গ্যাস উৎপাদন
২৬টি কূপ খননে সরকারের উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব
দেশে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উপকূলীয় গ্যাসক্ষেত্র জুড়ে ২৬টি কূপ খননের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এই উদ্যোগ আরও এক মাস বিলম্বিত হবে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
মূলত দরপত্র সংক্রান্ত নথিপত্র তৈরি নিয়েই এই বিলম্ব সৃষ্টি হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ খনিজ, তেল ও গ্যাস করপোরেশনের অধীনে তিনটি গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনকারী কোম্পানি (সাধারণত পেট্রোবাংলা নামে পরিচিত) সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল), বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করার কথা ছিল।
আরও পড়ুন: তিতাস স্মার্ট প্রিপেইড মিটার প্রকল্পে অগ্রগতি সামান্য
কিন্তু সংবাদপত্র ও সংশ্লিষ্ট সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য দরপত্রের নথিপত্র চূড়ান্ত না হওয়ায় কোম্পানিগুলো দরপত্র আহ্বান করতে পারেনি।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে এক সংবাদ সম্মেলনে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার ঘোষণা দেন, প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সবুজ সংকেত পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে আশা করছেন তারা।
একই সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সরকার শিগগিরই বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে ২৬টি কূপ খননের জন্য একটি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করবে বলে আশ্বাস দেন।
সরকার জি-টু-জি ভিত্তিতে চুক্তি বা বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে অযাচিত চুক্তি করা থেকে বিরত থাকবে বলেও জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, এই উদ্যোগের লক্ষ্য বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করা ব্যয়বহুল এলএনজির ওপর নির্ভরতা কমানো।
দরপত্র আহ্বানে বিলম্বের বিষয়ে ফাওজুল কবির ইউএনবিকে বলেন, দরপত্র তৈরিতে তার মন্ত্রণালয় একজন দরপত্র ক্রয় বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিচ্ছে এজন্য কিছুটা বেশি সময় লাগছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড দেবে সরকার
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ঐতিহাসিকভাবে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ এর আওতায় একই ধরনের চুক্তির দলিল তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এবার উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করতে হলে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) ২০০৮ মেনে চলতে হবে তাই বিলম্ব হচ্ছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র জারি করতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের পুরো মাস লাগতে পারে।
গত ৩ অক্টোবরের সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি উপদেষ্টা ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খননের সরকারি পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।
এর মধ্যে ৬৯টি অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ এবং বাকি ৩১টি কূপ হবে ওয়ার্ক-ওভার ওয়েল।
বাপেক্স ৬৯টি অনুসন্ধান কূপের মধ্যে ৪৩টি এবং বাকি ২৬টি কূপ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারদের মাধ্যমে খনন করবে।
বাপেক্স নিজস্ব রিগ ব্যবহার করে বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র জুড়ে ৩৩টি কূপ খনন করবে এবং ভাড়া করা রিগ ব্যবহার করে আরও ১০টি কূপ খনন করা হবে।
উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য বাপেক্সের সক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো।’
আরও পড়ুন: ঝুলে আছে ১০টি গ্রিড সংযুক্ত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিপিডিবির দরপত্র আহ্বান
২ মাস আগে
‘সরকারি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওনা ১৮৯৩ কোটি টাকা’
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ বকেয়া ১৮৯৩ কোটি টাকা পাবে বিদ্যুৎ বিভাগ।
তিনি আরও বলেন, দৈনিক গড়ে ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের কথা বিবেচনা করলে বাকি গ্যাস প্রায় ১১ বছর (১০ বছর ৮ মাস) ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
হামিদ জানান, বিদ্যুৎ বিভাগ স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৯০৫ দশমিক ২১ কোটি টাকা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ৩৯৫ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা পাবে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. মোজাফফর হোসেনের এক প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তদারকি জোরদার ও মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিগত কয়েক বছরে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ কমানো সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) বকেয়া কমানোর জন্য বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছ থেকে বকেয়া আদায়ের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা, বিল খেলাপিদের তালিকা তৈরি ও তা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপরিশোধিত বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।
আরও পড়ুন: ৮০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন: নসরুল হামিদ
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া কমাতে সকল গ্রাহককে প্রিপেইড/স্মার্ট মিটারের আওতায় আনা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সর্বশেষ (১ জুলাই, ২০২২) হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রমাণিত ও সম্ভাব্য পুনরুদ্ধারযোগ্য গ্যাস মজুদের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৫৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।
গ্যাস উৎপাদনের শুরু থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে গ্যাসের ক্রমবর্ধমান পরিমাণ ১৯ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।
বর্তমানে অবশিষ্ট পুনরুদ্ধারযোগ্য মজুদ ৯ দশমিক ০৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমান গড় দৈনিক ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বিবেচনা করলে অবশিষ্ট গ্যাস ১০ বছর ৮ মাস (প্রায় ১১ বছর) ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, দৈনিক হারে গ্যাস উৎপাদন হ্রাস পেলে এবং নতুন গ্যাসক্ষেত্র উদ্ভাবনের পর গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো হলে উল্লিখিত সময় বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে এলপিজি আমদানি করতে হয়, সেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না কমলে সরকারি ভর্তুকি ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজারে এলপিজির দাম কমানোর কোনো সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন: নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতির আশা নসরুল হামিদের
নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-১০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে ২৮ দশমিক ৩বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
এর মধ্যে বিদ্যুতের জন্য বেসরকারি খাতে ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে হামিদ বলেন, ডিজেল বিক্রি করে বিপিসি প্রতি লিটারে ২১ টাকা লোকসান করছে।
দেশব্যাপী চলমান লোডশেডিং নিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে হামিদ বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার এবং পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে জ্বালানি সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে গ্রিডে যুক্ত করা হবে এবং বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করে দ্রুত সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক লুটপাট, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কথা বলে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ।
হারুন প্রস্তাব করেন, স্পিকার এ বিষয়ে সংসদে আলোচনার ব্যবস্থা করবেন।
জবাবে হামিদ বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হারুনের সমালোচনা করেন।
আরও পড়ুন: শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহের সমস্যা সমাধান করা হবে: নসরুল হামিদ
২ বছর আগে