কর্মক্ষেত্র
কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নয়: জবি ভিসি
কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সাদেকা হালিম।
জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
জেন্ডার ইস্যুতে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষের মধ্যে যে ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের থেকে দুর্বল মনে করা হচ্ছে এবং এ কারণে নারীকে অধস্তন করে রাখতে হবে, এটা সম্পূর্ণ অমূলক।’
আরও পড়ুন: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি অধ্যাপক সাদেকা হালিম
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে, যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়। যদিও বাংলাদেশের সংবিধানের নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ‘সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কীভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু, এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেওয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এ উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা উল্লেখ করেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে, তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে। আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজ কে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।’
আরও পড়ুন: রাইড-শেয়ারিংয়ে বাড়ছে ঢাকার কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনমন্যতায় ভুগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্টস সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটা বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে, তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী, সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ না। খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হয়।’
তবে নারী সমাজের পরিবর্তনের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, এবং এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক। সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশ গ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, সমাজ কিন্তু তখনই বদলাবে।’
আরও পড়ুন: দুর্যোগের সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ বোধ করেন না প্রায় ৬৭ শতাংশ নারী
প্রতিবন্ধীরা ‘কর্মক্ষেত্রে বেশি মনোযোগী ও দায়িত্বশীল’: পলক
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, সুস্থ স্বাভাবিক তরুণদের চেয়ে প্রতিবন্ধীরা কর্মক্ষেত্রে বেশি মনোযোগী ও দায়িত্বশীল।
‘তারা (প্রতিবন্ধীরা) আমাদের ভাই ও বোন এবং তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা (প্রতিবন্ধীরা) তাদের কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও দায়িত্বশীলতা দিয়ে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন: অনলাইন জুয়ার অ্যাপস শতভাগ বন্ধ করা হবে: পলক
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে চাকরি মেলার উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পলক এসব কথা বলেন।
প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সহযোগিতায় এ মেলার আয়োজন করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বিশেষভাবে সক্ষমদের বৈষম্য দূর করতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো প্রতিবন্ধী শিশু ঘরে থাকবে না। তারা পরিবার বা দেশের বোঝা হবে না। প্রতিবন্ধীদের একটু সহযোগিতা ও সুযোগ করে দিলে তারা দেশের সম্পদে পরিণত হবে এবং বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে নেতৃত্ব দেবে।’
আরও পড়ুন: চবি সাংবাদিকতা বিভাগ অ্যালামনাইয়ের বার্ষিক পুনর্মিলনী উপলক্ষ্যে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
পলক বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করা হবে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কেবল চাকরি মেলা হবে না, তারা উদ্যোক্তা হয়ে হাজার হাজার যুবকের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।
তিনি ‘এম্পোরিয়া (emporia.bcc.gov.bd)’ পোর্টাল ব্যবহারের আহ্বান জানান, যাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ঘরে বসেই দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। একই সঙ্গে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালককে এনজিওতে চাকরির ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. শামসুল আরেফিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মো. সাইদুর রহমান এবং সিএসআইডির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম।
আরও পড়ুন: ক্যাশলেস সোসাইটি বিনির্মাণে যৌথভাবে কাজ করবে বাংলাদেশ-সুইডেন: পলক
২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে ১৪৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে: ওশি
বিদায়ী ২০২৩ সালে সারাদেশে কর্মক্ষেত্রে ১ হাজার ৪৩২ জন শ্রমিক নিহত এবং ৫০২ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নজরুল হামিদ মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা ‘বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশন’- এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায়।
ফাউন্ডেশন ১৫টি মিডিয়া আউটলেট এবং তাদের নিজস্ব মাঠ পর্যায়ের উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওএসএইচই-এর চেয়ারপার্সন সাকি রিজওয়ানা, ভাইস চেয়ারপার্সন ড. এস এম মোর্শেদ, গবেষণা ও মনিটরিং অফিসার নুর আলম এবং কেস ম্যানেজমেন্ট অফিসার নুসরাত জাহান।
প্রতিবেদন পেশ করে ড. মোরশেদ বলেন, ২০২৩ সালে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে ৩২৯ জন শ্রমিক মারা গেছে এবং অ-প্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে মৃতের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১০৩ জন।
তথ্যে দেখা যায়, পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৬৩৭ জন শ্রমিক তাদের শেষ পর্যন্ত পূরণ করেছে।
এই সময়ের মধ্যে, ২২০ জন দিনমজুর তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন এবং ৭৬ জন আহত হয়েছেন। নির্মাণ খাতে ১৪৯ জন মারা গেছেন এবং ৭২ জন আহত হয়েছেন, কৃষিতে ১৪৬ জন মারা গেছেন এবং ১০ জন আহত হয়েছেন (বজ্রপাতে ৭১ জন মারা গেছেন), পোশাক শিল্পে ৬৪ জন মারা গেছেন এবং ৮৯ জন আহত গেছেন এবং ৯৪ জন মারা গেছেন এবং ১৫ জন আহত গেছেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় ইউনিক গ্রুপের এমডির মেয়ে নাহিদার মৃত্যু
মৎস্য খাতে ৫৩ জন নিহত এবং ২২ জন আহত, সেবা খাতে ২৬ জন নিহত এবং ২২ জন আহত, সিরামিক খাতে ১৭ জন নিহত এবং ৯ জন আহত, চামড়া শিল্পে ৪ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত, ইটভাটায় ১১ জন নিহত এবং ছয়জন আহত, জাহাজডুবির ঘটনায় ৭ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন।
অপরদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এক চা শ্রমিক নিহত ও ছয়জন আহত এবং তিনজন নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা কাঠামো ধসে পড়া, বজ্রপাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সহিংসতা, গৃহকর্মীদের শারীরিক নির্যাতন, দেওয়াল-বিল্ডিং-ছাদ ও ভূমিধস কর্মক্ষেত্রে হতাহতের প্রধান কারণ।
ওশি কিছু সুপারিশ পেশ করেছে যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ (২০১৮ সালে সংশোধিত) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫-এ উল্লিখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধিগুলো প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে নিবিড় পর্যবেক্ষণ।
এটি পোশাক খাতের মতো শ্রমিক ও মালিকদের সমন্বয়ে একটি নিরাপত্তা কমিটি গঠন এবং শ্রম আইনে মৃত ও আহত শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং ৫ লাখ টাকা দেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।
আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা এবং সব শিল্পখাতে কর্মসংস্থান ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) প্রবর্তনেরও সুপারিশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় ভারতীয় দম্পতি নিহত
কর্মক্ষেত্র-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন নিয়ে গোলটেবিল আলোচনা
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) এবং জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের প্রয়োজনীয়তা’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারের এ এস মাহমুদ সেমিনার হলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) ও জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আইএলও’র জেন্ডার স্পেসালিস্ট শাম্মিন সুলতানা, ডিবিসি চ্যানেলের সাংবাদিক ইসরাত জাহান ঊর্মি এবং ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন আহমেদ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- কর্মজীবী নারী, বিএফএলএলএফইএ, বিজিটিএলডব্লিওএফ, ট্যানারি ওয়ার্কার্স, বিটিজিডব্লিওএল, ব্লাস্ট, ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, মনডিয়াল এফএনভি, ফুলকি, নারী মৈত্রী, সবুজের অভিযান, ইটিআই, এলএফএমইএবি, পংক্তি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জাতীয় শ্রমিক জোট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বিলস্, সলিডারিটি সেন্টার, উইমেন এন্ড ই-কমার্স এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর্মজীবী নারী’র অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, গোপনীয়তা রক্ষা করে তদন্ত কমিটি কাজ করছে কি না সে ব্যাপারে নজরদারি করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের সাহস দিতে হবে, যাতে তারা বিষয়টি নিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। মিডিয়াতে পৃথকভাবে এই বিষয়ক কর্নার খোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইএলও’র জেন্ডার স্পেসালিস্ট শাম্মিন সুলতানা বলেন, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সুন্দর রাখার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে আইনগুলোকে হালনাগাদ করতে হবে।
ডিবিসির সাংবাদিক ইসরাত জাহান ঊর্মি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে কাজ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির প্রয়াস চালাতে হবে এবং গণমাধ্যম কর্মীসহ সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: সংসদ সদস্যদের গোলটেবিল বৈঠক: কপ-২৮ এর আগে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের ককাস গঠনের প্রস্তাব
কুতুব উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে প্রতিটি কারখানায় অ্যান্টি হ্যারেসমেন্ট কমিটি থাকা বাধ্যতামূলক করা এবং আইন প্রয়োগের প্রতি জোর দিতে বলেন।
জাতীয় শ্রমিক জোটের জেনারেল সেক্রেটারি নাঈমুল আহসান জুয়েল জানান, নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার জন্য পাঠ্যপুস্তকে এ বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। আলোচনার পাশাপাশি মাঠে নামতে হবে এবং বিষয়টি প্রচারের মাধ্যমে প্রসার ঘটাতে হবে। বিষয়টিকে তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ন্যাশনাল ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্বলিত একটি পৃথক আইন করা দরকার।
বিএফএলএলএফইএ’র সচিব জয়নাল আবেদীন প্রচলিত আইনটির প্রয়োগের উপর জোর দিতে এবং কেবল আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধ না থেকে মানসিকতার পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান।
জান্নাত ফেরদৌস পান্না বেগম বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানীর বিষয়ে যে মামলাগুলো ইতোমধ্যে হয়েছে, তার হাল অবস্থা জানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটির পূর্ণ স্বাধীনতায় কাজ করার জায়গা তৈরি করতে হবে, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির তদন্ত কমিটি কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। গণপরিবহন ও রাস্তাঘাটে নারীরা যে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় সে বিষয়ে আরও বেশি নজর দিতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থা বা উচ্চশিক্ষায় ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে জানান মনডিয়াল এফএনভি কনসালটেন্ট শাহিনুর।
সাংবাদিক আতাউর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটি আছে কি না এবং কমিটির মিটিং হয় কি না সে বিষয়ে তদারকি করতে হবে। কমিটি কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ কমে না যাওয়ার জন্য নারীদের পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে হবে বলে দাবি করেন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধি।
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের আইনটি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এজন্য সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। কেবল শ্রমিককেন্দ্রিক কর্মক্ষেত্র নয় বরং সব কর্মক্ষেত্রে এটা নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সামাজিকভাবে একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ তৈরি করতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতি তৈরি করা প্রয়োজন: গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ
কসমস-বিআইপিএসএস গোলটেবিল: ইউক্রেন সংঘাতের বিরূপ প্রভাব কাটাতে বাংলাদেশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে