সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
সাম্য হত্যা: আসামিদের ধরলেও রহস্য উদঘাটন হবে কবে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে ২৭ মে বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এ মামলায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। এমনকি তাদের মধ্যে দুজন নাকি ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
তবে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ সুস্পষ্ট করে এখনও জানাতে পারেনি ডিএমপি। আবার আদালতে দেওয়া আসামিদের জবানবন্দির সঙ্গে পুলিশের বক্তব্যের মিল নেই বলে দাবি করেছে সাম্যর পরিবার। তাদের দাবি, সাম্যকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ছাত্রদলও ডিএমপির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। সব মিলিয়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
মামলার বর্তমান অবস্থা
সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে করে সাম্য ও তার দুই বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। এ সময় তারা মেহেদীর গ্রুপের রাব্বির হাতে একটি টিজার গান (যেটিতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়) দেখতে পান। টিজার গানটি দেখে সেটি কী— তা জানতে চান সাম্য। এ নিয়ে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর ওই মাদক ব্যবসায়ীর সহযোগীরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। সাম্যকে ছুরিকাঘাত করেন রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি।’
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বা নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে সে সময় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এখন চলমান। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের তদন্ত এ পর্যন্ত আছে। এর নেপথ্যে আর কোনো ঘটনা আছে কি না, সেটিও আমরা নিবিড়ভাবে দেখছি।’
গ্রেপ্তার হওয়া মেহেদীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সুইচগিয়ারটি উদ্যানের মাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান এই ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যায় বড় ষড়যন্ত্র থাকলেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে না: ঢাবি ছাত্রদল
পরিবারের সদস্যের বক্তব্য
তবে পুলিশের দাবির ওপর প্রশ্ন তুলেছেন সাম্যর বড় ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর। এক আসামির আদালতের দেওয়া জবানবন্দি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই নিউজটায় বলে হয়েছে আসামি নাকি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। এই খবর যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে তো সাম্য হত্যা একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ আকস্মাৎ মারামারির হলে তো দুটো দল প্রস্তুত থাকে না।’
পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টি আমি পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেটি বিস্তর তদন্ত করে আমাদের জানাবেন বলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পুলিশের কাছে আসামির জবানবন্দির কপি চেয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি। পুলিশ জানিয়েছে সেটি আদালত থেকে তুলতে হবে।’
দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়েছে, সাম্যকে সুইচগিয়ার দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। দুই গ্রুপের পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। হত্যার পর আসামিরা পালিয়ে কক্সবাজারে চলে যান। সোমবার (২৬ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালতে আসামি মো. রিপন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান।
জবানবন্দিতে রিপন বলেন, সাম্যকে হত্যার পর মূল আসামিকে তিনি মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দিরের গেটে নিয়ে যান। সেখান থেকে আরেকটিকে গ্রুপ তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এরপর তারা সবাই কক্সবাজারে পালিয়ে যান।’
তার ‘জবানবন্দি’ অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে দুটি গ্রুপ। ৫ থেকে ৭ জন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। এর মধ্যে দুজন সাম্যকে আঘাত করেন, বাকিরা আশপাশে নজর রাখেন। হত্যাকারীরা সবাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটনের দাবি ডিএমপির
সহপাঠীদের বক্তব্য ও পরবর্তী কর্মসূচি
এদিকে, ঘটনাস্থলে থাকা ভুক্তভোগী ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলামের বর্ণনাকে সমর্থন করেছেন। তার দাবি, রাব্বি নামের ছেলেটার হাতেই টিজার গান ছিল।
এর আগে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বায়েজিদ বলেছিলেন, ‘মুক্ত মঞ্চের পাশে (হত্যাকাণ্ডের স্থানের পাশে) দুটি অল্পবয়সী শিশু ছিল। মন্দিরের গেট দিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একজন আমাদের লক্ষ্য করে টিজার গান সদৃশ কিছু একটা মারে। শিশুদের হাতে এগুলো থাকা নিরাপদ না ভেবে সাম্য গাড়ি ঘোরায়। এ সময় আমরা বাচ্চাটিকে ধরতে গেলে সে পালানোর চেষ্টা করে।’
ঘটনার আকস্মিকতায় অন্য একটি পক্ষের মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগে তাদের। আর এ নিয়েই শুরু হয় কথা কাটাকাটি, যা একপর্যায়ে প্রাণঘাতী মারামারিতে রূপ নেয়।
শিশু নাকি তরুণের হাতে টিজার গান ছিল জানতে চাইলে ঢাবির এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘তার বয়স খুব একটা বেশি না, ১৮ বা এর কাছাকাছি হবে। তার কাছ থেকেই গানটি কাড়তে গিয়েই ঘটনার সূত্রপাত হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সাম্যর সঙ্গেই ছিলেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ। ওই সময় খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটারসাইকেলে চড়ে রমনা কালী মন্দির গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন তারা।
হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে সাম্যর সহপাঠী এ শিক্ষার্থী বলেন, ‘পুলিশ এখনও হত্যার মোটিভ বা হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারো হাত আছে কিনা, সেটি বের করতে পারেনি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে এটি বের করার জন্য পুলিশকে চাপ প্রয়োগে তৎপর রয়েছি।’
ছাত্রদলের অবস্থান
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ডিবির একাধিক দল গত কয়েক দিনে কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মেহেদী হাসান, রাব্বি ওরফে ‘কবুতর রাব্বি’, নাহিদ হাসান পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ইসলাম, রবিন, সুজন সরকার ও রিপন— মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তবে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
গত বুধবার (২৮ মে) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাঝে তিনি সাম্য হত্যা নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে। সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে বলে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্যর পরিবারও ডিএমপির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরাও সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করলাম। সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে ছাত্রদলের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
উদ্যানে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য দমেনি
সাম্য হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
তবে নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরালো হলেও এর মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে চলেছে। গত রবিবার (২৫ মে) ছিনতাইয়ের শিকার হন বলে দাবি করেছেন সেখানে ঘুরতে যাওয়া বাপ্পি (১৯) ও তার বন্ধুরা।
তারা ইউএনবিকে জানান, চারটি মোটরসাইকেলে করে ৭-৮ জন তাদের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। শুধু তা-ই নয়, ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোও লাগানো ছিল বলে দাবি তাদের।
এ ঘটনায় উদ্যানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য হালিমকে (৩০) প্রধান আসামি করে শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলে হয়েছে, বন্ধুদের সঙ্গে আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেড়াতে গেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রমনা কালী মন্দিরের পেছনে রাস্তার ওপর আনসার সদস্যের নির্দেশে অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জন বাইকে করে এসে আমাদের জোর করে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। তারা আমাদের পিস্তল দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আমাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধরও করা হয়।
এরপর তাদের কাছে থাকা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যমানের দুটি ক্যানন ৬ডি ক্যামেরা, ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি ক্যানন ৬ডি মার্ক-২ ক্যামেরা, ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি ক্যামেরার লেন্স, মোট ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের তিনটি স্মার্টফোন এবং নগদ সাড়ে ১৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ছিনতাইয়ের পর তাদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারে তারা কাজ করছেন।
সাম্য হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ না যেতেই আবারও ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্যানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এর আগে, গত ১৭ মে তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার আটজনের প্রত্যেককে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজা। এরপর ২৩ মে তাদের ফের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ছয়জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন— তামিম হাওলাদার (৩০), পলাশ সরদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮), সোহাগ, হৃদয় ও রবিন।
১৮৭ দিন আগে
সাম্য হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার না হলেও পুরস্কৃত পুলিশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিলেও এই মামলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি—মূল হত্যাকারী এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এ ছাড়া ঘটনার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাবি করছে পুলিশের দুই পক্ষ।
গত মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে ঢাবি ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাম্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও যে ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে সাম্য নিহত হন, তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাম্যর সহপাঠীসহ অন্যান্য ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
রহস্য উদঘাটন করেই পুরস্কৃত পুলিশ
এদিকে, দ্রুততম সময়ে সাম্য হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারের স্বীকৃতিস্বরূপ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) শাহবাগ থানা পুলিশের সংশ্লিষ্ট টিমকে নগদ এক লাখ টাকা পুরস্কার দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।এ নিয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ‘শাহবাগ থানার তদন্ত টিমের দ্রুত তৎপরতার কারণে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর স্বীকৃতিস্বরুপ ও সামনে আরও ভালো কাজের উৎসাহ প্রদানের জন্যই এ পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে।’
পুরস্কার দেওয়ার পরের দিনই (শুক্রবার) সাম্য হত্যায় জড়িত মূল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শাহবাগ থানা অবরোধ করে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি—সাম্য হত্যার যিনি মূলহোতা, অর্থাৎ যিনি ছুরিকাঘাত করেছেন, সাদা শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা সেই ব্যক্তি ও তার সব সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
তবে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে হত্যাকারীকে ধরতে পারেনি পুলিশ অভিযোগ তুলে রবিবার (১৮ মে) আবারও শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার বর্ণনা ও হত্যাকাণ্ড
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সাম্যর সঙ্গেই ছিলেন তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আব্দুল্লাহ আল বায়েজিদ। ওই সময় খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটারসাইকেলে চড়ে রমনা কালী মন্দির গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করেন তারা। পরে খাওয়া শেষে একটি শিশুর হাতে থাকা ‘টিজার গান’ কাড়তে গিয়ে অন্য একটি পক্ষের মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগে তাদের। আর এ নিয়েই শুরু হয় কথা কাটাকাটি, যা একপর্যায়ে প্রাণঘাতী মারামারিতে রূপ নেয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ বলেন, ‘সেদিন আমাদের ইনস্টিটিউটের একটি প্রোগ্রাম ছিল। প্রোগ্রাম শেষ করে রাতে খাওয়া-দাওয়া করতে উদ্যানের গেটের দোকানগুলোতে যাই। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষে সেখান থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম। তার মধ্যেই এই বিপত্তি।’
তিনি বলেন, ‘মুক্ত মঞ্চের পাশে (হত্যাকাণ্ডের স্থানের পাশে) দুটি অল্পবয়সী শিশু ছিল। মন্দিরের গেট দিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের একজন আমাদের লক্ষ্য করে টিজার গান সদৃশ কিছু একটা মারে। শিশুদের হাতে এগুলো থাকা নিরাপদ না ভেবে সাম্য গাড়ি ঘোরায়। এ সময় আমরা বাচ্চাটিকে ধরতে গেলে সে পালনোর চেষ্টা করে।’
‘এ সময় সেখানে কয়েকজন বসে ছিলেন। তাদের দিকে আমাদের খেয়াল ছিল না। হঠাৎ তাদের একটি বাইকের সঙ্গে আমাদের (বাইকের) ধাক্কা লাগে। এরপরই ওই ব্যক্তিরা আমাদের ওপর তেড়ে আসে।’
আরও পড়ুন: ঢাবির সাম্য হত্যাকাণ্ড: ৬ দিনের রিমান্ডে তিনজন
ওই ঘটনায় আহত এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘শুরুতে কথা কাটাকাটি হয়, পরে তারা প্রভাব দেখাতে চাইলে আমরাও উত্তেজিত হয়ে যাই। একপর্যায়ে পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়া লাল টি-শার্ট পরা ব্যক্তি আমাকে মাটিতে ফেলে মারধর শুরু করে।’
‘১-২ মিনিটের মধ্যেই ঘটনার আকস্মিকতা সামলে দেখি, সাম্য উঠে দাঁড়িয়েছে। তারপর চোখ যায় তার পায়ের দিকে। দেখি, তার ডান পা রক্তাক্ত। তার পরপরই ধুপ করে পড়ে যায় সে।’কথা বলতে গিয়ে এ সময় কণ্ঠ ভারী হয়ে ওঠে বায়েজিদের।
নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের সাহায্য চাই, কিন্তু কেউ সে সময় এগিয়ে আসেনি। পরে একটি ছোট বাচ্চার সাহায্য নিয়ে ওকে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
মূলত তাদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সাদা শার্ট বা পাঞ্জাবি পরা এক যুবক বড় ছুরি জাতীয় কোনো অস্ত্র দিয়ে সাম্যর পায়ে আঘাত করেন। এর পরপরই তিনটি মোটরসাইকেলে করে তাদের ১০-১২ জনের একটি দল দ্রুত পালিয়ে যান বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্রের আঘাতে সাম্যর ডান পায়ের উরুতে গভীর ক্ষত হয়। কাটা জায়গা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। হাসপাতালে নিতে নিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েই মারা যায় সে।’
পরে এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘উরুর পেছনে শরীরের একটি অন্যতম প্রধান রক্তনালী থাকে, যাকে বলা হয় ফিমোরাল আর্টারি। এটিকে বলতে পারেন দেহের প্রধান রক্তনালীর একটি শাখা রক্তনালী, কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
ওই রক্তনালী কেটে যাওয়ার পর হাসপাতালে আনতে দেরি হওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে নিজের ধারণার কথা জানান ওই চিকিৎসক।
আসামিদের গ্রেপ্তার নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন (বুধবার) সকালে রাজধানীর পৃথক তিনটি স্থান থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই শরিফুল আলম শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আটক তামিম হাওলাদার (৩০), সম্রাট মল্লিক (২৮) ও পলাশ সরদারকে (২৮) আদালতে তোলে পুলিশ। এরপর তাদের প্রত্যেককে ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন আসামিদের তিনজনই। তারা আদালতকে বলেন, হয়রানি করার জন্য আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
অন্যদিকে, গ্রেপ্তারদের অপরাধের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী বায়েজিদের দাবি, তারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজন আমাদের আক্রমণ করে মারধর করেছেন। তবে মূল হত্যাকারীকে ধরা হয়নি, তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইইআর-এর আরেক শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম রাফি হত্যাকারীর বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘যে তিনজনকে ধরা হয়েছে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, কিন্ত তারা মূল হত্যাকারী নন। সাদা জামা কিংবা পাঞ্জাবি পরা এক ব্যক্তি সাম্যকে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। ওই ব্যাক্তির গায়ের রঙ ফর্সা; তাকে দেখতে মোটেও উদ্বাস্তুর মতো নয়।’
একই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ফারহান শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ‘হত্যার দিন রাতে আমাদের ইনিস্টিটিউটের একটি প্রোগ্রাম ছিল। রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত আমরা সাম্য ভাইয়ের সঙ্গেই ছিলাম।’
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, আসামিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম
তার দাবি, রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছুরিকাঘাত এবং সোয়া ১২টার দিকে সাম্যকে মৃত ঘোষণা করা হলেও হত্যাকাণ্ডের ৬ ঘণ্টা পরও ঘটনাস্থল অরক্ষিত ছিল। ঢাবি শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে ঘটনাস্থলটি রক্ষা করে প্রমাণাদি বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান আসামিকে ধরতে পারল না, অথচ শাহবাগ থানার তদন্ত টিমকে পুরস্কৃত করা হলো। পুলিশের এই ধরনের প্রহসনের তীব্র নিন্দা জানাই আমরা।’
পুলিশ কী বলছে
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, ‘ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধীদের ধরতে আমরা শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে তল্লাশি অভিযান শুরু করি। পরে শমরিতা হাসপাতাল থেকে একজন ও বিআরবি হাসপাতাল থেকে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করি।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার ওই দুজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফোন নম্বর ট্র্যাক করে তৃতীয়জনকে ফার্মগেটের রাজাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়।’
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব!
এদিকে, পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে বিশ্লেষণ করছে বলে জানালেও রমনা কালী মন্দির ও বাংলা একাডেমি গেটের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন বায়েজিদ।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ নাকি তাদের কাছে আছে। অথচ শাহবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান আমাকে পার্সোনালি (ব্যক্তিগতভাবে) ডেকে বলেছেন, পুলিশ মন্দিরের গেট ও বাংলা একাডেমি গেটের সিসিটিভি ফুটেজ পায়নি।’
আক্ষেপ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘রমনা কালী মন্দির একটি ধর্মীয় সেনসিটিভ (স্পর্শকাতর) জায়গা। মন্দিরের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ না পাওয়া ও বাংলা একাডেমির ফুটেজ নষ্ট হওয়ায় ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশাসনের গাফিলতি আছে।’
বায়েজিদের দাবির সত্যতা যাচাই করতে আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না, নাকি কী পাওয়া যায়নি, সেটা এখন বলা যাবে না। আর এটি তদন্তকারী কর্মকর্তা জানেন। আমি তো এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নই। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘তাদের (বায়েজিদ) সঙ্গে কথা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ অবশ্যই আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর দু-তিন দিন চলে গেছে। আমরা বসেছিলাম না, কাজ করেছি। ঘটনার ক্লু বের করার চেষ্টা করছি।’
পরে এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট হওয়ার যে দাবি, সে বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। আমরা অন্তত ১১টি আলামত জব্দ করেছি। এগুলো নিয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’
বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হত্যার বিচার
সাম্য হত্যার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে শনিবার (১৭ মে) ঢাবি প্রশাসন ও ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলীর মধ্যে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে।
ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে উপাচার্যও সংহতি প্রকাশ করেছেন। ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, অপরাধীদের আগামীকাল (রবিবার) থেকে রিমান্ড শুরু হবে। দ্রুত তদন্ত কাজ শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
এ ছাড়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এ হত্যার বিচার কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হবে।’
উদ্যানের বর্তমান হালচাল
সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো ঐতিহাসিক একটি স্থানের নিরাপত্তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি উদ্যোগও নিয়েছে সরকার।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে উদ্যানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অভিযানে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটসহ কয়েক শ’ অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে সিটি করপোরেশন।
এ ছাড়া রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ধীরে ধীরে একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক স্থানে রূপান্তর করতে নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম জানিয়েছেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত উদ্যানে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
তবে শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাম্য হত্যার এক সপ্তাহও এখনও পেরোয়নি, অথচ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রাণচাঞ্চল্য কমেনি একটুও। আঁধার নামলেও উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে অনেককে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানোসহ একান্তে সময় কাটাতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে জাবি ছাত্রদলের অবস্থান কর্মসূচি
এসবের মাঝেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল চোখে পড়ে। টহলদল দেখলেই লোকজনকে সরে যেতে দেখা যায়, কিন্তু তারা চলে গেলে আবারও উদ্যানে ঢুকছিল মানুষ।
উপদেষ্টার ঘোষণার পর টিএসসি-সংলগ্ন গেটে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে নিরাপত্তাবাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন গেট গলে উদ্যানে ঢুকতে দেখা যায় অনেককে। অনেককে আবার ছবির হাটের গেট এবং টিএসসি-সংলগ্ন গেটের দেওয়াল টপকেও উদ্যানে ঢুকতে দেখা যায়।
বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত এক আনসার সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘উদ্যানের নিরাপত্তা রক্ষায় রাতের শিফটে আমরা মাত্র ৬ জন। এই ছয়জনের পক্ষে এতো বড় উদ্যানে টহল দিয়ে এসব বিষয়ের সমাধান করা কষ্টসাধ্য।’
২০০ দিন আগে
সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, আসামিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম
দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে হত্যায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা।শুক্রবার (১৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ‘বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রসমাজ’ ব্যানারে থানার সামনে অবস্থান নেন।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের সামনে জড়ো হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে, মিছিল নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য হয়ে থানার দিকে এগিয়ে যান তারা।
এ সময় সাম্য হত্যার বিচার ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়। কর্মসূচিতে হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানান ঢাবি শিক্ষার্থীরা।
পরে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলে গঠিত আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধি দল শাহবাগ থানায় প্রবেশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক ড. অসীম দাসসহ ৪ জন শিক্ষার্থী এই দলে ছিলেন।
আরও পড়ুন: দুর্বৃত্তের হাতে ঢাবি শিক্ষার্থী খুন: ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের প্রতিবাদ মিছিলে বহিরাগত!
থানা ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মুন্সি বলেন, এটি একটি নির্দলীয় আন্দোলন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সাম্যর মৃত্যু নিয়ে নিজেদের ফায়দা লুটার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদের একমাত্র দাবি সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা।’
তিনি আরও জানান, ‘ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
আজ একটি মাত্র দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন বলে জানান এ শিক্ষার্থী। তবে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার না করা হলে, আবারও থানা অবরোধের হুশিয়ারি দেন ইব্রাহিম।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
২০২ দিন আগে
হেফাজতের ১২ দফা সনদ ঘোষণা, ২৩ মে সারা দেশে বিক্ষোভ
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল ও রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক করিডোর প্রত্যাখান করে ১২ দফা সনদ ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
শনিবার (৩ মে) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
এছাড়া ধর্ম অবমাননাকারীদের কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন ও ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়কে’ অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
পল্টন জোন আয়োজিত সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
সমাবেশে ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন সংগঠনটির নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, আমরা একটি জাতীয় সংকটের সময়ে দেশের ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের জন্য এখানে সমবেত হয়েছি।
আরও পড়ুন: পাঁচ দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ চলছে
ঘোষিত সনদে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং তাদের ‘কোরআনবিরোধী’ সুপারিশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে হেফাজত।
তারা পশ্চিমা মতাদর্শকে বাদ দিয়ে দেশের নিজস্ব সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং ধর্মপ্রাণ নারী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি নতুন কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
সংবিধান থেকে আত্মঘাতী ধারণা ‘বহুত্ববাদ’ বাতিল করে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
‘সামাজিকভাবে ধ্বংসাত্মক এবং ধর্মীয়ভাবে অগ্রহণযোগ্য’ ও সমকামী সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে—এমন লিঙ্গ পরিচয়, লিঙ্গ বৈচিত্র্য ও তৃতীয় লিঙ্গ এবং এলজিবিটিকিউ’র মতো শব্দ ব্যবহারের তীব্র বিরোধীতা করেছেন তারা।
হেফাজত দাবি করেছে, এলজিবিজিকিউ পরিচয়কে বৈধতা দেওয়ার যেকোনো ধরণের বয়ান অবিলম্বে বাতিল করা হোক এবং প্রচেষ্টা বন্ধ করা হোক। আগামী নির্বাচনের আগে শাপলা চত্বরের গণহত্যা ও জুলাই আন্দোলনের সময় চালানো গণহত্যার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারিক ব্যবস্থা নেওয়া ও ট্রাইব্যুনালকে শক্তিশালী করার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
তারা আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা এবং অভিযুক্ত অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
আল্লাহ ও রাসূলকে (সা.) নিয়ে কটূক্তিকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন করার দাবির কথাও সনদ পাঠের সময় উচ্চারণ করেন মাওলানা মাহফুজুল হক।
তিনি সনদের আরেক দফায় পাঠ করেন, ‘ধর্ম অবমাননার শাস্তি সংক্রান্ত আইনের বিধান বাতিল করার জন্য মিডিয়া সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাতিল করা উচিত, তাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
চিন্ময় দাশের জামিন বাতিল এবং তার বিচারের দাবিও জানান তিনি।
সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের সরকার আখ্যা দিয়ে তারা শেখ হাসিনার শাসনামলে সারা দেশে ইসলামিক পন্ডিত, মাদরাসা শিক্ষার্থী, ইসলামপন্থী লোকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহারে অথবা নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা আরও বলেছেন ‘...জঙ্গিবাদ বা জঙ্গি নাটকের নামে হত্যা বা নির্যাতন করার সঙ্গে যারা জড়িত—তাদের বিচারের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে হবে।’
আরও পড়ুন: আদালতের মালখানার তালা ভেঙে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার চুরি, ৩ জন হেফাজতে
গাজায় ইসরায়েলের ‘চলমান গণহত্যা’ এবং ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারকে আরও শক্তিশালী কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ ও দেশ দুটির পণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘আমাদের অভ্যুত্থানের সরকারকে আরও কূটনৈতিকভাবে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।’
বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উল্লেখ করে তারা করে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সকল স্তরে ইসলাম শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি মানবিক করিডোর অনুমোদনেরও সমালোচনা করেছেন তারা। এটিকে একটি আত্মঘাতী পদক্ষেপ এবং দেশের ভৌগলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে হেফাজত।
২১৫ দিন আগে
পাঁচ দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ চলছে
অবিলম্বে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ শুরু হয়েছে।
শনিবার (৩ মে) ভোর থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হেফাজতে ইসলামের নেতা–কর্মীরা মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন।
আয়োজকদের তথ্য অনুসারে, সমাবেশটি সকাল ৯টা নাগাদ শুরু হয়েছে, যা চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
এদিকে, সমাবেশে অংশ নিতে আসা নেতা–কর্মীদের ভিড়ে ভোর থেকেই শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল সীমিত হয়ে আসে।
হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, আজকের সমাবেশে তাদের দাবি পাঁচটি। এর মধ্যে অন্যতম হলো, অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার।
আরও পড়ুন: শ্রমিক বাঁচলে শিল্প বাঁচবে: ডা. শফিকুর রহমান
সংগঠনটির হিসাবমতে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে পরিচালিত অভিযান ও হতাহতের ঘটনার বিচার, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় সফরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে সংঘটিত মৃত্যুর ঘটনার বিচার। এ ছাড়াও নারীর অধিকার সংস্কার সংক্রান্ত প্রস্তাবিত কমিশন বাতিল এবং ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলমানদের উপর কথিত গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা।
এর আগে, হেফাজতের কর্মীরা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় একটি মিছিল বের করেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দেন। সে সময় ইসলাম ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এদিকে, এই সমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভোর থেকেই শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে পুলিশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
২১৬ দিন আগে
ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বসহ নানা দাবি জানিয়ে শেষ হলো ‘মার্চ ফর গাজা’
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতির এক অনন্য নজির স্থাপন করল বাংলাদেশ। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের আয়োজনে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে সারা দেশ থেকে ছুটে আসে লাখো মানুষ। তাদের পদধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ; সোহরাওয়ার্দী উদ্যান উপচে তার আশপাশেও জমে জনতার জট।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত ও বাইরের জেলাগুলো থেকে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেলসহ নানা যানবাহনে করে এসে তারা জড়ো হতে থাকেন রাজধানীতে। পরে পায়ে হেঁটে রওনা দেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উদ্দেশে।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে ফিলিস্তিনের পতাকা, ইসারয়েলবিরোধী প্ল্যাকার্ড ও ফিলিস্তিনের পক্ষে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে দলে দলে সমাবেশে যোগ দেন হাজারো মানুষ। কেউ কেউ মাথায় বাঁধেন কালেমা খচিত ফিতা। ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’সহ নানা স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান তারা।
২৩৬ দিন আগে
অমর একুশে বইমেলা শুরু ১ ফেব্রুয়ারি
মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের স্মৃতিতে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ।’ এ বারের বইমেলা পরিবেশবান্ধব করতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।
আগামী শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন অমর একুশে বইমেলা ডিরেক্টরি কমিটির সভাপতি ও একাডেমির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সচিব ড. সেলিম রেজা ও অমর একুশে বইমেলা কমিটির সচিব ড. সরকার আমিন।
এবারের বইমেলায় মোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ৭০৮টি, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি; মোট ইউনিট ১০৮৪টি (গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি এবং ইউনিট ছিল ৯৪৬টি)। এবার মোট প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি (গত বছর প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৭টি)।
লিটল ম্যাগাজিন চত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় হবে। সেখানে প্রায় ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিশুচত্বরে মোট প্রতিষ্ঠান ৭৪টি এবং ইউনিট ১২০টি (গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৮টি এবং ইউনিট ১০৯টি)।
এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশন-এর অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বাহির-পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির-গেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট ৪টি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে।
শিশু চত্বর মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে—যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে। মেলায় এবার খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে বিশেষভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে।
মেলায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও নামাজের স্থানসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে, ধুলোবালি প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং সকলের সুবিধার্থে এবারই প্রথম মেলার ইতিহাসে সব মিলিয়ে ৩০টি ওয়াশরুমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে প্রেস কনফারেন্সে আয়োজকেরা জানান।
বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ৪৩টি ও পুনর্মুদ্রিত ৪১টি বই। বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে।
প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।
বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহিদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধুলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।
অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এছাড়া ২০২৪ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলা। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (ফেব্রুয়ারি ৮ ও ফেব্রুয়ারি ১৫ ব্যতিত)। ২১ ফেব্রুয়ারি, মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এবারের অমর একুশে বইমেলার আয়োজনকে পরিবেশ সুরক্ষা সচেতন এবং জিরো ওয়েস্ট বইমেলায় পরিণত করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে আয়োজনস্থল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থাপিত সব স্টল, দোকান, মঞ্চ, ব্যানার, লিফলেট, প্রচারপত্র, ফাস্ট ফুড, কফি শপ, খাবার দোকান ইত্যাদি প্রস্তুতে সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার শতভাগ পরিহার করে পুনঃব্যবহারযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ, যেমন: পাট, কাপড়, কাগজ ইত্যাদির ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।
৩০৮ দিন আগে
৪ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায় জামায়াত
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী শুক্রবার (৪ আগস্ট) সমাবেশ করতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
এজন্য সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে দলটি।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে ২২ জুলাই সমাবেশ করতে চায় জামায়াত
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) জামায়াতের পক্ষে আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে একটি আবেদন জমা দেন।
চিঠি জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মঙ্গলবার ১ আগস্ট পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের কথা থাকলেও পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ায় আমরা সমাবেশ করতে পারিনি।
তাই শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি পুলিশের কাছ থেকে শতাভাগ সহায়তা পাব।
এদিকে আবেদনটি গ্রহণ করেন ডিএমপি সদর দপ্তরের উপপুলিশ কমিশনার সৈয়দ শিমুল মোস্তফা।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ৫০০ জামায়াত-শিবির কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি-জামায়াতের ১৯ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
৮৫৬ দিন আগে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেনো বিএনপির অপছন্দ: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি কেনো সমাবেশের জন্য ১০ ডিসেম্বর বেছে নিয়েছে এবং তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেনো অপছন্দ, এমন প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বিএনপি সমাবেশকে ঘিরে আন্দোলনের নামে যদি সহিংসতার উপাদান যুক্ত করে তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সমুচিত জবাব দিবে।
বুধবার সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে বিএনপি’র উদ্দেশে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি কি জানে না বাংলাদেশের ইতিহাস? ১৯৭১ সালে ১০ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়নে প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১০ ডিসেম্বর সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন এবং সাংবাদিক সৈয়দ নাজমুল হক - এই দু’জনকে পাক-হানাদার বাহিনী ও আলবদর বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে যায়। ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর -এই বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো নৃশংসতম ঘটনা বাংলাদেশে সংগঠিত হয়।
জ্ঞান, গরিমা যাদেরকে ঘিরে সেই সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব, সাংবাদিক, চিকিৎসকদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের জন্য কেনো বিএনপি বেছে নিলো এটাই এখন প্রশ্ন?
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন বিএনপি যেতে চায় না, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাক-হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে, সেই ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ ভাষণ বিএনপির পছন্দ নাও হতে পারে - যদিও জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে সর্বকালের অন্যতম সেরা ভাষণ হিসেবে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়া ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে যোগ দিলে আদালত ব্যবস্থা নিবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে স্বধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, ১৬ ডিসেম্বর যারা বিশ্বাস করে, সেখানেই পাক-হানাদার বাহিনী - মুক্তি বাহিনী, মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন - সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন বিএনপির অপছন্দ তা জানতে চেয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঐতিহাসিক উদ্যান। বিশাল জায়গা এখানে, আওয়ামী লীগের সব সমাবেশ ও জাতীয় সম্মেলন এখানেই হয়।
তাহলে বিএনপি কেনো তাদের পার্টি অফিসের সামনে ৩৫ হাজার স্কোয়ার ফিটের মতো একটা ছোট জায়গা সমাবেশের জন্য বেছে নিলো প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের।
তিনি আরও জানতে চেয়ে বলেন, পার্টি অফিসে সমাবেশ করার জন্য বিএনপির এতো দৃঢ়তা কেন? এখানে তাদের কি কোন বদ উদ্দেশ্য আছে? কোন মতলবে তারা এটা চায়?
আওয়ামী লীগ ১০ ডিসেম্বর সতর্ক পাহারায় থাকবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
আরও পড়ুন: বিএনপিকে এখনও নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করতে পারে বিএনপি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
১১০০ দিন আগে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা: রিটের শুনানি পেছাল
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে আদালত অবমাননার মামলা এবং গাছ কাটা বন্ধের রিট আবেদনের ওপর শুনানি মূলতবি করেছেন হাইকোর্টের পৃথক দুটি বেঞ্চ।
বৃহস্পতিবার আদালত অবমাননার মামলার শুনানি ২ সপ্তাহ মুলতবি করেছেন বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আর গাছ কাটা বন্ধ চেয়ে ৬টি সংগঠন ও এক ব্যক্তির করা রিট আবেদনের শুনানি ৪ সপ্তাহের জন্য মূলতবি করেছেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট
হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। আর রিট আবেদনকারীপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল ও অ্যাডভোকেট সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন হাইকোর্টকে বলেন, রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে পরিবেশবাদীসহ সকলের সাথে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ না কাটার নির্দেশ হাইকোর্টের
তিনি বলেন, বৈঠকের পরে তারা উদ্যানে গাছ না কাটা এবং ৭ মার্চের ভাষণের আদলে অবকাঠামো নির্মাণসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’ এজন্য তিনি সময় চেয়ে দুটি মামলার শুনানি মূলতবির আবেদন জানান।
শুনানিকালে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব উভয়পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা চাই সেখানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) গাছও থাকবে। আর হাইকোর্টের আগের রায়ের নির্দেশনা অনুসারে কাজও হবে। আর একটা কথা, অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন যে, সরকার এটা নিয়ে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান চান। আমরাও চাই, সমস্যার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি হোক। অন্যথায় যারা সংক্ষুব্ধ তারা যেকোনো সময়ই আদালতে আসতে পারবেন।
আদালত অবমাননার মামলা
‘উদ্যানের ঐতিহাসিক স্থানসমুহ যথাযথভাবে সংরক্ষণে ২০০৯ সালের হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো সেখানে গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট ও দোকান বানাচ্ছে’-এই অভিযোগে সরকারের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামিম আখতার এবং প্রধান আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ মীর মনজুর রহমানের বিরুদ্ধে এই আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।
বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় আমাকে জানিয়েছেন যে, এখন গাছ কাটা হচ্ছে না। তিনি পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বসতে চান। বসেই সমাধান করতে চান। এজন্য এক মাস সময় চাচ্ছি। এ পর্যন্ত শুনানি মূলতবি রাখা হোক।
এই আবেদনের বিরোধিতা করে মনজিল মোরসেদ বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল যেহেতু বলছেন তাকে মন্ত্রী বলেছেন যে সবাইকে নিয়ে বসতে চান। তাহলে আদালত সময় দিতে পারেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে নিশ্চিত করবেন যে আর কোনো গাছ কাটা হবে না।
এ সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলে।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর আদালত বলেন, যেহেতু অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন যে তারা বসতে চান। তাহলে আমরা শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মূলতবি রাখছি। যদি এর মধ্যে কোনো গাছ কাটা হয় তখন আপনি (মনজিল মোরসেদ) আদালতে আসতে পারবেন। এরপর আদালত আদেশ দেন।
ছয় সংগঠনের রিটের শুনানি
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল নকসার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদ, উদ্যান সংরক্ষণ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মূলরুপে রাখার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে পরিবেশবাদী ছয়টি সংগঠন ও একজন ব্যক্তি। এ আবেদনের ওপর বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে বেলা একটার দিকে শুনানি শুরু হয়।
শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে শুনানি একমাস মূলতবি রাখার আবেদন জানান।
তিনি বলেন, মন্ত্রী পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চান।
সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, এর আগেও মন্ত্রী বলেছিলেন যে আমাদের সঙ্গে ১১ মে বসবেন। কিন্তু বসেননি। সুতরাং এই মুহূর্তে গাছ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিন এবং রুল জারি করুন।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মন্ত্রী মহোদয় নিজেই বলেছেন যে গাছ কাটা বন্ধ আছে। আপাতত গাছ কাটবে না।
এ সময় আদালত রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের উদ্বেগ বুঝতে পারছি। যেহেতু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনাদের নিয়ে বসতে চাচ্ছেন। আমরাও চাই আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান হোক। আপনারা সামনা-সামনি বসুন। সকলে মিলে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধান করুন। আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা উল্লেখ করে আদেশ দিচ্ছি। চার সপ্তাহ মূলতবি রাখছি।
আদালতে বলেন, আমরা চাই, আগের রায়ের নির্দেশনার আলোকে সমঝোতার ভিত্তিতে বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান হোক। আর যদি কোনো সমস্যা হয় তবে আদালত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
১৬৫৯ দিন আগে