বৈশ্বিক শান্তি
বাংলাদেশ বৈশ্বিক শান্তি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধানমন্ত্রী
যে কোনো সংঘাত বা সংকট বিশ্বের প্রতিটি জাতিকে প্রভাবিত করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে নিরাপত্তার গতিশীলতা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং দিন দিন জটিল হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এটি দেশগুলোর নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীল উন্নয়নকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধা দেয়।’
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ৪৬তম ইন্দো-প্যাসিফিক আর্মিস ম্যানেজমেন্ট সেমিনার (আইপিএএমএস)-২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথ আয়োজনে সেমনিারে ইউএস আর্মি প্যাসিফিক কমান্ডারসহ ২৭টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশকে কীভাবে প্রভাবিত করছে তা প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিজেদের দুর্দশা ছাড়াও তাদের দীর্ঘদিনের উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা বিশ্বের প্রায় সব দেশের প্রধান নীতিগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী সহযোগিতার দিকে নিয়ে গেছে। এটি যোগাযোগ, সংলাপ এবং শীর্ষ বৈঠকের বেসামরিক এবং সামরিক কূটনৈতিক চ্যানেলের পথও প্রশস্ত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আইপিএএমএস একটি অনুরূপ বহুজাতিক প্ল্যাটফর্ম যা বন্ধুত্ব এবং উষ্ণতার অনুভূতি তৈরি করতে পারে যাতে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করে।
পড়ুন: রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইপিএএমএস সব সময় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বন্ধুত্ব, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
‘আমি মনে করি, এই ফোরামের মাধ্যমে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া বাস্তবসম্মত বহু-পার্শ্বিক সমাধানে পৌঁছানোর জন্য সাধারণ স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে সহায়তা করবে’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো দেশের সেনাবাহিনী সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার অন্যতম উপাদান।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সময়ের সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি সহায়তা কার্যক্রমে অবদানের জন্য বাংলাদেশ আজ বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ মিশনে এবং বিশ্বের যে কোনো স্থানে দেশ ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা যে বাংলাদেশ সর্বদা বৈশ্বিক শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
পড়ুন: চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুবকদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
‘আমাদের সামরিক বাহিনী জাতিসংঘের অধীনে বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। আমরা এটা বজায় রাখতে চাই’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাফল্যের জন্য একটি ‘ডেবেলপমেন্ট মিরকাল’ হিসাবে স্বীকৃত। বিশেষ করে দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লিঙ্গ সমতা, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু শান্তির সুবিধায় বিশ্বাসী এবং জনগণের শক্তির ওপর নজর দিয়েছে, তাই অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় আমাদের বৈদেশিক নীতি থেকে শক্তি নিয়ে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশের’ স্বপ্ন দেখেছিলেন।
তিনি বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর: যৌথ সম্মতিতে যেসব সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ-ভারত
২ বছর আগে
মহামারিতে বৈশ্বিক শান্তি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে: প্রধানমন্ত্রী
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, 'করোনাভাইরাসের মতো অদৃশ্য শত্রুর আবির্ভাবের সাথে সাথে প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং সময়ের অগ্রগতির ফলে নতুন ধরনের হুমকির উপাদানের উদ্ভূত হয়েছে।'
আরও পড়ুন: দেশের উন্নয়নের জন্য আরও জ্বালানি প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী
সোমবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ‘শান্তির অগ্রসেনা-২০২১’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুশীলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আয়োজিত একটি বহুজাতিক অনুশীলন বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস, ঘাটাইল, টাঙ্গাইলে ৪-১২ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতের সেনা সদস্যদের পাশাপাশি ভুটান ও শ্রীলঙ্কার সেনা সদস্যরাও এই অনুশীলনে অংশ নিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। 'তাই, শান্তিরক্ষীদের মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।'
তিনি উল্লেখ করেছেন, এ পর্যন্ত ১৫৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মারা গিয়েছেন এবং ২৩৭জন আহত হয়েছেন। 'জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আসন্ন সংকট মোকাবেলার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করার সময় এসেছে।'
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে ‘শান্তির অগ্রসেনা অনুশীলন’-এ উপস্থাপন করা হয়েছিল যেন ভবিষ্যতের শান্তিরক্ষীরা এ জাতীয় পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষভাবে প্রশিক্ষিত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো দেশের জাতীয় ঐক্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী অপরিহার্য। 'একইভাবে, সামরিক সদস্যদের ক্ষমতা প্রমাণ করার ক্ষেত্রে নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই।'
আরও পড়ুন: তরুণদের শক্তি ও সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রীর জোর
২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময়ে ফিরে তাকিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার 'ফোর্সেস গোল-২০৩০' শীর্ষক একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং একটি উচ্চতর পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্য নিয়ে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার (বিপিসি)’ প্রতিষ্ঠা করেছে। গত ১২ বছরে তিনটি বাহিনীর আধুনিকায়নে এর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে।
'আমরা আমাদের সেনাবাহিনীতে পরিশীলিত অস্ত্র এবং প্রযুক্তি যুক্ত করেছি। আমরা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে 'জিরো-টলারেন্স নীতি' গ্রহণ করেছি,' তিনি বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ জন নারীসহ ১ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী পাঁচটি মহাদেশের ৪০ টি দেশে ৫৪ টি মিশনে অংশ নিয়েছেন। যেখানে ১০টি শান্তিরক্ষা মিশনে ৭ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী সেনা ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
'আমাদের শান্তিরক্ষীরা প্রতিটি মিশনে জাতিসংঘের পতাকা উঁচু করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করেছে। সে কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে,' তিনি বলেন।
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে: জেনারেল আজিজ
আর্থসামাজিক বিকাশের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারি চলাকালীন সময়েও যখন বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল, সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করেছে, দেশকে জিডিপিতে ৫.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম করেছে। 'সেই সাথে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছি।'
অনুষ্ঠানে আগত ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নারভানে বক্তব্য রাখেন এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ স্বাগত ও ধন্যবাদ বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে, সেনাবাহিনী প্রধান অনুশীলনে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন।
৩ বছর আগে
বাংলাদেশ বৈশ্বিক শান্তি চায়: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় এক কোটি ২২ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করছেন উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বৃহস্পতিবার বলেছেন যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতা দেখতে চায়।
৪ বছর আগে