কর্মক্ষেত্র
কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপায়
যেকোনো কর্মক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক কর্মীর সক্রিয় অংশগ্রহণ। আর এই অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে কর্মের সহায়ক পরিবেশ। সর্বাঙ্গীনভাবে ব্যক্তি মর্যাদা ও নিরাপত্তার সমন্বয়ে গড়ে ওঠে কাজের উপযোগী পরিবেশ। কিন্তু শিক্ষা ও সভ্যতার মেলবন্ধনে গঠিত কর্মযজ্ঞে বারবার আশঙ্কার সম্মুখীন হয়েছে নারীর নিরাপত্তা। অথচ নারীরা তাদের যোগ্যতা ও শ্রম দিয়ে যেকোনো গঠনমূলক কাজে অবদান রাখতে পারে। কিন্তু সেজন্য প্রয়োজন আত্মমর্যাদা নিয়ে দক্ষতা প্রয়োগের সহায়ক পরিবেশ থাকা। এই পরিপ্রেক্ষিতে চলুন, নারীদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
যে ১০টি উপায়ে নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলা যায়
হয়রানি ও বৈষম্যবিরোধী নীতি প্রয়োগ
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ৩৩২ ধারা অনুযায়ী যেকোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত নারীর সঙ্গে তার সম্মানের পরিপন্থী, অশালীন বা অশ্লীল হিসেবে গণ্য হতে পারে এমন আচরণ করা যাবে না।
এই আইনের রূপরেখায় নারীদের প্রতি হয়রানি ও বৈষম্য প্রতিরোধের জন্য কোম্পানি নীতিমালায় সুস্পষ্ট নীতি ও নির্দেশিকা অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এখানে নারীর আত্মমর্যাদা হানিকর প্রতিটি অনুপযুক্ত আচরণের স্বচ্ছ বিবৃতি থাকবে। একই সঙ্গে বিধি লঙ্ঘনের পরিণতিগুলোও বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। অতঃপর নির্ধারিত বিধিমালা স্তর ও পদ নির্বিশেষে সব কর্মচারীদের জানানো এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: স্মার্টফোনে ভূমিকম্প সতর্কতা চালু করবেন যেভাবে
পৃথক নারী নিরাপত্তা সেল গঠন
নারী কর্মচারীদের সুরক্ষায় হুমকিজনক বিষয়গুলো বহুমুখী হয়। তাই তার তদারক প্রক্রিয়া এবং নিরসন পদ্ধতিও ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোত্তম হচ্ছে একটি নিবেদিত নারী সুরক্ষা সেল তৈরি করা। এই পরিষদের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রোটোকল থাকা উচিত। এর আওতায় নানা ধরনের অভিযোগ নিষ্পত্তি, আইনি পরামর্শ, তদন্ত ও শাস্তি প্রদান এবং মানসিক সহায়তা বা কাউন্সিলিং অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এর ফলে নারী কর্মচারীরা নিঃসঙ্কোচে, সহজভাবে এবং নির্ভরতার সঙ্গে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।
মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্ম-সংস্কৃতি বাস্তবায়ন
একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি পরিষদে নারী ও পুরুষের সংখ্যার মধ্যে সমতা বিধান করা জরুরি। বিশেষ করে উচ্চপদস্থ জায়গাগুলোতে নারীদের উপস্থিতি নারী চাকরিপ্রার্থীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস এবং স্বীকৃতিপ্রাপ্তির অনুভূতি সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো প্রভাবশালী পদে থাকায় নারী কর্মকর্তা পুরো প্রতিষ্ঠানের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় প্রধান ভূমিকা রাখতে পারেন। এই বিষয় কর্মক্ষেত্রে আচরণবিধি প্রতিষ্ঠার জন্যও জরুরি। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত কর্মসংস্কৃতির দৌলতে প্রতিটি নবনিযুক্ত কর্মচারী বুঝতে পারে যে, তাদের কাছ থেকে কী আচরণ প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তারা এও বুঝে যায় যে, কোন আচরণের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে।
পূর্ব প্রতিষ্ঠিত আচরণবিধি পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এখানে স্বতঃস্ফূর্ততা আনতে ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের উন্মুক্ত এবং উদার হওয়া অপরিহার্য। নিয়োগকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে স্বচ্ছ যোগাযোগ ব্যবস্থা কাজের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায়ে সহায়ক হয়।
আরও পড়ুন: নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি যে কারণে
বেনামী অভিযোগের ব্যবস্থা গ্রহণ
প্রায় ক্ষেত্রে নারী কর্মচারীরা সহকর্মী বা বসদের অসংযত আচরণে লজ্জা ও আরও বেশি সম্মান হানির আশঙ্কায় আত্মপ্রকাশে অনীহা পোষণ করে। এমনকি ভুক্তভোগীদের চাকরি হারানোর ভয় থাকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো অগোচরেই থেকে যায়। তাই এমন একটি সিস্টেম তৈরি করা উচিত যেখানে পরিচয় গোপন রেখেই অভিযোগের সুযোগ থাকবে। প্রথমেই জনসমক্ষে না এনে গোপনে চালিয়ে যেতে হবে প্রাথমিক তদন্ত। এতে নারী কর্মীরা অকপটে নিজেদের প্রকাশ করতে পারবে। অধিকন্তু, এ বিষয়ে স্বয়ং নারী কর্মচারীরা কী ভাবছে তা বোঝার জন্য একটা সমীক্ষা চালানো যেতে পারে। এর মধ্য দিয়েও বেরিয়ে আসতে পারে নানা ধরনের প্রতিকূলতা।
নিরাপত্তা লঙ্ঘনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণ
এ ধরনের হয়রানিগুলোর জন্য কোনো বিচারই পাওয়া যাবে না; এরকম চিন্তা থেকেও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো আর প্রকাশ করা হয় না। এছাড়া দীর্ঘ প্রোটোকলের কারণে অনর্থক সময়ক্ষেপণের ফলে আস্থা হারিয়ে ফেলে ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে অপরাধী ব্যক্তি তার বিকৃত মানসিকতা অব্যাহত রাখতে সাহস ও প্রশ্রয় পেয়ে যায়।
তাই কালক্ষেপণ না করে নিয়োগকর্তাদের অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অবশ্যই অভিযুক্তের নিকট স্বচ্ছ হতে হবে। নিছক কোনো ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায় এড়ানো অথবা প্রতিষ্ঠানে সুনামের কথা ভেবে ভিন্ন দিকে পরিচালিত করা অন্যায়েরই নামান্তর। বরং দুষ্কৃতিকারীকে প্রতিষ্ঠানের আভ্যন্তরীণ আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুন: মোবাইল ফোন হ্যাকিং প্রতিরোধে করণীয়
এতে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানের প্রতি নারী কর্মীদের নির্ভরতা বাড়বে, অন্যদিকে শাস্তি দেখে অন্যান্যরাও সাবধান হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রকাশ্য শাস্তির বিধান ভবিষ্যতে একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
নিরাপদ পরিবহন বিকল্প
৯টা থেকে ৫টার অফিস প্রথায় স্বাভাবিকভাবে কাজ শেষে বের হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে কাজের প্রয়োজনে অতিরিক্ত সময় অফিসে থাকতে হয়। তাই নিদেনপক্ষে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে নারী কর্মচারীদের জন্য কোম্পানির নিজস্ব পরিবহন দেওয়া উচিত। প্রতিদিন কাজ শেষে ভয় নিয়ে বাসায় ফেরাটা মানসিক অসুস্থতার দিকে পরিচালিত করে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পরের দিন কাজের ওপর। তাই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই নারী কর্মীদের যাতায়াতের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া আবশ্যক।
এখানে একদম সুস্থভাবে বাসায় ফেরাটা নিশ্চিত করা উচিত। গণপরিবহন নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে দেওয়ার পর সেখান থেকে বাসায় ফেরার রাস্তাটি অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকে না। তাছাড়া মহাসড়কগুলো জনাকীর্ণ এবং প্রচুর আলোকিত থাকলেও আবাসিক এলাকার গলিগুলো কখনো কখনো অন্ধকার থাকে। কর্মচারীদের জন্য কমন পরিবহন দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর এই বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: ইসরো চন্দ্রযান-৩: ভারতের চন্দ্র বিজয়ে নারী বিজ্ঞানীদের সাফল্য
শক্তিশালী নিরাপত্তামূলক অবকাঠামো গঠন
নিয়োগকর্তাদের সিসিটিভি ক্যামেরা, অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের দিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই অবকাঠামো নির্জন সময়গুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি অপরাধ তদন্তের জন্যও প্রয়োজন। তাছাড়া এই সতর্কতার মাধ্যমে বাইরের সহিংসতা থেকেও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সুরক্ষিত করা যায়।
নারী কর্মচারীদের জন্য পৃথক ওয়াশরুম ও কমন রুমের ব্যবস্থা
দিনের একটা বিরাট সময় অতিবাহিত করা হয় অফিসে। এই দীর্ঘ সময়ে প্রাইভেসি রক্ষার্থে অফিসে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের জন্যও পৃথক কমন রুম ও ওয়াশরুম থাকা দরকার। এই স্বাচ্ছন্দ্যটুকু না থাকলে কর্মক্ষেত্রটি অনায়াসে অস্বস্তির জায়গায় পরিণত হয়। তবে এটি শুধু নারীর স্বাচ্ছন্দ্যের দিকটিই পরিপূর্ণ করে না, বরং এটি তাকে সম্মানিত করার শামিল। এর ফলে তারা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নিজের বাড়ির কাজ করার অনুভূতি পায়। অন্যদিকে, এই সুবিধা না থাকা নিতান্ত লিঙ্গ-বৈষম্যের নামান্তর।
সতর্কতা ও নিয়ম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান
মানবসম্পদ বিভাগ বা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা প্রধান দায়িত্বে থাকলেও নারী কর্মীদের সুরক্ষার দিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখা তাদের পক্ষে বেশ জটিল। এখানে দরকার দায়িত্বের বিকেন্দ্রিকরণ। এর মাধ্যমে মুখ্য দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি অন্যান্য কর্মচারীরাও নিরাপত্তা তদারকের ব্যাপারে সতর্ক হয়। এই কৌশল অবলম্বনের সর্বোত্তম পন্থা হলো কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে কাজের ফাঁকে পৃথক সেশনের মাধ্যমেও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-নীতি প্রণয়নের বিষয়গুলো কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন: লবিং-রেফারেন্স ছাড়াই চাকরি পেতে প্রয়োজনীয় কিছু দক্ষতা
এভাবে প্রতিটি নারী কর্মী পরস্পরের দিকে খেয়াল রাখতে পারবেন। এছাড়া পুরুষ কর্মীরাও কাজের পরিবেশ বজায় রাখাতে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে পারবেন। এভাবে বিধিমালার ব্যাপারে সতর্ক কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। পরবর্তীতে তারাই নবনিযুক্তদের কোম্পানি সংস্কৃতি ও নিয়ম-নীতি শিখিয়ে দিতে পারেন।
পিয়ার সাপোর্ট এবং বাডি সিস্টেম
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সময়োপযোগী কর্মসংস্কৃতি হচ্ছে এই বাডি সিস্টেম বা পিয়ার সাপোর্ট। এই গ্রুপভিত্তিক কাজের পদ্ধতিটি সবার জন্য প্রযোজ্য হলেও নারীদের জন্য এটি বেশ উপযোগী। এর মাধ্যমে অফিস অ্যাডমিনের পক্ষ থেকেই নির্দিষ্ট প্রোজেক্টের জন্য একাধিক কর্মচারীকে নিয়ে একটি গ্রুপ করে দেওয়া হয়। প্রোজেক্টটির কাজগুলো তারা নিজেদের যোগ্যতাগুলো পরিপূরকভাবে শেয়ার করার মাধ্যমে সম্পন্ন করে।
এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা যেতে পারে নারী কর্মচারীদের নিরাপত্তা রক্ষায়। ওভার-টাইম এবং কাজের সূত্রে দূরবর্তী কোনো স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কয়েকজনের একটি গ্রুপ করে দেওয়া যেতে পারে। তারা শুধু কাজের ক্ষেত্রেই নয়, নিরাপত্তাগত দিক থেকেও পরস্পরের প্রতি খেয়াল রাখবে। এই ব্যবস্থা কেবল তাৎক্ষণিক নিরাপত্তাই প্রদান করে না, বরং সহকর্মীদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বিশ্বাসের অনুভূতিও তৈরি করে। ফলশ্রুতিতে, যেকোনো বিপদে তারা একত্রিত থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।
আরো পড়ুন: কীভাবে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন?
পরিশিষ্ট
সর্বসাকূল্যে, কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জিরো টলারেন্স নীতি প্রণয়ন করা জরুরি। এই লক্ষ্যে নির্ভয়ে এবং নিঃসঙ্কোচে অভিযোগ করার সুযোগের পাশাপাশি যুগপৎভাবে পৃথক নিরাপত্তা সেল গঠন করা অপরিহার্য। এগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী অবকাঠামো কর্মক্ষেত্রের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে নিরাপদ করে তুলতে পারে। অপরদিকে, পরিবহন সুবিধা, পিয়ার ও বাডি সিস্টেম সহায়ক হতে পারে কর্মক্ষেত্রের বাইরে নারীর অবাধ বিচরণে। উপরন্তু, প্রাসঙ্গিক প্রশিক্ষণ সর্বাত্মকভাবে এই ব্যবস্থাকে পরিণত করতে পারে নিয়মিত চর্চায়।
আরো পড়ুন: নারীর নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষায় মোবাইল অ্যাপ
৩ মাস আগে
কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নয়: জবি ভিসি
কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সাদেকা হালিম।
জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
জেন্ডার ইস্যুতে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষের মধ্যে যে ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের থেকে দুর্বল মনে করা হচ্ছে এবং এ কারণে নারীকে অধস্তন করে রাখতে হবে, এটা সম্পূর্ণ অমূলক।’
আরও পড়ুন: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি অধ্যাপক সাদেকা হালিম
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে, যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়। যদিও বাংলাদেশের সংবিধানের নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, ‘সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কীভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু, এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেওয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এ উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা উল্লেখ করেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে, তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে। আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজ কে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।’
আরও পড়ুন: রাইড-শেয়ারিংয়ে বাড়ছে ঢাকার কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনমন্যতায় ভুগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্টস সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটা বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে, তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী, সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ না। খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হয়।’
তবে নারী সমাজের পরিবর্তনের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, এবং এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক। সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশ গ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, সমাজ কিন্তু তখনই বদলাবে।’
আরও পড়ুন: দুর্যোগের সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ বোধ করেন না প্রায় ৬৭ শতাংশ নারী
৮ মাস আগে
প্রতিবন্ধীরা ‘কর্মক্ষেত্রে বেশি মনোযোগী ও দায়িত্বশীল’: পলক
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, সুস্থ স্বাভাবিক তরুণদের চেয়ে প্রতিবন্ধীরা কর্মক্ষেত্রে বেশি মনোযোগী ও দায়িত্বশীল।
‘তারা (প্রতিবন্ধীরা) আমাদের ভাই ও বোন এবং তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা (প্রতিবন্ধীরা) তাদের কঠোর পরিশ্রম, মেধা ও দায়িত্বশীলতা দিয়ে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে।
আরও পড়ুন: অনলাইন জুয়ার অ্যাপস শতভাগ বন্ধ করা হবে: পলক
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে চাকরি মেলার উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পলক এসব কথা বলেন।
প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সহযোগিতায় এ মেলার আয়োজন করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বিশেষভাবে সক্ষমদের বৈষম্য দূর করতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো প্রতিবন্ধী শিশু ঘরে থাকবে না। তারা পরিবার বা দেশের বোঝা হবে না। প্রতিবন্ধীদের একটু সহযোগিতা ও সুযোগ করে দিলে তারা দেশের সম্পদে পরিণত হবে এবং বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে নেতৃত্ব দেবে।’
আরও পড়ুন: চবি সাংবাদিকতা বিভাগ অ্যালামনাইয়ের বার্ষিক পুনর্মিলনী উপলক্ষ্যে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
পলক বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করা হবে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কেবল চাকরি মেলা হবে না, তারা উদ্যোক্তা হয়ে হাজার হাজার যুবকের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।
তিনি ‘এম্পোরিয়া (emporia.bcc.gov.bd)’ পোর্টাল ব্যবহারের আহ্বান জানান, যাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ঘরে বসেই দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। একই সঙ্গে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালককে এনজিওতে চাকরির ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. শামসুল আরেফিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মো. সাইদুর রহমান এবং সিএসআইডির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম।
আরও পড়ুন: ক্যাশলেস সোসাইটি বিনির্মাণে যৌথভাবে কাজ করবে বাংলাদেশ-সুইডেন: পলক
৯ মাস আগে
২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে ১৪৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে: ওশি
বিদায়ী ২০২৩ সালে সারাদেশে কর্মক্ষেত্রে ১ হাজার ৪৩২ জন শ্রমিক নিহত এবং ৫০২ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নজরুল হামিদ মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থা ‘বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশন’- এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায়।
ফাউন্ডেশন ১৫টি মিডিয়া আউটলেট এবং তাদের নিজস্ব মাঠ পর্যায়ের উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওএসএইচই-এর চেয়ারপার্সন সাকি রিজওয়ানা, ভাইস চেয়ারপার্সন ড. এস এম মোর্শেদ, গবেষণা ও মনিটরিং অফিসার নুর আলম এবং কেস ম্যানেজমেন্ট অফিসার নুসরাত জাহান।
প্রতিবেদন পেশ করে ড. মোরশেদ বলেন, ২০২৩ সালে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে ৩২৯ জন শ্রমিক মারা গেছে এবং অ-প্রাতিষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে মৃতের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১০৩ জন।
তথ্যে দেখা যায়, পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৬৩৭ জন শ্রমিক তাদের শেষ পর্যন্ত পূরণ করেছে।
এই সময়ের মধ্যে, ২২০ জন দিনমজুর তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন এবং ৭৬ জন আহত হয়েছেন। নির্মাণ খাতে ১৪৯ জন মারা গেছেন এবং ৭২ জন আহত হয়েছেন, কৃষিতে ১৪৬ জন মারা গেছেন এবং ১০ জন আহত হয়েছেন (বজ্রপাতে ৭১ জন মারা গেছেন), পোশাক শিল্পে ৬৪ জন মারা গেছেন এবং ৮৯ জন আহত গেছেন এবং ৯৪ জন মারা গেছেন এবং ১৫ জন আহত গেছেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় ইউনিক গ্রুপের এমডির মেয়ে নাহিদার মৃত্যু
মৎস্য খাতে ৫৩ জন নিহত এবং ২২ জন আহত, সেবা খাতে ২৬ জন নিহত এবং ২২ জন আহত, সিরামিক খাতে ১৭ জন নিহত এবং ৯ জন আহত, চামড়া শিল্পে ৪ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত, ইটভাটায় ১১ জন নিহত এবং ছয়জন আহত, জাহাজডুবির ঘটনায় ৭ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন।
অপরদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এক চা শ্রমিক নিহত ও ছয়জন আহত এবং তিনজন নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা কাঠামো ধসে পড়া, বজ্রপাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সহিংসতা, গৃহকর্মীদের শারীরিক নির্যাতন, দেওয়াল-বিল্ডিং-ছাদ ও ভূমিধস কর্মক্ষেত্রে হতাহতের প্রধান কারণ।
ওশি কিছু সুপারিশ পেশ করেছে যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ (২০১৮ সালে সংশোধিত) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫-এ উল্লিখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধিগুলো প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে নিবিড় পর্যবেক্ষণ।
এটি পোশাক খাতের মতো শ্রমিক ও মালিকদের সমন্বয়ে একটি নিরাপত্তা কমিটি গঠন এবং শ্রম আইনে মৃত ও আহত শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং ৫ লাখ টাকা দেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।
আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা এবং সব শিল্পখাতে কর্মসংস্থান ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) প্রবর্তনেরও সুপারিশ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনায় ভারতীয় দম্পতি নিহত
১০ মাস আগে
কর্মক্ষেত্র-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন নিয়ে গোলটেবিল আলোচনা
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) এবং জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের প্রয়োজনীয়তা’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারের এ এস মাহমুদ সেমিনার হলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) ও জেন্ডার প্লাটফর্ম বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন আইএলও’র জেন্ডার স্পেসালিস্ট শাম্মিন সুলতানা, ডিবিসি চ্যানেলের সাংবাদিক ইসরাত জাহান ঊর্মি এবং ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন আহমেদ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- কর্মজীবী নারী, বিএফএলএলএফইএ, বিজিটিএলডব্লিওএফ, ট্যানারি ওয়ার্কার্স, বিটিজিডব্লিওএল, ব্লাস্ট, ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, মনডিয়াল এফএনভি, ফুলকি, নারী মৈত্রী, সবুজের অভিযান, ইটিআই, এলএফএমইএবি, পংক্তি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জাতীয় শ্রমিক জোট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বিলস্, সলিডারিটি সেন্টার, উইমেন এন্ড ই-কমার্স এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর্মজীবী নারী’র অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, গোপনীয়তা রক্ষা করে তদন্ত কমিটি কাজ করছে কি না সে ব্যাপারে নজরদারি করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের সাহস দিতে হবে, যাতে তারা বিষয়টি নিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে। মিডিয়াতে পৃথকভাবে এই বিষয়ক কর্নার খোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইএলও’র জেন্ডার স্পেসালিস্ট শাম্মিন সুলতানা বলেন, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সুন্দর রাখার ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে আইনগুলোকে হালনাগাদ করতে হবে।
ডিবিসির সাংবাদিক ইসরাত জাহান ঊর্মি বলেন, জাতীয় পর্যায়ে কাজ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির প্রয়াস চালাতে হবে এবং গণমাধ্যম কর্মীসহ সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন: সংসদ সদস্যদের গোলটেবিল বৈঠক: কপ-২৮ এর আগে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের ককাস গঠনের প্রস্তাব
কুতুব উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে প্রতিটি কারখানায় অ্যান্টি হ্যারেসমেন্ট কমিটি থাকা বাধ্যতামূলক করা এবং আইন প্রয়োগের প্রতি জোর দিতে বলেন।
জাতীয় শ্রমিক জোটের জেনারেল সেক্রেটারি নাঈমুল আহসান জুয়েল জানান, নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার জন্য পাঠ্যপুস্তকে এ বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। আলোচনার পাশাপাশি মাঠে নামতে হবে এবং বিষয়টি প্রচারের মাধ্যমে প্রসার ঘটাতে হবে। বিষয়টিকে তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ন্যাশনাল ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি যাতে না ঘটে তার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্বলিত একটি পৃথক আইন করা দরকার।
বিএফএলএলএফইএ’র সচিব জয়নাল আবেদীন প্রচলিত আইনটির প্রয়োগের উপর জোর দিতে এবং কেবল আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধ না থেকে মানসিকতার পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান।
জান্নাত ফেরদৌস পান্না বেগম বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানীর বিষয়ে যে মামলাগুলো ইতোমধ্যে হয়েছে, তার হাল অবস্থা জানতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটির পূর্ণ স্বাধীনতায় কাজ করার জায়গা তৈরি করতে হবে, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির তদন্ত কমিটি কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। গণপরিবহন ও রাস্তাঘাটে নারীরা যে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় সে বিষয়ে আরও বেশি নজর দিতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থা বা উচ্চশিক্ষায় ট্রেড ইউনিয়ন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলে জানান মনডিয়াল এফএনভি কনসালটেন্ট শাহিনুর।
সাংবাদিক আতাউর রহমান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যান্টি হ্যারেজমেন্ট কমিটি আছে কি না এবং কমিটির মিটিং হয় কি না সে বিষয়ে তদারকি করতে হবে। কমিটি কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ কমে না যাওয়ার জন্য নারীদের পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে হবে বলে দাবি করেন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধি।
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের আইনটি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে এবং এজন্য সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। কেবল শ্রমিককেন্দ্রিক কর্মক্ষেত্র নয় বরং সব কর্মক্ষেত্রে এটা নিয়ে কাজ করতে হবে এবং সামাজিকভাবে একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ তৈরি করতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতি তৈরি করা প্রয়োজন: গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ
কসমস-বিআইপিএসএস গোলটেবিল: ইউক্রেন সংঘাতের বিরূপ প্রভাব কাটাতে বাংলাদেশকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে
১১ মাস আগে