চার্জশির্ট দাখিল করে।
স্টেশন পরিদর্শনে এসে দুই কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করলেন রেলমন্ত্রী
চট্টগ্রাম স্টেশন পরিদর্শনে এসে রেলের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।সাময়িক বহিষ্কৃত কর্মকর্তারা হলেন-রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) এম শামস মোহাম্মদ তুষার ও স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী।পরিদর্শনকালে স্টেশনের সামনে অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতা ও অব্যবস্থাপনা দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন রেলমন্ত্রী তাদের বহিস্কারের নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: দেশ এগিয়ে যাচ্ছে: রেলমন্ত্রী
শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টায় পুরাতন রেল স্টেশনস্থ রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের বহুতল ভবন নির্মাণের স্থান পরিদর্শনে আসেন মন্ত্রী। পুরাতন রেল স্টেশন থেকে নতুন স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে স্টেশনের সামনে অপরিস্কার এবং অব্যবস্থাপনা দেখে ক্ষুব্ধ হন তিনি।
পরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের সামনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, দোকানপাট দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। পরিদর্শন শেষে তিনি সিআরবির কনফারেন্স কক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
এসময় সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতার মধ্যেই বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারের নীতি হলো ৩০ শতাংশ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিই) আওতায় উদ্যোগ গ্রহণ করা। সিআরবি প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। এই কমিটি মাঠ পর্যায়ে কাজ শেষের পর এখন অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ আসছে। এ বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। পক্ষ-বিপক্ষে যাই হোক না কেনো, আলোচনা চলছে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়েই অনুমোদন দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর সড়ক ও রেলপথ একসাথে উদ্বোধনে ‘সংশয়’ রেলমন্ত্রীরবাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব জমিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় সিআরবি সংলগ্ন ছয় একর জমিতে নির্মিতব্য প্রকল্পটির নাম রাখা হয়েছে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ স্বাস্থ্যসেবা কমপ্লেক্স।নভেম্বরে দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রেলমন্ত্রী বলেন, আমরা তো জনগণের জন্যই হাসপাতাল করছি। জনগণ বলতে আমরা কি বুঝব সেটা আপেক্ষিক বিষয়। এখানে অনেক মন্ত্রী, এমপিসহ বহু জনপ্রতিনিধিরা আছেন। তারা না চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে যাবেন না। আমাদেরও প্রয়োজন নেই।রেল নিয়ে বিগত সরেকারের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, সরকার নিজে ব্যবসা করে না। সরকারের নীতি হলো যারা ব্যবসা করছেন তাদের সহায়তা করা। যেটা আমাদের উন্নয়নের কাজে আসলো না তাদের আটকে রেখে লাভ নেই। অনেকে রেলের জায়গাও দখল করে বসে আছে।
চট্টগ্রামবাসী না চাইলে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না: রেলপথমন্ত্রী
চট্টগ্রামের মানুষজন না চাইলে সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল হবে না বলে জানিয়েচেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। সোমবার দুপুরে রাজধানীর রেল ভবনে নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রাম’র নেতাদের সাথে মতবিনিময়কালে এ ঘোষণা দেন তিনি।
রেল্পথমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে হাসপাতাল করতে হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ থেকে নকশা অনুমোদন করতে হবে। সিডিএ যদি নকশা না দেয় সেখানে হাসপাতাল হবে কী করে? আর অন্যান্য সংস্থার অনুমোদনে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও সেখানে কোনো কিছু করা সম্ভব না। সবচেয়ে বড় কথা চট্টগ্রামবাসী না চাইলেও সেখানে হাসপাতাল প্রকল্প হবে না।’
নুরুল ইসলাম বলেন, সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প রেল মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেনি। এটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পিপিপি অথরিটির প্রকল্প। বিনিয়োগও বেসরকারি। সুতরাং রেল মন্ত্রণালয়ের এখানে করার কিছু নেই। নাগরিক সমাজের দেয়া যাবতীয় তথ্য উপাত্ত আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবো। তিনিই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে আমার অভিমত হচ্ছে, আইন ও চট্টগ্রামবাসীর সেন্টিমেন্টের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। আমরা যা কিছু করছি জনগণের কল্যাণে। জনগণের কল্যাণে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করে।
রেলপথমন্ত্রী বলেন,এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের। জলবায়ু সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মতবিনিময়কালে মন্ত্রীর কাছে প্রকল্পের যাবতীয় অসঙ্গতি তুলে ধরে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেন নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম’র সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।
এ সময় তিনি মন্ত্রীকে বলেন, সিআরবি হচ্ছে ২০০৯ সালের গেজেট অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অনুমোদিত সরকার ঘোষিত হেরিটেজ জোন। এখানে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারে না। আইনত তা নিষিদ্ধ। তাছাড়া এটি চট্টগ্রামের ফুসফুস এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু।
ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল আরও বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) জিএস শহীদ আবদুর রব, শহীদ মনোয়ার, শহীদ শেখ নজিরসহ ৯ শহীদের কবর এই সিআরবিতে। এখানে কোনো স্থাপনা হলে শহীদের কবর ধ্বংস হবে।
তিনি বলেন, আমরা হাসপাতালের বিপক্ষে নই। হাসপাতাল চাই। তবে সিআরবিতে নয়। সিআরবি ছাড়া অন্যত্র হাসপাতাল হলে আমরা স্বাগত জানাবো।
মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রাম’র কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস, আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, জাসদ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাবুল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাজান চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন, নাগরিক সমাজ-চট্টগ্রাম’র যুগ্ম সদস্য সচিব ও বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, চট্টগ্রাম বিভাগ সাংবাদিক ফোরামের মহাসচিব শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী, আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান, প্রণব চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রাশেদুল ইসলাম ও অনির্বাণ দত্ত । এছাড়া অ্যাডভোকেট মাসুদুল আলম চৌধুরী, ব্যারিস্টার হেলাল উদ্দিন ও ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদও উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: সিআরবিতে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না: চসিক মেয়র
চট্টগ্রামে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা
সিআরবির পরিবেশ ক্ষতি করে হাসপাতাল নির্মাণের চেষ্টা: ৮ সংস্থাকে আইনি নোটিশ
সিআরবিতে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না: চসিক মেয়র
শুধু হাসপাতাল নয়, সিআরবিতে কোনভাবেই কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সিআরবি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য স্মারক। এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও বৈভব হানি করে হাসপাতাল তো নয়, ইট-পাথরের কোন স্থাপনা গড়ে তুলতে দেয়া হবে না।মঙ্গলবার বিকেলে সিআরবি রক্ষায় আন্দোলনকারী সংগঠন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে চসিক মেয়র এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুনঃ চট্টগ্রামে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলাসিআরবি রক্ষার আন্দোলনে নিজের একাত্মতা ও সম্পৃক্ততা অঙ্গিকার করে মেয়র বলেন, সিআরবি রক্ষায় যা যা করণীয়, আমি তা করবো।সভায় মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর যেখানেই মুক্তিযুদ্ধ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্মৃতিময় স্থান রয়েছে সেগুলো যথাযথ সংরক্ষণ করে সেখানে ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ তাৎপর্য সৌধ স্মারক স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, সিআবিতে হাসপাতাল নির্মাণ অশুভ অপতৎপরতারই অংশ।
রেজাউল করিম বলেন, আমরা হাসপাতাল চাই। তবে সিআবিতে কোনভাবেই নয়। হাসপাতালের জন্য সিআরবি ছাড়া আরও অনেক বড় পরিসরের স্থান রয়েছে। চসিকেরও আছে। চাইলে আমরা হাসপাতালের জায়গা দেবো। কিন্তু তার আগেই আমরা নিশ্চয়তা চাই সিআবি-তে কোন হাসপাতাল নয়। তবে এটাও ঠিক হাসপাতাল হতে হবে সাধারণ মানুষের সেবার জন্য, বিত্তবানদের জন্য নয়।
আরও পড়ুনঃ সিআরবির পরিবেশ ক্ষতি করে হাসপাতাল নির্মাণের চেষ্টা: ৮ সংস্থাকে আইনি নোটিশতিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ ও মাষ্টারপ্ল্যানে সিআরবিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে কোন স্থাপনা নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। হেরিটেজ সিআরবি’তে ড্যাপ’র সুপারিশ অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে।
মেয়র বলেন, রেলওয়ের অনেক জায়গা রয়েছে, সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ করা যায়। যদি রেলওয়ে জায়গা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে সিটি করপোরেশন জায়গা দিতে প্রস্তুত আছে বলেও জানান মেয়র।সভায় উপস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আক্তার সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে তিনি নিজে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে একাত্মতা প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শহীদ চাকসু’র তৎকালীন নির্বাচিত জিএস সাবেক ছাত্রনেতা আবদুর রব’র কথা স্মরণ করে চবি উপাচার্য বলেন, শহীদ আবদুর রবসহ মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্যা শহীদের কবর সিআরবিতে রক্ষিত রয়েছে। এই কবরের ওপর কোন বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা শহীদদের প্রতি অবমাননার শামিল। সিআরবিতে কোন স্থাপনা নির্মাণ করতে আমরা দেব না।
নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের কো চেয়ারম্যান ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব প্রবীণ আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, কো-চেয়ারম্যান রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, যুগ্ম সদস্যসচিব রাশেদ হাসান, কার্যকরী সদস্য সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, স্বপন মজুমদার, সাংবাদিক আসিফ সিরাজ, সংস্কৃতিকর্মী অহিল সিরাজ, আবৃত্তিকার প্রনব চৌধুরী, ন্যাপ নেতা মিঠুল দাশগুপ্ত, শ্রমিক নেতা মো. সাইফুল, সাংবাদিক প্রীতম দাশ প্রমুখ।
চট্টগ্রামে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা
চট্টগ্রামের সিআরবিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে হাসপাতাল নিমার্ণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা করেছে এক আইনজীবী। মামলাটিতে ১৬ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু চট্টগ্রাম সহকারী জজ ১ম আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিলেও কোনও নির্দেশ দেননি বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুনঃ সিআরবির পরিবেশ ক্ষতি করে হাসপাতাল নির্মাণের চেষ্টা: ৮ সংস্থাকে আইনি নোটিশমামলার বাদী অ্যাডভোকেট সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, ‘পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক লীলাভূমি ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ কোনও ভাবেই কাম্য নয়। তাই হাসপাতাল নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা করেছি। আর বিতর্কিত স্থাপনা নিমার্ণে কেউ যাতে সহযোগিতা করতে না পারে সেজন্য ১৬ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।‘
আরও পড়ুনঃ পরিবেশদ রক্ষায় সবাইকে গাছ লাগানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীরমামলার বিবাদীরা হলেন, মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সিএমপি পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের সচিব, চট্টগ্রাম ওয়াসার সচিব, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চট্টগ্রাম উপ-পরিচালক, বিস্ফোরক দ্রব্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম উপ-পরিচালক, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চট্টগ্রাম সচিব, রেলওয়ে পূবার্ঞ্চলের মহা ব্যবস্থাপক, রেলওয়ে পূবার্ঞ্চলের এস্টেট অফিসার, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ রক্ষার দাবি পরিবেশবাদীদের
চট্টগ্রামের `ফুসফুস' খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বৃক্ষরোপণ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম, ক্যাব যুব গ্রুপ, লায়ন্স ক্লাব অব প্রগ্রেসিভ ওয়েস্টসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। শনিবার নগরীর সিআরবির সাত রাস্তা মোড়ে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে পরিবেশবাদীরা বলেন, সিআরবি চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক অক্সিজেন কারখানা। নগরীর ঐতিহাসিক স্থান, ঐতিহ্য, প্রতিবেশ, বন, পাহাড় ধ্বংস করে শুধু হাসপাতালই নয়, কোনো ধরনের স্থাপনাই করা উচিত নয়। হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও বিভিন্ন শিল্পের নামে পাহাড়, রেলওয়ের ভূমি দখলে ব্যবসায়ীদের ষডযন্ত্র বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের ফুসফুস ও বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার স্থানটিকে ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে অবিলম্বে এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহবান জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।
আরও পড়ুন: পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা: মেয়র আতিক
বক্তারা আরও বলেন, চট্টগ্রামে হাজার বছরের গাছগাছালিতে আচ্ছাদিত নয়নাভিরাম এই উন্মুক্ত প্রাকৃতিক পরিসরটি নগরীর লাখ লাখ মানুষকে সতেজ শ্বাস নিতে সহায়তা করছে। যার কারণে সংস্কৃতি অঙ্গন ও বিনোদনের অন্যতম তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে এই সিআরবি। যা চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সংগে মিশে আছে। হাসপাতাল করতে হলে বন্দর হাসপাতাল, টিভি হাসপাতাল, হাজী ক্যাম্প ও রেলওয়ের অনেক অবৈধ দখলী ভূমিতে করা যায়।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের শিল্প স্থাপনের নামে প্রতিনিয়তই বিপুল পরিমাণ সরকারি ভূমি, পাহাড়, স্থাপনা নামমাত্র মূল্যে বরাদ্দ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে পাহাড়, টিলা ও মানুষের শ্বাস নেয়ার স্থানটুকুও বাদ যাচ্ছে না। সিআরবি চট্টগ্রামের কার্বন শোষণের প্রাকৃতিক কারখানা। হাসপাতাল করার জন্য চট্টগ্রামে অনেক জায়গা থাকলেও শতবর্ষী গাছ, পাখির কোলাহল, বসার জায়গা, হাঁটাহাঁটির পথ, প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে কংক্রিটের ভারী স্থাপনা নির্মাণের অনুমোদন খুবই দুঃখজনক। আর প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল কেন শহরের মাঝখানে স্থাপন করতে হবে, তা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে তারা মতপ্রকাশ করেন। পরে নেতারা হাসপাতালের প্রস্তাবিত স্থানে বৃক্ষরোপণ করেন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার মানবিক সহায়তা সারা বিশ্বে এক অনন্য নজির: কৃষিমন্ত্রী
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়েছেন ক্যাব চট্টগ্রামের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট পরিবেশ গবেষক ড. ইদ্রিস আলী, ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, লায়ন্স ক্লাব অব প্রগ্রেসিভ ওয়েস্ট এর সভাপতি অধ্যাপিকা ববি বড়ুয়া, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ক্যাব কর্নেলহাট থানা সভাপতি ডা. মাসবাহ উদ্দীন তুহিন, সাধারণ সম্পাদক দিদার প্রদান, ক্যাব পাচলাইশের সাধারণ সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব চান্দগাঁও সভাপতি মো. জানে আলম, ক্যাব হালিশহর সভাপতি এমদাদুল করিম সৈকত, ক্যাব বন্দর-পতেঙ্গার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আলী, ক্যাব জামালখানের সাধারণ সম্পাদক নবুয়াত আরা সিদ্দীকি, ক্যাব চকবাজারের হেলাল চৌধুরী, ক্যাব নেতা সেলিম সাজ্জাদ, শাহীন শিরিন প্রমুখ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ মডার্নার আরও ৩০ লাখ টিকা পাবে: মার্কিন রাষ্ট্রদূত
সিআরবির পরিবেশ ক্ষতি করে হাসপাতাল নির্মাণের চেষ্টা: ৮ সংস্থাকে আইনি নোটিশ
চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র সিআরবিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ইউনাইটেড গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও ১০০ শয্যার মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সরকারের ৮ সংস্থাকে লিগ্যাল নোটিশ পঠিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)।
নোটিশে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রামে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে বিবাদী করা হয়। বিবাদীদের আগামী ৭ দিনের মধ্যে পরিবেশ বিনষ্টকারী এই প্রকল্পের স্থান অন্যকোন যৌক্তিক জায়গায় সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিএইচআরএফ পরিচালক, ট্রাস্টি ও চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এডভোকেট এএম জিয়া হাবিব আহসানের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ (বুধবার) ডাক ও ইমেইলযোগে এই নোটিশ জারি করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম।
আরও পড়ুন: কল-কারখানাগুলোতে কাজের নিরাপদ পরিবেশ নেই: বিএনপি
নোটিশে প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে বিএইচআরএফ’র পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপযুক্ত আদালতে মামলা কিংবা উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করার ঘোষণাও দেয়া হয় নোটিশে।
উল্লেখ্য, সিডিএ প্রণীত তালিকা অনুসারে ঐতিহাসিক, নান্দনিক ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় সিআরবির মতো জায়গা ও স্থাপনাসমূহকে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। যা সিডিএর ওয়েবসাইটেও দেয়া।
বিএইচআরএফ পরিচালক, ট্রাস্টি ও চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এডভোকেট এএম জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট ও গাছ নিধন করে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে, সংবিধানের ১৮-ক ও ২৪ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে। যেখানে পরিবেশ ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় স্থানসমূহকে সংরক্ষণের কথা স্পষ্ট বলা আছে।
ছায়াদানকারী শতবর্ষী গাছ, বিভিন্ন প্রজাতির সবুজ বৃক্ষ ও পাখির বিচরণ ক্ষেত্র মিলিয়ে প্রকৃতির এক দারুণ মায়াজাল সিআরবি। সেইসাথে শহরের সবথেকে সুন্দর জায়গা, ঐতিহাসিক স্থাপনা রেলওয়ে বিল্ডিং, শিশু-কিশোর থেকে প্রবীণদের আড্ডা ও খেলাধুলা এবং পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে নগরীর প্রধানতম স্থান এই সিআরবি।
যেখানে হাসপাতাল নির্মিত হলে সেই হাসপাতালকে ঘিরে মানুষ ও যানবাহনের অবাদ চলাচল এবং বর্জ্য নিঃসরণসহ নানা কারণে হুমকির মুখে পড়বে সিআরবি সৌন্দর্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য।
নোটিশ উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবাদীদের নজরে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন,নোটিশের মেয়াদকালে সমস্যার সমাধান না হলে বিএইচআরএফ মহামান্য উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করতে বাধ্য হবেন।
পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে গাছ লাগানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর