কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, 'করোনাভাইরাসের মতো অদৃশ্য শত্রুর আবির্ভাবের সাথে সাথে প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং সময়ের অগ্রগতির ফলে নতুন ধরনের হুমকির উপাদানের উদ্ভূত হয়েছে।'
আরও পড়ুন: দেশের উন্নয়নের জন্য আরও জ্বালানি প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী
সোমবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ‘শান্তির অগ্রসেনা-২০২১’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুশীলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আয়োজিত একটি বহুজাতিক অনুশীলন বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস, ঘাটাইল, টাঙ্গাইলে ৪-১২ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতের সেনা সদস্যদের পাশাপাশি ভুটান ও শ্রীলঙ্কার সেনা সদস্যরাও এই অনুশীলনে অংশ নিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। 'তাই, শান্তিরক্ষীদের মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।'
তিনি উল্লেখ করেছেন, এ পর্যন্ত ১৫৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মারা গিয়েছেন এবং ২৩৭জন আহত হয়েছেন। 'জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আসন্ন সংকট মোকাবেলার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করার সময় এসেছে।'
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে ‘শান্তির অগ্রসেনা অনুশীলন’-এ উপস্থাপন করা হয়েছিল যেন ভবিষ্যতের শান্তিরক্ষীরা এ জাতীয় পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষভাবে প্রশিক্ষিত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো দেশের জাতীয় ঐক্য ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যথাযথ প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী অপরিহার্য। 'একইভাবে, সামরিক সদস্যদের ক্ষমতা প্রমাণ করার ক্ষেত্রে নিয়মিত অনুশীলনের বিকল্প নেই।'
আরও পড়ুন: তরুণদের শক্তি ও সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রীর জোর
২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের সময়ে ফিরে তাকিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার 'ফোর্সেস গোল-২০৩০' শীর্ষক একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং একটি উচ্চতর পেশাদার ও প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্য নিয়ে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার (বিপিসি)’ প্রতিষ্ঠা করেছে। গত ১২ বছরে তিনটি বাহিনীর আধুনিকায়নে এর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে।
'আমরা আমাদের সেনাবাহিনীতে পরিশীলিত অস্ত্র এবং প্রযুক্তি যুক্ত করেছি। আমরা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে 'জিরো-টলারেন্স নীতি' গ্রহণ করেছি,' তিনি বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮০০ জন নারীসহ ১ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী পাঁচটি মহাদেশের ৪০ টি দেশে ৫৪ টি মিশনে অংশ নিয়েছেন। যেখানে ১০টি শান্তিরক্ষা মিশনে ৭ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী সেনা ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
'আমাদের শান্তিরক্ষীরা প্রতিটি মিশনে জাতিসংঘের পতাকা উঁচু করার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করেছে। সে কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে,' তিনি বলেন।
আরও পড়ুন: সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে: জেনারেল আজিজ
আর্থসামাজিক বিকাশের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারি চলাকালীন সময়েও যখন বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল, সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করেছে, দেশকে জিডিপিতে ৫.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম করেছে। 'সেই সাথে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছি।'
অনুষ্ঠানে আগত ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নারভানে বক্তব্য রাখেন এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ স্বাগত ও ধন্যবাদ বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে, সেনাবাহিনী প্রধান অনুশীলনে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন।