ইথিওপিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আফারে খরা ও সংঘাতের কারণে সাম্প্রতিক সপ্তাহে অন্তত ৩৫ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দেশটির স্থানীয় একটি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের জনহিতকর সংস্থা ডক্টরস উইদআউট বর্ডার জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ডক্টরস উইদআউট বর্ডার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘শুধু গত আট সপ্তাহে ৩৫ জন শিশু মারা গেছে এবং তাদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি হাসপাতালে ভর্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছে।’
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় গ্রুপের জরুরি সমন্বয়কারী রাফেল ভিচট বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো আমরা শুধু মূল সমস্যার শুরুটা দেখতে শুরু করেছি এবং এটি ইতোমধ্যেই অপ্রতিরোধ্য।’
গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার সম্মুখীন হচ্ছে ইথিওপিয়া। এছাড়া ২০২০ সালের নভেম্বরে ইথিওপিয়ার প্রতিবেশী তাইগ্রে অঞ্চলে শুরু হওয়া যুদ্ধের কিছু মারাত্মক লড়াই দেখেছে আফার অঞ্চল।
আফারের দুবতি হাসপাতাল এই অঞ্চলের বৃহত্তম হাসপাতাল এবং ১০ লাখের বেশি মানুষকে সেবা দিয়ে থাকে। এ হাসপাতালের পরিচালক হুসেইন আদেম দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে শিশুদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, তাইগ্রের সীমান্তবর্তী সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লোকেরা আসছে।
আরও পড়ুন: আঞ্চলিক রাজধানী মেকেলে 'সম্পূর্ণ দখলে' নেয়ার দাবি ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে অপুষ্টিতে আক্রান্ত ও অসুস্থ শিশুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তাই শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর হারও বাড়ছে।’
তার দলের সদস্যরা কয়েকজনকে অন্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পাঠানোর চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের ওয়ার্ড পূর্ণ। তাই তাঁবু ব্যবহার করছি। এমনকি এটিও পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা করিডোরে তাদের কয়েকজনের চিকিৎসা করছি।’
জাতিসংঘ ও ইথিওপিয়ান সরকার উভয়ের পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করছে, দেশটির অন্যান্য অংশেও লাখো ইথিওপিয়ান খাদ্য সংকটের মুখোমুখি।
ইথিওপিয়ার পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী ফিটসুম আসসেফা সোমবার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বলেছেন, দক্ষিণ, ওরোমিয়া ও সোমালি অঞ্চলে সাত দশমিক চার মিলিয়ন মানুষের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। তাইগ্রেতে আরও পাঁচ দশমিক দুই মিলিয়ন, আফারে প্রায় ছয় লাখ ও আমহারা অঞ্চলে আট দশমিক সাত মিলিয়নের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। এসব মানুষ সরকার ও দাতাদের মাধ্যমে সহায়তা পাচ্ছে।
তবে এ প্রচেষ্টাকে ‘বড় সাফল্য’ উল্লেখ করে তিনি প্রাণহানিকে অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: ইথিওপিয়ায় কলেরায় আক্রান্ত ৬৭৮৯: জাতিসংঘ
২৫ ফেব্রুয়ারি ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ এক টুইটবার্তায় সতর্ক করে বলেন, পূর্ব আফ্রিকার দেশটির সোমালি ও বোরানা অঞ্চলে খরাজনিত ক্ষুধা ‘শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে প্রাণহানি ঘটাচ্ছে’।
তিনি বলেন, ‘যদি বর্ষা শুরুর জন্য অপেক্ষা করি তাহলে আমরা আমাদের অনেক নাগরিক হারাবো।’
মঙ্গলবার জাতিসংঘ ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়া, ইরিত্রিয়া ও জিবুতিতে চার দশমিক দুই মিলিয়ন মানুষকে সাহায্য করার জন্য ৮৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আবেদন করেছে। এসব মানুষের অর্ধেক শিশু।
সংস্থাটি বলছে, ‘এ অঞ্চলের পুষ্টি পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক কেননা অপুষ্টির হার বাড়ছে, বিশেষ করে ইথিওপিয়ায় এবং কেনিয়া ও সোমালিয়ার শুষ্ক ও আধা-শুষ্ক ভূমিতে।’