খরা
কুড়িগ্রামে বন্যা-খরায় পাটে ক্ষতি ৫৬ কোটি টাকা
খরা,অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কুড়িগ্রামের কৃষি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে পাট, আমন বীজতলা,শাক সবজি ও আউশসহ বিভিন্ন ফসলের হাজার হাজার হেক্টর জমির আবাদ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্নাঞ্চলের পাটের আবাদ। তথ্যমতে জেলায় এবার কৃষিতে ১০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর এই ক্ষতির পরিমাণের অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে পাটে।
ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমর ও জিঞ্জিরাম এই পাঁচ আন্তঃসীমান্ত নদীসহ ১৬ নদ নদীর জেলা কুড়িগ্রাম। যার ফলে বন্যাসহ নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখানে লেগেই থাকে। এ বছর এপ্রিল ও মে মাসে বৃষ্টি হয়নি। খরার তীব্রতাও ছিল বেশি। এরপর পুরো জুন মাস ধরে অতিবৃষ্টি হয়েছে। যার পরিমাণ ১ হাজার ১০০ মিলিমিটার বলে জানিয়েছে রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিস। পরের মাস জুলাইয়ের প্রথম থেকে শুরু হয়েছে বন্যা। দুই সপ্তাহ ধরে বন্যা চললেও এখন পর্যন্ত নিম্নাঞ্চল থেকে পুরোপুরি পানি নেমে যায়নি।
আরও পড়ুন: খরায় পুড়ছে আম, ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষীরা
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ১৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে সোনালি আঁশখ্যাত পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও খরার কারণে তা অর্জিত হয়নি। আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ২৫৬ হেক্টর জমিতে। এরপর অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ২ হাজার ৮৮৪ হেক্টর জমির পাট সম্পূর্ণরুপে নষ্ট হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের কারণে বিচ্ছিন্ন যাত্রাপুর এবং ধরলা নদীর কারণে বিচ্ছিন্ন পাঁচগাছী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পানিতে ডুবে থাকায় অনেক জমির পাট গাছ মরে গেছে। চাষিরা সেই পাট গাছ কেটে এনে পাটখড়ি হিসেবে ব্যবহারের জন্য শুকাচ্ছেন। কিছু কিছু চাষি পাট জাগ দিয়ে ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। তবে যেসব ক্ষেত থেকে পাট পাওয়া গেছে তার উৎপাদন ও মান ভালো হয়নি। ফলে লাভ তো দূরে থাক, আবাদ খরচ তোলা নিয়ে দুঃশ্চিতায় পড়েছেন পাটচাষিরা।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ঘন শ্যামপুর এলাকার রহিমুদ্দিন নামের একজন কৃষক বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে পাট কাটা যেত। এর মধ্যে বন্যায় পাট তলিয়ে সব গাছ মরে গেছে। এখন খড়ি করা ছাড়া কোন উপায় নাই। তাই পাট কেটে খড়ি হিসেবে শুকাচ্ছি।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান জানান, জেলায় এবার ২১ হাজার ৩৪৬ জন কৃষকের ১০ হাজার ২৪০ মেট্রিকটন পাট উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৫৬ কোটি টাকার মতো বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, নিম্নাঞ্চল থেকে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রোপা আমন আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়াও নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি দেরিতে নামলে আগাম রবি ফসল আবাদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: ডক্টর আবেদ চৌধুরীর পঞ্চব্রীহি ধান: উদ্ভাবন, চাষ পদ্ধতি ও সম্ভাবনা
৩ মাস আগে
খরা, যুদ্ধের মধ্যে ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়: এফএও
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানিয়েছে, শস্য ও উদ্ভিজ্জ তেলের মতো খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্য গত বছর রেকর্ড পরিমাণ সর্বোচ্চ ছিল, এমনকি টানা ৯ মাস পতন দেখা গেলেও। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ, খরা ও অন্যান্য কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায় এবং বিশ্বব্যাপী ক্ষুধাকে আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যায়।
রোমভিত্তিক সংস্থাটি শুক্রবার বলেছে, ব্যবসানির্ভর খাদ্য পণ্যের আন্তর্জাতিক মূল্যের মাসিক পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা এফএও খাদ্য মূল্য সূচক এক মাস আগের তুলনায় ডিসেম্বরে এক দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস দেখতে পেয়েছে। পুরো বছরের হিসাবে দাঁড়িয়েছে ১৪৩ দশমিক ৭ পয়েন্টে, যা ২০২১ সালের গড় থেকে ১৪ শতাংশ বেশি, বৃদ্ধিটি বেশ বড়।
ডিসেম্বরের পতনের কারণে আমদানি চাহিদা কমার মধ্য দিয়ে উদ্ভিজ্জ তেলের দাম হ্রাস পেয়েছে। এদিকে দক্ষিণ আমেরিকায় সয়াবিন তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রত্যাশা ও অপরিশোধিত তেলের দাম কমেছে। শস্য ও মাংসের দাম কম ছিল। তবে দুগ্ধজাত পণ্য ও চিনির দাম সামান্য বেড়েছিল।
এফএওর প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো তোরেরো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দুটি অত্যন্ত অস্থির বছর পরে শান্ত (তুলনামূলক) খাদ্য পণ্যের দামকে স্বাগত জানাই। সতর্ক থাকা এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা প্রশমিত করার জন্য দৃঢ় ফোকাস রাখা গুরুত্বপূর্ণ।’
এফএও’র তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জাতিসংঘের সংস্থাটির খাদ্য মূল্য সূচক ১৯৬১ সালে রেকর্ড শুরু করার পর থেকে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।
ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন খাদ্য সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেয়। কারণ দুটি দেশ গম, বার্লি, সূর্যমুখী তেল এবং অন্যান্য পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহকারীদের নেতৃত্ব দেয়। এদিকে, বিশেষ করে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার কিছু অংশে যারা ইতোমধ্যেই ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে ছাদ কৃষি প্রয়োজন: এফএও
কৃষ্ণ সাগরের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে খাদ্যের দাম রেকর্ড উচ্চতায় বেড়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি, দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে যা আমদানির ওপর নির্ভরশীল।
এফএও বলছে, গম ও ভুট্টার দাম গত বছর রেকর্ড উচ্চে পৌঁছেছে, যদিও ডিসেম্বরে অন্যান্য শস্যের দামের সঙ্গে তাদের দাম কমেছে। দক্ষিণ গোলার্ধে ফসলের সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং রপ্তানিকারকদের মধ্যে শক্তিশালী প্রতিযোগিতা দেখা যায়।
সংস্থাটির উদ্ভিজ্জ তেলের মূল্য সূচক গত বছর সর্বকালে সর্বোচ্চে পৌঁছায়, এমনকি এটি ডিসেম্বরে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গিয়েছিল। ২০২২ সালের জন্য এফএও দুগ্ধজাত পণ্যের মূল্য সূচক ও মাংসের মূল্য সূচকও ১৯৯০ সাল থেকে সর্বোচ্চ ছিল।
আরও পড়ুন: এফএওকে একটি আন্তর্জাতিক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব শেখ হাসিনার
এফএও সম্মেলন: খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
১ বছর আগে
খরায় কেনিয়ায় কয়েকশ’ হাতি ও জেব্রার মৃত্যু
কেনিয়ার ভয়াবহ খরা চলছে। চলতি বছর পূর্ব আফ্রিকার বেশিরভাগ অঞ্চল গত কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহ খরার মুখে পড়েছে। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে হাতি ও জেব্রার মতো কয়েকশ’ বন্যপ্রাণী মারা গেছে।
শুক্রবার কেনিয়ার বন্যপ্রাণী পরিষেবা এবং অন্যান্য সংস্থা প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নজিরবিহীন খরায় কেনিয়ায় ২০৫টি হাতিসহ বহু বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত হাতি ছাড়াও, ৫১২টি নু-হরিণ, ৩৮১টি জেব্রা, ১২টি জিরাফ ও ৫১টি মহিষসহ আরও অনেক বণ্যপ্রাণী মারা গেছে।
কেনিয়ার কিছু অংশে গত দুই বছরে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের সঙ্গে পরপর চারবার খরা হয়েছে। যা গবাদি পশু সহ মানুষ ও প্রাণীদের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।এর সঙ্গে পানির ঘাটতির বন্যপ্রাণীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: সোমালিয়ার রাজধানীতে দুটি গাড়িবোমা বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ১০০
প্রতিবেদন লেখকদের মতে, দেশটির পর্যটক আকর্ষণের কিছু জাতীয় উদ্যানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে-আম্বোসেলি,সাভো ও লাইকিপিয়া-সাম্বুরু অঞ্চল।
জানা গেছে,সেখানে বন্য প্রাণীদের ওপর খরার প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে সরকারের উদ্দেশে বন্যপ্রাণীদের জন্য জরুরি বায়বীয় আদমশুমারির আহ্বান জানিয়েছে।
অ্যালিফ্যান্ট প্রতিবেশি কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক জিম জাস্টাস নাইমু’র মতে,বিশেষজ্ঞরা বলেন ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে দ্রুত পানি ও লবণ ছড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।
উদাহরণস্বরূপ, হাতিরা প্রতিদিন ২৪০ লিটার (৬৩.৪০ গ্যালন) পানি পান করে।
এছাড়া গ্রেভির জেব্রার জন্য বিশেষজ্ঞরা খড়ের ব্যবস্থা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: চাদে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নিহত ৬০
প্রবল বর্ষণে নাইজারে ১৭৯ জন নিহত
২ বছর আগে
আমনে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জিত: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে আমন আবাদে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তাকে পিছনে ফেলে চলমান আমন মৌসুমে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জিত হয়েছে।
শনিবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বছর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা হলো ৫৯ লাখ হেক্টর। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ মেট্রিক টন চাল। ২০২০-২১ সালে আমন মোট আবাদ হয়েছিল ৫৬ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৪৫ লাখ টন। গতবছর ২০২১-২২ সালে আবাদ হয়েছিল ৫৭ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এবংআর উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৫০ লাখ টন চাল।
এতে আরও বলা হয়েছে, খরা আর কম বৃষ্টিপাতের কারণে আমনে প্রায় ১৫ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দিতে হয়েছে। সেচকাজে প্রায় ছয় লাখ ৭৪ হাজার গভীর নলকূপ, অগভীর নলকূপ, এলএলপিসহ বিভিন্ন সেচযন্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। দেশে মোট সেচযন্ত্রের পরিমাণ ১৪ লাখেরও বেশি।সম্প্রতি ময়মনসিংহে এক কর্মসূচিতে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমন উৎপাদনে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। আর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমনে উৎপাদন গতবছরের তুলনায় বেশিও হতে পারে।
আরও পড়ুন: খরা-অনাবৃষ্টি: অবশেষে আমন আবাদে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রার অর্জন
ফসলি জমি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃষকদের খোলা চিঠি
জামানাত ছাড়াই কৃষককে ঋণ দেয়া যায়: কৃষিমন্ত্রী
২ বছর আগে
তীব্র খরায় বাগেরহাটে আমন উৎপাদন ব্যাহত
আমন ধান উৎপাদনে বিপর্যয় বাগেরহাটে আসন্ন খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাগেরহাটে ৪৮৯ মিলিমিটার কম বৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমন মৌসুম প্রায় শেষের দিকে খরার পরিস্থিতির কারণে জেলার প্রায় ৪০ শতাংশ কৃষি জমি অনাবাদি পড়ে আছে।
পানির অভাব কৃষকদের আমনের চারা রোপণ করা কঠিন হয়ে উঠেছে এবং যারা ইতোমধ্যে চারা রোপণ করেছেন তারা তাদের ফসল হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ধান চাষ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা এবং কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাতের কথা ভাবছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে মোট দুই লাখ ৪৪ হাজার ৩২৮টি কৃষক পরিবার রয়েছে। ১ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমন ধান রোপনের মৌসুম। বাগেরহাট জেলায় এ বছর ৭৪ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৬৬ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পর্যন্ত আবাদ হয়েছে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনায় বন্ধ হওয়া ৬ ট্রেন চালু হয়নি, দুর্ভোগে যাত্রীরা
এছাড়া বাগেরহাটে চলতি বছরের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত দুই হাজার ৫৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে তিন হাজার ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সে হিসাবে জেলায় ৪৮৯ মিলিমিটার কম বৃষ্টি হয়েছে।
বাগেরহাটের কচুয়া ও ফকিরহাট উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানকার সব ধান খেতে ফাটল ও আগাছা দেখা দিয়েছে। খাদ্য সংকটে উদ্বিগ্ন কৃষকরা সেচের মাধ্যমে চারা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। জেলার সদর, শরণখোলা ও মোল্লারহাট উপজেলায়ও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
স্থানীয় কৃষক শেখ আসাদুর রহমান প্রতি বছর পাঁচ একর জমিতে ধান লাগান। জমিতে উৎপাদিত ধান বিক্রি করে তিনি সংসার চালান। এ বছর মৌসুমের শুরুতে জমিতে প্রথমবার যে বীজপাতা তৈরি করেছিল তা বীজতলায় মারা গেছে। দ্বিতীয়বার চেষ্টা করে অল্প পরিমাণ জমিতে বীজপাতা তৈরি করেছে। দুইবারের চেষ্টার বীজপাতা এখন গরু-ছাগলে খাচ্ছে।
আরও পড়ুন: স্কুলশিক্ষকের তৈরি ভাসমান সেতুতে দুর্ভোগের অবসান হলো গ্রামবাসীর
কৃষক আসাদ বলেন, শুকনো জমিতে চারা রোপণ করা যায় না। এ মৌসুমে পানির অভাবে কোনো চারা রোপন করতে পারিনি। আমন চাষের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে, মানে এ বছর আমি ধান চাষ করতে পারব না। আমি জানি না আমি কীভাবে বাঁচব।
বিভিন্ন দেশে কৃষি সেক্টর ঘুরে দেখা ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাশ জানান, নেদারল্যান্ডে শতকরা ৬০ শতাংশ পানি নদী-খালে বাষ্পীভূত হয়। কীভাবে ওই বাষ্পীভূতকে রোধ করে সেচের ব্যবস্থা করা যায় কি না তা নিয়ে তারা গবেষণা করছে। মাটি এবং পানি নিয়ে গবেষণা করলেও আমরা কিন্তু তা করছি না।
ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাস অনেক দেশের কৃষি পদ্ধতি দেখেছেন। ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে তিনি জেলায় চলমান কৃষি সঙ্কট নিরসনে কিছু ধারণা দেন।
আরও পড়ুন: খুলনায় ‘অপরিকল্পিত’ শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, মরে যাচ্ছে শত শত গাছ
তিনি বলেন, পানি ও মাটি নিয়ে গবেষণা করে ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন করতে হবে। সেচের মাধ্যমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সৌরশক্তি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া বর্তমান সেচ পদ্ধতিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে এবং বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে।
বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমান পানি সংকট মোকাবিলায় ধান চাষে পানির পাম্প ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
কৃষি কর্মকর্তা আজিজুর জানান, ক্ষতি কমানোর জন্য, আমরা কৃষকদের বিআর-২৩ জাতের ধান চাষ করতে এবং সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। বর্তমানে জেলায় চার হাজার ৫০০ সেচযন্ত্র চালু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: জনবল সংকটে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ও এইচডিইউ সেবা বন্ধ
তিনি জানান, চারা রোপণের সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
আজিজুর বলেন, সরকার এ বছর আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হারাবে কি না তা জানতে আমাদের ফসল কাটার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
২ বছর আগে
খরা: খুলনায় আমনের আবাদ নিয়ে শঙ্কা
অনাবৃষ্টির কারণে আমন ধান চাষ প্রক্রিয়া প্রায় দেড় মাস বিলম্বিত হওয়ায় খুলনা জেলার ৮০ হাজারের বেশি কৃষকের আশঙ্কা যে তারা এ বছর উৎপাদন খরচও তুলতে পারবেন না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বর্ষা মৌসুমে ৯৩ হাজার একশ’ ৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও এ পর্যন্ত মাত্র ১৬ হাজার পাঁচশ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর খুলনায় প্রায় চার থেকে পাঁচ গুণ কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
২০২১ সালের জুন মাসে ৩৮৮ দশমিক ৮৯ মিলিমিটার, জুলাই মাসে ৫০৬ মিলিমিটার ও আগস্ট মাসে ২১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এ বছরের জুন মাসে ৯৪ দশমিক ৩৬ মিলিমিটার, জুলাই মাসে ৯১ দশমিক ২৭ মিলিমিটার এবং ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ১৬১ দশমিক ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পড়ুন: দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ঢাকা-ভাঙা রেলপথের কাজ
চলতি মৌসুমে জেলায় তিন হাজার ছয়শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে আউশ, এক হাজার তিনশ’ ১৬ হেক্টর জমিতে পাট, ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো, দুইশ’ ৭৩ হেক্টর জমিতে তরমুজ, দুইশ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে সীম, আট হাজার দুইশ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ হয়েছে। অধিকাংশ ফসলে সেচ দিতে হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ফুলতলা, তেরখাদা, রূপসা, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, দিঘলিয়া ও দাকোপ উপজেলায় নদী থেকে পানি উত্তোলন করে আমন আবাদ করা হচ্ছে। পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার নদীর পানি এখনো নোনা থাকায় এ দুই উপজেলায় নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই বীজতলা একশ’ শতাংশ সম্পন্ন হলেও আমন উৎপাদন কম হবে।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় আমন রোপনের অগ্রগতি কম। রোপনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৪০ শতাংশ আমন আবাদ হয়েছে। সাড়ে চারশ’ একর জমির উৎপাদিত পাট নদীর জোয়ারের পানিতে, আবার অন্য কোথাও গর্ত করে পলিথিন বিছিয়ে মাটি চাপা দিয়ে পঁচানো হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহায়তায় সেচ দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
দাকোপ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আমন চাষে বিলম্বের পাশাপাশি পানখালী ইউনিয়নে তরমুজ ও সবজির উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনায় বন্ধ হওয়া ৬ ট্রেন চালু হয়নি, দুর্ভোগে যাত্রীরা
২ বছর আগে
আগামী মাসে আরেকটি বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
দেশে আগামী মাসে (আগস্টে) আরেকটি বন্যা হতে পারে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘দেশের কৃষি প্রকৃতিনির্ভর এবং কৃষি সবসময়ই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকে। সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জসহ ১২টি জেলায় ফসলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগস্টে আরেকটি ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে, এটি একটি রুটিন কাজ। আমরা ব্যাপক পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। একইসাথে, নাবী জাতের (লেইট ভ্যারাইটি) ধান চাষে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে কৃষিখাতে সরকারি বেসরকারি অংশিদারিত্ব (পিপিপি) নিয়ে পর্যালোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কৃষিতে বন্যা, খরা, সাইক্লোনসহ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি রয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে সরকারের এখন মূল লক্ষ্য হলো কৃষিকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিকীকরণ করা, যাতে কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটে। সেলক্ষ্য সরকার কাজ করছে। তবে এক্ষেত্রে বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও যান্ত্রিকীকরণে বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। কৃষিযন্ত্র অনেক ব্যয়বহুল, ৯০ শতাংশ যন্ত্র আমদানিনির্ভর। এসব কৃষিযন্ত্র আমরা দেশে উৎপাদন করতে চাই। পিপিপি এখানে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে।
বেসরকারি শিল্পোদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে তাদেরকে প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক, পলিসিসহ সকল বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। এছাড়া, বর্তমানে ডাল, তেলসহ যেসব কৃষিপণ্য আমদানি করতে হয়, তা উৎপাদনে ৪ সতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে সকল কৃষিপণ্যে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী বলেন, চাল আমদানির ফলে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। ‘বাজার স্থিতিশীল রাখতেই সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, চাল আমদানির আমাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টার্গেট আছে। সেই পরিমাণ চাল দেশে এসে গেলে আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে। আমরা প্রতিদিনই নিবিড়ভাবে বাজার মনিটর করছি। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয় একত্রে কাজ করছে। কাজেই চাল আমদানির ফলে দেশীয় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থা প্রধান এবং কৃষি-শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
পড়ুন: দেশের নির্বাচনে বিদেশিরা ভূমিকা রাখতে পারবে না: রাজ্জাক
বন্যা থেকে বাঁচতে নদীগুলো খনন করতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২ বছর আগে
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পশু-পাখির সুরক্ষা: বন্যা, খরা ও শৈত্য প্রবাহে করণীয়
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বেড়ে চলেছে। এ সময় মানুষের পাশাপাশি প্রাণহানির শিকার হচ্ছে পশু-পাখিও। বাংলাদেশের কৃষি নির্ভর অর্থনীতির এক বিরাট যোগান আসে গৃহপালিত পশু-পাখি জাত দ্রব্যাদি থেকে। তাছাড়া ঘরে পশু-পাখি লালণ-পালন করে অনেকেই বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা স্বাবলম্বি হচ্ছে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এই মহামূল্যবান সম্পদকে রক্ষা করার প্রতি সতর্ক হওয়ার কোন অবকাশ নেই। এক্ষেত্রে অবলা প্রাণীগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া বাঞ্ছনীয়। চলুন, ঝড় এবং বন্যায় কিভাবে গৃহস্থালি পশু-পাখির ব্যবস্থা করবেন তা জেনে নেয়া যাক।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পশু-পাখির সুরক্ষায় করণীয়
ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার সময় করণীয়
এ সময় সর্বত ভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে ঝড় বৃষ্টিতে গবাদিপশু যেন ভিজে না যায়। বন্যা, ঝড় অথবা জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাসের সঙ্গে সঙ্গেই গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগিকে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে নিতে হবে। বন্যার সময় পশু-পাখিকে নৌকা বা মাচার উপরে নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিজস্বভাবে অপারগ হলে সরকারি প্রতিষ্ঠান, সড়ক বা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো উপযুক্ত জায়গা হতে পারে। কোন ভাবেই পশু-পাখিকে ভেজা জায়গায় রাখা যাবে না।
অতিবৃষ্টির মৌসুমের আগ থেকেই কিছু খড় ও দানাদার খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে। এ সময় সাইলেজ তৈরি করা অথবা ইউরিয়ার মাধ্যমে খড় প্রক্রিয়াজাত করে সংরক্ষণ অনেক কাজে লাগতে পারে। সবসময় চেষ্টা করতে হবে আর্দ্রতামুক্ত পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণ করা। যতটা সম্ভব ঘরের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। লিটার কোন ভাবেই ভিজতে দেয়া যাবে না।
এমন আপদকালীন সময়ের জন্য আগে থেকে খাদ্য মজুদ করে রাখতে হবে। এর জন্য উঁচু স্থানে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য উঁচু করে গুদাম ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে। বিকল্প খাদ্য হিসাবে কলা, তুঁত, কাঁঠাল, ডুমুর, ইপিল-ইপিল, ডেউয়া, পাকুড়, আম, বাঁশ, জিগা, ও বট গাছের পাতা বন্যার ও শুষ্ক উভয় মৌসুমেই উপযুক্ত।
পড়ুন: কুড়িগ্রামে বানভাসিদের দুর্ভোগ বেড়েছে, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার জন্য আগে থেকেই ঘরে শক্ত খুঁটি দিয়ে রাখতে হবে। নিয়মিত জীবাণু মুক্ত রাখার জন্য আগে থেকেই শেডের মেঝেতে চুন দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে ছাই, কাঠের গুঁড়া বা বালু, তুষ ছড়িয়ে দেয়া এবং নিয়মিতভাবে তা বদলে দেয়া যেতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির পানি যাতে ঘরের ভেতরে না যায় সেজন্য ঘরের চারদিকে চটের বস্তা বা রেকসিনের পর্দা দিয়ে ঘেরাও করে দিতে হবে।
পশু-পাখি কোন ভাবেই যেন বন্যার দূষিত পানি কিংবা পচা খাবার না খায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বন্যার পানির নিচে ডুবে যাওয়া ঘাস; এমনকি বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নতুন করে গজানো ঘাস পশুকে খাওয়ানো ঠিক নয়। নিজেদের আহারের উদ্বৃত্ত অংশ নষ্ট না করে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির জন্য রাখা যেতে পারে।
ঝড়-বৃষ্টির শুরুর আগেই হাস-মুরগি ও এগুলোর ডিম বাজারজাত করা জরুরি। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এগুলো বাজারজাত করে ফেলা ভালো।
বন্যাতে পশুর ডায়রিয়া, তড়কা, বাদলা, খাদ্যে বিষক্রিয়া, ক্ষুরারোগ প্রভৃতি রোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। হাস-মুরগির ক্ষেত্রে রানীক্ষেত, কলেরা, ডাকপ্লেগ, বসন্ত, ছত্রাক ও অন্যান্য পরজীবীজনিত রোগের সংক্রমণের ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। আগে ভাগেই প্রতিটি রোগের জন্য প্রতিষেধক টিকা দিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে মৃত পশু-পাখি পুড়িয়ে বা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। সর্বপরি, পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ও বন্যা পরবর্তী সময়ে যে কোনো সমস্যায় নিকটস্থ পশুসম্পদ দপ্তরের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।
পড়ুন: পদ্মায় পানি বৃদ্ধি, ভাঙন ঝুঁকিতে ৩৫০ পরিবার
খরার সময় করণীয়
এ সময় অতিরিক্ত গরম থাকে বিধায় গবাদিপশুকে যে কোন শেড বা গাছের নিচে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা উচিত। তাপমাত্রা কমানোর জন্য শেডের চালের ওপর পানি ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে। হাঁস-মুরগির ঘরের চালার ওপর চট বিছিয়ে তার ওপরেও একই ভাবে ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
পানি যে কোন পাত্রে দীর্ঘক্ষণ রেখে দিলেই তা গরম হয়ে যায়, তাই পানি বেশিক্ষণ একই পাত্রে রাখা যাবে না। এ ক্ষেত্রে অল্প অল্প করে পাত্রে রেখে মাঝে মাঝে তা বদলে দেয়া যেতে পারে। এজন্য পানির পাত্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্যাংক থেকে সরাসরি পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ট্যাংকটিকে কোনো কিছু দিয়ে আবৃত করে রাখতে হবে, যেন ট্যাংকের পানি গরম হয়ে না যায়।
পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে পশু-পাখির ঘরে। কমপক্ষে রাত ২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত আলোর ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি এক্সজস্ট ফ্যান স্থাপন করা একটা ভালো উপায়। আর গরম খুব বেশি বাড়লে ঘরে ফ্যানের সংখ্যা দুয়েকটা বাড়িয়ে পশু-পাখির সংখ্যা কমিয়ে দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে রুমের তাপমাত্রা বোঝার জন্য থার্মোমিটার ব্যবহার জরুরি। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গেলে মুরগির ওপর ও ঘরের মেঝেতে ঠাণ্ডা পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
গরমকালে পশুর খাদ্য গ্রহণের হার কম, তাই খাদ্যে যত বেশি সম্ভব প্রোটিন রাখতে হবে। গরম বাড়ার সাথে সাথে ভোর, সন্ধ্যা ও রাতে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায়। এ সময় দুপুরের খাবারটা বন্ধ রাখা আবশ্যক। যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ ঠাণ্ডা পানির যোগান দিতে হবে। রাত ঠিক ২টার পর থেকে খাবার ও পানি খাওয়ানো যেতে পারে। পাত্রের খাবার পানি গরম হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রেখে পুনরায় বদলে দিতে হবে। ঠাণ্ডা পানির সাথে ইলেকট্রোলাইট্স এবং ভিটামিন-সি দেয়া উত্তম।
প্রচন্ড গরমে গবাদি পশু হিটস্ট্রোক, ম্যাসটাইটিস, ধকল, অ্যানাপ্লাজমোসিস, থাইলেরিওসিস, বেবিসিসিস, গলাফুলা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া মশা-মাছির প্রকোপ তো আছেই। এ ব্যাপারে পশুর সম্ভাব্য উপসর্গগুলোর প্রতি কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে। রাতে বা খুব ভোরে হাস-মুরগীর জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দেয়া হয়। অত্যাধিক গরমের এই পথ্যটি অন্যান্য সময়ে প্রদানের দুই থেকে তিন দিন পর দেয়া যেতে পারে।
পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপ (হাই প্রেশার) হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস
শৈত্য প্রবাহের সময় করণীয়
শেডে বেড়া এবং চারদিকে চট বা প্লাস্টিকের পর্দা ঝুলিয়ে দিলে অতিরিক্ত ঠান্ডার সময় বেশ কাজে দেয়। টিনের শেডে সিলিং থাকা জরুরি আর শেডের ওপর চট বা খড় বিছিয়ে দিলে ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে। প্রচন্ড ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর জন্য গবাদিপশুর গায়েও চট দিয়ে ঢেকে দেয়া যায়। শেডের ভেতরে বা ব্রুডারে ১০০ থেকে ২০০ ওয়াটের বাল্ব, আগুন জ্বালিয়ে রাখা বা বৈদ্যুতিক হিটার সংযোজন ঘরে প্রয়োজনীয় তাপ সরবরাহ করবে।
লোডশেডিং-এর সময় ঘরের ভেতর হ্যাজাক বা হারিকেন দিতে হবে। শেডের মেঝেতে লিটার দেয়ার সময় তার পুরুত্ব চার ইঞ্চি রাখতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন বেশি স্যাঁতসেঁতে হয়ে না যায়। শেডের চালের নিচ দিয়ে যথেষ্ট আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা দরকার।
পশু-পাখি যেন সুষম খাদ্য পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবারে প্রোটিনের মাত্রা বেশি থাকতে হবে এবং অধিক ক্যালরিযুক্ত হতে হবে। কুসুম গরম পানির সাথে খাবার সরবরাহ করতে হবে। পানিতে ভিটামিন-সি, এ, ডি ও ই মিশিয়ে দেয়া উত্তম। এ সময় বিশেষ করে গর্ভবতী গাভী ও বাছুরের প্রতি আলাদা ভাবে বেশি যত্ন নেয়া দরকার।
ঠান্ডায় গবাদিপশুর রোগগুলোর মধ্যে আছে সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়া। হাস-মুরগির সর্দি-কাশি, সিআরডি, ব্রুডার নিউমোনিয়া ও আমাশয়ে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ বিষয়গুলোতে আগে থেকেই নিকটস্থ পশুসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
পড়ুন: স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা
শেষাংশ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পশু-পাখির সুরক্ষার্থে উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো বেশ কার্যকরি ভূমিকা পালন করবে। নিদেনপক্ষে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও দুর্যোগের পরে ক্ষতিপূরণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে। দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আবার নতুন করে শুরু করতে বেশ বেগ পেতে হয়। সে সময় গৃহপালিত পশু-পাখিগুলোই শেষ অবলম্বন হিসেবে দেখা দেয়। তাই নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই এই বহু কষ্টে লালিত সম্পদগুলোর যথাযথ যত্ন নেয়া উচিত।
২ বছর আগে
ইথিওপিয়ার আফারে খরা ও সংঘাতে ৩৫ শিশুর মৃত্যু
ইথিওপিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আফারে খরা ও সংঘাতের কারণে সাম্প্রতিক সপ্তাহে অন্তত ৩৫ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দেশটির স্থানীয় একটি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের জনহিতকর সংস্থা ডক্টরস উইদআউট বর্ডার জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ডক্টরস উইদআউট বর্ডার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘শুধু গত আট সপ্তাহে ৩৫ জন শিশু মারা গেছে এবং তাদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি হাসপাতালে ভর্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছে।’
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় গ্রুপের জরুরি সমন্বয়কারী রাফেল ভিচট বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো আমরা শুধু মূল সমস্যার শুরুটা দেখতে শুরু করেছি এবং এটি ইতোমধ্যেই অপ্রতিরোধ্য।’
গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার সম্মুখীন হচ্ছে ইথিওপিয়া। এছাড়া ২০২০ সালের নভেম্বরে ইথিওপিয়ার প্রতিবেশী তাইগ্রে অঞ্চলে শুরু হওয়া যুদ্ধের কিছু মারাত্মক লড়াই দেখেছে আফার অঞ্চল।
আফারের দুবতি হাসপাতাল এই অঞ্চলের বৃহত্তম হাসপাতাল এবং ১০ লাখের বেশি মানুষকে সেবা দিয়ে থাকে। এ হাসপাতালের পরিচালক হুসেইন আদেম দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে শিশুদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, তাইগ্রের সীমান্তবর্তী সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লোকেরা আসছে।
আরও পড়ুন: আঞ্চলিক রাজধানী মেকেলে 'সম্পূর্ণ দখলে' নেয়ার দাবি ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে অপুষ্টিতে আক্রান্ত ও অসুস্থ শিশুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তাই শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হারও বাড়ছে।’
তার দলের সদস্যরা কয়েকজনকে অন্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পাঠানোর চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের ওয়ার্ড পূর্ণ। তাই তাঁবু ব্যবহার করছি। এমনকি এটিও পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা করিডোরে তাদের কয়েকজনের চিকিৎসা করছি।’
জাতিসংঘ ও ইথিওপিয়ান সরকার উভয়ের পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করছে, দেশটির অন্যান্য অংশেও লাখো ইথিওপিয়ান খাদ্য সংকটের মুখোমুখি।
ইথিওপিয়ার পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী ফিটসুম আসসেফা সোমবার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বলেছেন, দক্ষিণ, ওরোমিয়া ও সোমালি অঞ্চলে সাত দশমিক চার মিলিয়ন মানুষের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। তাইগ্রেতে আরও পাঁচ দশমিক দুই মিলিয়ন, আফারে প্রায় ছয় লাখ ও আমহারা অঞ্চলে আট দশমিক সাত মিলিয়নের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। এসব মানুষ সরকার ও দাতাদের মাধ্যমে সহায়তা পাচ্ছে।
তবে এ প্রচেষ্টাকে ‘বড় সাফল্য’ উল্লেখ করে তিনি প্রাণহানিকে অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: ইথিওপিয়ায় কলেরায় আক্রান্ত ৬৭৮৯: জাতিসংঘ
২৫ ফেব্রুয়ারি ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ এক টুইটবার্তায় সতর্ক করে বলেন, পূর্ব আফ্রিকার দেশটির সোমালি ও বোরানা অঞ্চলে খরাজনিত ক্ষুধা ‘শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে প্রাণহানি ঘটাচ্ছে’।
তিনি বলেন, ‘যদি বর্ষা শুরুর জন্য অপেক্ষা করি তাহলে আমরা আমাদের অনেক নাগরিক হারাবো।’
মঙ্গলবার জাতিসংঘ ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া ও জিবুতিতে চার দশমিক দুই মিলিয়ন মানুষকে সাহায্য করার জন্য ৮৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আবেদন করেছে। এসব মানুষের অর্ধেক শিশু।
সংস্থাটি বলছে, ‘এ অঞ্চলের পুষ্টি পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক কেননা অপুষ্টির হার বাড়ছে, বিশেষ করে ইথিওপিয়ায় এবং কেনিয়া ও সোমালিয়ার শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক ভূমিতে।’
২ বছর আগে