সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাধ করে থাকলে তাকে প্রত্যর্পণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
'দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড ইভেন্ট'-এ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেন হবে না? তিনি যদি অপরাধ করে থাকেন তাহলে তাকে প্রত্যর্পণ করে বিচারের আওতায় আনা উচিত। তাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ টেনে আইনবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সম্প্রতি বলেছেন, ভারতের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় কোনো দণ্ডিত ব্যক্তির বিচার শুরু হলে বাংলাদেশ অবশ্যই তার প্রত্যর্পণ চাইবে।
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, কোনো দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি ভারতে থেকে গেলে আমরা তার প্রত্যর্পণ চাইতে পারি। আমরা শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আপনাদের জানাব।’
গত ৫ আগস্ট দেশ ত্যাগ করা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তদন্ত ও প্রসিকিউশন টিম গঠনসহ কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতি রয়েছে।
নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউনূস বলেন, 'কোনোভাবেই নয়, এটা আমার জন্য নয়।’
তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো পরিকল্পনা তার নেই। ‘যারা নির্বাচনে অংশ নেয়, আমাকে কি তাদের মতো মনে হচ্ছে?’
'গণপিটুনি' বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিদেশের মানুষ অতিরঞ্জিত সংবাদ পাচ্ছে এবং তাদের নিজের চোখে দেখে রিপোর্ট করার জন্য সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানান।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, যেহেতু সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাই বেশি দেরি করা ঠিক হবে না।
সংস্কার অর্জনের জন্য গঠিত কমিশনগুলো হলো- বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, সরফরাজ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন, টিআইবির ড. ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন কমিশন, আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এবং ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
এই কমিশনগুলো ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে এবং তারা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।
'তুমিই কারণ, আমরা ভোগান্তির শিকার।’
ইউনূস আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সীমিত করার বৈশ্বিক প্যারিস চুক্তি ততদিন কাজ করবে না, যতদিন বিশ্ব বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে টিকে থাকবে।
তিনি বলেন, এই ব্যবস্থা সর্বাধিক মুনাফা অর্জন, একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য সম্পদ তৈরি এবং ব্যাপক বর্জ্য সৃষ্টির উপর কেন্দ্রীভূত।
মানুষ 'আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা' তৈরি করেছে উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, 'আমরা যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি তা এই গ্রহের ধ্বংসের চাবিকাঠি।’
নিউইয়র্ক টাইমস ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড সামিটে ইউনূস বলেন, চুক্তিতে যত পরিবর্তনই আনা হোক না কেন, এটি কোনো পার্থক্য আনবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বের অন্তর্নিহিত ব্যবস্থাগুলো নতুন করে সাজানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভারত বন্ধুত্ব চায় শুধু স্বৈরশাসক হাসিনার সঙ্গে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়: রিজভী
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ধনী দেশের কারণে জলবায়ুর ক্ষতির বোঝা বহন করতে হবে না।
তিনি বলেন, ‘আপনি আমাদের উপর যে সমস্ত ধ্বংসযজ্ঞ চাপিয়ে দিয়েছেন, তার বোঝা আমরা কেন বহন করব? আপনারই কারণ, আমরা ভুক্তভোগী।’
তিনি আরও বলেন, কম বর্জ্য উৎপাদনের পাশাপাশি তাদের জীবাশ্ম জ্বালানি কমানোর দায়িত্বও পালন করা উচিত।
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের সম্মুখীন একটি দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন ইউনূস।
তার মতো দেশগুলোর কাছে ধনী দেশগুলোর কী পাওনা জানতে চাইলে ইউনূস বলেন, জলবায়ু মোকাবিলায় বৈশ্বিক কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন, যার লক্ষ্য নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণ এবং চরম সম্পদ বৈষম্য দূরীকরণ।
নিউইয়র্ক টাইমস বুধবার উদ্ভাবক, কর্মী, বিজ্ঞানী এবং নীতিনির্ধারকদের একত্রিত করে লাইভ জার্নালিজমের সারাদিনের ইভেন্টে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো পরীক্ষা করে।
ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড নামে এই অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তনকে ঘিরে রাজনৈতিক ও নীতিগত চ্যালেঞ্জ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন বক্তারা।
এতে জেন গুডাল, মুহাম্মদ ইউনূস ও আর জে স্কারিংসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমস্যার মধ্য দিয়ে কাজ করা এবং দ্রুত উষ্ণ হওয়া গ্রহের হুমকি সম্পর্কে কঠিন প্রশ্নের উত্তরের জন্য মত বিনিময় করেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখবে: অধ্যাপক ইউনূস