বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে বিদ্যুৎ বিল বাবদ বকেয়া ১৮৯৩ কোটি টাকা পাবে বিদ্যুৎ বিভাগ।
তিনি আরও বলেন, দৈনিক গড়ে ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের কথা বিবেচনা করলে বাকি গ্যাস প্রায় ১১ বছর (১০ বছর ৮ মাস) ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
হামিদ জানান, বিদ্যুৎ বিভাগ স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৯০৫ দশমিক ২১ কোটি টাকা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ৩৯৫ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা পাবে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. মোজাফফর হোসেনের এক প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তদারকি জোরদার ও মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিগত কয়েক বছরে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ কমানো সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) বকেয়া কমানোর জন্য বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছ থেকে বকেয়া আদায়ের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা, বিল খেলাপিদের তালিকা তৈরি ও তা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপরিশোধিত বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।
আরও পড়ুন: ৮০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন: নসরুল হামিদ
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া কমাতে সকল গ্রাহককে প্রিপেইড/স্মার্ট মিটারের আওতায় আনা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সর্বশেষ (১ জুলাই, ২০২২) হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রমাণিত ও সম্ভাব্য পুনরুদ্ধারযোগ্য গ্যাস মজুদের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৫৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।
গ্যাস উৎপাদনের শুরু থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে গ্যাসের ক্রমবর্ধমান পরিমাণ ১৯ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।
বর্তমানে অবশিষ্ট পুনরুদ্ধারযোগ্য মজুদ ৯ দশমিক ০৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমান গড় দৈনিক ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বিবেচনা করলে অবশিষ্ট গ্যাস ১০ বছর ৮ মাস (প্রায় ১১ বছর) ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, দৈনিক হারে গ্যাস উৎপাদন হ্রাস পেলে এবং নতুন গ্যাসক্ষেত্র উদ্ভাবনের পর গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো হলে উল্লিখিত সময় বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে এলপিজি আমদানি করতে হয়, সেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না কমলে সরকারি ভর্তুকি ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজারে এলপিজির দাম কমানোর কোনো সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন: নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতির আশা নসরুল হামিদের
নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-১০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে ২৮ দশমিক ৩বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
এর মধ্যে বিদ্যুতের জন্য বেসরকারি খাতে ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে হামিদ বলেন, ডিজেল বিক্রি করে বিপিসি প্রতি লিটারে ২১ টাকা লোকসান করছে।
দেশব্যাপী চলমান লোডশেডিং নিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে হামিদ বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার এবং পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে জ্বালানি সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে গ্রিডে যুক্ত করা হবে এবং বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করে দ্রুত সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক লুটপাট, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কথা বলে সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ।
হারুন প্রস্তাব করেন, স্পিকার এ বিষয়ে সংসদে আলোচনার ব্যবস্থা করবেন।
জবাবে হামিদ বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হারুনের সমালোচনা করেন।
আরও পড়ুন: শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহের সমস্যা সমাধান করা হবে: নসরুল হামিদ