জাতির পিতা
সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ বাতিল চান অ্যাটর্নি জেনারেল
সংবিধান থেকে ‘সমাজতন্ত্র’, ‘জাতির পিতা’, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র মতো কিছু বিষয় বাদ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। একইসঙ্গে সংবিধানে গণভোটের বিধান বহালের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের ওপর পঞ্চম দিনের মতো শুনানিতে অংশ নিয়ে বুধবার (১৩ নভেম্বর) এই দাবি জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী বহাল রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ’৯০-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং ’২৪-এর জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই সংশোধনী বাতিল না হলে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে না।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ১৯ আগস্ট রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি চলছে। বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অ্যাটর্নি জেনারেল।
আরও পড়ুন: সাহস থাকলে ফিরে এসে বিচারের মুখোমুখি হোন: হাসিনাকে অ্যাটর্নি জেনারেল
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই রুলকে সাপোর্ট করি। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধংস করা, ফ্যাসিজমকে দীর্ঘায়িত করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুণ্ঠিত করা, সংবিধানের সুপ্রিমেসি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এটা সংবিধানের ওপর প্রতারণার শামিল।’
সংবিধানে ‘জাতির পিতা’ যুক্ত করার ব্যাপারে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে কেউ অস্বীকার করে না। কিন্তু জাতির পিতা নিয়ে সিরিয়াস বিতর্ক আছে; এ বিষয়ে জাতি বিভক্ত।’
‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে উনার অবদান অনস্বীকারর্য। রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবেও উনি অনেক উপরের মানুষ। কিন্তু একজন ব্যক্তি সব কিছু করেছেন– এটা আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার ধারণা নয়।’
তিনি বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৈরি করা সংবিধানে ‘জাতির পিতা’ টার্মটি ছিল না। এটি পঞ্চদশ সংশোধনীতে ঢোকানো হয়েছে; জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এমনভাবে করা হয়েছে যে, তার (শেখ মুজিব) বিরুদ্ধে কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহ হবে। অথচ তাকে জাতির পিতা বলা সংবিধানের স্পিরিটের পরিপন্থী।”
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বলেছি, সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে উই দ্য পিপল অব বাংলাদেশ। আমরা সবাই স্বাধীন হয়েছি। এই কথা ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে। ‘উইনেস’ থেকে সরে এসে আমরা ‘আইনেস’ এবং বায়োপিক থিউরিতে গিয়েছি। রাজনৈতিকভাবে এটি আমাদের যেখানে নিয়ে যাচ্ছে, সেটি কাঙ্ক্ষিত নয়। এটি আমাদের দেশ-রাষ্ট্র-সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।”
সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে ভাষা দিয়ে জাতিসত্তা নির্ধারণ করা হয় না।’
সংবিধানের ৭ক ও ৭খ অনুচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য, গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য করা হয়েছে। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থী। এছাড়া সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র; সমাজতন্ত্র নয়। আমরা সমাজতন্ত্র বাদ দিতে চাচ্ছি।’
অনুচ্ছেদ ৮-এর বিষয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। (সংবিধানে) আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটা যেভাবে আগে ছিল, সেভাবে চাচ্ছি। আর ২ (ক)-তেই বলা আছে, রাষ্ট্র সকল ধর্ম পালনে সমান অধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করবে। অনুচ্ছেদ ৯-এ ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর কথা বলা হয়েছে। এটিও সাংঘর্ষিক।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে গণতন্ত্রের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। রায়ের জন্যও অপেক্ষা করা হয়নি। এটা সংবিধানের, মানুষের বুকে কুঠারাঘাত করা হয়েছে। ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্য বহাল রেখে আবার নির্বাচন করা অবৈধ; এটা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে আঘাত করে।’
আরও পড়ুন: ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারক এখনও গুরুত্বপূর্ণ পদে: অ্যাটর্নি জেনারেল
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এই বিধান তুলে দেওয়া হয়েছিল। আমরা গণভোটের এই বিধানটির পুনর্বহাল চাই। যারা নিশিরাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে এমপি হয়েছিলেন, তাদের ভোটেই এই বিধান বাতিল হয়।’
‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে, মৌলিক অধিকার ধ্বংস করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না? এটা সংবিধানের অংশ হিসেবে রাখা যাবে না। পঞ্চদশ সংশোধনী রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ’৯০–এর গণ–অভ্যুত্থান ও ’২৪–এর জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই সংশোধনী বাতিল না হলে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে এটা নয় যে হাজার হাজার মানুষকে গুম করা হবে, ৬০ লাখের বেশি মানুষকে গায়েবি মামলায় আসামি করা হবে, বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হবে। যাদের হাত নেই, এ রকম মানুষকেও আসামি করে বলা হয়েছে তারা বোমা মেরেছেন। হজে থাকা ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে এসব হতে পারে না।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়। এরপর ওই বছরের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং ৩ জুলাই রাষ্ট্রপতি তাতে অনুমোদন দেন।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
এই সংশোধনী বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। এ বিষয়ে গত ১৯ আগস্ট রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। পরে এই রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরাম প্রমুখ।
সেগুলোর ওপর আগামী ১৭ নভেম্বর শুনানির তারিখ রয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানি চলছে হাইকোর্টে।
এদিকে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না- মর্মে জারি করা রুলে দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলতে ইন্টারভেনার হিসেবে হাইকোর্টে নিজেদের পক্ষভুক্ত করেছেন চার আইনজীবী। তারা হলেন- ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, ব্যারিস্টার শাইখ মাহদী, নাফিউল আলম সুপ্ত ও সাইয়েদ আবদুল্লাহ। এখন তারাও এ রিটের ওপর বক্তব্য রাখবেন।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রিট খারিজ চাইলেন অ্যাটর্নি জেনারেল
১ সপ্তাহ আগে
জাতির পিতার জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস ২০২৪ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ রবিবার (১৭ মার্চ) সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী রবিবার
১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন নতুন দুই ডেপুটি গভর্নরের
এরপর প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন এবং বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও তার জন্য দোয়া করবেন।
জাতীয় শিশু দিবসের একটি অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন তিনি।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকেসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের হত্যা করা হয়।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মুছে ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
৮ মাস আগে
বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী রবিবার
দেশে আগামীকাল রবিবার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে সরকারি ছুটির পাশাপাশি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও উদযাপন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকাল ৭টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় তিনি গার্ড অব অনার প্রদান ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেবেন।
আরও পড়ুন: ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদযাপিত
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে বেলা ১১টায় যোগ দেবেন।
দিবসটি উপলক্ষে টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘জাতির পিতার ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমি এই মহান নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।’
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হয়ে আছেন বাঙালি জাতির প্রেরণার চিরন্তন উৎস। রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু নীতি ও আদর্শের প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হন।’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে দেশের সব শিশুকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন: টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের শ্রদ্ধা
কারাগারে থেকে এবং কারাগারের বাইরেও বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যখন ভাষা আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়, তখন বঙ্গবন্ধু কারাগারে অনশন করেছিলেন।
ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সব বড় আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ মুজিব।
বঙ্গবন্ধু তার গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে সংগঠিত করেছিলেন। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীন অর্জিত হয়।
বঙ্গবন্ধু যখন সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন পরাজিত ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র তাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে পরে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়েছে।
দিবসটি পালনে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর প্রতি নতুন মন্ত্রিসভার শ্রদ্ধা
৮ মাস আগে
বঙ্গবন্ধু অ্যাপ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি ডিজিটাল বাংলাদেশের শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে বঙ্গবন্ধু অ্যাপের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ হলো।
শনিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্বার টেকনোলজিস লিমিটেডের তৈরি অ্যাপটি উদ্বোধন করা হয়।
আরও পড়ুন: রমজানে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'এই অ্যাপ মানুষকে জাতির পিতার ঘটনাবহুল জীবন সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিয়েছে।’
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষিত করতে ডিজিটাল মাধ্যম হিসেবে অ্যাপটি ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী এই দূরদর্শী প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের প্রচেষ্টার জন্য বঙ্গবন্ধু অ্যাপের পেছনে থাকা টিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: স্বাধীন বিচার বিভাগ একটি দেশের উন্নয়নকে উৎসাহিত করে: প্রধানমন্ত্রী
আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মগুলো সময়মতো কাজ করে না: প্রধানমন্ত্রী
৮ মাস আগে
বিজয় দিবসে জাতির পিতার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তিনি এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী মহান নেতা ও স্বাধীনতার স্থপতির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
পরে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের সভাপতি হিসেবে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ৫৩তম বিজয় দিবস উদযাপন করছে জাতি।
১৯৭১ সালের এই গৌরবময় দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৯ মাসের নৃশংস যুদ্ধশেষে আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে।
দিবসটি উপলক্ষে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আরও পড়ুন: ‘বিজয়’: বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী-মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সোম ও শিশু শিল্পীদের নিয়ে গ্যালারি কসমসের দিনব্যাপী আর্ট ইভেন্ট
১১ মাস আগে
জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন নবনিযুক্ত ৪ রাষ্ট্রদূতের
বাংলাদেশে নবনিযুক্ত চার দেশের রাষ্ট্রদূত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
তারা হলেন- পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ এহ্মাদ মারুফ, মিশরের রাষ্ট্রদূত ওমার মোহি এলদিন আহমেদ ফাহমি, হলি-সি ভ্যাটিকানের এপস্টলিক নানসিও কেভিন র্যান্ডাল এবং শ্রীলংকার রাষ্ট্রদূত ধর্মপালা বিরাক্কডি।
জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রদূতগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সিইও মাশুরা হোসেন রাষ্ট্রদূতদের এ সময় বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন।
পরে রাষ্ট্রদূতগণ পরিদর্শকের বইয়ে সই করেন।
এসময় রাষ্ট্রদূতগণকে জাদুঘরের পক্ষ থেকে উপহার দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করলেন পাকিস্তান, মিশর, ভ্যাটিকান সিটি ও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূত
ডেনমার্কের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান রাষ্ট্রপতির
রাষ্ট্রপতির কাছে আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ
১১ মাস আগে
টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং বঙ্গবন্ধু ও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের অন্যান্য শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত সফরে বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে পদ্মা সেতু পার হয়ে সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পৈতৃক বাড়িতে পৌঁছান।
আজ রাত টুঙ্গিপাড়ার বাসায় কাটিয়ে আগামীকাল তার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের ৪৬তম ক্ষমতাধর নারী: ফোর্বস
আ. লীগ ক্ষমতায় থাকতে বাইরের কারো চোখ রাঙানি সহ্য করবে না: শেখ হাসিনা
বিএনপি-জামায়াত আসন্ন নির্বাচন বানচাল করলে পরিণতি ভালো হবে না: প্রধানমন্ত্রী
১১ মাস আগে
বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন নবনিযুক্ত ৭ রাষ্ট্রদূত
নবনিযুক্ত ৭ কূটনীতিক ৬ ও ৭ ডিসেম্বর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
কূটনীতিকদের মধ্যে ৫ জন রাষ্ট্রদূত এবং ২ জন হাইকমিশনার রয়েছেন।
এ সময় তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন এবং দর্শনার্থী বইয়ে সই করবেন। একই সঙ্গে তারা জাদুঘরটিও পরিদর্শন করবেন।
নতুন নিযুক্ত ৫ জন রাষ্ট্রদূত আর্জেন্টিনা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, মিশর ও ভ্যাটিকানের এবং ২ জন হাইকমিশনার শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনে নেপালের উচ্চ পর্যায়ের সংসদীয় প্রতিনিধি দল
খুলনা পুরাতন সার্কিট হাউজ এখন ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর’
১১ মাস আগে
বুধবার শেখ রাসেল দিবস পালিত হবে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে বুধবার (১৮ অক্টোবর) সারাদেশে ও বিদেশে দূতাবাসগুলোতে শেখ রাসেল দিবস পালিত হবে।
১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করা শেখ রাসেলকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
সরকার ২০২১ সালে ১৮ অক্টোবরকে শেখ রাসেল দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে বিসিসি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ তথ্য জানান।
এ উপলক্ষে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসটি শুরু হবে।
সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আইসিটি বিভাগ ও শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে।
আরও পড়ুন: রংপুরের শেখ রাসেল পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বিল পাস
দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় বিআইসিসি থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় বিআইসিসিতে শেখ রাসেল দিবস-২০২৩ উদ্বোধন করবেন এবং শেখ রাসেল পুরস্কার-২০২৩ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ পুরস্কার বিতরণ করবেন।
তিনি শেখ রাসেল অ্যানিমেশন ল্যাব এবং অন্যান্য কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন এবং ১০ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, রোবটিক্স কর্নার, ৫৫৫ জয় সেট সেন্টার, ডুআইসিটি#২০৪১ স্মার্ট টাওয়ার এবং ইউনিভার্সিটি ইনোভেশন হাবের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশের সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে চিত্রাঙ্কন, দাবা, জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
শেখ রাসেল দিবস ২০২৩-এর লোগোও উন্মোচন করেন পলক।
আরও পড়ুন: শেখ রাসেল যুব র্যাপিড দাবা শুক্রবার থেকে শুরু
ক্যানবেরায় শেখ রাসেল দিবস উদযাপন
১ বছর আগে
বেদনায় ভরা দিন: শেখ হাসিনা
তখনো ভোরের আলো ফোটেনি। দূরের মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। এমন সময় প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ। এ গোলাগুলির আওয়াজ ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের একটি বাড়ি ঘিরে, যে বাড়িতে বসবাস করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এক বিঘা জমির উপর খুবই সাধারণ মানের ছোট্ট একটা বাড়ি। মধ্যবিত্ত মানুষের মতোই সেখানে বসবাস করেন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি সবসময়ই সাধারণ জীবনযাপন করতেন। এই বাড়ি থেকেই ১৯৭১ সালের ২৬-এ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের যে আন্দোলন-সংগ্রাম - এই বাড়িটি তার নীরব সাক্ষী। সেই বাড়িটিই হলো আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। গোলাগুলির আওয়াজের মধ্যে আজানের ধ্বনি হারিয়ে যায়।
রাষ্ট্রপতির বাসভবনের নিরাপত্তায় সাধারণত সেনাবাহিনীর ইনফেন্ট্রি ডিভিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ১০-১২ দিন পূর্বে বেঙ্গল ল্যাঞ্চারের অফিসার ও সৈনিকদের এ দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমার মা, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, লক্ষ্য করলেন কালো পোশাকধারী সৈনিকেরা বাড়ির পাহারায় নিয়োজিত। তিনি প্রশ্নটা তুলেছিলেনও। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাননি।
আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছিল দেশের মানুষের প্রতি অঢেল ভালোবাসা। তিনি সকলকেই অন্ধের মতো বিশ্বাস করতেন। তিনি কখনো এটা ভাবতেও পারেননি যে, কোনো বাঙালি তাঁর ওপর গুলি চালাতে পারে বা তাঁকে হত্যা করতে পারে। তাঁকে বাঙালি কখনো মারবে না, ক্ষতি করবে না - এই বিশ্বাস নিয়েই তিনি চলতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, সেই বিশ্বাসের কি মূল্য তিনি পেয়েছিলেন?
চারদিকে মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ। বিকট শব্দে মেশিনগান হতে গুলি করতে করতে মিলিটারি গাড়ি এসে দাঁড়ালো ৩২ নম্বর রোডের বাড়ির সামনে। গুলির আওয়াজে ততক্ষণে বাড়ির সকলেই জেগে উঠেছে। আমার ভাই শেখ কামাল দ্রুত নিচে নেমে গেল রিসেপশন রুমে - কারা আক্রমণ করলো, কী ঘটনা জানতে। বাবার ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বিভিন্ন জায়গায় ফোন করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছিলেন না।
সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর কামাল বেরিয়ে বারান্দায় এসে দেখে বাড়ির গেট দিয়ে মেজর নূর ও ক্যাপ্টেন হুদা এগিয়ে আসছে। কামাল তাদের দেখেই বলতে শুরু করলো: আপনারা এসে গেছেন, দেখেন তো কারা বাড়ি আক্রমণ করলো?
ওর কথা শেষ হতে পারলো না। তাদের হাতের অস্ত্র গর্জে উঠলো। কামাল সেখানেই লুটিয়ে পড়লো। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় মেজর নূর আর কামাল একইসঙ্গে কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। আর সেই কারণে ওরা একে অপরকে ভালোভাবে চিনতো। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য! সে চেনা মানুষগুলি কেমন অচেনা ঘাতকের চেহারায় আবির্ভূত হলো। নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করলো সহযোদ্ধা কামালকে। কামাল তো মুক্তিযোদ্ধা। দেরাদুন থেকে ট্রেনিং নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে যায় যুদ্ধ করতে। এরপর বাংলাদেশ সরকার ক্যাপ্টেন শেখ কামালকে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে।
মেজর সৈয়দ ফারুক ট্যাঙ্ক নিয়ে আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল। আব্বা সবার আগে ঘর থেকে সেনাবাহিনী প্রধান সফিউল্লাহ সাহেবকে ফোন করেন। তাঁকে জানান বাড়ি আক্রান্ত। তিনি জবাব দেন: আমি দেখছি। আপনি পারলে বাইরে কোথাও চলে যান।
আরও পড়ুন: জাতীয় শোক দিবস: বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
এর মধ্যে ফোন বেজে ওঠে। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরিয়াবাত, আমার সেজ ফুফা, ফোনে জানান যে তাঁর বাড়ি কারা যেন আক্রমণ করেছে। আব্বা জবাব দেন তাঁর বাড়িও আক্রান্ত। আব্বা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে ফোন করেন। আব্দুর রাজ্জাক বলেন: লিডার দেখি কী করা যায়। আব্দুর রাজ্জাক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। তোফায়েল আহমেদ ফোনে বলেন: আমি দেখছি। রিসিভার নামিয়ে রাখতে রাখতে বলতে থাকেন: আমি কী করবো? তোফায়েল আহমেদ রক্ষী বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন। আব্বা নিচে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হন। মা পাঞ্জাবিটা পরিয়ে দেন। আব্বা যেতে যেতে - কামাল কোথায় - জিজ্ঞেস করতে থাকেন। কথা বলতে বলতে তিনি সিঁড়ির কাছে পৌঁছান।
এ সময় সিড়ির মাঝের প্ল্যাটফর্মে যারা দাঁড়িয়েছিল তারাও দোতালায় উঠে আসছিল। এদের মধ্যে হুদাকে চিনতে পারেন আব্বা। আব্বা তার বাবার নাম ধরে বলেন: তুমি রিয়াজের ছেলে না? কী চাস তোরা? কথা শেষ করতে না করতেই গর্জে উঠে ওদের হাতের অস্ত্র। তাদের সঙ্গে ইতোমধ্যেই যোগ দিয়েছিল রিসালদার মোসলেউদ্দিন।
ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে সিঁড়ির উপর লুকিয়ে পড়লেন আব্বা। আমার মা সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘাতকের দল ততক্ষণে ওপরে উঠে এসেছে। আমার মাকে তারা বাধা দিল এবং বললো যে আপনি আমাদের সঙ্গে চলেন। মা বললেন: আমি এক পা-ও নড়বো না, কোথাও যাবো না। তোমরা উনাকে মারলে কেন? আমাকেও মেরে ফেলো। ঘাতকদের হাতের অস্ত্র গর্জে উঠলো। আমার মা লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে।
কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল ও জামালের স্ত্রী রোজী জামাল মা’র ঘরে ছিল। সেখানেই তাঁদের গুলি করে হত্যা করে ঘাতকেরা। রাসেলকে রমা জড়িয়ে ধরে এক কোণে দাঁড়িয়েছিল। ছোট্ট রাসেল কিছুই বুঝতে পারছে না। একজন সৈনিক রাসেল আর রমাকে ধরে নিচের তলায় নিয়ে যায়। একইসঙ্গে বাড়িতে আরও যারা ছিল তাদেরও নিচে নিয়ে দাঁড় করায়।
গৃহকর্মী আব্দুল গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। তাকেও নিয়ে যায়। বাড়ির সামনে আম গাছতলায় সকলকে দাঁড় করিয়ে একে একে পরিচয় জিজ্ঞেস করে। আমার একমাত্র চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের পঙ্গু ছিলেন। তিনি বার বার মিনতি করছিলেন: আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা; আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমাকে মেরো না। ছোট ছোট বাচ্চারা আমার, ওদের কী হবে? কিন্তু খুনিরা কোনো কথাই কানে নেয় না। তাঁর পরিচয় পেয়ে তাঁকে অফিস ঘরের বাথরুমে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
রমার হাত ধরে রাসেল “মা’র কাছে যাব, মা’র কাছে যাব” বলে কান্নাকাটি করছিল। রমা বারবার ওকে বোঝাচ্ছিল: তুমি কেঁদো না ভাই। ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু অবুঝ শিশু মায়ের কাছে যাব বলে কেঁদেই চলছে। এ সময় একজন পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় পেয়ে বলে: চলো, তোমাকে মায়ের কাছে দিয়ে আসি।
ভাইয়ের লাশ, বাবার লাশ মাড়িয়ে রাসেলকে টানতে টানতে দোতলায় নিয়ে মায়ের লাশের পাশেই গুলি করে হত্যা করে। দশ বছরের ছোট্ট শিশুটাকে ঘাতকের দল বাঁচতে দিল না।
যে বাড়ি থেকে একদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই বাড়িটি রক্তে ভেসে গেল। সেই রক্তের ধারা ওই সিঁড়ি বেয়ে বাংলার মাটিতে মিশে গেছে- যে মাটির মানুষকে তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন।
৪৬ ব্রিগেডের দায়িত্বে ছিলেন সাফায়েত জামিল। সেনাপ্রধান তাঁকে ফোন করে পায়নি। সিজিএস খালেদ মোশাররফও কোনো দায়িত্ব পালন করেনি। সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ জিয়াউর রহমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেনি বরং সে পুরো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। খুনি রশিদ ও ফারুক বিবিসি-তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার কথা বলেছে। খুনি মোস্তাক জিয়াকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়। ঢাকার তৎকালীন এসপি মাহবুবকেও ফোন করে পাওয়া যায়নি।
মেজ ফুপুর বাসা
ঘাতকেরা ধানমন্ডির মেজ ফুফুর বাড়ি আক্রমণ করে রিসালদার মোসলেউদ্দিনের নেতৃত্বে। তাদের একটি দল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে গালি দিতে থাকে। বুটের আওয়াজ আর চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে মুক্তিযোদ্ধা যুবনেতা এবং বাংলার বাণীর সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। বন্দুক তাক করে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকে ঘাতকের দল। এ সময় তাঁর অন্তঃসত্তা স্ত্রী আরজু ছুটে এসে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে ঘাতকদের বুলেট থেকে বাঁচাতে। কিন্তু ঘাতকের দল তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি করে। বুলেটের আঘাতে দুজনের শরীর ঝাঁঝরা হয়ে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নিথর দেহ দুটি। ছোট দুই ছেলে, তিন বছরের তাপস আর বছর পাঁচেকের পরশ, মা-বাবার লাশের পাশে এসে চিৎকার করতে থাকে আর বলতে থাকে: মা ওঠো, বাবা ওঠো। ওই শিশুদের কান্না মা-বাবা কি শুনতে পেয়েছিল? ততক্ষণে তাঁরা তো না-ফেরার দেশে চলে গেছে। শিশুদের চোখের পানি মা-বাবার রক্তের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়।
সেজ ফুপুর বাড়ি
গুলি করতে করতে মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মেজর এ এম রাশেদ চৌধুরী মিন্টু রোডে সেজ ফুফার সরকারি বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় উঠে যায়। পরিবারের সকল সদস্যকে তাঁদের ঘর থেকে বের করে নিচতলায় বসার ঘরে নিয়ে আসে। এর পর তাদের উপর ব্রাশ ফায়ার করে। গুলির আঘাতে লুটিয়ে পড়েন আবার ফুপু আমিনা সেরনিয়াবাত, আমার ফুফা কৃষিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সেরিয়াবাত, তাঁর মেয়ে বিউটি, বেবি, রিনা, ছেলে খোকন, আরিফ, বড় ছেলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর স্ত্রী শাহানা, নাতি সুকান্ত, ভাইয়ের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ, ভাগ্নে রেন্টু। আট বছরের নাতনি কান্তা গুলিবিদ্ধ লাশের নিচে চাপা পড়ে যাওয়ায় বেঁচে যায়। দেড় বছরের নাতি সাদেক গুলিবিদ্ধ মায়ের বুকে পড়ে কাঁদতে থাকে। আট বছরের কান্তা নিজের ফুফু বেবির লাশের নিচে চাপা পড়েছিল। সেখান থেকে কোন মতে বের হয়ে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। সারি সারি গুলিবিদ্ধ আপনজন পড়ে আছে। কারও নিথর দেহ, কেউ বা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ঘরের কোণায় রাখা অ্যাকুরিয়াম গুলি লেগে ভেঙে যায়। অ্যাকুরিয়ামের পানির সঙ্গে মাছগুলি মাটিতে পড়ে যায়। রক্ত ভেজা পানিতে মাছগুলিও ছটফট করে লাফাতে থাকে। কিছুক্ষণ আগে যে আপনজন মা, বাবা, দাদা-দাদি, চাচা, ফুফুসহ সকলকে নিয়ে এই শিশুরা ছিল, আর এখন গুলিবিদ্ধ রক্তে ভেজা আপনজন। লাশের নিচ থেকে নিজেকে বের করে ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে ৮ বছরের শিশুটি অবাক বিস্ময়ে ভীত-সন্ত্রস্ত চোখে তাকিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: ১৫ আগস্ট: শোক দিবসে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হবে
মেজর ফারুক ট্যাঙ্ক নিয়ে লেকের ওপার থেকে ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল। সেই গুলি মোহাম্মদপুরে এক বাড়িতে পড়ে। সেখানে ১১ জন মানুষ নিহত হয় আরও অনেকেই আহত হয়। মেজর ডালিম রেডিও স্টেশন দখলের দায়িত্বে ছিল। সেখান থেকেই সে ঘোষণা দেয়: শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতকেরা শুধু হত্যা করে তাই নয়, তারা আমাদের বাসা লুটপাট করে। আমার বাবার শোবার ঘরে এবং ড্রেসিং রুমের সকল আলমারি, লকার সবকিছু ভেঙে সেখান থেকে যা কিছু মূল্যবান ছিল - গহনা, ঘড়ি, টাকা-পয়সা লুটপাট করে নিয়ে যায়। বাসায় ব্যবহার করা গাড়িটাও মেজর হুদা ও নূর নিয়ে যায়।
আলমারির সব কাপড় চোপড় বিছানার ওপর পড়েছিল। সেগুলোর অনেকগুলোতে ছিল রক্তের দাগ। এই হত্যাকাণ্ডের পর লুটপাটের ঘটনা মনে করিয়ে দেয় ওদের চরিত্রের অন্ধকার দিকটা। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তারা এই সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষের কত বড় সর্বনাশ করেছিল তা কি ওরা বুঝতে পেরেছিল?
যে বুকে বাংলার মানুষের জন্য প্রচণ্ড ভালোবাসা ছিল, সেই বুকটাই ঝাঁঝরা করে দিল তাঁরই প্রিয় বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কিছু দুর্বৃত্ত। আমার আব্বা কোনোদিন বিশ্বাস করতেই পারতেন না যে, বাংলাদেশের কোন মানুষ তাঁকে মারতে পারে, বা কোনো ক্ষতি করতে পারে। পৃথিবীর অনেক নেতাই তাঁকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, ওরা তো আমার ছেলে, আমাকে কেন মারবে? এত বড় বিশ্বাস ভঙ্গ করে ওরা বাঙালির ললাটে কলঙ্ক লেপন করল।
কী বিচিত্র এ দেশ! একদিন যে মানুষটির একটি ডাকে এদেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় এনেছিল, বীরের জাতি হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে মর্যাদা পেয়েছিল, আজ এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে সেই জাতি সমগ্র বিশ্বের কাছে বিশ্বাসঘাতক জাতি হিসেবে পরিচিতি পায়। খুনি ও ষড়যন্ত্রকারীদের এদেশের অগণিত জনগণ ঘৃণা করে এবং বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে।
আমার অন্তঃসত্ত্বা চাচি ছয় জন সন্তান নিয়ে চরম বিপদের সম্মুখীন হন। খুলনায় ভাড়ার বাসায় বসবাস করতেন। সে বাসা থেকে তাঁকে বিতাড়িত করা হয়। টুঙ্গিপাড়ার বাড়িও সিল করে রাখা হয়। ঘরবাড়ি হারা সদ্য বিধবা কোথায় ঠাঁই পাবেন?
সোবহানবাগ
আব্বার সামরিক সচিব কর্নেল জামিল তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে রওয়ানা হন। সোবহানবাগ মসজিদের কাছে তাঁর গাড়ি আটকে দেয় ঘাতকেরা। তিনি এগোতে চাইলে ঘাতকেরা তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে।
আমাদের বাড়ির নিচে পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্য এসআই সিদ্দিকুর রহমানকেও তারা গুলি করে হত্যা করে।
বেলজিয়াম
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ...। টেলিফোনটা বেজেই যাচ্ছে। আমার ঘুম ভেঙে গেল। মনে হলো টেলিফোনের আওয়াজ এত কর্কশ? আমি ঘুম থেকে উঠে সিঁড়ির কাছে দাঁড়ালাম। দেখি নিচে অ্যাম্বাসেডর সানাউল হক সাহেব ফোন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে বললেন, ওয়াজেদের সঙ্গে কথা বলবেন। আমি তাঁকে ঘুম থেকে ডেকে তুললাম। অপর পারে জার্মানির অ্যাম্বাসেডর হুমায়ুন রশিদ সাহেব কথা বলছেন। তিনি জানালেন বাংলাদেশে ক্যু হয়েছে। আমার মুখ থেকে বের হলো: “তাহলে তো আমাদের আর কেউ বেঁচে নাই”। রেহানা পাশে ছিল। তাঁকে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু তখনও জানি না কী ঘটনা ঘটেছে।
মাত্র ১৫ দিন আগে জার্মানি এসেছি। বেলজিয়ামে বেড়াতে এসেছি। নেদারল্যান্ডেও গিয়েছিলাম। আব্বা বলেছিলেন, নেদারল্যান্ড কীভাবে সাগর থেকে ভূমি উত্তোলন করে - পারলে একবার দেখে এসো। একদিন আগেই আব্বা-মার সঙ্গে কথা হয়েছে। কেন জানি মা খুব কাঁদছিলেন। বললেন “তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে, তুই আসলে আমি বলবো।” আমাদের খুব খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল তখনই দেশে ছুটে চলে যাই।
আব্বা বললেন: রোমানিয়া ও বুলগেরিয়াতে তিনি যাবেন। আর ফেরার পথে আমাদের নিয়ে আসবেন।
কিন্তু আমাদের আর দেশে ফেরা হলো না। একদিন পরই সব শেষ। বেলজিয়ামের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হক, যিনি রাজনৈতিক সদিচ্ছায় অ্যাম্বাসেডর পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন, রাতারাতি তার চেহারাটাই পাল্টে গেল। তিনি জার্মানিতে নিয়োজিত রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশিদ সাহেবকে বলেন, যে বিপদ আমার কাঁধে পাঠিয়েছেন তাঁদের ফেরত নেন।
যিনি আগের রাতে আমাদের জন্য ‘ক্যান্ডেল লাইট ডিনার’ এর আয়োজন করেছিলেন; কত খাতির, আদর-যত্ন, আর এখন আমরা তার কাছে আপদ হয়ে গেলাম। আমাদের বর্ডার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়িটাও দিলেন না। বেলজিয়াম অ্যাম্বাসিতে কর্মরত আমার স্কুলের বান্ধবী নমি’র স্বামী জাহাঙ্গীর সাদাতের গাড়িতে করে আমদের বেলজিয়াম বর্ডারে যেতে বললেন। জাহাঙ্গীর সাদাত আমাদের জার্মানির বর্ডারে পৌঁছে দিলেন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে নোম্যান্স ল্যান্ড পার হয়ে আমরা জার্মানির মাটিতে পৌঁছলাম। জার্মানির অ্যাম্বাসেডর হুমায়ুন রশিদ সাহেব গাড়ি পাঠিয়েছেন। আর তাঁর স্ত্রী আমার বাচ্চাদের জন্য শুকনো খাবার-দাবারও গাড়িতে দিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে কয়েকদিন আশ্রয় পেলাম। তাঁদের আদর যত্ন দুঃসময়ে আমাদের জন্য অনেক মূল্যবান। আমরা কোনোদিন ভুলতে পারবো না হুমায়ুন রশীদ ও তাঁর স্ত্রীর অবদান। জার্মান অ্যাম্বাসির সকল অফিসার ও কর্মচারি আমাদের অত্যন্ত যত্ন করেছিলেন। অ্যাম্বাসির গাড়িতে আমাদের কার্লস রুয়ে পৌঁছে দিলেন। জার্মান সরকার, যগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ আরও অনেকে আমাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে চাইলেন। জার্মানিতে নিযুক্ত ভারতের অ্যাম্বাসেডর জনাব হুমায়ুন রশিদ ও ডক্টর ওয়াজেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি আমাদের ভারতে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেন। আমরা জার্মানি থেকে ভারতে পৌঁছালাম।
উপসংহার
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রক্তাক্ত বেদনার আঘাত বুকে ধারণ করে আমার পথচলা। বাবা মা ভাইদের হারিয়ে ৬ বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসতে পেরেছি। একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছি, যে বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, তা ব্যর্থ হতে পারে না। লাখো শহিদের রক্ত আর আমার বাবা-মা ভাইদের রক্ত ব্যর্থ হতে আমি দেব না।
আমার চলার পথ খুব সহজ ছিল না, বারবার আমার উপর আঘাত এসেছে। মিথ্যা অপপ্রচার, গুলি, বোমা ও গ্রেনেড হামলার শিকার হতে হয়েছে আমাকে। খুনি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময় বলেছিল, “শত বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না।” “শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও কখনো হতে পারবে না।” এর পরেই তো সেই ভয়াবহ ২০০৪ সালের ২১-এ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানবঢাল রচনা করে সেদিন আমাকে রক্ষা করেছিলেন। উপরে আল্লাহ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আর বাংলাদেশের জনগণই আমার শক্তি। আমার চলার কণ্টকাকীর্ণ পথে এরাই আমাকে সাহায্য করে চলেছেন। তাই আজকের বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জনগণের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশের জনগণকে ক্ষুধার হাত থেকে মুক্তি দিতে পেরেছি। তারা এখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে।
বাবা! তুমি যেখানেই থাক না কেন, তোমার আশীর্বাদের হাত আমার মাথার উপর আছে - আমি তা অনুভব করতে পারি। তোমার স্বপ্ন বাংলাদেশের জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। তোমার দেশের মানুষ তোমার গভীর ভালোবাসা পেয়েছে আর এই ভালোবাসার শক্তিই হচ্ছে এগিয়ে যাবার প্রেরণা।
লেখক- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা।
আরও পড়ুন: শোক দিবস: বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন
১ বছর আগে