কর
কর কমাতে মুদ্রাস্ফীতি কমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে: ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী
ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, কর কমানোর চেয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা আরও গুরুত্বপূর্ণ।
শুক্রবার ব্যবসায়ী এবং ভোটারদের তাৎক্ষণিক কর বন্ধের জন্য শাসক রক্ষণশীল পার্টির কিছু লোকের আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করে তিনি এ কথা বলেন।
লন্ডনে এক বক্তব্যে চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার জেরেমি হান্ট বলেন, ‘বর্তমানে সেরা কর কমানো হলো মুদ্রাস্ফীতি কমানো।’
যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার অক্টোবরে চার দশকের সর্বোচ্চ ১১ দশমিক এক শতাংশে পৌঁছেছে। যা জীবনযাত্রার খরচ-সঙ্কট এবং ক্রমবর্ধমান খাদ্য ও জ্বালানির দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের ধর্মঘটে নামিয়েছে। এরপর থেকে এটি হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এখনও ডিসেম্বরে একটি কষ্টদায়ক সাড়ে ১০ শতাংশতে পৌঁছেছে এবং ১৯৮০ সালের পর এটি সর্বোচ্চ।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক মূল্যস্ফীতির হার বছরের শেষ নাগাদ ওই স্তর থেকে অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হান্ট বলেছেন, তিনি ব্রিটেনকে একটি কম করের অর্থনীতির দেশ বানাতে চান। তবে ‘অস্থির বাজার এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেই অর্থনীতিতে প্রথমে ভালো পর্যায়ে আসতে হবে’। গত মার্চ এ দেয়া তার বার্ষিক বাজেট বিবৃতিতে তিনি কর মওকুফ করবেন না বলে একটি ইঙ্গিত দেন।
বিশ্বজুড়ে অন্যদের মতো যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিও মহামারির বিধিনিষেধ এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ধাক্কায় বিপর্যস্ত। ব্রিটেনও গত বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লিজ ট্রাসের সংক্ষিপ্ত মেয়াদের স্ব-প্ররোচিত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থবিহীন ট্যাক্স কাটছাঁটের পরিকল্পনার কারণে তিনি অক্টোবরে পদত্যাগ করেন। আর্থিক বাজারকে ক্ষতির মধ্যে ফেলে ঋণ নেয়ার খরচ বাড়িয়ে দেয় এবং ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দাম রেকর্ড পরিমাণ কমে যায়।
হান্টকে ট্রাসের সাত সপ্তাহের মেয়াদের শেষ দিনগুলোতে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তার উত্তরসূরি সুনাক তাকে রেখেছিলেন।
মুদ্রাস্ফীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরো মুদ্রা ব্যবহারকারী ২০টি দেশের তুলনায় বেশি। বেশিরভাগ পূর্বাভাসক ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সংকুচিত হবে বলে আশা করছেন।
নিউজ এজেন্সি ব্লুমবার্গের সদর দপ্তরে তার বক্তব্যে হান্ট যুক্তি দিয়েছিলেন যে আর্থিক বিধি এবং অন্যান্য নিয়মের পরিবর্তনগুলো ব্রেক্সিট দ্বারা সম্ভব হবে এবং যুক্তরাজ্যের একগুঁয়ে কম উৎপাদনশীলতার হারকে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করবে।
ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার তিন বছর এবং বিভক্ত হওয়ার দুই বছরেরও বেশি সময় পরে রক্ষণশীল সরকার এখনও ব্রেক্সিটপন্থী রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুত অনেক অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদানের জন্য সংগ্রাম করছে।
আরও পড়ুন: সিটবেল্ট ব্যবহার না করায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে জরিমানা
বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ একমত যে ব্রেক্সিট ইইউ-এর ২৭-দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করা যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ব্যবসার জন্য কঠিন করে দিয়ে অর্থনীতিকে জটিল করেছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি, সবুজ শক্তি এবং জীবন বিজ্ঞানের নেতা হান্ট বলেছিলেন যে পরিবর্তনগুলো ‘প্রয়োজনীয়, শক্তিশালী এবং ব্রেক্সিট’ ব্রিটেনকে ‘বিশ্বের পরবর্তী সিলিকন ভ্যালি’ বানাতে সাহায্য করবে।
হান্ট বলেছিলেন যে ব্রিটেন দ্বিতীয় স্বাবলম্বি দেশ হবে। ইইউ’র একটি নিয়ম যা নির্ধারণ করে যে বীমাকারীদের কত টাকা রিজার্ভ রাখতে হবে। হান্ট বলেছেন যে বিধিনিষেধ শিথিল করা বড় অবকাঠামো এবং নিরাপদ জ্বালানি প্রকল্পের জন্য এক দশক ধরে ১০০ বিলিয়ন পাউন্ড(১২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলা) বিনিয়োগ উন্মুক্ত করতে পারে।
ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো হান্টের বক্তব্যে স্বাগত জানিয়েছে, তবে তারা বলেছে যে এর সুনির্দিষ্টতার ঘাটতি রয়েছে। ব্রিটিশ শিল্পের প্রধান টনি ড্যাঙ্কার বলেছেন যে এটি ‘বৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো প্রদান করেছে।’ যদিও ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের শেভান হ্যাভিল্যান্ড বলেছেন হান্টের দৃষ্টিভঙ্গির ‘বিষয়বস্তু অস্পষ্ট’ ছিল।
বিরোধী লেবার পার্টির অর্থনীতির মুখপাত্র র্যাচেল রিভস বলেছেন, ‘২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা রক্ষণশীলদের ‘এখন কোনো পরিকল্পনা নেই এবং ভবিষ্যতের জন্য কোন পরিকল্পনা নেই।’
আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন হিপকিন্স
আমদানিকৃত ভোজ্যতেলের ওপর ৫% ভ্যাট কমানোর মেয়াদ বাড়ল ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত
সরকার ভোজ্য তেলের ওপর হ্রাসকৃত পাঁচ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সময়সীমা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে পূর্ববর্তী নোটিশের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার পর এই মেয়াদ ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
আরও পড়ুন: সয়াবিন লিটারে কমল ৫ টাকা, কার্যকর রবিবার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আমদানির সময় সয়াবিন তেল এবং অপরিশোধিত পাম তেলের ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে এবং গত বছরের মার্চ মাসে উৎপাদন ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছে।
ভোজ্যতেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগের মধ্যেই ভোজ্যতেলের ওপর ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: দেশে জুলাই-ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় ২৭.২২ বিলিয়ন ডলার
বড়ধরনের কর ফাঁকির জন্য লোকসান গুনছে এনবিআর
ভ্যাট নিবন্ধন নেয়া সত্ত্বেও প্রায় ২২ শতাংশ কোম্পানি তাদের ভ্যাট রিটার্ন জমা দিচ্ছে না। করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক ব্যক্তি কর নেটওয়ার্কের বাইরে রয়েছেন।
গত অর্থবছরে মোট ২৬ লাখ মানুষ বা ৫২ দশমিক ৪১ শতাংশ করদাতা তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। ৫০ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ধারকের মধ্যে প্রায় ২৪ লাখ গত অর্থবছরে তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
ফলে বড় অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
আরও পড়ুন: ২০২১-২২ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করায় সাড়া কম: এনবিআর ডাটা
কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্য বা সেবার জন্য ভ্যাট নিলেও সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিচ্ছে না।
সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্মকর্তারা এনবিআরকে বিভিন্নভাবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
অর্থনীতিবিদ ও খাতের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা বারবার দেশের রাজস্ব খাতকে এমনভাবে সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছেন যাতে করে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) করের অনুপাত অর্থনীতির আয়তন অনুযায়ী বৃদ্ধি পায়।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম। ২০১৬ সালের বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার কর-জিডিপি অনুপাত নেপালে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ, ভুটানে ১৬ শতাংশ, ভারতে ১২ শতাংশ, আফগানিস্তানে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, মালদ্বীপে ৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং বাংলাদেশে এটি ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
সরকারি তথ্য বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির চিত্র দেখালেও কর সংগ্রহে প্রায় বিপরীত প্রবণতা দেখা যায়।
জিডিপির শতাংশ হিসাবে কর সংগ্রহ ২০১৭ সালে প্রায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে গেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন এবং বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশগুলোর একটি।
এটি অর্থনীতিবিদদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে প্রশ্ন করতে প্ররোচিত করে, কারণ রাজস্ব প্রাপ্তি অর্থনীতির সম্প্রসারণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আবদুল মজিদ ইউএনবিকে জানান, বড় কোম্পানিগুলো বিভিন্ন উপায়ে ভ্যাট এড়িয়ে যেতে পারে। সক্ষমতার অভাবে এনবিআর তা শনাক্ত করতে পারে না।
তিনি রাজস্ব খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাজস্ব কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন, যাতে মানুষ ঝামেলামুক্ত পরিবেশে কর প্রদানে উৎসাহিত হয়।
আরও পড়ুন: প্রথম ত্রৈমাসিকে রাজস্ব সংগ্রহ ১৩% কমেছে: এনবিআর
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কিছু পরিসরে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ব্যবসাগুলো ২০২২ অর্থবছরে মহামারির কারণে লোকসান থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে আসতে পারেনি। এতেই বড় কোম্পানিগুলো থেকে ভ্যাট সংগ্রহে কম প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
ব্যাংকিং খাত থেকে কম সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো বর্তমানে মুনাফায় মন্দাভাবের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে।
মনসুর বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় উৎস থেকে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য মোট ভ্যাট ও কর খাতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছেন।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘যা বড়ধরনের অমিল দেখায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি দেখায় যে জিডিপি বৃদ্ধি ও রাজস্ব সংগ্রহের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও অন্যান্য দেশে কর-জিডিপি অনুপাত অর্থনীতির বৃদ্ধির কারণেই বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি একটা ধাঁধা।’
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে তিন লাখ ৭২ হাজার কোম্পানি। যদিও এর মধ্যে দুই লাখ ৯০ হাজার কোম্পানি বা ৭৮ দশমিক ২১ শতাংশ নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক সূত্রে জানা গেছে যে তবে এখনও প্রায় ২২ শতাংশ কোম্পানি ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয় না।
এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তিন লাখ ৭২ হাজার ব্যবসা ভ্যাট নিবন্ধন করেছে। তাদের মধ্যে দুই দশমিক ৪৩ লাখ বা ৮৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রিটার্ন দাখিল করেছেন।
ভ্যাট আইন অনুযায়ী, ৫০ লাখ টাকার নিচে বার্ষিক টার্নওভার আছে এমন কোম্পানির ভ্যাট নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট লাগবে না: এনবিআর
অনলাইনে কর পরিশোধে ১০ শতাংশ রেয়াত ডিএনসিসির
অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স, নতুন লাইসেন্স এবং লাইসেন্স নবায়ন ফি পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ রেয়াত (ছাড়) পাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসির) নাগরিকেরা। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ডিএনসিসি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল পদ্ধতির সঙ্গে ডিএনসিসি'র এলাকার সম্মানিত করদাতা/ ব্যবসায়ীগণকে পরিচিতির সুবিধার্থে বকেয়াসহ চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের চার কিস্তি হোল্ডিং ট্যাক্স একত্রে অনলাইনে পরিশোধ করলে এর ওপরে ১০ শতাংশ রেয়াত (ছাড়) দেয়া হবে। এবং চার কিস্তি হোল্ডিং ট্যাক্স একত্রে অনলাইনে পরিশোধ করে রেয়াত পাওয়ার এবং সারচার্জ ব্যতীত ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময়সীমা আগামী ৩০ নভেম্বর, ২০২২ খ্রি. পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।
আরও পড়ুন: সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধভাবে রাখা সামগ্রী সাড়ে ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি ডিএনসিসির
এতে আরও বলা হয়েছে, সম্মানিত করদাতাদেরকে বর্ধিত সময়ের মধ্যে বকেয়াসহ চলতি অর্থ বছরের চার কিস্তি হোল্ডিং ট্যাক্স একত্রে পরিশোধ করে ১০ শতাংশ রেয়াতের সুযোগ গ্রহণ এবং সম্মানিত ব্যবসায়ীদেরকে সারচার্জ ব্যতীত ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
এতে আরও বলা হয়েছে, ট্রেড লাইসেন্স, লাইসেন্স নবায়ন ও গৃহকর পরিশোধে নগরবাসী হয়রানি নিরসনে এবং নগরবাসীর মূল্যবান সময় বাঁচাতেও সহায়তা করবে।
উদ্যোগটি ডিএনসিসির সকল কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজড করণ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজস্ব স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি শক্তিশালীকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রমের একটি অংশ এটি।
আরও পড়ুন: মশা নির্মূলে ডিএনসিসির বিশেষ অভিযান, জরিমানা ৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযানের ঘোষণা ডিএনসিসি মেয়রের
আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার পদ্ধতি
একজন নাগরিকের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার নিরিখে নির্ধারিত হয় তিনি প্রতি বছর কত টাকা কর দেবেন। বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত ফর্মে নাগরিক কর্তৃক প্রদানকৃত নির্দিষ্ট অর্থ-বছরে (১ জুলাই থেকে পরের বছর ৩০ জুন) তার আয়ের সকল তথ্যাবলী যাচাই করে আয়কর কর্তৃপক্ষ এই আয়করের পরিমাণটি ঠিক করেন। ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেক টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) ধারীর জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক করেছে। এই হিসাবপত্রটি জমা না দিলে বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জরিমানাসহ নানান ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই নথিপত্র জমা করা উচিত। চলুন, সরকারকে নিজের আয়ের বিবরণী জানানোর এই পদ্ধতিটি সম্বন্ধে জেনে নেয়া যাক।
কাদের জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া জরুরি
করযোগ্য আয়কারী
* যাদের আয় বছরে ৩ লক্ষ টাকার উপরে
* নারী, তৃতীয় লিঙ্গ, এবং ৬৫ বছর থেকে শুরু করে তদুর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তি; যাদের আয় বছরে
৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার উপরে
* প্রতিবন্ধী; যাদের আয় বছরে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার উপরে
* গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা; যাদের আয় বছরে ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার উপরে|
পড়ুন: ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ট্যাক্স রিটার্ন ডকুমেন্ট লাগবে না: এনবিআর|
এছাড়াও যাদের জন্য রিটান দাখিল আবশ্যক
→ যারা ১২ অঙ্কের টিন সনদ গ্রহণ করেছেন
→ পূর্ববর্তী ৩ বছরের যেকোন বছরে যাদের আয় করযোগ্য হয়েছে কিংবা যাদের কর নির্ধারণ হয়েছে
→ যাদের নামে নির্দিষ্ট কোন কোম্পানির শেয়ার আছে
→ যারা কোন ফার্মের অংশীদার
→ যে সকল সরকারি কর্মকর্তার বেতন বছরের যে কোন সময় ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশী
→ কোন নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদের কর্মী
→ কর্ম থেকে অব্যাহতি পাওয়া বা আয় কমে যাওয়া অবস্থায় যারা করযোগ্য হয়েছেন
→ যারা কোন ধরনের মোটর গাড়ির মালিকানা পেয়েছেন
→ ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণকারি ব্যবসায়ী
→ মূল্য সংযোজন কর আইনের অধীনে থাকা কোন সংঘের সদস্য
→ চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, আইনজীবী, অ্যাকাউন্টেন্ট, স্থপতি, প্রকৌশলী,
→ সার্ভেয়ার কিংবা এ জাতীয় কোন কাজের পেশাজীবী হিসেবে কোন স্বীকৃত সংস্থায় নিবন্ধিত ব্যক্তিরা
→ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিবন্ধিত আয়কর কর্মকর্তা
→ শিল্প বিষয়ক চেম্বার বা ব্যবসায়িক সংস্থার সদস্য ব্যাক্তিরা
→ সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী ব্যাক্তিরা
→ স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি, আধা সরকারি অথবা স্থানীয় সরকারের টেন্ডারে অংশগ্রহণকারি ব্যক্তিরা
→ কোম্পানির পরিচালনার পরিষদে নিযুক্ত ব্যক্তিরা
→ লাইসেন্স করা অস্ত্রের মালিকানা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা
→ স্থান, মোটরযান, বাসস্থান বা অন্যান্য সম্পদ সরবরাহের মাধ্যমে শেয়ারড আর্থিক কার্যক্রম-এ অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা|
পড়ুন: ২০২১-২২ অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করায় সাড়া কম: এনবিআর ডাটা|
যাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে না
→ যে অনিবাসিদের বাংলাদেশে স্থায়ী কোন ভিত্তি নেই
→ জমি বিক্রি করা বা ক্রেডিট কার্ড নেয়ার জন্য যাদেরকে ১২ অঙ্কের টিন করতে হয়েছে, অথচ কোন করযোগ্য আয় নেই
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা
প্রতি বছর কর দিবস ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই করদাতাকে তার আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হয়। জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে এই কর দিবসের মধ্যে যে কোন সময় রিটার্ন দেয়া যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার কারণে এই সময়ের ভেতর জমা করা সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে করদাতাকে রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ফর্মে উপকর কমিশনার বরাবর উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আবেদন করতে হবে।
আবেদন মঞ্জুর হলে বর্ধিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দেয়া যাবে। এখানে করদাতার উপর কোন জরিমানা আরোপ না হলেও বিলম্ব সুদ এবং অতিরিক্ত সরল সুদ আরোপিত হবে।
পড়ুন: এনবিআর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডকে সহায়তা করে: চেয়ারম্যান
আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বেতনভুক্তদের ক্ষেত্রে
* নির্দিষ্ট অর্থ-বছরে করদাতার বেতন বিবরণী
* প্রতি বছরের আয়ের কোন অংশ ব্যাংক সুদ থেকে আসলে, ঐ ব্যাংক হিসাবের নথি বা ব্যাংক সার্টিফিকেট
* বিনিয়োগ ভাতা বা বীমা প্রকল্প থাকলে তার প্রমাণাস্বরূপ নথি|
নিরাপত্তা জামানতের সুদের ক্ষেত্রে
* নির্দিষ্ট অর্থ-বছরে ক্রয়কৃত বন্ড বা ডিবেঞ্চারের অনুলিপি। বন্ড বা ডিবেঞ্চারটি ব্যাংক/কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করে থাকলে, সেই ব্যাংক/প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে প্রত্যয়নপত্র
* সুদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সুদ কেন্দ্রিক আয়ের জন্য সেই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যয়ন পত্র|
পড়ুন: ভ্যাট ফাঁকি রোধে ১০ হাজার ইএফডি বসাবে এনবিআর|
বাড়ি/জমি-সম্পত্তির মালিকদের ক্ষেত্রে
* এক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র/ভাড়ার রশিদের অনুলিপি। এর সাথে প্রাপ্ত বাড়িভাড়া ব্যাংকে জমা রাখলে সেই ব্যাংক হিসাব বিবরণী
* পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন কর/ভূমি রাজস্ব প্রদানের রশিদের কপি
* বাড়ি ক্রয় বা নির্মাণের উদ্দেশ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ উত্তোলন করলে ঐ ঋণের সুদের বিপরীতে ব্যাংক হিসাব বিবরণী এবং ব্যাংক সনদপত্র|
ব্যবসায়ী ও নির্দিষ্ট দক্ষতার পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে
* এক মালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসার এবং নির্দিষ্ট পেশা থেকে লব্ধ আয়-ব্যয়ের বিবরণী
মূলধনী লাভ থেকে আয়ের ক্ষেত্রে
* করদাতার স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর অথবা বিক্রি হলে তার দলিলের অনুলিপি
* মূলধনী উৎসে আয়কর জমা হলে তার চালানের অনুলিপি
* পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানীর শেয়ার লেনদেন থেকে আয় করলে তার বিপরীতে প্রত্যয়নপত্র|
পড়ুন: আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ১৩৫ পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এনবিআরের
অন্যান্য উৎসের আয়ের ক্ষেত্রে
* ব্যাংক/অন্য প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত নগদ টাকা থেকে লাভ গ্রহণ করলে তার ব্যাংক হিসাব এবং ডিভিডেন্ট ওয়ারেন্টের অনুলিপি বা সনদপত্র
* ব্যাংক/অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত সুদের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গার সময় কিংবা সুদ প্রাপ্তির সময় নেওয়া সনদের অনুলিপি
* এছাড়া অন্য কোন ধরনের উৎস থেকে আয় করলে ঐ উৎসের প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র
কর পরিশোধের প্রমাণ স্বরুপ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
* যারা ইতোমধ্যে কর দিয়েছেন, তাদের কর পরিশোধের বিপরীতে চালান কপি, পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট, একাউন্ট-পে-চেক
* উপরোক্ত যে কোন উৎস থেকে আয়ের ভিত্তিতে আয়কর প্রদান করা হলে কর আরোপকারী কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নপত্র|
পড়ুন: বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আদায় তিন লাখ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই
আয়কর রিটার্ন ফরম
দরকারি সব কাগজপত্র প্রস্তুত হয়ে গেলে এবার রিটার্ন ফর্ম পুরনের পালা। এনবিআর(ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভেনিউ) থেকে প্রতি বছরই এই ফর্মে নতুন কিছু পরিবর্তন আনা হয়। নতুন বা পুরাতন যে কোন রিটার্ন ফর্ম করদাতা তার নিকটস্থ আয়কর অফিস থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারবেন।
এছাড়াও এনবিআর-এর ওয়েবসাইট থেকেও প্রয়োজনীয় ফর্মগুলো ডাউনলোড করা যাবে। করদাতার জন্য প্রযোজ্য ফর্মগুলো নির্ভুল ও প্রাসঙ্গিক তথ্য সরাবরাহের মাধ্যমে যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। এ সময় কোন বিষয় নিয়ে কোন রকম সন্দেহ বা বিড়ম্বনা সৃষ্টি হলে ব্যক্তিগত আইনজীবীর পরামর্শ নেয়া উত্তম।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে হিসাব জমা করার জন্য প্রথমে করদাতাকে এনবিআর-এর ওয়েবসাইটের ই-ট্যাক্স রিটার্ন পেজে প্রবেশ করতে হবে। এই পৃষ্ঠার মাধ্যমে করদাতা ইরিটার্ন সাইটে নিবন্ধন করতে পারবেন। এর জন্য সোজা চলে যেতে হবে ‘ইরিটার্ন’ অপশনে। পরের পৃষ্ঠায় নিচে লেখা ‘রেজিষ্ট্রেশন’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে।
এবার এখানে ইংরেজিতে করদাতার ১২ অঙ্কের টিন সংখ্যা ও মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। অতঃপর ক্যাপচা বসানো, মোবাইল নাম্বার যাচাইয়ের জন্য ওটিপি দেয়া এবং পাসওয়ার্ড ঠিক করার মাধ্যমে নিবন্ধনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়ে যাবে।
পড়ুন: পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না: অর্থমন্ত্রী
এবার আবার ই-ট্যাক্স রিটার্ন সাইটে যেয়ে ১২ অঙ্কের টিন সংখ্যা ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ‘সাইন ইন’ করতে হবে। এরপরেই করদাতা ইরিটার্ন সাইটে তার নিজস্ব ইউজার ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করতে পারবেন। এখন বাম পাশের তালিকা থেকে ক্লিক করতে হবে ‘রিটার্ন সাবমিশন’-এ।
আর এর ফলেই তিনি পৌছে যাবেন অনলাইনে রিটার্ন জমা দেয়ার মুল অংশে। এখানে আয়ের উৎস ও হিসাব সহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সঠিক ভাবে সরবরাহ করতে হবে। প্রতি পৃষ্ঠাতেই তথ্য দেয়ার পর নিচের ‘সেভ এ্যান্ড কন্টিনিউ’ বাটনে ক্লিক করে পরের পৃষ্ঠায় যেতে হবে।
সবগুলো পৃষ্ঠায় তথ্য দেয়া শেষ হলে চূড়ান্ত ভাবে আয়কর রিটার্নের সারসংক্ষেপ দেখানো হবে। এখানে তথ্য সব ভালো ভাবে যাচাই করার পর ‘ভিউ রিটার্ন’ বাটনে ক্লিক করলে তা করদাতাকে তার রিটার্ন ফর্মটি সম্পূর্ণরূপে পূরণ করা অবস্থায় দেখাবে। এখান থেকে সবকিছু আরো একবার নিরীক্ষা করে নিয়ে নিচের দিকে ‘ভেরিফিকেশন’-এ টিক মার্ক দিয়ে দিতে হবে। সবশেষে ‘সাবমিট রিটার্ন’ বাটনে ক্লিক করলেই সফলভাবে দাখিল হয়ে যাবে আয়কর রিটার্ন।
জমাকৃত আয়কর রিটার্নের একটি কপি ডাউনলোডের পর প্রিন্ট করে পরবর্তী প্রয়োজনের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: পাচার হওয়া অর্থ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ
কোথায় আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়
কর প্রদানকারিদের শ্রেণীর উপর ভিত্তি করে রির্টান দাখিলের পৃথক পৃথক আয়কর সার্কেল নির্দিষ্ট করা থাকে। যেমন- ঢাকা জেলায় অবস্থিত যে সকল বেসামরিক সরকারি ও পেনশনভুক্ত কর্মকর্তার নাম এ, বি এবং সি অক্ষরগুলো দিয়ে শুরু হয়েছে, তাদেরকে ঢাকা কর সার্কেল-৭১ ও কর অঞ্চল-৪-এ রিটার্ন জমা দিতে হয়।
নতুন করদাতারা তাদের নাম, চাকুরিস্থল অথবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা যে কর অঞ্চলের অধীনে পড়েছে সেখানে গিয়ে ১২ অঙ্কের টিন সংখ্যা উল্লেখ করে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এছাড়া প্রয়োজনে তারা নিকটস্থ আয়কর অফিস কিংবা কর পরামর্শ কেন্দ্র থেকে সার্কেল অফিস সম্বন্ধে জেনে নিতে পারবেন।
শেষাংশ
দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের টাকা নাগরিকদের আয়কর থেকে আসে। সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীর বেতন-ভাতার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের একটা বেশ বড় অংশই নির্ভর করে এই আয়করের উপর। তাছাড়া সরকারি যাবতীয় পরিষেবাগুলোকে সুষ্ঠুভাবে নাগরিকদের কাছে পৌছে দিতে আয়করের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। তাই নিজেদের স্বার্থেই আয়কর নিশ্চিত করতে প্রতিটি সচেতন নাগরিকের আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া উচিত।
পড়ুন: আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ল
অর্থ পাচারকারীদের দায়মুক্তির সমালোচনা সংসদ সদস্যদের
সাত শতাংশ কর দিয়ে পাচার করা অর্থ বৈধ করার বিষয়ে বাজেট প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।
রবিবার সংসদে তারা ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রস্তাব করায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সমালোচনা করেন।
অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, যারা টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তা না হলে অর্থপাচার বিরোধী আইনের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে আনার সুযোগ বাতিলের আহ্বান টিআইবির
পীর ফজলুর রহমান বলেন, যারা টাকা চুরি, অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছে তাদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটি মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়।
গাইবান্ধা থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি এই সাধারণ ক্ষমা পাসের পর চলমান মামলার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
পাটোয়ারী বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এই সাধারণ ক্ষমা লাভ করা যাবে না এমন একটি নীতি থাকা উচিত।
জাতীয় পার্টির সাংসদ বলেন, ভারতে এ ধরনের সাধারণ ক্ষমা দেয়া হলেও তা কোনো সফলতা আনতে পারেনি।
সিলেট থেকে নির্বাচিত গণফোরামের সাংসদ মোকাব্বির খান দেশের শীর্ষ ১২ দুর্নীতিবাজের শাস্তি দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না: অর্থমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে আমরা দেশের ৫০ শতাংশ দুর্নীতি কমিয়ে আনতে পারব, অন্যথায় আমি সংসদ থেকে পদত্যাগ করব।’
মোকাব্বির খান অভিযোগ করে বলেন,বড় বড় পদে থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা বড় দুর্নীতিবাজদের ছোঁয়ার সাহস কর্তৃপক্ষের নেই।
কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ সদস্য প্রাণ গোপাল দত্ত অর্থ পাচারকারীদের সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাব সংশোধনের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটার কোনো ইতিবাচক প্রভাব নেই, যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, তারা সৎ থাকলে দেশেই টাকা রাখত।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: পাচার হওয়া অর্থ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ
পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, যারা পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনবে তাদের কোনো প্রশ্ন করা হবে না, আইন করে তাদের সেই সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে তার পদক্ষেপের পক্ষে তিনি বলেন, ত্রুটিপূর্ণ সিস্টেমের কারণে এই জাতীয় বেশিরভাগ অর্থ অঘোষিত ও পাচার হয়ে গেছে।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশ অর্থ পাচারকারীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন: বাজেট অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে: অর্থমন্ত্রী
সদ্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে ঘোষিত একটি বিধান অনুযায়ী, আয়কর কর্তৃপক্ষসহ কোনো কর্তৃপক্ষ বিদেশে অবস্থিত কোনো সম্পদের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না যদি কোনো করদাতা এই ধরনের সম্পদের ওপর কর দেন।
বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১৫ শতাংশ, বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১০ শতাংশ এবং বাংলাদেশে পাঠানো নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করেন মন্ত্রী।
এই সুযোগটি ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, সরকার কিছু হাতিয়ার ব্যবহার করবে যাতে মানুষ পাচার হওয়া অবৈধ টাকা ফেরত আনতে উৎসাহিত হবে। তবে যারা যারা নিয়মিত কর প্রদান করে এটি তাদের নিরুৎসাহিত করবে না।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: সম্পূর্ণ অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা করেছেন অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রীর দাবি, প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সমাজের সকল অংশের জন্য বিশেষ করে দরিদ্রদের জন্য সুবিধা নিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ‘আমি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি এবং দারিদ্র্য থেকে বেড়ে উঠেছি। তাই, আমি দরিদ্রদের কষ্ট অনুভব করি।’
তিনি বলেন, নতুন বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা-বেষ্টনী কর্মসূচির জন্য বরাদ্দসহ অনেক ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পাচারকৃত অর্থের কিছু অংশ দুর্নীতি ও ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে আয় করা হলেও নতুন বিধানের পর এ ধরনের বেশির ভাগ অর্থই ফেরত আসবে।
তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাজারে চাহিদা নিয়ন্ত্রণে সংকোচনের নীতি অনুসরণ করা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা পণ্য ও পণ্যের দামের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সে কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: রেমিটেন্সের সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি শিগগিরই ফিরবে, প্রত্যাশা অর্থমন্ত্রীর
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে যার প্রভাব স্থানীয় বাজারে পড়েছে। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং সময় এবং সরকার তার অভিজ্ঞতা থেকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে।
তিনি বলেন, রেমিটেন্স প্রেরকদের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনার কারণে বৈদেশিক রেমিটেন্স ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে এবং ৫০ বিলিয়ন বেঞ্চমার্ক অতিক্রম করবে।
তবে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকরা কী পরিমাণ রেমিটেন্স বাইরে চলে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি বিরত থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এএসএম শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: মূল্যস্ফীতিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী
বাজেট ২০২২-২৩: পাচার হওয়া অর্থ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ
দেশ থেকে বিদেশে পাচার করা অর্থ কর দিয়ে বৈধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাজেট উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং বিশ্বের কিছু অংশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে। সেই জন্য আমাদের রাজস্ব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আরও বিচক্ষণ এবং দূরদর্শী হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিকে সচল রাখতে একদিকে যেমন সরকারি খরচের জন্য আরও বেশি রাজস্বের যোগান দিতে হবে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও প্রাণবন্ত ও গতিশীল করতে হবে।’
এ অবস্থায় মন্ত্রী বিদেশে অর্জিত অর্থ এবং অর্জিত সম্পদ অর্থনীতির মূলস্রোতে আনার মাধ্যমে নতুন তহবিল এবং বিনিয়োগের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এ একটি নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করেন।
প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী, আয়কর কর্তৃপক্ষসহ কোনো কর্তৃপক্ষ বিদেশে অবস্থিত কোনো সম্পদের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না যদি কোনো করদাতা এই ধরনের সম্পদের ওপর কর দেন।
বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১৫ শতাংশ, বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনা না হলে ১০ শতাংশ এবং বাংলাদেশে পাঠানো নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করেন মন্ত্রী।
কামাল বাজেট বক্তব্যে বলেন, এই সুযোগটি ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
পড়ুন: বাজেট ২০২২-২৩: স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ৫.৪ শতাংশ
বাজেট ২০২২-২৩: মূল্যস্ফীতিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী
পদ্মা সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটাবে: কামাল
টেলিকম খাতের কর ব্যবস্থা ব্যবসা-বান্ধব করার আহ্বান
টেলিকম খাতের কর ব্যবস্থা ও ইকোসিস্টেম ব্যবসা-বান্ধব করার আহ্বান জানিয়েছে এই খাতের নীতি-নির্ধারক ও প্রতিনিধিরা। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ খাত সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী কাজ করার পরামর্শ দেন তারা।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে এমটব (এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের) ও বিআইজিএফ (বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভরনেন্স ফোরাম) আয়োজিত টেলিকম ট্যাক্স পলিসি ও ইকোসিস্টেম নিয়ে এক পলিসি ডায়লগে বক্তারা এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন বিআইজিএফের চেয়ারপার্সন ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমাদের তরুণরা এখন ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা করছে। ডিজিটাল কানেক্টিভিটির অনেক সুবিধা রয়েছে। এ বিষয়ে আমি একমত যে উচ্চ কর দীর্ঘদিন ধরে একটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি মনে করি, আমরা এনবিআর এর কাছে টেলিযোগাযোগ খাতে উচ্চ করের প্রভাবের বিষয়টি সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারিনি। আমাদের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে চিন্তা করতে হবে, যেখানে যৌক্তিক হারে কর নির্ধারণের দিকে নজর দেওয়া দরকার।’
অনুষ্ঠানে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বাংলাদেশে টেলিকম খাতে কর খুব বেশি। এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের কোষাগারে অনেক অর্থ দিচ্ছে, তাহলে তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে কেন? ট্যাক্স কমানো হলে সরকারের কোন ক্ষতি নেই, কারণ এতে পরোক্ষভাবে সরকারের আয় বাড়ে। মোবাইল খাতে করপোরেট ও ন্যূনতম টার্নওভার কর কমিয়ে অন্যান্য শিল্প খাতের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করা উচিত।’
পলিসি ডায়ালগে টেলিকম করনীতি ও টেলিকম ইকোসিস্টেম নিয়ে দুইটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম এবং এরিকসনের মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, শ্রীলংকার হেড অব নেটওয়ার্ক সল্যুশন এবং এরিকসন বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার আবদুস সালাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘টেলিকম খাতকে সামনে এগিয়ে নিতে আমাদের বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি মনে করি, কিছু কর যৌক্তিক করা দরকার। ট্যাক্স সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানের মাধ্যমে প্রান্তিক গ্রাহকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমি এনবিআরের সাথে আলোচনা করব।’
পড়ুন: ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডের প্রচারের আহ্বান বিজিএমইএ’র
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘দেশ বিদেশের সকল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান যেন সঠিকভাবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা অনুসরণ করেই তাদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়া হয়। টেলিকম খাত শুধু সেবা প্রদানই নয়, দেশের প্রবৃদ্ধিতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তাই তাদের প্রতি আমাদের ইতিবাচক মনোভাব সবসময়ই বজায় থাকবে। তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই আমরা বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।’
রবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিএফও এম. রিয়াজ রাশিদ বলেন, মার্কেটে যত বেশি প্লেয়ার থাকবে অপারেটরদের কাজের দক্ষতা তত বেশি কমবে। আর শেষ পর্যন্ত এর প্রভাব গিয়ে পড়বে গ্রাহকদের উপর কারণ এতে সেবা প্রদানের ব্যয় বেড়ে যায়। তিনি বিষয়টির উপর নজর দেয়ার জন্য নীতি নির্ধারকদের মনোযোগ দেওয়ার অনুরোধ করেন।
মূল প্রবন্ধে শাহেদ আলম বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের মোবাইল খাতের কর তুলনামূলকভাবে বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অপারেটরদের বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন সন্তোষজনক নয়। একদিকে অপারেটরদের গ্রাহকপ্রতি গড় আয় কম অন্যদিকে মোবাইল ভয়েস ও মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে কম। আমরা আরও নতুন ধরনের সাশ্রয়ী সেবা প্রদান করতে চাই। কিন্তু সেবাদাতাদের যদি করের ভারে জর্জরিত করা হয় তাহলে তাদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যায়। আমরা এই খাতে যৌক্তিক হারে করারোপের দাবি জানাই। আমাদের মনে রাখা দরকার যে দেশের ৪৫ শতাংশ লোক নেটওয়ার্ক থাকা সত্ত্বেও এখনও মোবাইল ব্যবহার করতে পারে না।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, ‘সরকারের 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' রূপকল্প বাস্তবায়নে টেলিকম অপারেটররা প্রধানতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। করের ভার এবং অন্যান্য অনেক চ্যালেঞ্জে থাকা সত্ত্বেও আমরা কোটি কোটি গ্রাহকদের সেবা দিয়ে আসছি। আমরা সরকারের ভ্যাকসিন এবং বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। এখনও অনেক পথ যেতে হবে, কিন্তু আমরা জেনে খুশি যে সরকার লং ডিসট্যান্স টেলিকম নীতি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের ডিজিটাল ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি এটি আমাদের আরও উৎকৃষ্ট সেবা দিতে সাহায্য করবে।’
গ্রামীণফোনের অ্যাক্টিং সিসিএও হোসেন সাদাত বলেন, ‘আমরা উচ্চ কর সমস্যা সমাধানের জন্য নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের প্রতি বছর বিপুল বিনিয়োগ করতে হয়। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য, আমাদের খুব শিগগিরই টেলিকম খাতের ট্যাক্স ব্যবস্থার বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের অযৌক্তিক করের বৈষম্য দূর করতে হবে। ভালো ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে করের পরিমাণ কম হওয়া উচিৎ। তৃণমূল স্তরে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য, আমাদের কর যৌক্তিকীকরণ করতে হবে।’
পড়ুন: ঈদে ২৩০০০ কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়বে বাংলাদেশ ব্যাংক
গবেষণা: অনিয়ন্ত্রিত উৎপাদন ব্যবস্থাই ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের কর আহরণে বড় বাধা
বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারের করজালের বাইরে রয়েছে। সম্প্রতি ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহায়তায় ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের কর জালের বাইরে থাকার কারণ এবং এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে জানতে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরতে সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে একটি ওয়েবিনার আয়োজন করে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, উবিনীগ, ভয়েস এবং প্রজ্ঞা।
আরও পড়ুন: তামাকের ছোবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে: প্রজ্ঞা
গবেষক দলের প্রধান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন।
ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
আলোচনা পর্বে অংশ নেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর রিসার্চ ডিরেক্টর মারিয়া জি. কারমোনা এবং সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামস ডিরেক্টর বন্দনা শাহ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহের নেতারা।
আরও পড়ুন: দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বছরে ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু: প্রজ্ঞা
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর সদস্য (মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘শুধু রাজস্ব নয়, জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যবহার কমলে স্বাস্থ্যখাতে খরচ কমে যাবে।’
গবেষণার সার্বিক ফলাফলে দেখা গেছে, দেশে ৪৩৫টি জর্দা কারখানা এবং ৪৮টি গুল কারখানার মধ্যে মাত্র ২১৮টি জর্দা ও গুল কারখানা কর প্রদান করে। ৮টি বিভাগের ২৯টি জেলায় করজালের বাইরে থাকা ৮৮ জন ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীর (৮১ জর্দা এবং ৭ গুল) মধ্যে ৩৩ শতাংশের বৈধ ট্রেড লাইসেন্স নেই। ৯১ শতাংশ উৎপাদনকারী যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া হাতে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদন করেন। সাধারণত বাড়িতে বা ক্ষুদ্র পরিসরে কারখানায় এসব তামাকপণ্য উৎপাদিত হয়। এসব কারখানায় মোট মাসিক গ্রস টার্নওভারের পরিমাণ ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।
গবেষণায় অনানুষ্ঠানিক উপায়ে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকেই ট্যাক্স কমপ্লায়েন্সের অন্যতম বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও এনবিআর এর দক্ষ জনবলের সংকট, মাঠ পর্যায়ের অবকাঠামো এবং সনাতন সরঞ্জাম ও পদ্ধতি এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: দেশে করোনার মারাত্মক ঝুঁকিতে ৪ কোটি তামাক ব্যবহারকারী
গবেষণার সার্বিক ফলাফলে আরও দেখা গেছে, আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং শক্তিশালী ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং পদ্ধতির অভাবে এখাতে উৎপাদনকারীরা কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পায়।
গবেষণায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের কর পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসাথে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলোর মধ্যে মূল্য পার্থক্য কমিয়ে সহজলভ্যতা হ্রাস করার সুপারিশও করা হয়েছে।
অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন পদ্ধতি প্রচলন, আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ এনবিআর জনবলকে প্রশিক্ষণ প্রদান, ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং পদ্ধতি হিসেবে এসব পণ্যে ব্যান্ডরোল ব্যবহার, অনিবন্ধিত কারখানাগুলোকে করজালের আওতায় নিয়ে আসতে স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে ক্ষমতা প্রদান এবং তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের পুরস্কার প্রদান না করা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠির মধ্যে ২০.৬ শতাংশ মানুষ (২ কোটি ২০ লক্ষ) এবং ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সি বিদ্যালয়গামী শিশুদের ৪.৫ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩০.৬ কোটি টাকা যা মোট তামাক রাজস্বের মাত্র ০.১২ শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং মুখ গহ্বরসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন চলে অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত এবং আইন বহির্ভূত উপায়ে। ফলে এটি অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য রয়ে গেছে। সকল ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের করজালের মধ্যে আনা হলে এ খাতে রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।