ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির
ঢাকা ও নিকটবর্তী এলাকার ১০টি ঐতিহাসিক মন্দির
জনাকীর্ণ নগরী ঢাকার শত বছরের ইতিহাসের এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে এর আনাচে-কানাচে এখনও টিকে থাকা মন্দিরগুলো। তীর্থস্থানগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতিফলন। একই সঙ্গে স্থাপনাগুলো তৎকালীন সময়ের স্থাপত্যশৈলীর নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অধিকাংশগুলোতে এখনও পালিত হয় ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠান। চলুন, ঢাকা ও নিকটবর্তী এলাকার এমনি ১০টি মন্দির সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ঢাকা ও আশেপাশের এলাকার ১০টি প্রাচীন মন্দির
.
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির
রাজধানীর পলাশীতে অবস্থিত বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহত্তম এই উপাসনালয়টি ঢাকার প্রথম হিন্দু মন্দির। এর গোড়াপত্তন হয় সেন রাজবংশের সম্রাট বল্লাল সেনের হাতে ১২শ শতকে।
কথিত আছে যে, বল্লাল সেনের জন্ম হয় বুড়িগঙ্গার এক জঙ্গলে। সেখানে বেড়ে ওঠার সময় একদা তিনি এক দুর্গা মূর্তি পান। তার বিশ্বাস ছিল যে, জঙ্গলের যাবতীয় বিপদ থেকে তাকে রক্ষার পেছনে রয়েছে এই দেবী। পরবর্তীতে রাজ ক্ষমতায় বসার পর বল্লাল সেন এই স্থানে একটি মন্দির স্থাপন করেন। বনের ভেতর আবৃত অবস্থায় ছিল বলে এই দেবীকে ডাকা হতো ‘ঢাকেশ্বরী’ তথা ‘ঢাকা ঈশ্বরী’। অতঃপর মন্দিরটিও এই নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করে।
কয়েকটি মন্দির ও সৌধের সমন্বয়ে গঠিত ঢাকেশ্বরী মন্দিরের মূল ভবনগুলোর রঙ লাল ও উজ্জ্বল হলুদাভ। এখানকার চারটি শিব মন্দিরের প্রত্যেকটি একই নকশায় গড়া।
প্রতি বছর রাজধানীর দুর্গা পূজার সব থেকে বড় আয়োজনটি হয় এখানে। এছাড়া জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রাও শুরু হয় এই মন্দির প্রাঙ্গণ থেকেই।
গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অটো, রিকশা বা পাবলিক বাসে করে সরাসরি আসা যায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে।
আরো পড়ুন: রাজশাহীর পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
জয় কালী মন্দির
পুরান ঢাকার ঠাটারি বাজার এবং ওয়ারীর ঠিক মাঝামাঝি ২৪ নম্বর জয় কালী মন্দির সড়কটির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই মন্দির।
প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই উপাসনালয়টি তৈরি হয় ১০০১ বঙ্গাব্দে তৎকালীন নবাব তুলসী নারায়ণ ঘোষ এবং নব নারায়ণ ঘোষের তত্ত্বাবধানে।
মন্দিরের মোজাইক করা মেঝে আর টালি করা দেয়ালে খচিত রয়েছে হিন্দু দেব-দেবীর ছবি। মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে দেখা যায় স্টেইনলেস স্টিলে তৈরি ঐশ্বরিক প্রতীক ‘ওম’। পুরো স্থাপনাটি মূলত একটি বর্গাকার কাঠামো, যার কলামগুলো আপাদমস্তক যথেষ্ট ভারী ও পুরু উপাদান দিয়ে গড়া। আর উপরের দেয়ালগুলো করা হয়েছে খিলান আকৃতির।
গুলিস্তান বাস-স্টপেজ থেকে এই তীর্থস্থানটি ১৫ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ।
আরো পড়ুন: দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজীর মন্দির ভ্রমণ: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
রমনা কালী মন্দির
বাংলা একাডেমির বিপরীতে ও ঢাকার রমনা পার্কের বহির্ভাগে অবস্থিত গোটা মন্দির কমপ্লেক্সের আয়তন প্রায় ২ দশমিক ২৫ একর।
জনশ্রুতি অনুসারে, আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে গোপালগিরি নামের এক সন্ন্যাসী ঢাকায় সাধন-ভজনের একটি আখড়া গড়ে তোলেন। এই আখড়াতেই আরও ২০০ বছর পর আরেক বড় সাধু হরিচরণ গিরি নির্মাণ করেন মূল রমনা কালীমন্দির।
সেই থেকে মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী বহু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। মন্দিরের সামনে বড় দিঘিটি একসময় দর্শনার্থী ও উপাসকদের সাঁতার কাটার জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিল। প্রধান অনুষ্ঠান কালী পূজা হলেও এখানে দুর্গাপূজাও বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয়।
গুলিস্তান থেকে বাসে করে মৎস্য ভবন পর্যন্ত এসে অথবা রিকশা যোগে গুলিস্তান থেকে সরাসরি যাওয়া যায় রমনা কালীবাড়িতে।
আরও পড়ুন: কলকাতায় কেনাকাটার জনপ্রিয় স্থান
২ মাস আগে
রাজধানীর ২৫৭ মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা
রাজধানীর মন্দির ও অস্থায়ী পূজামণ্ডপগুলোতে দুর্গোৎসবের জোর প্রস্তুতি চলছে। এবার রাজধানীতে ২৫৭টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ (বিপিইউপি)।
সংগঠনটি জানায়, ঢাকায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, বনানী, কলাবাগান, শাঁখারিবাজার, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, ফার্মগেটের খামার বাড়ি এবং পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজার ও তাঁতিবাজারসহ ঢাকার ২৫৭টি মণ্ডপে পূজা হবে।
আরও পড়ুন: খুলনায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুত ৯৯১টি মণ্ডপ
কারিগররা প্রতিমার চূড়ান্ত রূপ দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেশের প্রধান প্রধান বাজার এবং শপিং মলগুলোতে চলছে পূজার কেনাকাটা।
গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বড় বড় বিপণিবিতান, শপিং মল ও দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
পূজার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজারের ঐতিহ্যবাহী দোকানগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে শঙ্খের খোল, প্রতিমার কাপড়, ঘণ্টা, হাঁড়ি, মঙ্গল প্রদীপ, আগরবাতি, দেবতার মালা, মুকুট, শাড়ি, ধুতি, পাঞ্জাবি ও অন্যান্য অলঙ্কার বিক্রি চলছে পুরোদমে।
এদিকে, দুর্গাপূজা উদযাপনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজধানীর পূজামণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য ঢাকেশ্বরী মন্দির চত্বরে কেন্দ্রীয় পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা
শনিবার বিকেলে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘এ দেশে সবার সম অধিকার রয়েছে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। এরজন্য যা যা দরকার, করা হবে।’
নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। আপনারা নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যাবেন। আমরা একটা সুন্দর পরিবেশ চাই, যেখানে আপনারা সবাই পূজা উদযাপন করতে পারবেন।’
দুর্গাপূজায় রবিবার থেকে সারা দেশের ৩২ হাজার ৬৬৬টি পূজামণ্ডপে ২ লাখ ১২ হাজার ১৯২ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হবে। এছাড়া সীমান্তে কড়া নজর থাকবে বিজিবির।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে ১০২ মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা, চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি
২ মাস আগে