পানিসম্পদ
সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সুনামগঞ্জ জেলার হাওর (জলাভূমি) এলাকায় ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
সাধারণত আগাম বন্যা ও ভাঙন থেকে ফসল রক্ষার জন্য শস্য সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। হাওর বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত জলাভূমি বাস্তুসংস্থান। অসংখ্য হাওরের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা বিখ্যাত।
পানিসম্পদ, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সম্প্রতি হাওর পরিদর্শনে এসে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত ফসলরক্ষা বাঁধের প্রকল্প গ্রহণ না করার স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াও বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নিয়োজিত উপজেলা কমিটিকেও অতিরিক্ত, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এসব নির্দেশনার পরও সংশ্লিষ্টরা তা মানছেন না। বেড়েই চলছে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের তালিকা। চূড়ান্ত প্রকল্পগুলো উন্মুক্ত না করে গোপন রাখা হয়েছে এমন অভিযোগও উঠেছে।
প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টরা ৬০০ প্রকল্প নেওয়া হবে বললেও গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭৫টি। এই সংখ্যা ৭০০’র ঘরে পৌঁছে যাবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এবার হাওরের অস্থায়ী ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে সরকারের কাছে ১২৫ কোটি টাকা প্রাথমিক বরাদ্দ চেয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতি বছর হাওরের বরাদ্দে নেতাকর্মীদের বাড়ির সড়ক, স্থায়ী সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয়, অতিরিক্ত প্রকল্পও গ্রহণ করা হয় বলে হাওরবাসীর অভিযোগ আছে।
আরও পড়ুন: হাওরে ইজারা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপজেলায় কর্মরত এসও (সাবস্টেশন অফিসার) বাইরের জেলা থেকে মওসুমে বাঁধের প্রাক্কলন করতে আসা সার্ভেয়ারদের দিয়ে অক্ষত, অল্প ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পেও সমান বরাদ্দের বাজেট করে নেন। এবারও একই কারণে বাঁধের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এতে সরকারি অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি অপরিকল্পিত ও অতিরিক্ত বাঁধ হাওরের স্বাভাবিক প্রকৃতিরও ক্ষতি করবে বলে বিভিন্ন ফোরামে দাবি জানিয়ে আসছেন হাওর আন্দোলনের নেতারা।
গত সপ্তাহে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছিলেন চলতি মওসুমে ৬শ’র অধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না। গত ২৬ নভেম্বর হাওর পরিদর্শনে আসেন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি ওইদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন পরিবেশের ক্ষতি করে এমন কোনো অতিরিক্ত প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। গত ৫ ডিসেম্বর ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া শাল্লা উপজেলায় গিয়েও হাওরের বাঁধে প্রয়োজনের চেয়ে এবার কম টাকা লাগবে বলে মন্তব্য করে প্রচ্ছন্নভাবে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ না করার নির্দেশনা দেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে যারা জড়িত তাদেরকেও তিনি এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দিয়ে আসেন।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৭৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই সংখ্যা সাতশর ঘরে গিয়ে পৌঁছাবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। গত বছর জেলায় ৭৩৪টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যার প্রায় শতাধিক অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত বলে সংবাদ সম্মেলন, সমাবেশ ও স্মারকলিপি দিয়ে প্রতিবাদ করেছিল হাওর বাঁচাও আন্দোলন। তারা অতিরিক্ত এই প্রকল্পের
পাশাপাশি অল্প ক্ষতিগ্রস্ত, অক্ষত প্রকল্পেও সমান বরাদ্দ দিয়ে সরকারি অর্থ হাতানোর পাঁয়তারা করা হয় এমন অভিযোগ করেছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, চলতি মওসুমে ৫৩টি হাওরের ৫৩৪ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ সংস্কার ও মেরামতে ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫৩টি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ পুনঃনির্মাণ, সংস্কার ও মেরামত করতে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) কাজ করবে। এবার ১০৫টি ক্লোজারেও (বড় ভাঙ্গন) কাজ করা হবে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২৮ ডিসেম্বর কাজ শেষ করার কথা।
হাওর আন্দোলনের নেতারা জানান, প্রতি বছর প্রকল্প বাড়িয়ে সরকারি বরাদ্দ লোপাটের ধান্দায় থাকা সিন্ডিকেট এবারো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রকল্প বাগিয়ে নিতে তৎপর হয়ে ওঠেছে। তারা নানাভাবে তদবির করে ইতোমধ্যে সফলকামও হয়েছে। শাল্লা, দিরাই, তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলায় প্রকাশ্যে এই তৎপরতা শুরু হয়েছে।
হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সদস্য ও এবি পার্টির জেলা কমিটির আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতি বছরই হাওরের বরাদ্দ লোপাট করতে নানা ফন্দিফিকির করা হয়। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের সঙ্গে অল্প ক্ষতিগ্রস্ত ও অক্ষত প্রকল্পেও সমান বরাদ্দ দিয়ে নকশা করেন সার্ভেয়াররা(ভূমি জরিপকারী)। পিআইসি সিন্ডিকেটের লোকজন ঘুষ দিয়ে এসব প্রকল্প নিয়ে ব্যবসা করে। এবার সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সচেতন থেকে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প না বাড়ানোর নির্দেশনা দিলেও সেটি মানা হচ্ছেনা। ঘোড়ার মতো লাফিয়ে বাড়ছে প্রকল্প সংখ্যা। পিআইসি’র সেই সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে ওঠেছে এবারও।
শাল্লা উপজেলা কৃষকদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হোসেন বলেন, যে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছে কাজ শুরুর আগে এবং ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার আগে উন্মুক্ত করা হোক। তাহলে স্বচ্ছতা আসবে। নাহলে গোপন রেখে অনুমোদন দেওয়া হলে দুর্নীতি ও অনিয়ম থাকবেই। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোতে আগের সিন্ডিকেট তাদের স্বজনদের নামে গ্রহণ করাচ্ছে এসব জানতে পারছি আমরা।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চিঠি দিয়ে হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধের অনিয়ম না করার অনুরোধ জানিয়েছি। নীতিমালার আলোকে গণশুনানি করে পিআইসি গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৃষকদের মতামত নিয়ে প্রকল্প তালিকা উন্মুক্ত করতে হবে। বাঁধের সিদ্ধান্ত নেবেন কৃষকরাই। এভাবে করা হলে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের সুযোগ থাকবেনা। সরকারি অর্থও অপচয় হবেনা এবং প্রকৃতিরও ক্ষতি হবেনা। এবার বাঁধ নির্মাণকাজে অনিয়ম হলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, আমরা খুব সাবধানে এবার প্রকল্প গ্রহণ করছি। কোনো অনিয়ম যাতে না হয় স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। এ পর্যন্ত ৬৭৫টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। আরও কিছু বাড়তে পারে।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমরা শুরু থেকেই পিআইসি গঠন অনিয়মমুক্ত করার চেষ্টা করছি। যে মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে তাদেরকে ১২টি উপজেলায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তারা ঘুরে এসে আমাদের প্রতিবেদন দেবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।
আরও পড়ুন: কাদের দাপটে হাওরের দেশীয় প্রজাতির ধান হারিয়ে যাচ্ছে জানালেন কৃষকেরা
৫ দিন আগে
নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার
নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার।
রবিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) নাজমুল আহসানকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জুনের শেষ সপ্তাহে পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হবে: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
২২ ফেব্রুয়ারির পর বিধিনিষেধ বাড়বে না: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ
২ বছর আগে
সিরাজগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলের ভাঙন ঠেকাতে ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানিয়েছেন, যমুনার ভাঙন থেকে চৌহালী উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলকে রক্ষায় ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের শেষে ওই প্রকল্পের আওতায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) বিকেলে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন কালে তিনি এসব কথা জানান।
তিনি বলেছেন, সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের ৫’শ মিটার যমুনার ভাঙ্গন কবলিত এলাকাকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভাঙন থেকে রক্ষা করা হবে।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে নদী ভাঙনের কবলে কয়েক গ্রামের বাসিন্দা
তিনি আরও বলেন, নদীর নাব্যতা ফেরাতে ও ভাঙন ঠেকাতে সরকার জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। যমুনার ভাঙ্গন থেকে চৌহালী উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলকে রক্ষায় ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমের শেষে ওই প্রকল্পের আওতায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। পাশাপাশি যমুনার চর এলাকাকেও স্থায়ী বাঁধের আওতায় আনার পরিকল্পনার কথাও জানান প্রতিমন্ত্রী।
এর আগে তিনি চৌহালী উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের চরছলিমাবাদ, মিটুয়ানী, ভুতের মোড় ও বিনানই গ্রামের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাউবো) অতিরিক্ত মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী (কেন্দ্রীয় অঞ্চল) আব্দুল মতিন সরকার, বগুড়া পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (পওর) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ, সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম ও চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক সরকার উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়ি-ঘর
২ বছর আগে
হাওড়ে ৯০ শতাংশ ফসল ঘরে তুলেছেন কৃষক: উপমন্ত্রী
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেছেন, হাওর এলাকায় ৯০ শতাংশ বোরো ধান কৃষকেরা ঘরে তুলেছেন।
শুক্রবার শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া-জাজিরার পদ্মার ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘হাওর এলাকার অবশিষ্ট ১০ শতাংশ ধান শিগগিরই কাটা হবে।’
শামীম বলেন, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণেই বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে হাওড়ের মানুষ।
তিনি বলেন, দেশে দুই লাখ ২২ হাজার আটশ’’ পাঁচ হেক্টর হাওড় রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচ হাজার সাতশ’ ৬৫ হেক্টর হাওড়ের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয়, চেরাপুঞ্জিসহ কয়েকটি এলাকায় রেকর্ড এক হাজার ২০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ওই বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে হাওড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতির পরিমাণ ২ শতাংশ।
আরও পড়ুন: বন্যার পানি হাওরে ঢুকে ফসলহানির আশঙ্কা সুনামগঞ্জের কৃষকদের
উপমন্ত্রী বলেন, আমি (পানিসম্পদ উপমন্ত্রী), প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। তিনদিন সেখানে থেকে কাজও করেছি। সেখানকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আর হাওড়ের সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীর বাসযোগ্য বিশ্বমানের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ডেল্টাপ্লান-২১০০ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। আর এই মহাপরিকল্পনার ৮০ ভাগ কাজই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সারাদেশে নদীভাঙন ও জলাবদ্ধতার কোনো সমস্যাই থাকবে না। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হেকিম, শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য জহির সিকদার প্রমুখ।
আরও পড়ুন: অসময়ের বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় নতুন প্রকল্প আসছে: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
বন্যা ও নদীভাঙন মোকাবিলায় ১৮০৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন একনেকে
২ বছর আগে
‘বাঁধের কাজ ভালো হওয়ায় এবার ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে’
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, সুনামগঞ্জে এ বছর ২০১৭ সালের চেয়েও বেশি পানি হয়েছে। তবে বাঁধের কাজ ভালো হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতিমন্ত্রী সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন।এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মিজানুর রহমান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্ব) মাহবুবর রহমান,পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) এস এম শহিদুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কর্মচারীর বাঁধ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শত শত শ্রমিকও প্রতিনিয়ত কাজ করছে। বাঁধের গোড়ায় মাটি ভর্তি বস্তাও ফেলা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ রক্ষায়ও কাজ করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, মার্চ মাসের ৩০ তারিখ প্রথম দফা পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করে। নদ-নদী ও হাওরে ব্যাপক পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পায়। উজানের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জির ভারী বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের নদ-নদী ও হাওড়ে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ঢলের পানি হাওড়ের পাড় উপচে তাহেরপুর উপজেলার বর্ধিত গুরমার হাওড়ে ঢুকছে। সর্বশেষ রবিবার রাতে দিরাই উপজেলায় হুরামন্দিরা হাওরে পানি ঢোকে। এখানে জমি আছে এক হাজার হেক্টর, ক্ষতি হয়েছে ২০০ হেক্টরের।
আরও পড়ুন: ভোলাসহ উপকূল রক্ষায় বাঁধের উচ্চতা বাড়াতে সমীক্ষা চলছে: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে আছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিভিন্ন প্রণোদনা ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। আগামী বোরো মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার দেয়া হবে। এছাড়া,সারা বছর ধরে ভিজিএফসহ বিভিন্ন খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে, যাতে খাদ্যের জন্য কেউ কষ্ট না করে। কৃষকবান্ধব সরকার হাওর অঞ্চলে ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার কৃষকদের দিচ্ছে যাতে করে উৎপাদন খরচ কম লাগে।কৃষি বিভাগের তথ্য মতে এ পর্যন্ত ১৭টি ছোট–বড় হাওর ও বিলের পাঁচ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। প্রথম দফা পাহাড়ি ঢলের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার দ্বিতীয় দফায় ঢল নামতে শুরু করেছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলায় ধান কাটা হয়েছে ৮৪ হাজার ৭৪৮ হেক্টর জমির। যা মোট ধানের ২৪ ভাগ। এবার হাওর ধান চাষাবাদ হয়েছে দুই লাখ ২২ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ১৪ লাখ মেট্রিক টন। আমরা কৃষকদেরকে বলছি, ৮০ ভাগ ধান পাকলে কাটার জন্য।উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওড়ে ৭২৭টি প্রকল্পে ১শ২২ কোটি টাকায় ৫শ৩৬ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজ হয়েছে। এ বাঁধ নির্মাণকাজের সময়সীমা ছিল ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সময় বাড়িয়েও বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি। এছাড়া হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দুই-তিন দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে তদন্ত কমিটি।
আরও পড়ুন: বন্যা মোকাবিলায় ১৩৯ পোল্ডার তৈরি করা হবে: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী
দেশে ১০০০ খাল খননের পরিকল্পনা রয়েছে: পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী
২ বছর আগে