কর অব্যাহতি
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে কর অব্যাহতি: দেশে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাড়ানোর পরিকল্পনা
শুধু ১০টি প্রকল্প নয়, এখন আরও অনেক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এই ধরনের বেসরকারি বিনিয়োগে কর মওকুফ পুনর্বহালের জন্য এনবিআরের বিজ্ঞপ্তি পাওয়ার পর এমন চিন্তাভাবনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান ১০টি প্রস্তাবিত কেন্দ্র ছাড়াও সৌর প্রকল্পের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে এটি নিশ্চিত।
এর আগে বেসরকারি খাতে ১০টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল বিদ্যুৎ বিভাগ। একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগের উপর কর অবকাশ পুনর্বহালের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চেয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
প্রস্তাবিত প্রতিটি কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হওয়ার কথা ছিল ৫০ মেগাওয়াট সেই হিসাবে মোট উৎপাদন ক্ষমতা হওয়ার কথা ছিল ৫০০ মেগাওয়াট।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'অবশেষে আমরা এ বিষয়ে এনবিআরের প্রজ্ঞাপন পেয়েছি এবং এখন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১০টির বেশি হবে।’
তবে এ ধরনের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সংখ্যা কত হবে তা এখনো চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়নি বলে তিনি ইউএনবিকে জানান।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৩০-৪০টির মধ্যে হতে পারে।
গত ২৭ অক্টোবর জারি করা এনবিআরের পরিপত্র অনুযায়ী, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের ওপর ১০ বছরের কর অব্যাহতি পাবেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেসব কোম্পানি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতির আওতায় ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে ২০৩৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করবে, তারা ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ পাবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপরিকল্পিত ও ব্যয়বহুল উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে হাসিনা সরকার: উপদেষ্টা ফাওজুল
এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘এসব কোম্পানি প্রথম ৫ বছরের জন্য শতভাগ, পরবর্তী ৩ বছরের জন্য ৫০ শতাংশ এবং বাকি ২ বছরের জন্য ২৫ শতাংশ কর অব্যাহতি পাবে।’
এতে আরও বলা হয়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়তা করতেই ১০ বছর মেয়াদে এই কর প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, ২০২৩ সালের ২৬ জুনে জারি করা একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই ছাড়গুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছিল সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, যেসব সংস্থা ১ জানুয়ারি, ২০২৩ থেকে ৩০ জুন, ২০২৪ এর মধ্যে তাদের বাণিজ্যিক অপারেশন তারিখ (সিওডি) অর্জন করবে, তারা কর ছাড় পাবে।
আগের গেজেটের শর্ত অনুযায়ী, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাদে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কর ছাড় পাওয়ার যোগ্য।
এনবিআরের আগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলো ২০৩৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শতভাগ আয়কর অব্যাহতি সুবিধা ভোগ করবে; যা বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত আয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
এ ছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশি কর্মীরা বাংলাদেশে আসার পর তিন বছরের জন্য আয়কর ছাড় পাবেন।
পূর্ববর্তী বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আরও ছাড়ের মধ্যে রয়েছে সিওডি থেকে শুরু করে অপারেশনের প্রথম পাঁচ বছরের জন্য ১০০ শতাংশ, পরবর্তী তিন বছরের জন্য ৫০ শতাংশ এবং পরবর্তী দুই বছরের জন্য ২৫ শতাংশ আয়কর মওকুফ।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ স্থগিত করে এবং এই আইনের অধীনে অনুমোদিত ৩৪টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে।
এসব প্রকল্প মূলত কোনো দরপত্র প্রক্রিয়া ছাড়াই এবং অযাচিতভাবে তাদের নির্বাচিত করা হয়েছিল।
এরপর বিদ্যুৎ বিভাগ ১০টি সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে অনেক সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী কর অব্যাহতি সুবিধা না পেয়ে দরপত্রে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) প্রকল্পগুলোর দরপত্র দিতে পারেনি। এরপরই বিদ্যুৎ বিভাগ এনবিআরকে চিঠি দিয়ে কর অব্যাহতি সুবিধা পুনর্বহালের অনুরোধ জানায়।
বিপিডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কর অবকাশ পুনর্বহালের পর তারা এখন আশা করছেন বেসরকারি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের নিলামে আরও বেশি বিনিয়োগকারী অংশ নেবেন।
তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, বেশ কয়েকটি প্রস্তাব রয়েছে - মোট সৌর প্রকল্পগুলো গড়ে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৪০টি পর্যন্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের সক্ষমতা থেকে শুরু করে স্থান নির্ধারণ পর্যন্ত সবকিছু এ সপ্তাহের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে চূড়ান্ত করা হবে।’
বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তর
বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ শতাংশ জ্বালানি চাহিদা পূরণের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, এটি অর্জনে আনুমানিক ১.৫ থেকে ১.৭১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।
স্বল্প কার্বন নিঃসরণের বিষয়ে অগ্রগতির প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমানভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জ্বালানি দক্ষতার দিকে মনোনিবেশ করছে।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ১ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৩৫ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ থেকে ২৩০ মেগাওয়াট এবং সৌরশক্তি থেকে ১ হাজার ৮০ দশমিক ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
পাওয়ার সেলের নথি অনুযায়ী, মোট ৩ হাজার ৯৬৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াটের প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ৯৪৩.৫ মেগাওয়াট প্রকল্প নির্মাণাধীন, ৬০৯ মেগাওয়াট লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বা নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ), ২২৮ মেগাওয়াট দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং ২,১৮৩ মেগাওয়াট পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন: আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্মূল্যায়নে কমিটি গঠন
১ মাস আগে